মাসিক মদীনার মিথ্যাচারের উত্তর – পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ ছেটে ফেলা এবং ঈসা (আঃ)-কে শূলীবিদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে


কারো সম্বন্ধে কোন উক্তি করলে তাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেয়া উচিত- এটাই ভদ্রতা এবং আইনানুগ নীতি। মাসিক মদীনা বা এ ধরনের কতিপয় পত্রিকা আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বিরুদ্ধে এক তরফাভাবে
মিথ্যাচার করে যান অথচ এ ব্যাপারে আমরা অনেক সময় জানতেও পারি না। তাদের উচিত আমাদের নিকট পত্রিকার কপি পাঠানো যাতে করে আমরা আমাদের বক্তব্যও জন সমক্ষে তুলে ধরতে পারি।

মাসিক মদীনা সেপ্টেম্বর ‘৯৮ সংখ্যায় আমাদের সম্বন্ধে মিথ্যা বক্তব্য রেখেছে। ঘটনাক্রমে ইহা আমাদের গোচরীভূত হয়েছে। তাই এগুলোর জবাব দেয়ার নৈতিক প্রয়োজন মনে করছি।

প্রশ্নোত্তর বিভাগে জনৈক মিজানুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে বলা হয়েছে, “পবিত্র কুরআনের কিছু অংশ ছেটে ফেলা হয়েছে এ অপপ্রচারটি কাদিয়ানী ও শিয়াদের একটা জঘন্য অপপ্রচার মাত্র”।

শিয়ারা এ অপপ্রচারটি করে কিনা তা আমাদের জানা নেই তবে আমরা এ অপপ্রচার করি না। আমাদের আকিদা ও ধর্ম-বিশ্বাস সম্বন্ধে আমাদের বই পুস্তকে এন্তার বলা আছে। খাতামান্নাবীঈন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর ওপরে যে কুরআন শরীফ নাযেল হয়েছে তা-ই আমাদের কুরআন , তাত্থেকে এক বিন্দু বেশীও নয় এক বিন্দু কমও নয়। সুতরাং আমরা প্রশ্নকারীর কথায়ই বলছি আমাদের বিরুদ্ধে একথাটা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন একটি অপপ্রচার ছাড়া আর কিছু নয়।’

অন্য আর এক স্থানে জনৈক এ, এইচ, এ শাহীনের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে উত্তরদাতা বলেছেন- “ঈসা (আঃ)-কে শূলীবিদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে কেউ একথা বললে কাফের হয়ে যাবে। আমাদের দেশে মুসলমানের
ছদ্মবেশধারী কাদিয়ানী মুরতাদেরা এ ধরনের বিভ্রান্তিকর কথা বলে থাকে। কোন মুসলমান বলে না।”

আমরা উত্তরদাতাকে সর্বশক্তিমান খোদার কসম দিয়ে বলছি, আপনি কি আমাদের কোন বই-পুস্তক থেকে দেখাতে পারবেন যে, আমরা এই আকীদা ও ধর্ম-বিশ্বাস পোষণ করি? যেখানে আল্লাহতাআলা কুরআন করীমে-ওয়ামী কাতালুহু ইয়াক্বীনান (অর্থ: এবং নিশ্চিতরূপে, তারা তাকে হত্যা করেনি-৪ঃ ১৫৮) বলেছেন, সেখানে আমরা কি করে বলতে পারি যে, ঈসা (আঃ)-কে শূলীবিদ্ধ করে মেরে ফেলা হয়েছে? শত আফসোস আমরা লা’নাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন- মিথ্যাবাদীদের ওপরে আল্লাহর অভিসম্পাত বর্ষিত হোক পাঠ করছি। সৎসাহস থাকলে মাসিক মদীনার উত্তরদাতাকেও এ লা’নতের দোয়া পাঠ করতে অনুরোধ করছি।

মাসিক মদীনার উল্লেখিত সংখ্যায়ই জনৈক মোল্লা জামান রচিত ‘কাদিয়ানী মতবাদ একটি ফেৎনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ প্রকাশ করা হয়েছে। যথাসময়ে এর জবাব দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ। আপাততঃ এতটুকু বলে রাখি– মোল্লা জামান সাহেব আমাদের প্রকাশিত আহ্বান পুস্তকের নিম্নোক্ত অংশ তুলে ধরেছেন:
“ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে খোদাতাআলা তোমাদের নিকট ইহা চাহেন যেন তোমরা বিশ্বাস কর যে, আল্লাহ এক-অদ্বিতীয় এবং মুহম্মদ (সঃ) তাঁহার নবী এবং খাতামাল আম্বিয়া (নবীদিগের মহর)। তিনি সকল নবী হইতে শ্রেষ্ঠ। তাহার পরে তাহার গুণে গুণান্বিত হইয়া, তাহার প্রতিচ্ছায়ারূপে যিনি আসেন তিনি ব্যতীত অন্য কোন নবী আসিবেন না”।

এর ওপরে মন্তব্য করতে গিয়ে মোল্লা সাহেব মন্তব্য করেছেন- “উপরের আকিদাটুকুই একজন মানুষের কাফের হবার জন্যে যথেষ্ট”।
মোল্লা সাহেবকে আমাদের জিজ্ঞাসা:

উক্ত উদ্ধৃতিতে আল্লাহ এবং মুহাম্মদ (সঃ) সম্বন্ধে আমাদের যে আকিদা বর্ণনা করা হয়েছে তা-ও কি আপনার মতে কাফের হওয়ার জন্যে যথেষ্ট? আপনার মন্তব্য থেকে যদি কেউ ইহা বুঝে তাহলে তাকে দোষারোপ করবেন কোন বিবেকে?

এতদ্ব্যতিরেকে মোল্লা সাহেব নবুওয়তের মসলা নিয়ে আহমদীদেরকে অবলীলায় কাফের বলে ফেল্লেন- আমরা তো জানি এ ধরনের আকিদা পোষণ করতেন হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) সহ আরও অনেক সর্বজনমান্য বুযর্গ [দেখুন তকমেলা মাজমাউল বেহার, দুররে মানসুর, ফতুহাতে মক্কীয়া, আল ইউয়াকিতুআল জওয়াহের, নাবরাস, আল ইনসানুল কামেল, মসনবী রূমী, তফহীমাতে ইলাহিয়া, তাহযীরুন নাস প্রভৃতি]

এসব মহান গ্রন্থের প্রণেতাগণের ব্যাপারে মোল্লা সাহেব কী ফতওয়া দিবেন? আর এটুকু আকিদার জন্যে যদি আমরা কাফের (?) হয়েই থাকি তাহলে আবার সভা-মহাসম্মেলন প্রভৃতি করে সরকারের দোরগোড়ায় ধন্না দেয়া কেন?

আসল কথা কি জানেন, আপনারা কুরআন ও রসূল (সঃ)-এর শিক্ষাকে উপেক্ষা করে বনী ইসরাঈলী নবী হযরত ঈসা (আঃ)-কে চতুর্থ আসমানে উঠিয়ে রেখে যত গোল বাঁধিয়েছেন। অবশ্য আপনারাই বলেন যে, হযরত
ঈসা নবীউল্লাহ আবার দুনিয়াতে আসবেন (একথা স্বীকার না করে উপায় নেই। কেননা, মুসলিম শরীফের হাদীসে নবী করীম (সঃ) আগমনকারী ঈসাকে চার বার নবীউল্লাহ ঈসা’ বলে আখ্যায়িত করেছেন)। ঐ আকিদা-বিশ্বাস কি আপনার মতে খতমে নবুওয়তের খেলাফ নয়? উহা কি কুফরীর পর্যায়ে পড়ে না?

মোল্লা সাহেবের নিকট বিনীত অনুরোধ, আপনি আল্লাহর ওয়াস্তে ঈসা (আঃ)-এর মৃত্যুর বিষয়ে কুরআন, হাদীস ও বুযর্গানের অভিমত অনুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিন তাহলেই আমাদের আকিদার সব বিষয় আপনার নিকট
বোধগম্য হবে। ঈসা (আঃ)-কে আকাশে বসিয়ে রেখে কোন বিষয়ের সুষ্ঠু সমাধান হবে না। অবশ্য ঈসা (আঃ) যে মারা গেছেন তা মাসিক মদীনাও স্বীকার করেছে বৈকি, আমরা বল্লেই যত দোষ। মাসিক মদীনার এপ্রিল,
১৯৯৪ সংখ্যায় সর্বজনাব নজমুল হুদা সিরাজী ও মুহাম্মদ সফিউল্লাহ লিখিত প্রচলিত খ্রীষ্ট ধর্মের স্থপতি কে?’ শীর্ষক প্রবন্ধে লিখেছেন “…কিন্তু গভীর অনুসন্ধান ও বিচার-বিশ্লেষণে একথা প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়
যে, যীশু যে জীবন বিধান ও জীবন দর্শন শিক্ষা দিয়েছিলেন সে শিক্ষা তাঁর মৃত্যুর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই বিলুপ্ত হয়ে যায়” (পৃষ্ঠা-৯)। সুতরাং মাসিক মদীনা যে ঈসা (আঃ) বা যীশু খ্রীষ্টকে মৃত মনে করেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। আমরা সকলের সঠিক পথ প্রাপ্তির জন্যে কায়মনোবাক্যে দোয়া করছি।

 

সম্পাদকীয়

পাক্ষিক আহ্‌মদী – নব পর্যায় ৬১বর্ষ | ৬ষ্ঠ সংখ্যা | ৩০শে সেপ্টেম্বর ১৯৯৮ইং