ইসলাম

اِنَّ الدِّیۡنَ عِنۡدَ اللّٰہِ الۡاِسۡلَامُ ۟ وَ مَا اخۡتَلَفَ الَّذِیۡنَ اُوۡتُوا الۡکِتٰبَ اِلَّا مِنۡۢ بَعۡدِ مَا جَآءَہُمُ الۡعِلۡمُ بَغۡیًۢا بَیۡنَہُمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّکۡفُرۡ بِاٰیٰتِ اللّٰہِ فَاِنَّ اللّٰہَ سَرِیۡعُ الۡحِسَابِ

নিশ্চয় আল্লাহ্‌র নিকট ইসলামই পরিপূর্ণ দীন। এবং যাদেরকে কিতাব দেওয়া হয়েছিল, তাদের নিকট জ্ঞান আসার পরই পরস্পর বিদ্বেষবশতঃ তারা মতভেদ করল এবং যে-ই আল্লাহ্‌র নিদর্শনাবলীকে অস্বীকার করে সে জেনে রাখুক নিশ্চয় আল্লাহ্‌ হিসাব গ্রহণে তৎপর ।

(সূরা আ লে ‘ইমরান: ২০)

আল্ হাদীস

عَنِ ابْنِ عُمَرَ ـ رضى الله عنهما ـ قَالَ قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ بُنِيَ الإِسْلاَمُ عَلَى خَمْسٍ شَهَادَةِ أَنْ لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ وَأَنَّ مُحَمَّدًا رَسُولُ اللَّهِ، وَإِقَامِ الصَّلاَةِ، وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، وَالْحَجِّ، وَصَوْمِ رَمَضَانَ ‏

ইবনু উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি: সাক্ষ্য প্রদান করা, আল্লাহ্ ছাড়া কোন উপাস্য নেই এবং মুহাম্মদ আল্লাহ্‌র রাসূল, নামাজ কায়েম করা, যাকাত আদায় করা, হাজ্জ (হজ্জ) করা এবং রামাজানে রোজা রাখা।

(বুখারী, কিতাবুল ঈমান; হাদীস নম্বর: ০৭)

অমৃতবাণী

প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.) বলেন:

ইসলাম কী জিনিস? সেই জ্বলন্ত অগ্নি, যা আমাদের হীন ও তুচ্ছ জীবনকে ভস্মীভূত করে এবং আমাদের মিথ্যা উপাস্যগুলিকে দগ্ধ করে সত্য ও পবিত্র আরাধ্য মাবূদের সম্মুখে আমাদের প্রাণ, আমাদের ধনসম্পদ ও আমাদের সম্ভ্রমের কুরবানী উপস্থিত করে। এহেন উৎসে প্রবেশের ফলে আমরা এক নতুন জীবন সুধা পান করি এবং আমাদের সকল আধ্যাত্মিক শক্তি খোদার সাথে এমনভাবে সম্পর্কযুক্ত হয়ে যায়, যেমন এক আত্মীয় অন্য আত্মীয়ের সাথে গভীর যোগসূত্রে আবদ্ধ। বিদ্যুতের আগুনের ন্যায় এক আগুন আমাদের অভ্যন্তর হতে বের হয় আর এক আগুন উর্ধ্বলোক হতে আমাদের ওপর নিপতিত হয়। এই দুই অগ্নি-শিখার সম্মিলনে আমাদের যাবতীয় আগ্রহ, আকাঙ্ক্ষা এবং আল্লাহ্ ছাড়া যাবতীয় অন্য জিনিষের প্রেম ভস্মীভূত হয়। আমাদের প্রথম জীবনের মৃত্যু হয়। পবিত্র কুরআন অনুযায়ী এই অবস্থার নামই হল, ইসলাম।

(ইসলামী নীতি দর্শন, পৃ: ৯৭)

ইসলাম মানে ফরমাবরদারী এবং আনুগত্য, শান্তি বা সম্পূর্ণ আত্মসমর্পণ। ইসলাম খোদার জন্য ফানা বা বিলীন হয়ে যাওয়া, খোদার ইচ্ছায় নিজের ইচ্ছাকে বিলীন করিয়া দেওয়ার নাম ই ইসলাম। নিশ্চয় আল্লাহ্‌র নিকট ইসলাম ই পরিপূর্ণ দীন। (আ লে ‘ইমরান: ২০)

আজ আমি তোমাদের জন্য তোমাদের দ্বীনকে পরিপূর্ণ করিলাম এবং তোমাদের উপর আমার নেয়ামতকে সম্পূর্ণ করিলাম, এবং ইসলামকে তোমাদের জন্য দ্বীনরূপে মনোনীত করিলাম। (আল্‌-মায়েদা: ৪)

সকল ধর্মই আল্লাহ্‌র একত্ব এবং তাহার কাছে পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের ধারনা পরিপূর্ণতা লাভ করিয়াছে। কারন পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণের পূর্বশর্ত হইলে আল্লাহ্‌ তা’লার গুণাবলীর পরিপূর্ণ প্রকাশ ঘটিয়াছে, এত পরিপূর্ণভাবে পূর্বে তাহা ঘটে নাই। অতএব সকল ধর্মের মধ্যে একমাত্র ‘ইসলাম’ ই সঠিক অর্থে দাবী করিতে পারে, ইহাই আল্লাহ্‌র নিজস্ব ধর্ম। আসলে সকল সত্য ধর্মই প্রকৃত পক্ষে, আংশিকভাব ইসলাম ছিল এবং অনুসারিগণও আক্ষরিক অর্থে মুসলমান ছিলেন। কিন্তু যে পর্যন্ত ধর্ম সকল দিক হতে পরিপূর্ণতা লাভ করে নাই, সে পর্যন্ত ইহা ইসলাম নাম প্রাপ্ত হয় নাই। যখন ধর্মের সকল আনুষাঙ্গিক ও সংশ্লিষ্ট বিষয়বলী সমন্বিত করিয়া কুরআনের মাধ্যমে শেষ ঐশীবিধানের পরিপূর্ণতা দেওয়া হইল, তখনই আল্লাহ্‌ তা’লা ইহাকে ‘আল-ইসলাম’ নামে অভিহিত করিলেন। কুরআন স্পষ্ট ভাষায় ঘোষণা করিতেছে যে ইসলামই একমাত্র ধর্ম, যাহা আল্লাহ্‌র গ্রহণযোগ্য। ইহুদী, খৃষ্টান, সাবিয়ান বা অন্য যে কোন ধর্মেরই হওক না কেন, যদি আল্লাহ্‌তে ও আখেরাতে তাহাদের অটল ও অকপট বিশ্বাস থাকে এবং সত্য ধর্মের (ইসলামের) সারবস্তু সৎকর্মশীলতাকে জীবনের অবলম্বন করে তাহা হইলে পরিণামে তাহাদের কোনও ভয়ের কারণ নাই এবং তাহারা দুঃখে নিপতিত হইবেনা। ইসলাম স্বীয় অনুসারিদিগকে নির্দেশ দিতেছে যে, তাহারা যেন সর্বকালের, সর্বজাতির, সর্বদেশের ও সর্বসম্প্রদায়ের নবীগণকেই বিনা ব্যতিক্রমে স্বীকৃতি দান করে। ইহা ইসলামকে অন্যান্য সকল ধর্মের উপর শ্রেষ্ঠত্ব ও মাহাত্ব দান করিয়াছে। ইসলামের প্রধান উদ্দেশ্য ‘ফানা’ (আত্মবিলীন অবস্থা), আল্লাহ্‌র কাছে সম্পূর্ণরূপে আত্মসমর্পণ দ্বারা ইহাই বুঝায় যে, আমাদের সমস্ত শক্তি, সামর্থ্য, দেহ-মন, এবং আমাদের যাহা কিছু আছে সবকিছু আল্লাহ্‌র কাছে সমর্পন করিয়া একমাত্র তাহারই সেবায় ন্যাস্ত করা। এই অবস্থায় ‘ফানা’ বা মৃত্যু, যাহা একজন সত্যিকার মুসলমান নিজের উপর আনয়ন করিয়া লয়। সে সৎ কর্মে সর্বদা নিয়োজিত থাকে। ‘বাকা’ বা পুনুরুজ্জীবনের অবস্থার দিকে ইঙ্গিত করিতেছে, কেননা যখন কোন ব্যাক্তি আল্লাহ্‌র ভালবাসায় নিজেকে বিলীন করিয়া দেয় এবং তাহার পার্থিব আশা-আকাঙ্খা ও কামনা বাসনা সব নির্বাপিত হইয়া যায় এবং এক প্রকার মৃত্যুবরন করে। যেমন আঁ-হযরত (সা.) বলিয়াছেন, মৃত্যু বরণ করার পূর্বে মৃত্যু বরণ কর, এই মৃত্যুর পর তাহাকে এক নব জীবন দান করা হয় যাহাকে ‘বাকা’ নামে অভিহিত করা হয়। তখন সে আল্লাহ্‌র জন্যই বাঁচে এবং মানুষের সেবায় আত্ম-নিয়োগ করে। উচ্চতম অবস্থা ‘লেকা’ বুঝাইতেছে, যেখানে সে আল্লাহ্‌র সাথে মিলিত হয়। এই শেষ অবস্থার অপর নাম ‘নাফ্‌স মুতমায়িন্নাহ্‌’ (শান্তি-প্রাপ্ত আত্মা)। (আল্‌ ফাজর: ২৮) ইসলাম নিজেকে সম্পূর্ণভাবে নিখুঁত ও পূর্ণতম ধর্ম বলিয়া দাবী করে, ইহা সম্পুর্ণ সত্য। কিন্তু তাই বলিয়া, অন্য ধর্মগুলির সত্য এবং সৎ গুণাবলীকে অকপটে স্বীকার করিতে কুন্ঠা বোধ করে না। ইসলামের উদ্দেশ্য আল্লাহ্‌র সহিত শান্তি প্রতিষ্ঠা। ইসলামের অন্য অর্থ সৃষ্ট জীবের সহিত শান্তি। সৃষ্ট জীবের সহিত শান্তি রাখিতে হইলে ইসলাম গ্রহণ আবশ্যক। সুতরাং ইসলাম শান্তির ধর্ম, শান্তিই ইহার কাম্য, শান্তি নিকেতন বা ‘দারুস সালাম’ ইহার মুখ্য উদ্দেশ্য এবং ইহার নবী বিশ্বশান্তির দূত।

প্রবন্ধ

আত্মহত্যা

ইসলামী খেলাফতশূন্য মুসলমানদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য

ইসলামে খেলাফতের গুরুত্ব ও কল্যাণ

বল প্রয়োগ করে ইসলাম প্রচার করা নিষিদ্ধ

প্রত্যহ দরূদ শরীফ পাঠের বরকত এবং তওবা ও এস্তেগফার

রূপক বর্ণনার অন্তরালে

এক মুসলমান অপর মুসলমানের ভাই

আত্মহত্যা ইসলামে নিষিদ্ধ

ইসলামের ইতিহাস

ইসলামের নামে সন্ত্রাস

পূণ্যের মূল শিকড় তাক্‌ওয়ায় নিহিত

সাম্প্রদায়িকতা এবং বিশ্ব শান্তি

ইসলাম সাম্য মৈত্রী ও শান্তির ধর্ম

মু’মিন মুত্তাকীর পরিচয়

ইসলামী জিহাদের মর্মকথা

একমাত্র সার্বজনীন ধর্ম আলইসলাম

ধর্মহীন মানুষ ভয়ঙ্কর জীব

অস্ত্রের জোরে ইসলাম প্রচারিত হয় নাই

জাহান্নাম সম্পর্কে কিছু কথা

ধর্ম ও বিশ্বাসের স্বাধীনতা: শান্তির ভিত্তি

ইসলামে নির্দেশিত পথ কোনটি?

ইসলাম প্রত্যেকের স্বাধীনতা ও শান্তি নিশ্চিত করে

পুস্তক