আপত্তি: তার নিজের কথা অনুযায়ী তিনি মুহাদ্দাসও নন নবীও নন


আপত্তি: হযরত মসিহ মওউদ (.) তার কিতাব ইযালায়ে আওহামে মুহাদ্দাস হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন এবং নবী হওয়া অস্বীকার করেছেন এবং “এক গালাতি কা ইযালায়” নবুয়তের দাবি করেছেন এবং মুহাদ্দাস হওয়া কে অস্বীকার করেছেন। অতএব তার নিজের কথা অনুযায়ী তিনি মুহাদ্দাসও নন নবীও নন।

জবাবঃ এই দুইটি বিষয়ই তার (আ.) উদ্ধৃতি থেকে ভুলভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। এই বিষয়ে হুযুর (আ.) নিজে বলেছেন যে, যে যে স্থানে আমি নবুয়্যত বা রিসালাতের অস্বীকার করেছি তা শুধুমাত্র এই অর্থে যেআমি স্বতন্ত্রভাবে শরীয়ত আনয়কারী নবী নই। কিন্তু আমি এই অর্থে নবী যেআমি আমার অনুসরণীয় রসূল থেকে কল্যাণ লাভ করে এবং নিজের জন্য তার নাম পেয়ে তার মাধ্যমে খোদার নিকট থেকে অদৃশ্যের জ্ঞান পেয়ে আমি নবী ও রসূল। কিন্তু নতুন কোন শরীয়ত আনয়ন ছাড়া। এইরূপ নবী বলা হতে আমি কখনো অস্বীকার করিনি। বরং এই অর্থেই আ্লাহ তালা আমাকে নবী ও রসূল বলে সম্বোধন করেছেন। (এক গালাতি কা ইযালা, তৃতীয় সংস্করণ, পৃষ্ঠা ৬)

এই উদ্ধৃতিতে তিনি স্বতন্ত্র ও শরীয়তবাহক নবুয়্যতের অস্বীকার করেছেন এবং যিল্লি ও শরীয়তবিহীন নবুয়্যতের স্বীকার করেছেন। সুতরাং কোন প্রকার মতবিরোধ ও স্ববিরোধ নেই। যে উদ্ধৃতির উপরে আপত্তি করা হয় তার আসল উদ্ধৃতি এই যে, যদি খোদা তালার পক্ষ থেকে অদৃশ্যের সংবাদ প্রাপ্তগণের নাম নবী রাখা না হয় তা হলে বলুন তাকে আর কি নামে ডাকা হবে। যদি বলা হয় তার নাম মুহাদ্দাস রাখা উচিত তা হলে আমি বলি যেহাদিসে বর্ণিত তাহদিসের অর্থ কোন অভিধানেই অদৃশ্যের সংবাদ প্রকাশ করা হয়নি। এই উদ্ধৃতি থেকে কিভাবে প্রমাণিত হয় যেযে ব্যক্তি নবী হয় সে মুহাদ্দাস নয়এর অর্থ তো এটাই যে খোদা সেই ব্যক্তিকে অর্থাৎ অদৃশ্যের সংবাদ প্রাপ্তদের নাম শুধুমাত্র মুহাদ্দাস রাখতে পারেন না। কেননা খোদার কাছ থেকে অদৃশ্যের সংবাদ প্রাপ্তদের নাম নবী রাখার মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। এটা নয় যেএখানে মুহাদ্দাসিয়াতের অস্বীকার করা হয়েছে। কোন স্থান কি এমন রয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যেআমি মুহাদ্দাস নই?”

হুযুর (আ.) এর বারাহীনে আহমদীয়া থেকে নিয়ে তার মৃত্যু পর্যন্ত এই দাবিই ছিল যে, খোদা তা’লা আমার সাথে অধিক হারে কথা বলেছেন এবং সম্বোধন করেছেন এবং অদৃশ্যের সংবাদ আমার কাছে প্রকাশ করেছেন। প্রথম দিকে তিনি (আ.) তার নাম মুহাদ্দাসিয়াত দিতেন। কেননা তার কাছেও অন্যদের মত নবীর জন্য নতুন শরীয়ত আনা বা স্বতন্ত্র নবী হওয়া জরুরি ছিল। সুতরাং তিনি তার লেখনীতে বলেছেন, ইসলামী পরিভাষায় নবী এবং রসূলের এই অর্থ হয়ে থাকে যেতিনি কোন নতুন শরীয়ত নিয়ে আসেন অথবা পূর্ববর্তী শরীয়তের কিছু নির্দেশকে রহিত করে দেনঅথবা নিজেকে পূর্ববর্তী নবীর উম্মত বলেন না এবং কোন নবীর সাহায্য বা কল্যাণ ছাড়াই আল্লাহ তালার সাথে সম্পর্ক রাখেন।” (আল হাকাম, ৩য় খন্ড, সংখ্যা ২৯, ১৮৯৯ ইং)

কিন্তু যখন আল্লাহ তা’লা তার (আ.) উপর এই বিষয়টি স্পষ্ট করে দিলেন যে, কোন শরীয়ত নিয়ে আসা বা নিজে স্বতন্ত্র হওয়া কোন শর্ত নয়, তখন তিনি (আ.) বলেন,

১. নবীর অর্থ এটি যেখোদার পক্ষ থেকে ওহীর মাধ্যমে সংবাদ প্রাপ্ত হবেন এবং ঐশী মুকালেমা ও মুখাতেবার কল্যাণে কল্যাণ মন্ডিত হবে। শরীয়ত আনয়ন করা তার জন্য আবশ্যক নয়। আর কোন শরীয়তওয়ালা নবীর অনুসারী না হওয়াও আবশ্যক নয়।” (বারাহীনে আহমদিয়া, ৫ম খন্ড, পৃষ্ঠা ১৩৮)

২. পূর্বে আমার এটি বিশ্বাস ছিল যেমসীহ ইবনে মরিয়মের সাথে আমার কি সম্পর্কতিনি একজন নবী এবং খোদার নৈকট্যপ্রাপ্ত বুযুর্গ ব্যক্তিগণের অন্তর্ভুক্ত এবং যদি কোন বিষয় আমার শ্রেষ্ঠত্বের জন্য প্রকাশ করা হত তা হলে আমি সেটিকে আংশিক শ্রেষ্ঠত্ব মনে করতাম। কিন্তু পরবর্তীতে খোদা তালার ওহী বৃষ্টির ন্যায় আমার উপর নাযিল হয়। তখন তিনি আমাকে এই বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে দিলেন না এবং স্পষ্টভাবে আমাকে নবী উপাধি দিলেন। কিন্তু এভাবে যেএক দিক থেকে নবী আর এক দিক থেকে উম্মতি।” (হাকীকাতুল ওহী, পৃষ্ঠা ১৪৯-১৫০)

৩. এখন শুধুমাত্র মুহাম্মদী নবুয়ত ছাড়া সকল নবুওয়ত বন্ধ হয়ে গেছে। কোন শরীয়ত বাহক নবী আসতে পারবে না। এবং শরীয়তবিহীন নবী হতে পারবেকিন্তু সেই পারবে যে প্রথমে উম্মতী হবে। এই দিক থেকে আমি উম্মতীও এবং নবীও। (তাজাল্লিয়াতে ইলাহিয়া, পৃষ্ঠা ২৫)

অন্যান্য উত্তর