আপত্তি : সহীহ্ হাদীসসমূহে আছে, মসীহ শতাব্দির শুরুতে আসার কথা
‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদ সাহেব ভালোভাবেই জানেন, সহীহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে,
হযরত আবু হুরায়রা(রা.) বর্ণনা করেন, আমি রসূলুল্লাহ(সা.)-এর কাছ থেকে যেসব বিষয় জেনেছি তার মাঝে তিনি একথাও বলেছেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ্ প্রত্যেক শতাব্দির শিরোভাগে এমন এক বা একাধিক ব্যক্তি আবির্ভূত করবেন যিনি ধর্মের সংস্কার সাধন করবেন। (আবু দাউদ: কিতাবুল মালাহিম)
এই হাদীসের আলোকে এই উম্মতের বিদগ্ধ আলেমরা বিশ্বাস করতেন, চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দেদ মাহদীই হবেন।
আহলে হাদীস আলেম সম্প্রদায়ের শিরোমণি নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব তের শতাব্দীর মুজাদ্দেদদের একটি তালিকা দেয়ার পর লিখেছেন, “চতুর্দশ শতাব্দী শুরু হতে আর মাত্র দশ বছর বাকি আছে। যদি এই শতাব্দীতে মাহদী ও ঈসা(আ.)-এর আবির্ভাব হয়ে যায় তাহলে তিনিই চতুর্দশ শতাব্দীর মুজাদ্দেদ ও মহাপুরুষ হবেন।’ (হুজাজুল কিরামাহ ফী আসারিল কিয়ামাহ, পৃষ্ঠা ১৩৯, শাহজাহানপুর, ভূপাল থেকে মুদ্রিত, প্রকাশকাল ১২৯১ হি.)
এখন প্রশ্ন থাকে, মাহদী ও মসীহ্ যে শতাব্দীর মুজাদ্দেদ হবেন এটা তো স্পষ্ট হল কিন্তু এই ঘটনা যে চতুর্দশ শতাব্দীর শিরোভাগেই হবে এর প্রমাণ কি? বিষয়টি আরও স্পষ্টভাবে বুঝার জন্য দেখুন ইবনে মাজা শরীফের কিতাবুল ফিতান অধ্যায়ের হাদীস- “…সেইসব নিদর্শন দুইশ’ বছর পর প্রকাশিত হবে।” এই হাদীসের ব্যাখ্যায় আহলে সুন্নত ওয়াল জামা’তের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস হযরত মোল্লা আলী আল-ক্বারী(রাহ.) লেখেন, “খুব সম্ভব, আল মিয়াতাইন-এ ‘লাম’ অক্ষরটি “আহদ যিকরি যেহনি’র জন্য ব্যবহৃত হয়েছে এবং এর অর্থ হল, এক হাজার বছরের পর দুই শ’ বছর অর্থাৎ ১২০০ বছর পর এসব লক্ষণ প্রকাশিত হবে আর সেই যুগই ইমাম মাহদীর আবির্ভাবের যুগ।” (মিরকাতুল মাসাবীহ্ শারহ মিশকাতিল মাসাবীহ কিতাবুল ফিতান বাবু আশরাতিস্ সাআ, হাদীস নম্বর-৫৪৬০)
অতএব হাদীস থেকে মির্যা সাহেব শুধু একাই এই যুক্তি গ্রহণ করেন নি বরং এই উম্মতের অন্যান্য আলেমরাও একই অর্থ গ্রহণ করেছেন। অতএব এ বিষয়ে আল্লামার আপত্তি ধোপে টেকে না। উদাহরণস্বরূপ আরও বলা যায়, সংবিধান বিশেষজ্ঞরা যখন বলেন, এ বিষয়টি সংবিধানে আছে- তখন এটি আক্ষরিক অর্থে কেউ খুঁজতে যায় না বরং সামগ্রিক দৃষ্টিতে সংবিধানে প্রণিত নীতিমালায় বিষয়টি আছে অর্থে কথাটাকে নেয়া হয়।
ক) প্রসিদ্ধ বুযুর্গ হযরত শাহ নেয়ামতুল্লাহ্ ওলী (৫৬০ হিজরী)
তিনি তার বিখ্যাত ফারসী কবিতায় শেষ যুগের অবস্থা বর্ণনা করেছেন, তিনি লিখেছেন, অনুবাদ: যখন ১২০০ বছর অতিক্রম করবে তখন আমি অদ্ভুত অদ্ভুত দৃশ্য দেখি। যুগের মাহদী এবং এযুগের ঈসা উভয়কে ঘোড়ায় আরোহনরত অবস্থায় দেখেছি। (আরবাঈন ফী আহওয়ালিল মাহদীঈন, মুহাম্মদ ইসমাঈল শহীদ সংকলিত পৃষ্ঠা ২, ৪ প্রকাশকাল ১২৬৮ হিজরী সন)
খ) হযরত শাহ ওলীউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী (১১১৪-১১৭৫ হিজরী)
আমার প্রভু আমাকে জানিয়েছেন, কিয়ামত সন্নিকট এবং মাহদী আবির্ভূত হতে যাচ্ছেন।
গ) নওয়াব সিদ্দীক হাসান খান সাহেব হযরত শাহ ওলীউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভীর বিষয়ে লিখেন,
“হযরত শাহ ওলী উল্লাহ্ ইমাম মাহদী(আ.)-এর আবির্ভাবের সময় চেরাগ দীন শব্দে বর্ণনা করেছেন, যা কিনা হুরুফে আবজাদ হিসাবে একহাজার দু’শত আটষট্টি ১২৬৮ হিজরী হয়।” (হুজাজুল কিরামাহ্ ফী আসারিল কিয়ামাহ্ পৃষ্ঠা ৩৯৪)
আশা করি মির্যা সাহেবের কথা যে ভিত্তিহীন নয় তা আপত্তিকারী এতক্ষণে বুঝতে সক্ষম হয়েছেন।
অন্যান্য উত্তর
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রসূল (সা.)-কে হেলাল এবং নিজেকে বদর আখ্যা দিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন, তার সিংহাসন সবার ওপরে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নিজেকে দরুদ শরীফের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন ইয়ালাস খোদাতা’লার নাম
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের উপর অন্য ভাষায় ইলহাম হল কেন?
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেছেন, মাহদীর মাধ্যমে মহানবী (সা.) এর দ্বিতীয় আগমন হবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নতুন নবুয়্যত, ধর্ম, কিবলা, নামায এবং কুরআন বানিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের কথা- একটি নতুন বাহন আবিষ্কার হবে যা আগুন দ্বারা চলবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, কুরআনে তাঁর নাম ইবনে মরিয়ম রাখা হয়েছে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রেশমী লুঙ্গি পরিধান করেছিলেন যা হারাম