আপত্তি : মির্যা কাদিয়ানী কখনও কখনও যিনা-ব্যভিচার করতেন (নাউযুবিল্লাহ্)
আপত্তি : হযরত মসীহে মওউদ (মির্যা কাদিয়ানী) অলীউল্লাহ (আল্লাহর ওলী) ছিল। আর (এই) আল্লাহর ওলী কখনও কখনও যিনা-ব্যভিচার করতেন।
“কাদিয়ানীদের পত্রিকা আল-ফযলে ৩১ আগষ্ট ১৯৩৮ সালের সংখ্যায় এক কাদিয়ানীর বক্তব্য প্রকাশিত হয়। বর্ণনাকারী বলেছেন, হযরত মসীহে মওউদ (মির্যা কাদিয়ানী) অলীউল্লাহ (আল্লাহর ওলী) ছিল। আর (এই) আল্লাহর ওলী কখনও কখনও যিনা-ব্যভিচার করতেন। যদি তিনি কখনও তা করেন তাতে অসুবিধার কী আছে? মসীহে মওউদের (মির্যা) উপর আমাদের কোন অভিযোগ নেই। কেননা তিনি কদাচিৎ ব্যভিচার করেন। আমাদের আপত্তি হচ্ছে, বর্তমান খলীফা (মির্যা বশীরুদ্দীন মাহমুদ) কে নিয়ে, যিনি সর্বদা যিনা করেন।”
উত্তর: নাউযুবিল্লাহি মিন যালিক-আহমদীরা নাকি নিজেদের পত্রিকাতেই একথা অকপটে ঘোষণা করেছে, তাদের প্রতিষ্ঠাতা এবং তাদের দ্বিতীয় খলীফা নাকি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকতেন। যারা সত্যান্বেষী খোদাভীরু পাঠক তাদের অবগতির জন্য জানাচ্ছি, আল-ফযল আহমদীয়া মুসলিম জামাতের মুখপত্র। এর প্রথম প্রকাশ ১৯১৩ সালে। সেই পত্রিকায় আহমদীরা কীভাবে এরকম জঘন্য বিষয় স্বীকারোক্তি আকারে প্রকাশ করতে পারে? কোন আধ্যাত্মিক জামাত তো দূরের কথা, জগতের বস্তুবাদিতার মোহে আক্রান্ত লোকেরাও এমন নির্লজ্জতা দেখাতে সাহস পায় না। বিষয়টি ছিল সম্পূর্ণ বিপরীত।
একজন বিদ্বেষী ও বিরোধী ব্যক্তি আধ্যাত্মিক জামাতের বিরোধিতায় কত জঘন্য অপবাদ আরোপ করতে পারে তার উপমা দিতে গিয়ে হযরত মির্যা বশীরুদ্দীন আহমদ(রা.) এক ব্যক্তির উল্লিখিত মিথ্যা অপবাদ উদাহরণস্বরূপ তুলে ধরেছিলেন। শত্রুর বক্তব্য তুলে ধরে তিনি যা বলেছেন সেটা আল-ফযলে ছাপা হয়েছিল। হযরত মির্যা বশিরুদ্দীন মাহমুদ আহমদ(রা.) এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে এর মূল্যায়ন করে বলেন, এ ব্যক্তি বাহ্যত যদিও আমার বিরোধিতা করছে কিন্তু তার বিরোধিতা মূলত আহমদীয়া জামা’তের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে। তার কথার কোন ভিত্তি নেই। যদি কারও ক্ষেত্রে ব্যভিচারী হওয়া প্রমাণিত হয় সে কি কখনও সাধু পুরুষ হতে পারে? সম্পূর্ণ বিষয়টিকে পূর্বাপর উল্লেখ না করে বিকৃত ও খণ্ডিত আকারে উপস্থাপন করা হয়েছে। আর ১৯৩৮ এ প্রকাশিত আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিরোধী এক আপত্তিকারীর আপত্তিটিকে নকল করে আল্লামা আব্দুল মজিদ তা পুনরায় আপত্তি হিসাবে তুলে ধরেছেন।
মহানবী(সা.) এ ধরনের বাজে কথা ছড়াতে নিষেধ করে বলেছেন: একজন মানুষের মিথ্যাবাদী হওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট যে, সে যা শুনে তা–ই বলে বেড়ায়। পাঠকদের অবগতির জন্য কয়েকটি ঐতিহাসিক সাক্ষ্য এখানে তুলে দিচ্ছি, যা দ্বারা হযরত মির্যা সাহেবের নিষ্কলুষ জীবনচরিত সাব্যস্ত হয়ে যাবে।
মওলানা আবুল কালাম আজাদ উপমহাদেশের একজন সর্বজনবিদিত প্রখ্যাত আলেম ছিলেন। তিনি ১৯০৮ সালের ২৬শে মে তারিখে হযরত মির্যা সাহেবের মৃত্যুর পর, শোক প্রকাশ করার পাশাপাশি তার প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করে প্রবন্ধ লেখেন। তার এই লেখা ১৯০৮ সালের ২০শে জুন তারিখে পাঞ্জাবের উকিল পত্রিকায় (অমৃতসর থেকে) প্রকাশিত হয়। মওলানা আজাদ লিখেছেন:
“তিনি (অর্থাৎ হযরত মির্যা সাহেব) এক অতি মহান ব্যক্তি ছিলেন। তার লেখা এবং কথায় যাদু ছিল। তার মস্তিষ্ক ছিল এক মূর্তিমান বিস্ময়। তার দৃষ্টি ছিল প্রলয়–স্বরূপ এবং কণ্ঠস্বর কিয়ামত সদৃশ। তার আঙ্গুলের ইশারায় বিপ্লব সংঘটিত হত। তার দুটি মুষ্ঠি বৈদ্যুতিক ব্যাটারির মত ছিল। তিনি ত্রিশ বছর যাবৎ ধর্মজগতে মহাপ্রলয় ও তুফানের ন্যায় বিরাজমান ছিলেন। তিনি প্রলয় বিষাণ হয়ে ঘুমন্তদেরকে জাগিয়ে তুলতেন। তিনি আজ জগৎ থেকে বিদায় গ্রহণ করেছেন। ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের বিরুদ্ধে তিনি যেরূপ বিজয়ী সেনাপতির কর্তব্য সম্পাদন করেছেন তাতে আমরা এ কথা স্বীকার করতে বাধ্য, যে মহান আন্দোলন আমাদের শত্রুদেরকে দীর্ঘকাল যাবৎ বিপর্যস্ত করে রেখেছিল তা যেন ভবিষ্যতেও চলমান থাকে। খৃষ্টান এবং হিন্দু আর্যসমাজীদের বিরুদ্ধে মির্যা সাহেব যেসব পুস্তক রচনা করেছেন, তা সর্বসাধারণের মাঝে সমাদৃত। …”
জমিদার পত্রিকার সম্পাদক মৌলভী জাফর আলী খান সাহেবের পিতা মৌলভী সিরাজ উদ্দিন সাহেব হযরত মির্যা সাহেবের মৃত্যুতে স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন:
“মির্যা গোলাম আহমদ ১৮৬০–৬১ খ্রীস্টাব্দে শিয়ালকোট জেলায় চাকুরীরত ছিলেন। তখন তার বয়স ২২/২৩ বছর হবে। আমি স্বচক্ষে দেখে সাক্ষ্য দিচ্ছি, তিনি যৌবনে একজন খুবই নেক এবং খোদাভীরু বুযুর্গ ছিলেন।” (জমিদার পত্রিকা, ৮ জুন ১৯০৮)
অমৃতসর থেকে প্রকাশিত উকিল পত্রিকার সম্পাদক মওলানা আব্দুল্লাহ্ আল এমাদী নিজ পত্রিকায় লিখেন:
“চরিত্রগত দিক থেকে মির্যা সাহেবের আঁচলে একটি ক্ষুদ্র দাগও দৃষ্টিগোচর হয় নি। তিনি এক পূতঃপবিত্র জীবন যাপন করেছেন“ (উকিল পত্রিকা, ৩০ মে ১৯০৮)
যারা মির্যা সাহেবকে কাছ থেকে দেখেছেন, যারা তাকে ব্যক্তিগতভাবে চিনতেন, তারা তাঁর মৃত্যুর সাথে সাথে, তার মৃত্যুর সংবাদ পেয়ে তাঁর চরিত্র ও জীবন সম্পর্কে নিজেরা স্বেচ্ছায় এসব মন্তব্য করেছেন। অতএব আল্লামা আব্দুল মজিদের অপবাদগুলো মিথ্যা সাব্যস্ত করার জন্য এসব উদ্ধৃতি যথেষ্ট।
অন্যান্য উত্তর
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রসূল (সা.)-কে হেলাল এবং নিজেকে বদর আখ্যা দিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন, তার সিংহাসন সবার ওপরে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নিজেকে দরুদ শরীফের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন ইয়ালাস খোদাতা’লার নাম
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের উপর অন্য ভাষায় ইলহাম হল কেন?
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেছেন, মাহদীর মাধ্যমে মহানবী (সা.) এর দ্বিতীয় আগমন হবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নতুন নবুয়্যত, ধর্ম, কিবলা, নামায এবং কুরআন বানিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের কথা- একটি নতুন বাহন আবিষ্কার হবে যা আগুন দ্বারা চলবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, কুরআনে তাঁর নাম ইবনে মরিয়ম রাখা হয়েছে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রেশমী লুঙ্গি পরিধান করেছিলেন যা হারাম