আপত্তি: স্বপ্নে দেখলাম, আমি খোদা এবং বিশ্বাস করলাম
আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন “স্বপ্নে দেখলাম, আমি খোদা এবং বিশ্বাস করলাম আসলেই তাই। (রুহানী খাযায়েন ৫/৫৬৪)” অর্থাৎ মির্যা সাহেব আল্লাহর অবমাননা করেছেন, নাউযুবিল্লাহ।
আপত্তির উত্তর: হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) রচিত ‘আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম’ গ্রন্থের ৫৬৪ নম্বর পৃষ্ঠার আরবী অংশে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.) একটি স্বপ্নের উল্লেখ করেছেন। চলুন, প্রথমে তাঁর লেখা আরবী অংশের অনুবাদটি দেখে নেয়া যাক। তিনি (আ.) বলেন,
‘আমি স্বপ্নে নিজেকে আল্লাহ্ হিসাবে দেখেছি এবং দৃঢ় প্রত্যয় জন্মাল আমিই তিনি। আর আমার নিজস্ব কোন ইচ্ছা, চিন্তা বা আচরণ অবশিষ্ট থাকল না, আর আমি কানায় কানায় পরিপূর্ণ একটি পাত্রের মত হয়ে গেলাম বরং এমন একটি বস্তুর মত হয়ে গেলাম যাকে আরেক সত্তা বগলদাবা করে এমনভাবে নিজের মাঝে লুকিয়ে ফেলেছে যার ফলে তার নিজস্ব কোন অস্তিত্ব বা গন্ধ বলে কিছুই রইল না আর সে তাঁর মাঝে বিলিন হয়ে গেল…’
‘…আর আমার আল্লাহ্-রূপে নিজেকে দেখার অর্থ হচ্ছে কায়ার দিকে ছায়ার প্রত্যাবর্তন। খোদা-প্রেমিকদের সাথে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটেই থাকে। এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা হল, আল্লাহ যখন কোন মঙ্গল সাধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেন তখন যেভাবে তাঁর ইচ্ছা পরিকল্পনা ও প্রজ্ঞা চায়, সেভাবে তা পূর্ণ করার লক্ষে আমাকে তাঁর উদ্দেশ্য ও একত্ববাদের বিকাশস্থলে পরিণত করেন। সৎকর্মশীল, কুতুব ও সিদ্দীকদের সাথে তিনি এ ধরনেরই আচরণ করে থাকেন।’ (‘আয়েনায়ে কামালাতে ইসলাম’ পৃষ্ঠা: ৫৬৪)
হযরত মির্যা সাহেব শেষে গিয়ে বলছেন,
“এই ঘটনার মাধ্যমে আমি ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ’ (সর্বেশ্বরবাদ) মতবাদে বিশ্বাসীদের ধারণাকে বুঝাই না আবার এর মাধ্যমে আমি ‘হুলুলিয়্যিন’ (অর্থাৎ আক্ষরিকভাবে খোদা কারো মাঝে প্রবিষ্ট হয়ে যান এমন) মতবাদে বিশ্বাসীদের ধারণাকেও বুঝাচ্ছি না বরং এ ঘটনাটি ঠিক তেমনই যেমনটি মহানবী(সা.)-এর একটি হাদীসে বর্ণিত হয়েছে অর্থাৎ নফল ইবাদতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে বুখারী শরীফে যে হাদীসটি বর্ণিত হয়েছে-সে কথাই বুঝিয়েছি।”
পাঠকবৃন্দ, এ পুরো বিষয়টি হযরত মির্যা সাহেবের স্বপ্নে দেখা একটি দৃশ্য। হযরত মির্যা সাহেব তার দেখা স্বপ্ন তুলে ধরেছেন এবং এর পাশাপাশি এর সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অর্থ ও ব্যাখ্যাও প্রদান করেছেন। স্বপ্নের দৃশ্যকে ভিত্তি করে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) নিজেকে কোথাও আল্লাহ্ বলে ঘোষণা দেন নি বরং তিনি নিজেকে আল্লাহ্র শক্তি ও পরিকল্পনার বিকাশস্থল হিসেবে বর্ণনা করেছেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে তিনি একটি কানায় কানায় পরিপূর্ণ পাত্র হিসাবে উপস্থাপন করেছেন যার নিজের কোন ইচ্ছা বা বাসনা অবশিষ্ট নেই। নিজেকে আরেক অস্তিত্বের পূর্ণাঙ্গীণ অধীনস্থ হিসাবে উল্লেখ করেছেন, যেভাবে কোন বস্তুকে কেউ পূর্ণরূপে আয়ত্বে নিয়ে নেয়। আর এটি স্পষ্ট করার জন্য তিনি ‘বগলদাবা’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন। আর শেষে গিয়ে নিজেকে আল্লাহ্র অস্তিত্বে বিলীন এক ইবাদতকারী বান্দা হিসেবে উল্লেখ করে বুখারী শরীফের সেই বিখ্যাত হাদীসটির প্রতি ইঙ্গিত করেছেন, যে হাদীসে নফল ইবাদতের মাহাত্ম্য ও শ্রেষ্ঠত্ব বর্ণিত হয়েছে। এ হাদীসের উল্লেখ করে তিনি স্বপ্নের ব্যাখ্যাটি নির্দিষ্ট করে দিয়েছেন। সেই হাদীসটি হল,
হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদীস। তিনি বলেন, রসূলুল্লাহ্(সা.) বলেছেন: আল্লাহ্ তা’লা বলেন, …আমার বান্দা নফল ইবাদত করতে করতে আমার নৈকট্য অর্জন করতে থাকে। এমন কি অবশেষে আমি তাকে আমার এত প্রিয় বানিয়ে নেই যেন আমি তার কান হয়ে যাই যা দিয়ে সে শোনে। আমি তার চোখ হয়ে যাই, যা দিয়ে সে দেখে। আর আমি তার হাত হয়ে যাই, যা দিয়ে সে ধরে। আমি তার পা হয়ে যাই, যার মাধ্যমে সে হাঁটে…’ (বুখারী, কিতাবুর রিকাক, বাবুত তাওয়াযু‘; ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃক অনুদিত বুখারী শরীফের ১০ম খ-, পৃষ্ঠা-৭৩ হাদীস নম্বর- ৬০৫৮ দ্রষ্টব্য)।
সম্মানিত পাঠক! আল্লাহ্কে ভয় করে বলুন, এ লেখার মাঝে মির্যা সাহেব আল্লাহ্ হবার দাবি করেছেন নাকি আল্লাহ্র সত্তায় বিলীন এক নগণ্য বান্দা হবার দাবি করেছেন? আল্লাহ্ স্বপ্নযোগে তাঁর প্রিয় বান্দাকে যে দৃশ্য দেখান তার জন্য কি বান্দাকে দায়ী করা যেতে পারে? যদি স্বপ্নে দেখা দৃশ্যাবলি সম্পর্কে এদেশের আলেম-উলামার আপত্তি থেকে থাকে তাহলে আমাদের বিনীত প্রশ্ন, সূরা ইউসুফের শুরুতেই উল্লেখ আছে,
হযরত ইউসুফ(আ.) স্বপ্নে দেখেছিলেন, এগারটি তারা এবং চন্দ্র-সূর্য তাকে সেজদা করছে (সূরা ইউসুফ: ৫)
সকল মুসলমান জানে, সেজদা কেবল আল্লাহ্কেই করা যায়। বলুন, হযরত ইউসুফ (আ.) কি তবে খোদা হবার তথা উপাস্য হবার দাবি করেছেন? কক্ষনো না! একথা সবাই জানে, হযরত ইউসুফ (আ.)-এর স্বপ্নটির একটি গভীর তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাখ্যা রয়েছে।
অতএব, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-ও তার স্বপ্নের মাধ্যমে খোদা হবার দাবি করেন নি বরং খোদার মহান অস্তিত্বের পক্ষ থেকে এই স্বপ্নে সূক্ষ্ম একটি ভবিষ্যদ্বাণী জানানো হয়েছে।
মূলত এই স্বপ্নের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লা জানিয়েছেন,
হে গোলাম আহমদ! তুমি তোমার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার মাধ্যমে আমার এত নৈকট্য লাভ করেছ, যার ফলে, তুমি আমার মহান অস্তিত্বের বিকাশস্থলে পরিণত হয়ে গেছ। আমি আমার ইচ্ছা ও পরিকল্পনা এ যুগে তোমার মাধ্যমে বাস্তবায়ন করব।
আর বাস্তবে তা-ই হয়েছিল। স্বপ্নের ব্যাখ্যা সম্বলিত ইবনে সিরিন (রহ.)-এর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ তা’বীরুর রুইয়া-এ মানবীয় রূপে আল্লাহ্কে প্রত্যক্ষ করার অর্থ দেয়া আছে। এই গ্রন্থানুযায়ী এ ধরনের দৃশ্য দেখার অর্থ হল, আধ্যাত্মিক উন্নতি ও ঐশী সমর্থন লাভ হবে।
আমরা নিশ্চিত আপত্তিকারীরা মির্যা সাহেবের বইটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পড়েছেন। আহমদীদের বিষয়ে তার মন্তব্য একথাই প্রমাণ করে। আপত্তিকারীরা উদ্ধৃত পুস্তকের ৫৬৪ নম্বর পৃষ্ঠা পড়েছেন আর ৫৬৬ নম্বর পৃষ্ঠা পড়েননি এটি হতেই পারে না। নিশ্চয়ই তারা পড়ে থাকবেন। সেক্ষেত্রে পৃষ্ঠা নম্বর ৫৬৪-এর ভগ্নাংশ উল্লেখ করে বাকি অংশটুকু জনসমক্ষে উল্লেখ না করা ইচ্ছাকৃতভাবে জনগণকে বিভ্রান্ত করা নয় কি?
অন্যান্য উত্তর
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রসূল (সা.)-কে হেলাল এবং নিজেকে বদর আখ্যা দিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন, তার সিংহাসন সবার ওপরে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নিজেকে দরুদ শরীফের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন ইয়ালাস খোদাতা’লার নাম
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের উপর অন্য ভাষায় ইলহাম হল কেন?
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেছেন, মাহদীর মাধ্যমে মহানবী (সা.) এর দ্বিতীয় আগমন হবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নতুন নবুয়্যত, ধর্ম, কিবলা, নামায এবং কুরআন বানিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের কথা- একটি নতুন বাহন আবিষ্কার হবে যা আগুন দ্বারা চলবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, কুরআনে তাঁর নাম ইবনে মরিয়ম রাখা হয়েছে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রেশমী লুঙ্গি পরিধান করেছিলেন যা হারাম