আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, আমি (আল্লাহ্) চোরের মত গোপনে আসবো
আপত্তি : মির্যা সাহেব বলেন, আমি (আল্লাহ্) চোরের মত গোপনে আসব। (রুহানী খাযায়েন ২০/৩৯৬)”- “আল্লামা আপত্তি করে বলেছেন, মহান আল্লাহকে চোরের সাথে তুলনা করে কাদিয়ানী সাহেব কোন মর্যাদা রক্ষা করতে গেলেন? গোপনে আসা কি চোর ছাড়া অন্য কোন উপমা দিয়ে বোঝানো যেত না?
উত্তর: আপত্তিটির প্রথম উত্তর হল, একথাটি মির্যা সাহেবেরই নয়। এটি আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রাপ্ত একটি ইলহাম । অতএব ‘আল্লামা’-র উচিৎ আপত্তিটি আল্লাহর কাছে উত্থাপন করা। কিন্তু তিনি যদি এটিকে সত্য ইলহাম হিসেবে মনে না করেন, তাহলে মুসলমান হিসেবে তাকে এ কথা বিশ্বাস করতেই হবে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপকারী ভণ্ডদের শাস্তি দিতে এবং ধ্বংস করার জন্য আল্লাহই যথেষ্ট । এটি যদি মির্যা সাহেবের মনগড়া কোন কথা হত, আর আল্লাহ্ যদি এটিকে নিজের জন্য অপমানজনক কোন বিষয় বলে মনে করতেন তাহলে তিনিই মির্যা সাহেবকে ধ্বংস করার ব্যবস্থা করতেন। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তা’লা বলেন,
“আর সে যদি কোন কথাকে মিথ্যা বানিয়ে আমাদের প্রতি আরোপ করত তাহলে নিশ্চয় আমরা তাকে ডান হাতে ধরতাম এবং আমরা অবশ্যই তার জীবন শীরা কেটে দিতাম। তখন তোমাদের কেউই তাকে রক্ষা করতে পারত না।“ (সূরা আল হাক্কা: ৪৫-৪৮)
আমরা যারা মুসলমান, আমরা জানি ও ঈমান রাখি, হযরত মুহাম্মদ(সা.) সত্যবাদী নবী ও রসূল ছিলেন। আমরা জানি তিনি (সা.) ৪০ বছর বয়সে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে প্রত্যাদিষ্ট হবার দাবী করেন আর ৬৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। মহানবী(সা.) তাঁর প্রথম ওহী লাভ করার পর ২৩ বছর জীবন লাভ করেছিলেন। মুসলমান আলেমগণ এই মানদণ্ডটিকে আহলে কিতাবদের সামনে মহানবী(সা.)-এর সত্যতার প্রমাণ হিসাবে উপস্থান করে আসছেন যুগ যুগ ধরে। আল্লাহ্ তা’লা চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, তোমাদের কেউ মিথ্যা দাবীদারকে আমার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের নির্ভরযোগ্য একটি গ্রন্থ শারাহ্ আকায়েদ নাসফীতে লেখা আছে, নবী ছাড়া অন্য কারো মাঝে এসব বৈশিষ্ট্য পাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহ তা‘লার প্রতি মিথ্যা আরোপ করার পরও আল্লাহ্ তাকে ২৩ বছর ছাড় দিবেন— এটিও একেবারে অসম্ভব‘ (মাবহাসুন নাবুওয়াত পৃষ্ঠা, ১০০)।
এরপর তিনি মানদণ্ড হিসেবে ২৩ বছর কেন নিলেন এর ব্যাখ্যা করতে গিয়ে উক্ত শারাহ আকায়েদ নাসফীতে লিখেন, ‘নিশ্চয় মহানবী(সা.) যখন আবির্ভূত হয়েছেন তখন তার বয়স ছিল ৪০ বছর আর যখন তিনি ইন্তেকাল করেছেন তখন তার বয়স ছিল ৬৩ বছর।‘ (মাবহাসুন নাবুওয়াত পৃষ্ঠা, পৃষ্ঠা ৪৪৪)
তাই নিরপেক্ষ দৃষ্টিতে আল্লাহ্ তা’লা নির্ধারিত এই মানদণ্ডে চলুন মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-কে যাচাই করে দেখি। মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) ১৮৮০ সালের আগ থেকেই আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে শরীয়ত বিহীন ওহী ও ইলহাম প্রাপ্তির দাবী করেন। আর এ দাবী তিনি বারাহীনে আহমদীয়া পুস্তকে প্রকাশ করে দেন। আর সফল জীবন কাটিয়ে তিনি ইন্তেকাল করেছেন ১৯০৮ সনে। অর্থাৎ মির্যা সাহেব ইলহাম প্রাপ্তির দাবী করার পর ২৮ বছরেরও বেশী জীবন লাভ করেছেন। অতএব পবিত্র কুরআনের এই আয়াত অনুযায়ী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.) তার দাবীতে সত্য প্রমাণিত হন।
অনেকে খোদার উপর খোদকারী করতে গিয়ে বলে ফেলেন, এমন তো অনেকেই করতে পারে এবং ২৩ বছর জীবন লাভ করতে পারে। যারা এমন কথা বলেন তাদেরকে বলছি, আল্লাহকে ভয় করুন। আমাদের আল্লাহ্ এখনও তেমনই ক্ষমতার অধিকারী যেমনটি তিনি মুহাম্মদ(সা.)-এর সময় ছিলেন। এমন বক্তব্য খোদার বিরুদ্ধে চরম ধৃষ্টতা ছাড়া আর কিছু নয়। এক্ষেত্রে আমাদের চ্যালেঞ্জ শুনুন! পৃথিবীতে এমন কোন মিথ্যা দাবীদার দেখাতে পারবেন না যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা ওহী ও ইলহাম আরোপ করে আল্লাহ্ নির্ধারিত ২৩ বছর জীবন লাভ করেছে। নবুয়্যতের মিথ্যা দাবীদার অনেকেই গত হয়েছেন, যেকোন একটি উদাহরণ দেখান যে আল্লাহর পক্ষ থেকে ওহী ও ইলহাম লাভের মিথ্যা দাবী করেও ২৩ বছর জীবন পেয়েছে। অসম্ভব, কখনও এমনটি হতে পারে না। কেননা আল্লাহ্ তা’লা যিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী তিনি বলেছেন, আল্লাহ্ তা’লার প্রতি মিথ্যারোপকারীকে আল্লাহ নিজে ধ্বংস করে দেন। অতএব হৃদয়ের চোখ উন্মুক্ত করে দেখুন এই আয়াত কীভাবে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী(আ.)-এর সপক্ষে সত্যতার প্রমাণ দিয়ে যাচ্ছে।
কিন্তু আল্লাহ্ মির্যা সাহেবকে ধ্বংস না করে পদে পদেউল্টো তাকে এবং তার জামাতকে সাহায্য ও বিজয় দান করে প্রমাণ করে দিয়েছেন মির্যা সাহেব মিথ্যাচার করেন নি, বরং এটি আল্লাহর পক্ষ থেকেই ইলহাম করা হয়েছে।
এ কথা সর্বজন বিদিত, উপমা দেয়ার ক্ষেত্রে সর্বদাই কোন একটি গুণ বা বৈশিষ্ট্যকে লক্ষ্য করে উপমা দেয়া হয়। যেমন, কাউকে যদি বাঘের বাচ্চা” বলে উপমা দেয়া হয় তাহলে এর দ্বারা কেবল বাঘের বীরত্বের গুণের দিকেই ইঙ্গিত করা হয়, অন্যান্য নেতিবাচক বিষয় যেমন, এর হিংস্রতা বা এর পশুত্ব এতে ধর্তব্য হয় না। কেউ যদি বাঘের বাজে দিকগুলোকে মাথায় এনে চিন্তা করে তাহলে এটিও গালির পর্যায়ে পড়তে পারে। একইভাবে অন্যান্য উপমা ও তুলনার বিষয় যাচাই করা কর্তব্য। কাউকে ‘গামা’ বা ‘রুস্তম’ পাহলওয়ান বললে সে আনন্দিত হয় ঠিকই কিন্তু সে যদি বংশ পরিচয় বা বাপের পরিচয় পাল্টে দেয়ার কথাটি ভাবে তাহলে উপমা প্রদানের মূল উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে।
লক্ষ্য করুন, আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে সূরা বাকারার ২৪৬ নম্বর আয়াতে “কে আছে যে আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিবে যেন তিনি তার জন্য এটিকে বহুগুণে বাড়িয়ে দেন?” এ আয়াতে কি আল্লাহ্ তা’লা নিজেকে অভাবী সাব্যস্ত করছেন? না, বরং ঋণগ্রহিতা হিসেবে এখানে আল্লাহর একটি বিশেষ দিক তুলে ধরা হচ্ছে। ঋণ যেমন মানুষ ফিরে পায়, তেমনই তোমরাও অর্থাৎ আল্লাহর পথে অর্থ-সম্পদ ব্যয়কারীরাও আল্লাহর পথে ব্যয়কৃত সম্পদ অবশ্যই ফেরৎ পাবে। কেবল একথা বোঝানোর জন্য ঋণ প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
ঠিক একইভাবে, হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, “হাশরের মাঠে আল্লাহ তার কোন এক বান্দাকে উদ্দেশ্য করে বলবেন, “আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম– তোমরা আমাকে খাবার দাও নি, আমি পিপাসার্ত ছিলাম– তোমরা আমাকে পানি পান করাওনি, আমি নগ্ন ছিলাম তোমরা আমাকে বস্ত্র দাও নি, আমি অসুস্থ ছিলাম– তোমরা আমাকে সেবা কর নি।” (মুসলিম, অধ্যায়: আল-বিররু ওয়াস-সিলাহ ওয়াল আদাব, অনুচ্ছেদ: ফাযলি ইয়াদাতিল-মারীয)
‘আল্লামা’, এখন বলুন উপরোক্ত হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ নিজের সম্বন্ধে কি এগুলোর চেয়ে ভাল কোন উপমা খুঁজে পান নি? ক্ষুধার্ত আর পিপাসার্ত হবার কথা না হয় বাদই দিলাম, কিন্তু তৃতীয় উপমাটি বাহ্যিক অর্থে আল্লাহর ঘোরতর অবমাননা নয় কি? অথচ সবার জানা কথা, আল্লাহ তা’লা উপরোক্ত সমস্ত দোষ দুর্বলতা থেকে সম্পূর্ণ পবিত্র।
ঠিক একইভাবে চোরের মত সংগোপনে আসার উদাহরণ আল্লাহ্ এজন্যই দিয়েছেন, চোর একেবারে নীরবে নির্জনে আর নিভৃতে আসে এবং পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে সংগোপনে আসে। সবার অলক্ষ্যে আসার নাম হল চোরের মত আসা। উপরোক্ত উদাহরণ দিয়ে এটিই বুঝানো হয়েছে, এর চেয়ে বাড়তি কিছু নয়। সংগোপনে অকস্মাৎ ঐশী নিদর্শনাবলীর প্রকাশিত হবার বিষয়টিকে এভাবে বলা হয়েছে মাত্র।
অন্যান্য উত্তর
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রসূল (সা.)-কে হেলাল এবং নিজেকে বদর আখ্যা দিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন, তার সিংহাসন সবার ওপরে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নিজেকে দরুদ শরীফের মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করেছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেব লিখেছেন ইয়ালাস খোদাতা’লার নাম
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের উপর অন্য ভাষায় ইলহাম হল কেন?
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেছেন, মাহদীর মাধ্যমে মহানবী (সা.) এর দ্বিতীয় আগমন হবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব নতুন নবুয়্যত, ধর্ম, কিবলা, নামায এবং কুরআন বানিয়েছেন
- আপত্তি: মির্যা সাহেবের কথা- একটি নতুন বাহন আবিষ্কার হবে যা আগুন দ্বারা চলবে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব বলেন, কুরআনে তাঁর নাম ইবনে মরিয়ম রাখা হয়েছে
- আপত্তি: মির্যা সাহেব রেশমী লুঙ্গি পরিধান করেছিলেন যা হারাম