ইসলামী প্রতীকসমূহের ব্যবহার আহ্‌মাদী ফিরকার জন্য আইনতঃ নিষিদ্ধ হওয়া উচিত কি?


মাসিক মদীনা’র জানুয়ারী-২০০০ খৃ.-এর সংখ্যায় জেহাদ উদ্দীন তারেক কর্তৃক লিখিত “কাদিয়ানী কর্তৃক ইসলামের প্রতীকসমূহের ব্যবহারঃ আইনের বক্তব্য” শিরোনামের একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হইয়াছে। প্রবন্ধ-লেখক তাহার প্রবন্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের আইনের উদ্ধৃতিসমূহ উল্লেখ করায় উহা একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনী দলিলরূপে অনেক পাঠকের নিকট বিবেচিত হওয়া স্বাভাবিক। এই কারণে উক্ত প্রবন্ধে উল্লেখিত বিভিন্ন বিষয়ের ব্যাখ্যা জানিবার প্রয়োজন হইলে অথবা লেখকের কোনও বক্তব্য পাঠকের নিকট ভ্রান্ত বা অযৌক্তিক বিবেচিত হইলে উত্তরের জন্য উহা লেখকের সমীপে উপস্থাপিত করা সমীচীন বিধায় উক্তরূপ প্রয়োজনে এই প্রবন্ধে বিজ্ঞ আইন
বিশারদ জনাব জেহাদ উদ্দীন তারেক সমীপে কতগুলি আরয পেশ করিতেছি। ‘মাসিক মদীনা’র মাননীয় সম্পাদক আমার এই প্রবন্ধ তাহার পত্রিকায় প্রকাশ করিবার জন্য প্রয়োজনীয় উদারতা ও মহানুভবতার অধিকারী হইলে ইহায় মাসিক মদীনা’ই পাঠাইতাম। কিন্তু, আমার আরযসমূহ উহাতে প্রকাশিত হইবার সম্ভবনা নাই বিধায় ‘মাসিক মদীনায় ইহা প্রেরিত হইল না।

১ | বিজ্ঞ আইনবিদ জনাব তারেক সাহেব তাহার প্রবন্ধে উল্লেখ করিয়াছেন যে, শুধু কাদিয়ানী কেন, পৃথিবীর কোনও অমুসলমান-ই ইসলাম ও মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীকসমূহ ব্যবহার করিতে পারে না। মুসলমানরাও অন্যান্য ধর্মের প্রতীকসমূহ ব্যবহার করিবে না। এস্থলে বিজ্ঞ লেখকের নিকট আমার বিনীত প্রশ্নঃ

(ক) লেখকের মতে পৃথিবীর মুসলিমনামধারী বিভিন্ন সম্প্রদায়, ফের্কা ও দল-উপদলের মধ্য হইতে বিভিন্ন সম্প্রদায়, ফের্কা ও দল-উপদলের মধ্য হইতে কোন কোন সম্প্রদায়, ফেরকা ও দল-উপদল অমুসলিম বলিয়া বিবেচিত? এস্থলে আমি পৃথিবীর বিপুলসংখ্যক মুসলিমনামধারী ফের্কা অথবা দল-উপদলের মধ্য হইতে এইরূপ কতগুলি ফের্কা ও দল-উপদলের নাম উল্লেখ করিতেছি- যাহাদের প্রত্যেক ফের্কা বা দল-উপদল অন্যান্য মুসলমানের অন্ততঃ একটি ফের্কা বা দল-উপদলের ফতোয়া অনুযায়ী কাফির ও অমুসলিম। উক্তরূপ কয়েকটি ফের্কা ও দল-উপদলের নাম নিম্নরূপঃ দেওবন্দী; বেরেলুবী: শীআ ইসনা আশারিয়াঃ ইসমাঈলী বা আগাখানী শীআ; ইরানের আয়াতুল্লাহ্‌ রূহুল্লাহ্‌পন্থী শীআ, আহলে হাদীস সম্প্রদায়; সায়্যিদ আবুল-আলা মওদূদী কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত জামাআতে ইসলামী ওহাবী ও দেওবন্দী ফের্কা। কুফরী ফতোয়াপ্রাপ্ত অতীত যুগের অসংখ্য মুসলিম মনীষী, ফাকীহ ও ইমামের মধ্য হইতে অতি অল্প কয়েক জন ব্যক্তির নামঃ- ইমাম আবু হানীফা, মুহাম্মাদ আল ফাকীহ যুনূনূন মিস্রী আহমাদ রাওয়ান্দী; ইবনে হান্নান, মানসূর হাল্লাজ; ইমাম গাযযালী শেখ আবুল হাসান শাযলী; বুখারী শরীফের সংকলক ইমাম বুখারী। উপরোক্ত ফেরকাসমূহ এবং ব্যক্তিগণ ব্যতীত বাংলাদেশের দেওয়ানবাগী পীর সাহেব ও তাহার অনুসারীগণ এবং সারা পৃথিবীর ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী (=Secularist) মুসলমানগণও বিরুদ্ধবাদী পীর মাশায়েখের ফতোয়া অনুযায়ী কাফির। যাহারা ক্ষমতায় গিয়া আল্লাহর-আইন যেমনঃ চুরি, ব্যভিচার ইত্যাদি অপরাধের জন্য আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত শাস্তির বিধান- জারী করে না, তাহারা ও এবং যাহারা বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম-প্রধান দেশে ক্ষমতাসীন হইবার পর এ পর্যন্ত আহমাদী সম্প্রদায়কে সরকারীভাবে অমুসলিম ঘোষণা করতঃ তাহাদের সকল তৎপরতা ও কর্মকান্ড বেআইনী করিয়া দেয় নাই এবং তাহাদিগকে মৃত্যুদন্ড দেয় নাই, তাহারাও আলেম এবং পীর-মাশায়েখের ফতোয়া অনুযায়ী কাফির। বিজ্ঞ আইনবিদ তারেক সাহেবের নিকট বিনীত প্রশ্ন- উপরোক্ত সম্প্রদায়, ফেরকা, দল-উপদল, সরকার, সরকারী সাবেক মন্ত্রীগণ, বর্তমান মন্ত্রীগণ এবং অতীত যুগের উপরোক্ত ইমামগণ ও তাঁহাদের ভক্ত-অনুসারীগণের জন্য ইসলামী প্রতীকসমূহের ব্যবহার আইনতঃ নিষিদ্ধ হওয়া উচিৎ নহে কি? আপনি মাসিক মদীনা পত্রিকায় উত্তর জানাইলে-ই কৃতজ্ঞ হইব। উত্তর জানাইয়া কৃতজ্ঞ করিবেন। এস্থলে একটি প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন আপনার সমীপে উত্থাপন করিবার অবকাশ রহিয়াছে। উহা এই যে, বাংলাদেশের যে সকল সাবেক সরকার এবং যে বর্তমান সরকার আহমাদী সম্প্রদায়কে আইনতঃ নিষিদ্ধ করে নাই অথবা উক্ত সম্প্রদায়ের লোকদিগকে হত্যা করে নাই, ভবিষ্যতে বাংলাদেশে কোনও ইসলামী সরকার কায়েম হইলে কি উক্ত সাবেক সরকারসমূহ ও বর্তমান সরকারের অন্ততঃ মন্ত্রীদিগকে কতল করা ভবিষ্যৎ সেই ইসলামী সরকারের জন্য কর্তব্য হইবে? আর এইরূপ কতলের শাস্তি চলিতে চলিতে দেওয়ানবাগীসহ কাহাদের পর্যন্ত গিয়া ঠেকিবে? অথবা উহা আদৌ কোথাও ঠেকিবে না, বরং উহা অব্যাহতভাবে চলিতে-ই থাকিবে, থাক সে প্রশ্ন। তবে আপনি উত্তর দিলে আমরা খুশী-ই হইব; অখুশী হইব না।

(খ) মুসলমানের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা কী? ১৯৫৩ খৃষ্টাব্দের পাঞ্জাব দাঙ্গা তদন্ত আদালতের সুবিজ্ঞ বিচারপতিগণ বিভিন্ন বিশিষ্ট আলেমের নিকট “মুসলমান”-এর সংজ্ঞা জানিতে চাহিয়া যে অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছিলেন, উহার ভিত্তিতে তাহারা দুঃখের সহিত তদন্ত-রিপোর্টে মন্তব্য করিয়াছিলেন যে, “মুসলমান”-এর সংজ্ঞা বর্ণনায় আমরা মাত্র দুই জন আলেমের মধ্যেও মতৈক্য দেখিতে পাই নাই। তদন্ত আদালত যা বলে, বলুক। বিজ্ঞ আইনবিদ জনাব তারেক সাহেবের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন- সারা পৃথিবীর সকল আলেম না হউক, অন্ততঃ বাংলাদেশের কয়েক লক্ষ আলেমের মধ্য হইতে মাত্র কয়েক শত আলেম কি “মুসলমান”-এর একটি সুনির্দিষ্ট সর্বসম্মত সংজ্ঞা বর্ণনা করিতে পারেন? যদি তাহারা পারেন, তবে আপনি তাহাদের নিকট হইতে উহা সংগ্রহ করতঃ মাসিক মদীনা’য় প্রকাশ করুন: কারণ, আপনি অমুসলিমদের জন্য ইসলামী প্রতীকসমূহের ব্যবহার আইনতঃ নিষিদ্ধ হইবার দাবী তুলিয়াছেন। তবে আমি আগে-ই আপনার খেদমতে আরয করিয়া রাখিতেছি-আপনি যে সংজ্ঞা “মাসিক মদীনায় প্রকাশ করিবেন, উহার বিরুদ্ধে কেহ কুরআন মাজীদ অথবা সহীহ হাদীছের আলোকে কোনও প্রশ্ন করিলে উহার কুরআন-হাদীছ ভিত্তিক উত্তর দেওয়াও আপনার কর্তব্য হইবে। এজন্য আপনাকে অবশ্য-ই প্রস্তুত থাকিতে হইবে। অবশ্য সংজ্ঞাটি কুরআন-হাদীছ-সম্মত হইলে উহাকে নিশ্চয়-ই সানন্দে লুফিয়া লওয়া হইবে।

(গ) উম্মুল-মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা), বড়পীর হযরত আবদুল-কাদির জীলানী, সূফীকুল-শিরোমনি হযরত মুহিয়্যুদ্দীন ইবনে আরাবী, ইমাম আব্দুল-ওয়াহ্হাব শা’রাণী, দেওবন্দ মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা কাসেম নানুতুবী, মাওলানা আবদুল-হাই লাখনবী, মেশকাত শরীফের শরাহ-লেখক মোল্লা আলী আল-কারী এবং ইমামে রব্বানী মুজাদ্দেদে আলফেছানী হযরত সায়্যিদ আহমদ সারহেদী-ইহারা সকলে রসূলে কারীম মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সঃ)-কে খাতামুন্নাবিয়্যীনও মানিতেন এবং তাহার পর তাহার শরীআতের অধীন নবীর আগমনের পথ উন্মুক্ত রহিয়াছে বলিয়াও বিশ্বাস করিতেন। তাহাদের বর্ণনায় অথবা তাহাদের গ্রন্থাবলীতে তাহাদের উক্ত আকীদা অত্যন্ত স্পষ্টরূপে বিবৃত রহিয়াছে। এমতাবস্থায় বিজ্ঞ লেখক তারেক সাহেবের সমীপে আমার বিনীত প্রশ্ন-উপরোল্লেখিত ব্যক্তিগণ “মুসলমান”-এর সংজ্ঞা অনুযায়ী কি মুসলমান ছিলেন, উত্তর দিয়া কৃতজ্ঞ করিবেন। আল্লাহ আপনাকে পুরস্কৃত করিবেন। এস্থলে জনাব তারেক সাহেবের খেদমতে আরেকটি আরয । মাওলানা আশরাফ আলী থানবী তাহার নাশরুত তীব ফী যিকরিন্নাবিয়্যিল-হাবীব’ নামীয় গ্রন্থে এবং মাওলানা মুফতী শফী তাঁহার খতমে নুবুউওয়াত গ্রন্থে হযরত আনাস (রা) হইতে বর্ণিত একটি দীর্ঘ হাদীছের এই অংশটিও বর্ণনা করিয়াছেনঃ নাবী উহা মিনহা এই উম্মাতের-অর্থাৎ উম্মাতে মুহাম্মাদিয়াঃর -নবী এই উম্মাতের মধ্য হইতে-ই হইবেন।” উক্ত উভয় ব্যক্তি-ই তাহাদের উপরোক্ত গ্রন্থদ্বয়ে উক্ত হাদীছকে সহীহ ও গ্রহণীয় হাদীছ রূপে স্থান দিয়াছেন। এস্থলে আমার প্রশ্ন-উক্ত লেখকদ্বয় উপরোক্ত হাদীছ ও উহাতে বর্ণিত বিষয়কে সহীহ্ মনে করা সত্ত্বেও তাহারা রসূলে কারীম (সঃ)-এর পর তাহার উম্মাতের মধ্য হইতে তাহার শরীআতের অধীন নবী-র আগমনের পথ বন্ধ বলিয়া বিশ্বাস করিতেন। তাহাদের উক্ত বিশ্বাস এবং উক্ত হাদীছকে তাহাদের সহীহ মনে করা কি পরস্পর-বিরোধী আকীদা নহে?

(ঘ) ইস্লাম ও মুসলমানদের স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীকসমূহ কী কী সবগুলি না হউক অন্ততঃ উদাহরণস্বরূপ কতগুলি প্রতীক উল্লেখ করুন। আলেম সমাজ ইসলামী পরিভাষা নাম দিয়া মাঝে মাঝে কতগুলি আরবী শব্দ উল্লেখ করিয়া থাকেন। যেমনঃ ইসলাম, মুসলিম কাফির, মাসজিদ, আযান, মুআযযিন, সলাত, সওম, যাকাত, হাজ্জ্‌, কলেমা, কুরআন, আল্লাহ্‌, মুহাম্মদ, নবী, রসূল, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদি।

এস্থলে বিজ্ঞ লেখক জনাব তারেক সাহেবের সমীপে আমার বিনীত প্রশ্ন—এ সকল শব্দের ব্যবহার শুধু মুসলমানদের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া দিয়াছেন কে? আল্লাহ্-রসূল অথবা অন্য কেহ, আরও কথা আছে। আপনার মতে অমুসলিমগণ কি নিজেদের জন্য “আল-হাক্ক’ বা ‘সত্য’-এই শব্দদ্বয়কে ব্যবহার করিবার অধিকার রাখে, অন্য কথায় বলা যায়-একজন ত্রিত্ববাদী খৃষ্টান কি “আমি সত্যের অনুসারী” অথবা “আমি সত্য ধর্মের অনুসারী”-এই কথা বলিবার অধিকার রাখে? খৃষ্টান পাদরীগণ তাহাদের ত্রিত্ববাদের ধর্মকে ‘সত্য ধর্ম’ বলিয়া মুসলিম জাহানসহ দুনিয়াময় প্রচার করিয়া বেড়াইতেছে। এক্ষেত্রে তাহাদের উক্তরূপ প্রচার-কে আইনতঃ নিষিদ্ধ ঘোষণা করা কি
মুসলিম শাসকগণের জন্য যরূরী নহে?

(ঙ) ইসলামী আইনের মূল উৎস কুরআন-সুন্নাহ। একজন মুসলমান শুধু  কুরআন-সুন্নাহ হইতে গৃহীত আইনকে জারী করিবার জন্য দাবী জানাইতে পারে। যে আইন কুরআন-সুন্নাহ-বিরোধী, তাহা জারী করিবার দাবী কোনও মুসলমান জানাইতে পারে না। যে আইন কুরআন সুন্নাহয় বর্ণিত হয় নাই আবার উহা কুরআন-সুন্নাহর বিরোধীও নহে, সে আইন মানা মুসলমানের জন্য ফরয নহে। এস্থলে বিজ্ঞ লেখক জনাব তারেক সাহেবের কাছে আমার বিনীত প্রশ্ন- তথাকথিত ইসলামী পরিভাষা ও প্রতীক ব্যবহারের অধিকার অমুসলিমগণ রাখে না -এ আইন উপরোক্ত তিন শ্রেণীর মধ্য হইতে কোন শ্রেণীর আইন?

(২) জনাব তারেক সাহেব তাহার প্রবন্ধে পৃথিবীর বিভিন্ন ধর্মনিরপেক্ষ দেশের কোম্পানী-আইনের উল্লেখ করতঃ বর্ণনা করিয়াছেন যে, যুক্তি ও আইনের দৃষ্টিতে প্রত্যেক ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসায়িক কোম্পানীর জন্য এবং উহাতে উৎপন্ন পণ্যের জন্য এইরূপ স্বাতন্ত্র্যসূচক নির্দিষ্ট প্রতীক রাখিবার অধিকার রহিয়াছে- যাহা অন্য কোনও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক কোম্পানী ব্যবহার করিবার অধিকার রাখিবে না। অনুরূপভাবে ধর্মের ক্ষেত্রেও প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের জন্য এইরূপ স্বাতন্ত্র্যসূচক নির্দিষ্ট প্রতীক বা প্রতীকসমূহ রাখিবার অধিকার রহিয়াছে – যাহা অন্য কোনও ধর্মের অনুসারীগণ ব্যবহার করিতে পারিবে না- ব্যবহার করিবার অধিকারও রাখিবে না। জনাব তারেক সাহেবের মতে আহ্‌মাদী সম্প্রদায় যেহেতু মুসলিম নহে, তাই অন্যান্য অমুসলিম সম্প্রদায়ের ন্যায় আহমাদী সম্প্রদায়ও মুসলমানদের জন্য নির্ধারিত স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীকসমূহ ব্যবহার করিবার
অধিকার রাখে না।

এস্থলে আইন-বিশেষজ্ঞ জনাব তারেক সাহেবের সমীপে আমার কয়েকটি বিনীত প্রশ্ন রহিয়াছেঃ

প্রথম প্রশ্ন-যে আইনটিকে আপনি অবশ্য পালনীয় আইনরূপে প্রয়োগ করিতে চাহেন, তাহাতে কুরআন মাজীদ অথবা সহীহ হাদীছে বর্ণিত থাকা জরুরী। আপনার আইনটি কি কুরআন মাজীদ অথবা সহীহ হাদীছে বর্ণিত রহিয়াছে? আপনি বলিতে পারেন-

‘সব আইন কুরআন মাজীদ অথবা সহীহ্ হাদীছে বর্ণিত থাকা যরূরী নহে, বরং যে আইন যুক্তির কষ্টিপাথরের যাচাইয়ে টিকে, উহাও পালনীয় আইন হয়। আর উপরোক্ত আইন যেহেতু যুক্তির বিচারে অত্যন্ত সঙ্গত তাই উহাও অবশ্য প্রযোজ্য ও অবশ্য পালনীয় আইন’।

আপনার উক্ত সম্ভাব্য উত্তরের পর্যালোচনায় কিছু কথা আছে । প্রথম কথা এই যে, যে ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি আপনার মতে ইসলামের দৃষ্টিতে জঘন্যরূপ ইসলাম বিরোধী অতএব অবশ্য-বজ্জনীয়, সেই ধর্ম নিরপেক্ষতার অনুসারী পাশ্চাত্য দেশসমূহ কর্তৃক উদ্ভাবিত ও প্রবর্তিত বৈষয়িক ব্যাপার সম্পর্কিত আইনের দৃষ্টান্ত টানিয়া আনিয়া উহাকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে প্রয়োগ করাকে যক্তিসঙ্গত মনে করেন কী রূপে? দ্বিতীয় কথা এই যে, যুক্তির বিচারে বৈষয়িক ব্যাপারে একটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান বা ব্যবসায়িক কোম্পানী অথবা একজন প্রতিদ্বন্দ্বী ব্যক্তি নিজের জন্য শুধু এতটুকু স্বাতন্ত্র্যসূচক নাম অথবা প্রতীক অথবা উভয়বিধ চিহ্নকে নির্দিষ্ট ও সংরক্ষিত করিয়া লইবার অধিকার রাখে- যাহা তাহার নিজের প্রকৃত স্বাতন্ত্র্যটকু প্রকাশ করিবার জন্য যথেষ্ট এবং যাহা অন্যের প্রকৃত স্বাতন্ত্র্যকে প্রকাশ করায় বাধা না দেয় । উদাহরণস্বরূপ বলা যায়- কোনও দেশের শিল্প-প্রতিষ্ঠান বিশেষ ধরনের কম্পিউটার নির্মাণ করিল। এ ক্ষেত্রে সেই শিল্প-প্রতিষ্ঠানটি দাবী করিতে পারে না যে, অন্য কোনও শিল্প প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার নির্মাণ করিলে সে উহাকে কম্পিউটার নাম দিতে পারিবে না এবং সে কম্পিউটার ক্ষেত্রে পূর্বোক্ত শিল্প প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ব্যবহৃত নাম ব্যবহার করিবার এবং উহাদিগকে নির্মাণে প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশসমূহের পরস্পর সংযোজন করিবার আইনগত অধিকার পাইবে না এবং সে কম্পিউটার নির্মাণ করিলে নিজে উহা ব্যবহার করিতে অথবা বাজারে উহা বিক্রয় করিতে পারিবে না।’

তাহার উক্তরূপ দাবী যৌক্তিক বিচারে এবং আইনের বিচারে সম্পূর্ণতঃ প্রত্যাখ্যানযোগ্য : – তবে সে নিজের কারখানায় নির্মিত কম্পিউটারকে স্বাতন্ত্র্যসূচক কোনও বিশেষণে বিশেষিত করিয়া-যেমনঃ প্রস্তুতকারী কোম্পানীর নামের সহিত সংশ্লিষ্ট করিয়া অথবা কোনও প্রতীক ব্যবহার করিয়া—উহাকে নিজে ব্যবহার ও বাজারে বিক্রয় করিতে পারে। যৌক্তিক বিচারে শুধু উপরোক্তরূপ স্বাতন্ত্র্যটুকু পাইবার অধিকার সকল ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের রহিয়াছে।

এখন দেখা যাক- বৈষয়িক ব্যাপার সম্পর্কিত উপরোক্ত যুক্তি ও আইনকে ধর্মীয় ক্ষেত্রে এবং ব্যাপকতর অর্থে চিন্তা জগতের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করিলে আমরা কী ফল লাভ করিতে পারি?

প্রত্যেক মানুষ যে-কোনও মতবাদ এবং যে কোনও ধর্মমত পোষণ পালন ও প্রচার করিবার অধিকার রাখে। কোনও যুক্তি এবং কোনও আইন তাহার উক্ত অধিকার কাড়িয়া লইতে পারে না- কাড়িয়া লইবার অধিকার রাখে না। ধর্মজগত ও চিন্তাজগতের ক্ষেত্রে বৈষয়িক ব্যাপার সম্পর্কিত পূর্বোল্লেখিত যুক্তি ও আইনকে প্রয়োগ করিবার কালে আমাদিগকে মানুষের উক্ত ধর্মীয় ও মননগত স্বাধীনতাকে অবশ্যই অক্ষুন্ন রাখিতে হইবে। ভাষার ব্যবহারের অধিকার বায়ুর ব্যবহারের অধিকারের ন্যায় অবারিত। কোনও মানুষ অথবা মানব-গোষ্ঠী যেরূপে বায়ুর ব্যবহারকে শুধু নিজের জন্য অথবা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া লইবার অধিকার রাখে না, কোনও মতবাদ বা ধর্মমতের অনুসারী ব্যক্তি অথবা সম্প্রদায়ও সেইরূপে কোনও ভাষাকে, ভাষার শব্দসম্ভারকে বা ভাষার বিশেষ বিশেষ কতগুলি শব্দকে শুধু নিজের জন্য অথবা নিজেদের জন্য নির্দিষ্ট করিয়া লইয়া অপরের জন্য উহার ব্যবহার নিষিদ্ধ করিয়া লইবার অধিকার রাখে না । আর সে সেরূপ অধিকার রাখিবেই বা কীরূপে? আরবী “ইসলাম” শব্দটির অর্থ- আত্মসমর্পণ, শান্তিপ্রদান এবং (উক্ত অর্থ হইতে) আল্লাহ্আতালার নিকট আত্মসমর্পণমূলক এবং সকল সুস্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সত্যের নিকট আত্মসমর্পণমূলক শান্তিময় একটি ধর্ম। ইসলাম শব্দ হইতে গঠিত কর্তৃবাচ্যার্থক বিশেষ্য ও বিশেষণ পদ “মুসলিম”। যুদ্ধক্ষেত্রে অন্যায় ও অসত্যের অনুসারী পক্ষ ন্যায় ও সত্যের অনুসারী পক্ষের নিকট আত্মসমর্পণ করিলে প্রথমোক্ত পক্ষের উক্ত কার্য্যকে আরবীতে ‘ইসলাম’ এবং উক্ত পক্ষকে মুসলিম বলা যায়-বলা হয়ও । জনাব তারেক সাহেব বলিতে পারেন- উক্তরূপ ব্যবহার ইসলাম শব্দকে উহার বু্যুৎপত্তিগত অর্থে ব্যবহার। পারিভাষিকভাবে উহাকে কেহ বিশেষ ধর্ম ছাড়া অন্য কোনও অর্থে ব্যবহার করিবার অধিকার রাখে না।’ বলি- ‘ইসলাম’ শব্দকে আপনি বিশেষ পারিভাষিক অর্থে ব্যবহার
করেন বলিয়া অন্যেরা তাহাদের বিশেষ পারিভাষিক অর্থে উহাকে ব্যবহার করিবার অধিকার হারাইবে কেন? যদি কেহ উক্ত শব্দকে “আল্লাহ তাআলার প্রতি আনুগত্যমূলক এবং তাহার ধারণা অনুযায়ী সকল সুস্পষ্ট ও গুরুত্বপূর্ণ সত্যের প্রতি আনুগত্যমূলক ধর্ম” অর্থে ব্যবহার করে, তবে উক্তরূপ ব্যবহার নিষিদ্ধ ও বেআইনী হইবে কোন যুক্তিতে? কোনও ব্যক্তি কুরআন মাজীদে বর্ণিত ইসলামকে গ্রহণ করিবার পর উহা ত্যাগ করিলে আপনি তাহাকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া ন্যায় ও সত্য মনে করেন।

পক্ষান্তরে, অন্য কোনও ব্যক্তি নিজে কুরআন মাজীদে বর্ণিত ইসলামকে মহাসত্য বলিয়া দৃঢ় ঈমান রাখিলেও ইসলামত্যাগী ব্যক্তিকে মৃতু্যদণ্ড অথবা অন্য কোনরূপ শাস্তি প্রদানকে কুরআন বিরোধী জঘন্য অন্যায় ও জঘন্য অসত্য মনে করে। আপনার কাছে যাহা মহাসত্য ও মহানায্য অন্যের কাছে তাহা কুরআনবিরোধী জঘন্য অন্যায় ও জঘন্য মিথ্যা। আপনার ন্যায় ও সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করা অর্থাৎ উহাকে ন্যায় ও সত্য বলিয়া মান্য করা। ‘ইসলাম’ অথবা ইসলামী বিধানের প্রতি আনুগত্য নামে অভিহিত হইবার অধিকার রাখিলে অন্যের ন্যায় ও সত্যের কাছে আত্মসমর্পণ করা অর্থাৎ উহাকে ন্যায় ও সত্য বলিয়া মান্য করা ‘ইসলাম’ অথবা ইসলামী বিধানের প্রতি আনুগত্য নাম অভিহিত হইবার অধিকার রাখিবে না কেন?

পূর্ণ ধর্মটির ক্ষেত্রেও ঐ এক-ই কথা প্রযোজ্য। আল্লাহ, মুহাম্মদ (সঃ), কুরআন, কলেমা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ, সালাত, সওম, যাকাত, হাজ্জ, মাসজিদ, আষান ইত্যাদি শত শত-বরং হাযার হাযার- শব্দ ও বাক্যের ব্যবহারের ক্ষেত্রে এবং উহা দ্বারা প্রকাশিত আচার আচরণ পালনের ক্ষেত্রেও ঐ এক-ই কথা প্রযোজ্য।

হ্যাঁ! এবার আমরা স্বাতন্ত্র্যসূচক ধর্মীয় প্রতীক বিষয়ে আলোচনা করিব। জনাব তারেক সাহেবের ধর্মমত এবং তাহার বিরুদ্ধবাদীদের ধর্মমত-বিরুদ্ধবাদীদের ধর্মমতের নাম ইসলাম হউক অথবা অন্য যাহা-ই হউক- এতদুভয়ের মধ্যে স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীক অথবা প্রতীক সমূহ বর্তমান থাকা জরুরী। হ্যাঁ! জরুরী-ই তো বটে। তবে, তারেক সাহেবকে স্মরণ করাইয়া দেই- আধ্যাত্মিক জগতের প্রতীক জড়ীয় নহে, বরং আধ্যাত্মিক-ই হইয়া থাকে- আধ্যাত্মিক হওয়া-ই যুক্তিযুক্ত। আধ্যাত্মিক প্রতীককে জড়ীয় চক্ষু দ্বারা নহে, বরং জ্ঞান-বুদ্ধি তথা আধ্যাত্মিক চক্ষু দ্বারা দর্শন করিতে হয়। জনাব তারেক সাহেব আধ্যাত্মিক প্রতীক দেখিতে গিয়া শুধু বিভিন্ন
কোম্পানীর কম্পিউটারের স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীক দেখিবার জন্য প্রয়োজনীয় চর্মচক্ষুকে যথেষ্ট মনে করিলে ঠকিবেন।

ধর্ম জগতের স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীকের পরিচয় সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় ভূমিকা শেষ। এবার স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীকের কথা বলিতেছি। প্রত্যেক ধর্মমতের অনুসারীগণ এক বা
একাধিক স্বতন্ত্র আকীদা বিশ্বাস পোষণ এবং তদনুযায়ী স্বতন্ত্র কার্য করিয়া থাকে। উহা ই তাহাদের স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীক বা প্রতীক সমূহ। আর এই স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীক বা প্রতীকসমূহের সন্ধানলাভ-ই তোঁ আমাদের সূক্ষ্ম পর্য্যালোচক আইনজ্ঞ জনাব জেহাদ উদ্দীন তারেক সাহেবের অতীব কাম্য বস্তু। খৃষ্টান, রাহুদী, পৌত্তলিক, বৌদ্ধ, অগ্নি উপাসক, প্রকৃতি-পূজারী, জৈন, ইরানের খোমেনীপন্থী শীআ ইসমাঈলী শীআ, খারেজী, রাফেযী, মু’তাযিলা, দেওবন্দী, বেরেলুবী, ওহাবী, বেদআতী, মাওদূদী পন্থী জামাআতে ইসলামী, দেওয়ান বাগী পন্থী আশেকীনে রসূল, সুন্নী, গায়ের সুন্নী, আহমাদী, গায়ের আহমাদী-প্রত্যেকে-ই স্ব স্ব স্বাতন্ত্র্যসূচক আকীদা-বিশ্বাসের প্রতীক দ্বারা স্বতন্ত্র। সেই স্বতন্ত্র প্রতীক দেখিয়া জনাব তারেক সাহেব প্রত্যেককে চিনিয়া লইবেন এবং প্রয়োজনে গোমরাহী হইতে আত্মরক্ষা করিবেন।

প্রকৃতপক্ষে জনাব তারেক সাহেবরা প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায়কে উহার স্বতন্ত্র আধ্যাত্মিক প্রতীক দেখিয়া চিনিয়াও থাকেন। আর চিনিয়া থাকেন বলিয়া-ই তো তাহারা কুরআন মাজীদে বর্ণিত ইসলামকে কায়েম করিবার উদ্দেশ্যে নহে, বরং তাহাদের নিজস্ব পর-মত-অসহিষ্ণু তথা কথিত ইস্লামকে যুক্তির ঘোরে নহে, বরং গায়ের যোরে কায়েম করিবার উদ্দেশ্যে কখনওবা দেওয়ানবাগী পন্থীদের উপর, কখনওবা (পাকিস্তানে) শীআদের উপর, কখনওবা আহমাদীদের উপর এবং কখনওবা অন্য কোনও ভিন্নমতাবলম্বী ধর্মীয় সম্প্রদায়ের উপর বর্বর হামলা চালাইয়া থাকেন।

আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন- কে কুরআন মাজীদের প্রকৃত শিক্ষার অনুসারী মুসলমান আর কে শুধু উহার শিক্ষার অনুসারী হইবার দাবীদার মুসলমান কিন্তু উহার প্রকৃত শিক্ষার অনুসারী মুসলমান নহে– তাহা কে নির্ধারণ করিবে?

জনাব তারেক সাহেব বলিতে পারেন-মুসলমান নামধারী সম্প্রদায়সমূহের মধ্য হইতে যে সম্প্রদায় সংখ্যাগরিষ্ঠ, সেই সম্প্রদায়-ই উহা নির্ধারণ করিবে। নির্ধারণ করিবার অধিকার একমাত্র তাহারা-ই রাখে।

এ ক্ষেত্রে জনাব তারেক সাহেব সমীপে আমার নিবেদন এই যে, রসূলে কারীম (সঃ) তাঁহার উম্মাতের চরম আধ্যাত্মিক অবক্ষয়ের যুগে তাহাদের তেহাত্তর ফেরকায় বিভক্ত হইবার কথা বর্ণনা করিবার পর এবং তেহাত্তর ফের্কার মধ্য হইতে একটি মাত্র ফের্কা ছাড়া সকল ফের্কার লোকদের জাহান্নামী হইবার কথা বর্ণনা করিবার পর ‘কোন ফের্কা নাজী ফের্কা অর্থাৎ দোযখে যাওয়া হইতে মুক্তি লাভকারী জান্নাতী ফেরকা হইবে’—সাহাবীগণের এই প্রশ্নের উত্তরে ‘সংখ্যাগরিষ্ঠ ফেরকা জান্নাতী হইবে’

-একথা না বলিয়া বরং বলিয়াছিলেন, “আমি এবং আমার সাহাবীগণ যে পথে আছি- সেই পথের অনুসারীগণ নাজী ফের্কা।” ইমাম মাহদী (আঃ)-এর যুগেও প্রথম দিকে তাহার অনুসারীগণের অন্যান্য মুসলমানের তুলনায় সংখ্যালঘু হইবার কথা রহিয়াছে। সকল নবী-র যুগেই প্রথম দিকে তাহাদের অনুসারীগণ সংখ্যালঘিষ্ঠ এবং অতি দুর্বল ছিল। এখন আমাদের আইন বিশেষজ্ঞ জনাব তারেক সাহেব বলুন- সে সকল যুগের সংখ্যা-লঘিষ্ঠ মু’মিনগণ সত্যপন্থী ও সত্যের অনুসারী নামে এবং তাহাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ বিরুদ্ধবাদীগণ যাহারা নিজদিগকে সত্যের অনুসারী এবং মু’মিনদিগকে ‘গোমরাহ ও সত্য-বিরোধী’  নামে অভিহিত করিত– “গোমরাহ ও
মিথ্যার অনুসারী নামে অভিহিত হইতে পারিবে কিনা । জনাব তারেক সাহেব! ধর্মের ব্যাপারটি প্রকৃত-ই স্বাধীনতার ব্যাপার। এখানে অন্যের ধর্মীয় স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ না করিয়া প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোনও ধর্মমত পোষণ, পালন ও প্রচার করিবার নৈতিক ও যৌক্তিক অধিকার রাখে। অন্যের কাছে তাহার ধর্মমত মিথ্যা ও বাতিল বলিয়া বিবেচিত হইলেও তাহাকে উক্ত অধিকার হইতে বঞ্চিত করিবার অধিকার আপনার, আমার বা অন্য কাহারও নাই। আমি আমার ধর্মমতের নাম কী রাখিব, আমি আমার ধর্মীয় কার্যকলাপ ও অনুষ্ঠানাদিকে কোন নামে অভিহিত করিব এবং আমি আমার ধর্মীয় বিষয়াদিতে কী প্রতীক ব্যবহার করিব, তাহা নির্ধারণ
করিবার মালিক আপনি নহেন বরং আমি এবং শুধু আমি। ভ্রান্ত কিন্তু আপনাকেও আমি বলিতে পারি- যেমন আপনি আমাকে ভ্রান্ত বলিতে পারেন। আর ইসলাম, মুসলমান প্রভৃতি পরিভাষা ও প্রতীকসমূহ ব্যবহার পরিত্যাগ করিবার জন্য আপনাকেও আমি অনুরোধ জানাইতে পারি- যেমন আপনি আমার ব্যাপারে দাবী জানাইতেছেন। ফায়সালা কে দিবে। ফায়সালা আল্লাহ তাআলা আখেরাতে দিবেন । তিনি আপনাকে ও আমাকে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে এই দুনিয়াতে পাঠাইয়াছেন। পরীক্ষার জন্য পরীক্ষার্থীর সঠিক উত্তর ও ভুল উত্তর-এতদুভয়ের যে কোনও একটি লিখিবার অধিকার থাকা প্রয়োজন। সে অধিকার আল্লাহতাআলা মানুষকে দিয়াছেনও । জনাব তারেক সাহেব! দয়া করিয়া আল্লাহতাআলাকে আমার ও আপনার পরীক্ষা লইতে দিন। যে পরীক্ষার্থী অন্য পরীক্ষার্থীকে নিজের ধারণায় ভুল উত্তর লিখিতে দেখিয়া তাহার উপর শক্তি প্রয়োগ করিতে তথা আল্লাহ তাআলার মহান পরীক্ষা গ্রহণ কার্য্যকে বিঘ্নিত করিতে চেষ্টা ক্রএ, সেই শক্তিপ্রয়োগকারী খোদাদ্রোহী ব্যক্তিকে আল্লাহতাআলা শাস্তি দিবেন না অথবা হালকা শাস্তি দিবেন- এরূপ মনে করা চরম বিভ্রান্তি। এস্কলে আমি কুরআন
মাজীদের সূরায়ে বাকারাঃর ২৫৭ নং আয়াত, সূরায় হূদের ২৯ নং আয়াত, সূরায়ে কাহাফের ৩০ নং আয়াত এবং সূরায়ে বুরূজকে হযরত ঈসা (আঃ)-এর যুগের য়াহুদী আলেমগণের অন্তর লইয়া নহে, বরং রসূলে কারীম (সঃ)-এর যুগের ইয়াহুদী আলেম আব্দুল্লাহ ইবনে সালামের অন্তর লইয়া বিনয় ও মনোযোগ সহকারে তেলাওয়াত করিতে জনাব তারেক সাহেবের নিকট সানুনয় অনুরোধ জানাই।
সংক্ষেপ করণের প্রয়োজনে এখানে উহা উদ্ধৃত করা হইতে বিরত রহিতেছি। জনাব তারেক সাহেব বলিতে পারেন পরস্পর বিরোধী সকল মুসলিম সম্প্রদায় সকলে মিলিয়া মুসলিম নামধারী যে সম্প্রদায়কে কাফের বা অমুসলিম বলিয়া ফতোয়া দেয়, সেই সম্প্রদায়-ই অমুসলিম বলিয়া নির্ধারিত হইবে।

জনাব তারেক সাহেব সমীপে আমার বিণীত নিবেদন-পবিত্র হাদীছে বর্ণিত তেহাত্তর ফের্কা-র মধ্য হইতে একটিমাত্র ফের্কা ছাড়া যে বাহাত্তর ফের্কার লোক জাহান্নামী হইবে, সেই বাহাত্তর ফেরকার লোকেরা সকলে মিলিয়া কি জান্নাতী দুর্বল ফের্কাটিকে জাহান্নামী ও কাফের বলিয়া ফতোয়া দিবে না? যদি তাহা-ই হয় এবং নিশ্চিত রূপে তাহা-ই হইবে, তবে বিণীত প্রশ্ন- এক্ষেত্রে আপনার ফতোয়া মানিব অথবা রসূলে কারীম (সঃ)-এর বাণী মানব? উত্তর দিবেন। –বাধিত হইব।

জনাব জেহাদ উদ্দীন তারেক সাহেব তাঁহার প্রবন্ধে আহমাদিয়া মুসলিম জামাআত প্রকাশিত ইস্লামে-ই নবুউওয়াত নামীয় একখানা পুস্তক সম্পর্কিত সূপ্রীম কোর্টের রায় উল্লেখ প্রসঙ্গে বর্ণনা করিয়াছেন যে, কাহারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত সৃষ্টিকারী কোনরূপ মৌখিক অথবা লিখিত বক্তব্য প্রকাশ করা আইনতঃ দন্ডনীয় অপরাধ । আর যেহেতু আহমাদীগণ মুসলমানদের মৌলিক ধর্মীয় আকীদার বিরোধী ও বিপরীত আকীদা পোষণ করে এবং উহার প্রকাশ ও প্রচার মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত দেয়, তাই আহমাদীগণ তাহাদের ধর্মমত প্রকাশও প্রচার করিবার অধিকারী নহে।

সুপ্রীম কোর্টের যুক্তিকে জনাব তারেক সাহেব নিজের যুক্তি হিসাবের গ্রহণ করিয়াছেন। আমি জনাব তারেক সাহেবের যুক্তি সম্পর্কে কিছু নিবেদন তাহার সমীপে পেশ করিতেছি। আশা করি, তিনি আমার নিবেদনের উত্তর দিবেন।

প্রথম নিবেদনঃ  সকল যুগে সকল নবী রসূল তাহাদের জাতিকে তাহাদের যালালাত ও গোমরাহীর বিরুদ্ধে সতর্ক করিয়া দিয়া তাহাদিগকে গায়রুল্লাহর ইবাদাত ত্যাগ করতঃ একমাত্র আল্লাহতাআলার ইবাদাত করিবার জন্য আহ্বান জানাইয়াছেন।

তাঁহাদের আহবান অতি আকুল ও ভালবাসাপূর্ণ হইলেও উহা অল্পসংখ্যক মানুষ ছাড়া সকলের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিয়াছে। এই আঘাতের কারণে-ই তো তাহারা শ্রেষ্ঠতম মানব-কল্যাণকামী নবী-রসূল ও তাঁহাদের অনুসারীদের উপর নৃশংসতম ও বর্বরতম অত্যাচার ও নির্যাতন চালাইয়াছে। সে ইতিহাস অনেক করুণ, অনেক মর্মন্তুদ। নবী রসূলগণ তো সত্য গ্রহণের জন্য তাহাদিগকে বাধ্য করেন নাই-করা যুক্তি-সংগতও ছিল না। তাঁহারা শুধু তাহাদিগকে সত্য গ্রহণের জন্য প্রেমময় আহবান জানাইয়াছিলেন। আর উহা-ই এবং শুধু উহা-ই তাঁহাদের কওমের লোকদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করিয়াছিল। সর্বকালের শ্রেষ্ঠতম মানব শ্রেষ্ঠতম মানব কল্যাণী রসূলে কারীম সায়্যিদুল-মুরসালীন খাতামুন্নাবিয়্যীন মুহাম্মাদ মুস্তাফা (সঃ) এবং তাঁহার সাহাবীগণের উপর এই কারণেই তো বর্বরতম অত্যাচার চালানো হইয়াছিল।

ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিবার অভিযোগ তুলিয়া কাহারও উপর অত্যাচার চালানো অথবা কাহাকেও তাহার মতবাদ বা ধর্মমত প্রকাশ ও প্রচার করিতে বাধা দেওয়া প্রকৃতপক্ষে একটি জঘন্য বর্বরতা যুগে যুগে বর্বর লোকেরা এই পথে মহামানবদের উপর নির্যাতন ও নিপীড়ন চালাইয়াছে এবং এখনও চালাইতেছে।

বর্বর খৃষ্টান পাদরীদের চাপে কয়েক শত বৎসর পূর্বে ইংল্যান্ডে ব্লাসফেমী আইন প্রবর্তিত হইয়াছিল। উক্ত আইন প্রবর্তনের পশ্চাতেও সেই একই ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিবার অজুহাত সক্রিয় ছিল। চিন্তার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে মানুষের মধ্যে বিরাট বিপ্লব ও রেনেসাঁ আসায় বর্তমানে ইংল্যান্ডে উক্ত বর্বর আইন কার্যতঃ পরিত্যক্ত হইয়াছে। বর্তমানে কেহ পাদরীদের ধারণা অনুযায়ী ব্লাসফেমী-র অপরাধ করিলেও উক্ত আইন অনুযায়ী তাহাকে শাস্তি দেওয়া হয় না।

“যিশু ঈশ্বর-পুত্র” – পাদরীদের এই মিথ্যা দাবীর বিরুদ্ধে যিশুকে অন্যান্য মানুষের ন্যায় আল্লাহর বান্দা বলিয়া দাবী করা ও ব্লাসফেমী আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ: কারণ, উহা ঈশ্বর-নিন্দা: অতএব, উহা অপরের ধর্মীয় অনুভূতিকে আহত করে। বর্তমানে অন্যান্য লেখকের রচনায় তো বটে-ই, খোদ বাইবেলের সহিতও উক্তরূপ তথা কথিত ঈশ্বর-নিন্দামূলক কথাটি যোগ করিয়া দেওয়া হইতেছে (দেখুন। বাংলাদেশে প্রকাশিত বাংলা “ইঞ্জিল শরীফ”)।

জনাব তারেক সাহেবের কাছে প্রশ্ন- ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দিবার অপরাধে কোন কোন ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মুখ বন্ধ করিতে হইবে? এতদসহ প্রশ্ন—আপনার ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মুখ খোলা রাখিতে হইবে অথবা বন্ধ ? খোলা রাখিতে হইলে কোন যুক্তিতে খোলা রাখিতে হইবে ? সে যুক্তি অন্যান্য ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হইবে না কেন? উত্তর দিবেন-কৃতজ্ঞ করিবেন।

(ক) উদাহরণ দিয়া বলিঃ প্রচলিত ত্রিত্ববাদমূলক খৃষ্টান ধর্ম হযরত ঈসা (আঃ)-কে ঈশ্বর পুত্র বলে। পক্ষান্তরে, কুরআন মাজীদ উহাকে এইরূপ জঘন্য মিথ্যা, পাপ ও শিরক বলিয়া আধ্যায়িত করিয়াছে– যাহার উচ্চারণে আসমান ও যমীন বিদীর্ণ হইবার উপক্রম হয়। এইরূপে ইসলাম ধর্ম ও প্রচলিত খৃষ্টান ধর্ম ঘোর পরস্পর-বিরোধী । অনুরূপভাবে প্রচলিত বৌদ্ধ ধর্ম নিরীশ্বরবাদ শিক্ষা দেয়। পক্ষান্তরে, অন্যান্য সকল ধর্ম ঈশ্বরবাদে বিশ্বাসী এবং নিরীশ্বরবাদের ঘোর বিরোধী। প্রত্যেক ধর্মের প্রচার অন্য ধর্মের অনুসারীদের ধর্মিয় অনুভূতিকে প্রচন্ডভাবে আহত করে। এমতাবস্থায় বিভিন্ন ধর্মের প্রচারের আইনগত বৈধতা সম্বন্ধে আইন বিশেষজ্ঞ জনাব তারেক সাহেবের রায় কী হইবে?

দ্বিতীয় নিবেদন: এক সময় ছিল- যখন আদালতের রায়ের বিরূপ সমালোচনা করা আদালত অবমাননার শামিল বলিয়া পরিগণিত হইত । সময় পরিবর্তিত হইয়া গিয়াছে। মানুষের চিন্তাধারায়ও পরিবর্তন আসিয়াছে। এখন চিন্তাবিদগণ– এমনকি বিচারপতিগণও– বলিতে শুরু করিয়াছেন যে, আদালতের রায় –এমনকি সবোচ্চ আদালতের রায়ও সমালোচনার উদ্ধে নহে– উর্দ্ধে থাকা যুক্তিযুক্ত নহে। আদালতের বিচারকগণ সর্বক্ষেত্রে বিশ্ব বিধাতা আল্লাহতাআলা কর্তৃক প্রদত্ত আইন দেখিয়া বিচার করেন না। তাহারা অনেক ক্ষেত্রে– এবং অধিকাংশ দেশে অধিকাংশ ক্ষেত্রে- মানব রচিত আইন দেখিয়া তদনুসারে বিচার করিয়া থাকেন। একমাত্র আল্লাহ-প্রদত্ত আইন অর্থাৎ কুরআন মাজীদ ও সহীহ হাদীছে বর্ণিত আইন-ই নিশ্চিতরূপে নির্ভুল ও অপরিবর্তনীয়। মানব-রচিত আইন আল্লাহ্‌-রচিত আইনের বিরোধী না হইলে উহা অমান্য করা যরূরী নহে, কিন্তু উহা আল্লাহ প্রদত্ত আইনের
বিরোধী হইলে শক্তি থাকিলে উহা অমান্য করা জরুরী।

অপরের অধিকার ও স্বাধীনতা স্বীকার করিয়া যে-কোনও মতবাদ বা ধর্মমত-তাহা সংখ্যা গুরু জনগণের মতবাদ বা ধর্মমতের বিরোদী হইলেও পোষণ পালন ও প্রচার করিবার অধিকার প্রত্যেক মানুষের রহিয়াছে। কোনও দেশের আদালত যদি কোনও ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মমত সম্বলিত কোনও পুস্তককে বেআইনী অথবা বাযেয়াফত বলিয়া রায় দেয়, তবে উহা মানব রচিত আইনের পরিপন্থী হউক অথবা না হউক- নিশ্চিতরূপে আল্লাহ প্রদত্ত আইনের পরিপন্থী। এ সম্বন্ধে আপনার মতামত কী ? জনাব তারেক সাহেব! কুরআন হাদীছের দলীল প্রমাণসহ জানাইয়া কৃতজ্ঞ করিবেন।

জনাব তারেক সাহেব! মানব-রচিত আইনের পরিবর্তনশীলতার দুই একটি উদাহরণ আপনার সমীপে পেশ করিতেছি। পৃথিবীর কোনও কোনও দেশে নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করিবার অপরাধে হত্যাকারীকে মৃতু্যদন্ড প্রদানের আইন আছে আবার কোনও কোনও দেশের হত্যাকারীর জন্য মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে লঘু দন্ডের আইন রহিয়াছে। কোনও কোনও দেশে পূর্বে এরূপ মৃত্যুদন্ডকে বর্বরতা ও নৃশংসতা বিবেচনা করা হইত এবং এখন আর উহা সেরূপ নিবেচনা করা হয় না। কোনও কোনও দেশে আবার উহার বিপরীত বিবেচনা লক্ষ্য করা যায়। অর্থাৎ সে সকল দেশে পূর্বে এরূপ মৃত্যুদন্ডকে ন্যায়সঙ্গত বিবেচনা করা হইত এবং এখন উহাকে বর্বরতা ও নৃশংসতা বিবেচনা করা হয়।

অনুরূপভাবে মাথায় হেজাব বা স্কার্ফ দিয়া বিদ্যালয়ে যাওয়া ছাত্রীদের জন্য এবং সরকারী কার্য্যালয়ে যাওয়া মহিলা কর্মচারীদের জন্য বেআইনী ও দন্ডনীয় অপরাধ বলিয়া কোনও কোনও দেশে ঘোষিত হইয়াছে। এই সকল দেশে পূর্বে উহা বেআইনী ছিল না। অন্যান্য দেশে উহা এখনও বেআইনী নহে। মানব-রচিত আইনের উক্তরূপ পরিবর্তনশীলতা আমাদিগকে কী শিক্ষা দেয় –জনাব তারেক সাহেব বলিতে পারেন কি?

প্রবন্ধের সার-সংক্ষেপঃ অন্যান্য সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ন্যায় আহ্‌মদী মুসলিম  সম্প্রদায়ের ও স্বাতন্ত্র্যসূচক প্রতীক বর্তমান রহিয়াছে, সুতরাং জনাব তারেক সাহেবের বিভ্রান্ত হইবার আশংকায় উদ্বিগ্ন হইবার দরকার নাই। আল্লাহ-প্রদত্ত আইনের বিরোধী কোনও আইন বা রায় কাহারও উপর চাপাইয়া দিতে জনাব তারেক সাহেব চেষ্টা করিবেন না। জনাব তারেক সাহেব আপনি নিজে যে রূপে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করিতে চাহেন, পৃথিবীর অন্য সকল মানুষকে সেইরূপে পূর্ণ ধর্মীয় স্বাধীনতা ভোগ করিতে দিন। উপসংহারঃ আল্লাহ তাআলা সকলকে বিশেষতঃ আইন-বিশেষজ্ঞ জনাব জেহাদ উদীন তারেক সাহেবকে সত্যান্বেষী অন্তরের অধিকারী হইবার এবং কুরআন মাজীদকে আঁকড়াইয়া ধরিবার ও আঁকড়াইয়া থাকিবার তাওফীক দান করুন!

-মু. মাযহারুল-হক

পাক্ষিক আহ্‌মদী – নব পর্যায় ৬২ বর্ষ | ১৬তম সংখ্যা | ২৯শে ফেব্রুয়ারী ২০০০ইং | পৃষ্ঠা: ৩০-৩৫