আপত্তি: মির্যা সাহেব ঈসা (আ.)-এর মুজেজার অদ্ভুত ব্যাখ্যা করেছেন
আপত্তি: মির্যা সাহেব হযরত মসীহ (আ.) এর পাখি সৃষ্টির কুদুসের পুকুরের মাটির প্রভাব, কাঠের কল বা খেলনা এবং নিরক্ষর ও অজ্ঞ লোক প্রভৃতি অর্থ করেছেন। এই ধরনের অদ্ভুত চিন্তা– ضالين সাথে কি ঐশী জ্ঞানের কোন সম্পর্ক আছে?
জবাব: নিঃসন্দেহে কুরআন মজিদে পাখি সৃষ্টির বিষয়টিকে মসীহ (আ.) এর প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু একে সত্যিকার অর্থে গ্রহণ করা সম্ভব নয়। কেননা অন্য এক স্থানে আল্লাহ তা’লা বলেন,
هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّـهِ? (সূরা ফাতের, রুকু ০১)
اللَّـهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ (সূরা রা’দ রূকু ০১)
لَن يَخْلُقُوا ذُبَابًا وَلَوِ اجْتَمَعُوا لَهُ (সূরা হজ্জঃ ৭৪)
এ ধরণের অনেক আয়াত এই ধারণাকে ভ্রান্ত প্রমাণিত করে যে, মসীহ সত্যিকার অর্থে পাখি সৃষ্টি করেছেন। এই কারণে অন্যান্য তফসীরকারকগণেরও ধারণা ছিল যে, হযরত মসীহ্ সৃষ্টিকৃত পাখি শুধু দর্শকের সামনেই উড়ত এবং আড়ালে যেতেই মরে মাটিতে পড়ে যেত। যেরূপভাবে আল্লামা জালালুদ্দিন সুয়ুতি লিখেছেন,
خلق لھم الخفاش لانہ اکمل الطیرخلقا فکان یطیروھم ینظرونہ فاذ غاب عن اعینھم سقط میتا- (জালালাইন মাতবাউ মুজতাবাঈ পৃ-৪৯)
ইমাম ওহাব তফসীরে নেশাপুরিতে ইবনে জারিরের খন্ড ৩ পৃ ১৯৫ এর টিকায় এবং আল্লামা ইবনে হাইয়্যান আল বাহরুল মুহিত ২য় খন্ড পৃ ৪৬৬-তে এই ধারণারই প্রকাশ করেছেন যে, তফসীরকারকগণ এই ব্যাখ্যা করেছেন যে, তা কৃত্রিম পাখি ছিল, সত্যিকার অর্থে ছিল না।
প্রকৃত কথা হল, সত্যিকার অর্থে খোদা ছাড়া অন্য কারোও সৃষ্টিকর্তা হওয়া অসম্ভব। সুতরাং যেভাবে সমস্ত তফসীরকারকগণ-এর পাখি সৃষ্টির বিষয়টিকে ব্যাখ্যা করতে হয়েছে, হযরত মসীহ মওউদ (আ.)-ও এর ব্যাখ্যা করেছেন এবং সত্যিকারের পাখি সৃষ্টির ব্যাপারে তিনি স্পষ্টভাবে অস্বীকার জ্ঞাপন পূর্বক বলেন, “এই বিশ্বাস সম্পূর্ণ ভ্রান্ত ও পরিত্যাজ্য এবং অংশীদারিত্ব ধারণা যে, মসীহ মাটির পাখি সৃষ্টি করে এবং এগুলোতে ফু দিয়ে সত্যিকারের পাখি বানিয়ে দিয়েছিলেন।” (ইযালায়ে আওহাম)
হযরত মসীহ (আ.) এর নিদর্শনাবলী এবং এর তত্ত্ব বর্ণনা করতে গিয়ে তিনি (আ.) বলেন, “বিরোধীরা বলে থাকে যে, এই ব্যক্তি হযরত মসীহ (আ.) এর পাখি সৃষ্টি করা এবং মৃতকে জীবিত করাকে অস্বীকার করে এবং তাকে মানে না। কিন্তু আমার জবাব হল, আমি হযরত মসীহর অলৌকিকভাবে জীবিত করা এবং অলৌকিক সৃষ্টি বিশ্বাস করি, কিন্তু এই বিষয় মানি না যে, তিনি (আ.) খোদার ন্যায় কোন মৃতকে জীবিত করেছেন অথবা কোন পাখি সত্যিকার ভাবে সৃষ্টি করেছেন। কেননা যদি সত্যিকার অর্থে মসীহ (আ.) এর মৃতকে জীবিত করা এবং পাখি সৃষ্টি করা মেনে নেয়া হয় তাহলে এতে করে খোদা তা‘লার সৃষ্টির এবং জীবের সাদৃশ্য হয়ে যাবে। মসীহ (আ.) এর পাখি মূসা (আ.) এর লাঠির ন্যায় যাকে সে সাপের ন্যায় দৌড়াতো। কিন্তু সবসময়ের সে নিজের প্রকৃত অবস্থাকে পরিত্যাগ করেনি। এরুপভাবে, গবেষকরা লিখেছেন, মসীহর পাখি মানুষের দৃষ্টিপটে থাকা পর্যন্ত উড়তো, কিন্তু মানুষের দৃষ্টির আড়ালে যাওয়ার পরপরই মাটিতে পরে যেত এবং নিজের পূর্বের অবস্থায় ফিরে যেত।” (হামামাতুল বুশরা,পৃ:৯০)
সমস্ত নবীগণকে তার বিরোধীদের উপর বিজয় দান করা হয় এবং এমন মুজেযা প্রদর্শন করা হয় যার কারণে সে গর্ব করে থাকে। যেরূপভাবে হযরত মূসা (আ.) কে জাদুকরী এবং আ হযরত (সা.) কে বাগ্মীতার মুজেযা প্রদান করেছেন। হযরত মসীহ মওউদ (আ.) কে যখন প্রেরণ করা হয়েছিল তখন ইহুদিদের মধ্যে চিকিৎসাবিদ্যা এবং জাদুকরী বিদ্যার অনেক রেওয়াজ ছিল। তাই আল্লাহ তা’লা নিজ হাতে এমন বিবেকপ্রসূত নিদর্শনসমূহ প্রকাশ করেছেন যার সামনে ইহুদিদের চিকিৎসাবিদ্যা এবং অন্যান্য বিষয়াবলী পরাজিত হয়েছে।
এই তত্ত্বকে দৃষ্টিপটে রেখে হযরত মসীহ মওউদ (আ.) বলেন, “যারা ফেরাউনের সময় মিশরে এমন এমন কাজ করত যে, সাপ বানিয়ে দেখাতো এবং অনেক ধরণের প্রাণী সৃষ্টি করে তা জীবিত প্রাণীদের ন্যায় চালিয়ে দিত। তা মসীহর সময় সাধারণভাবে ইহুদিদের মধ্যে ছড়িয়ে পরেছিল এবং ইহুদিরা তাদের কাছে অনেক ধরণের জাদুকরী কাজ শিখে নিয়েছিল, যেরুপভাবে কুরআন করীমও এই কথার স্বাক্ষী। সুতরাং এতে আশ্চর্যের কিছু নেই যে, খোদা তা‘লা হযরত মসীহকে বিবেকপ্রসূতভাবে এমন পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত করেছেন যা একটি মাটির খেলনা কোন সুইচ/কল চেপে বা কোন ফু মারার মাধ্যমে এমনভাবে উড়ত যেরুপভাবে পাখি উড়ে। অথবা না উড়লেও চলাফেরা করত।” (ইযালায়ে আউহাম, ৩য় সংস্করণ, পৃ ১২৫টিকা)
এরুপভাবে আরো বলেন, “যেহেতু কুরআন শরীফের অধিকাংশ স্থানে রুপক ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে তাই এই আয়াতগুলোর আধ্যাত্মিকভাবে এই অর্থও করা যেতে পারে মাটির পাখির অর্থ হল সেই নিরক্ষর ও অজ্ঞ লোক যাদেরকে হযরত ঈসা (আ.) নিজের সাথী বানিয়েছেন। যেন নিজের সাহচর্যে নিয়ে পাখিদের ন্যায় পোষ মানিয়েছেন অত:পর তাদের মাঝে হেদায়াতের রুহ ফুকে দিয়েছেন যার মাধ্যমে তারা উড়তে লাগল।” (ইযালায়ে আউহাম, ৩য় সংস্করণ পৃ ১২৫-১২৬)
মোটকথা হযরত ঈসা (আ) এর নিদর্শন থেকে হযরত মসীহ মওউদ (আ.) কোথাও অস্বীকার করেননি, যতদূর সম্ভব বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীন ব্যাখ্যা করেছেন।
অন্যান্য উত্তর
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রসূল (সা.)-কে হেলাল এবং নিজেকে বদর আখ্যা দিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন, তার সিংহাসন সবার ওপরে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নিজেকে দরুদ শরীফের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন ইয়ালাস খোদাতা’লার নাম
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের উপর অন্য ভাষায় ইলহাম হল কেন?
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেছেন, মাহদীর মাধ্যমে মহানবী (সা.) এর দ্বিতীয় আগমন হবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নতুন নবুয়্যত, ধর্ম, কিবলা, নামায এবং কুরআন বানিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের কথা- একটি নতুন বাহন আবিষ্কার হবে যা আগুন দ্বারা চলবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, কুরআনে তাঁর নাম ইবনে মরিয়ম রাখা হয়েছে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রেশমী লুঙ্গি পরিধান করেছিলেন যা হারাম