আপত্তি: কুরআন ধরাপৃষ্ঠ থেকে উঠে গিয়েছিল
আপত্তি: হযরত মির্যা সাহেব লিখেছেন, কুরআন ধরাপৃষ্ঠ থেকে উঠে গিয়েছিল। আমি হাদীসের বক্তব্যনুযায়ী তা উর্ধ্বোলোক থেকে নিয়ে এসেছি। (রুহানী খাযায়েন ৩/৪৯৩)
উত্তর: হযরত মির্যা সাহেব যেহেতু এস্থলে হাদীসের বরাতে কথা বলেছেন তাই এ বিষয়ে কেবল দু’টি হাদীস উল্লেখ করাই যথেষ্ট হবে। “মিশকাতুল মাসাবী’র কিতাবুল ইলমের একটি হাদীস এখানে উল্লেখ করলেই হযরত মির্যা সাহেবের বক্তব্য অনুধাবন করা সহজ হবে। হাদীসটি নিম্নরূপ মিশকাত শরীফের হাদীস:
“মানুষের উপর এমন এক সময় আসবে, যখন ইসলামের কেবল নাম এবং কুরআনের শুধু অক্ষরগুলো অবশিষ্ট থাকবে। তাদের মসজিদগুলো বাহ্যিকভাবে আরম্বরপূর্ণ হবে, কিন্তু হেদায়াতপূন্য থাকবে। তাদের আলেমগণ আকাশের নিম্নস্থ সকল সৃষ্টজীবের মাঝে নিকৃষ্টতম জীব হবে। তাদের মাঝ থেকে নৈরাজ্য মাথাচাড়াদিবে এবং তাদের মধ্যেই তা ফিরে যাবে।” (বায়হাকী, মিশকাত)।
প্রথমত: এখানে স্পষ্টভাবে হুযুর(সা.) বলেছেন, এক যুগ আসছে যখন ইসলামের কেবল নাম অবশিষ্ট থাকবে, এর প্রকৃত মর্ম ও শিক্ষা অবশিষ্ট থাকবে না। দ্বিতীয়ত: ধরাপৃষ্ঠ থেকে কুরআনের মর্ম ও প্রকৃত শিক্ষা উবে যাবে অবশিষ্ট থাকবে কেবল এর অক্ষরগুলো অর্থাৎ এর উচ্চারণ নিয়ে মানুষ ব্যতিব্যস্ত থাকবে। মসজিদগুলো সুরম্য অট্টালিকা হবে এবং বাহ্যত জনাকীর্ণও হবে কিন্তু সেগুলো হবে হেদায়াতপূণ্য। তখন অনেক আলেম থাকবে, কিন্তু তারা হবে মানুষের বানানো এবং মানুষের স্বীকৃত উলামা। মহানবী(সা.) এ হাদীসে বলেছেন, আকাশের চামড়ার তলে তারা হবে নিকৃষ্টতম জীব। তাদের প্রধানতম লক্ষণ হবে, তাদের কাছ থেকে নৈরাজ্য ছড়াবে এবং তাদের মাঝেই তা ফিরে যাবে।
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা সাব্যস্ত হয়, শেষযুগে তথাকথিত আলেমদের কাছে ইসলাম থাকলেও তা হবে কেবল পুঁথিগত ও প্রথাগত একটি বিষয়। আর পবিত্র কুরআনের অক্ষরগুলো ঠিক থাকলেও এর তত্ত্ব ও মর্ম মানুষ উপলব্ধি করবে না।
হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) যে যুগে আগমন করেছিলেন এই হাদীসটি হুবহু সেই যুগের চিত্রায়ন করছে। সে যুগের কবি, সাহিত্যিক ও দার্শনিক সবাই একথা অকপটে স্বীকার করেছেন। আর আজকের যুগের কথা বললে তো এ বিষয়ে কারও দ্বিমতই থাকতে পারে না। কুরআন উঠে যাবে বলতে এদিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে।
‘আর হাদীসের বক্তব্য অনুযায়ী তা আমি পৃথিবীতে নিয়ে এসেছি‘– এই বক্তব্যের অর্থ হল, মির্যা সাহেব শেষযুগের প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষ হয়ে সেই হারানো ঈমানকে পুনরায় পৃথিবীতে নিয়ে এসেছেন। এটিই শেষ যুগের প্রত্যাদিষ্ট মহাপুরুষের জন্য নির্ধারিত কাজ ছিল। নিচের হাদীসটি পড়লে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হয়ে যাবে।
আবু হুরায়রা(রা.) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন- আমরা নবী (সা.)-এর কাছে বসেছিলাম। এ অবস্থায় তাঁর প্রতি নাযিল হল সূরা জুমুআ, যার একটি আয়াত হল- “এবং তাদের অন্তর্ভুক্ত অন্য আরেক দলের মাঝেও যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি” (সূরা জুমুআ, আয়াত ০৪)। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘হে আল্লাহর রসূল! তারা কারা (যাদের মাঝে আপনার আসার কথা)?’ তিনবার জিজ্ঞেস করা সত্ত্বেও তিনি কোন উত্তর দিলেন না। আমাদের মাঝে সালমান ফারসী (রা.)-ও উপস্থিত ছিলেন। আল্লাহর রসূল সালমান(রা.)-এর ওপর হাত রেখে বললেন, ঈমান সুরাইয়া নক্ষত্রের চলে গেলেও এদের এক বা একাধিক ব্যক্তি তা ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। (বুখারী: কিতাবুত তাফসীর)
হযরত মির্যা সাহেব পারস্য বংশোদ্ভূত সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ হবার দাবিদার। তিনি এ জগত থেকে বিলুপ্ত ঈমানকে পুনরুদ্ধার করার জন্য এসেছেন। তার মৃত্যুর পর তার খলীফাগণও সেই কাজই অব্যাহত রেখেছেন। অতএব হাদীসের ভবিষ্যদ্বাণী তদনুযায়ী তিনি ঈমানকে এবং কুরআনের হারানো জ্ঞানকে উদ্ধার করে গেছেন।
আপত্তি করতে লাইসেন্স লাগে না। কিন্তু প্রশ্ন শুধু একটাই। আল্লাহ্ এবং মুহাম্মদ(সা.) যা বলেছেন মির্যা সাহেব যদি তদনুযায়ীই কথা বলে থাকেন তাহলে এ বিষয়ে আর কোন কথাই থাকতে পারে না। হযরত মির্যা সাহেব বলছেন, কুরআনের শিক্ষা উঠে গেছে। ‘আল্লামা’ আব্দুল মজিদের আপত্তি হল, একথা কীভাবে মির্যা সাহেব বলতে পারেন, আমাদের কুরআন তো উঠে যায় নি। মহানবী(সা.) হাদীসে যে বলেছেন, পবিত্র কুরআন শুধু অক্ষরে থাকবে এর মর্ম থাকবে না। আর বুখারী শরীফের হাদীসে যে মহানবী(সা.) বলেছেন ঈমান উঠে যাবে – মির্যা সাহেব শুধু মহানবী(সা.) এর ভবিষ্যদ্বাণীকৃত সেই যুগকে চিহ্নিত করে দেখিয়েছেন। এটি কুরআন বা ইসলামের অবমাননা নয় বরং এটি মহানবী(সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা যা এক শ্রেণীর আলেম-উলামা হীন স্বার্থ চরিতার্থে মানতে চান না।
অন্যান্য উত্তর
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রসূল (সা.)-কে হেলাল এবং নিজেকে বদর আখ্যা দিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন, তার সিংহাসন সবার ওপরে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নিজেকে দরুদ শরীফের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন ইয়ালাস খোদাতা’লার নাম
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের উপর অন্য ভাষায় ইলহাম হল কেন?
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেছেন, মাহদীর মাধ্যমে মহানবী (সা.) এর দ্বিতীয় আগমন হবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নতুন নবুয়্যত, ধর্ম, কিবলা, নামায এবং কুরআন বানিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের কথা- একটি নতুন বাহন আবিষ্কার হবে যা আগুন দ্বারা চলবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, কুরআনে তাঁর নাম ইবনে মরিয়ম রাখা হয়েছে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রেশমী লুঙ্গি পরিধান করেছিলেন যা হারাম