মাসিক মদীনায় প্রকাশিত “আহমদী সম্প্রদায় : আমার বক্তব্য” – আপত্তির উত্তর


সত্যের অপলাপ

মদীনা ভবন, বাংলা বাজার ঢাকা থেকে প্রকাশিত মাসিক মদীনা পত্রিকার মার্চ ৯৯ সংখ্যায় “আপনাদের কথা” কলামে সৈয়দ আলী আহসান নামক জৈনক ভি, সি, আহমদী মুসলিম জামাতের বিরুদ্ধে “আহমদী সম্প্রদায় : আমার বক্তব্য” নামে একটি মন্তব্য লিখেছেন। উদ্দেশ্য আর কিছুই নয়। সাধারণ মানুষকে ধোকা দিয়ে আহমদী জামাতের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে তোলা । তিনি দারুল এহসান নামক বিশ্ব বিদ্যালয়ের একজন ভি. সি. । তার বক্তব্যে মনে হচ্ছে সত্যের অপলাপে তিনি খুবই পারদর্শী। তিনি প্রথমেই লিখেছেন, “আমি পাকিস্তান আমল থেকেই কাদিয়ানীদের কার্যকলাপের সংঙ্গে পরিচিত”। ভি. সি. সাহেব সম্ভবতঃ ঘুমের ঘোরে অচেতন অবস্থায় আহমদী জামাতের কার্যকলাপের সাথে পরিচিত হয়েছেন। আল্লাহ্ তাআলার ভয় হৃদয়ে রেখে আঁখি খুলে একবার তাকিয়ে দেখুন আহমদ জামাত কর্তৃক সমগ্র বিশ্বব্যাপী হযরত রসূল করীম (সঃ) এর আদর্শ শিক্ষা ইসলামের সুমহান বাণী প্রচারের মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ অমুসলমানকে মুসলমান বানানো, এবং খোদার ঘর-শত শত মসজিদ প্রতিষ্ঠা, মানুষের সেবায় স্কুল কলেজ হাসপাতাল স্থাপনের কার্যাবলী। ভি. সি. সাহেব রাতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে বেহেশতে যাওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আমি প্রবন্ধকে দীর্ঘায়িত করব না। কেননা, ভি, সি সাহেবের আহ্‌মদী জামাতের বিরুদ্ধে এই সকল উক্তি নতুন কিছুই নয়। আহমদ জামাত বহুবার এই সকল মিথ্যা ভাওতাবাজীর উত্তর দিয়েছেন। আমি ভি. সি. সাহেবকে কয়েকটি প্রশ্ন করছি। আশা করি ভি. সি. সাহেব আমার প্রশ্নগুলির উত্তর দিবেন।

আল্লাহ্‌ তাআলা সূরা ফাতিহায় মুসলমানদেরকে মগযুব’ বা ইহুদীদের দশা থেকে বাঁচবার জন্য দোয়া শিক্ষা দেওয়ার তাৎপর্য কি? এবং কি কারণে ইহুদীগণ অভিশপ্ত হলেন? “যুগ ইমামের হাতে বয়াত না করে মৃত্যু লাভ করলে জাহেলিয়তের অবস্থায় মৃত্যু লাভ হয়” আশা করি ভি.সি সাহেবের ন্যায় একজন উচ্চ ডিগ্রীধারী পদস্থ লোকের পক্ষে অজানা থাকার কথা নয়। প্রশ্ন এই যে, বর্তমান যুগে মুসলিম জাতীর ইমাম কে এবং তিনি কোথায়? তবে তিনি কী মসজিদের ইমাম বা কোন উচ্চ ডিগ্রীধারী বিখ্যাত মাওলানা বা কোন পীর সাহেব ? বরং প্রকৃতপক্ষে একমাত্র তিনিই যুগ-ইমাম হতে পারেন যাকে আল্লাহতাআলা নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যেক শতাব্দীর শিরোভাগে মানব জাতির পরিচালনার জন্য প্রেরণ করেন। তাকে গ্রহণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য অবশ্য কর্তব্য। যে তাকে গ্রহণ করে না সে উপরোক্ত হাদীসের আওতাভুক্ত নয় কি? আমি বর্তমান যুগ সম্পর্কে মাসিক মদীনা থেকে কয়েকটি উদ্ধৃতি দিয়ে মূল বিষয়ে যাচ্ছি।

“বর্তমানে পৃথিবীতে পরিপূর্ণভাবে জাহেলিয়তের অন্ধকার যুগ চলছে” (মাসিক মদীনা ১০ পৃঃ ফেব্রুয়ারী ১৯৯৯)। “আল্লাহর আইন ছাড়া মোমেন মোত্তাকী শাসক ও খেলাফত ছাড়া তাদের মুক্তি আসবে না। অনেক আলেম ও ইসলাম পন্থী দল জাহেলিয়াতের প্রভাবে তৌহিদ শিরক এক করে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আনন্দোলন করে কুফরী তথা গণতন্ত্র কে বৈধতা দিচ্ছে” (মাসিক মদীনা ১৩ পৃঃ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৯)।

প্রশ্ন এই যে, মুসলমান জাতির খলীফা কোথায়? ভি সি. সাহেবরা তাঁর খবর রাখেন কি? খিলাফতে অবিশ্বাস, অগ্রাহ্য, উপেক্ষা ও অস্বীকার করার কারণেই মুসলমান জাতির ললাটে নেমে এসেছে অন্ধকারের ঘনঘটা।

“কোরআনের হুকুম ও সুন্নাহর সুকঠিন নিয়ম পদ্ধতি বাদ দিয়ে সহজ পদ্ধতিতে বেহেশত পাওয়ার জাহেলী রূপ দুর্বল ঈমানদারকে আকৃষ্ট করে বেশী। আয় রোজগারের হারাম পথ রুদ্ধ না করেই এক শ্রেণী দোয়া বিক্রির দোকানী নিজেদের আল্লাহর অলী ঘোষণা দিয়ে হারাম রোজগারীদের বড়লোক হওয়ার সুযোগ করে দেয়ার সাথে বেহেশতের পথ বাতলে দেয়। আল্লাহ সতর্ক করে বলেন, আল্লাহ্ বন্ধু পৃষ্ঠপোষক হচ্ছেন ঈমানদার লোকদের। তিনি তাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে বের করে নিয়ে আসেন। আর কাফেরদের বন্ধু পৃষ্ঠপোষক হচ্ছে আল্লাহদ্রোহী সীমালঙ্ঘনকারী লোকেরা। তারাই তাদের বের করে আনে আলো থেকে পঞ্জীভূত অন্ধকারের দিকে। (বাকারা- ২৫৭) নব্য জাহেলিয়াতের অভিনব কিছু উপশিরা মারাত্মকভাবে ঈমানের মূল প্রবাহে বিষক্রিয়া ছড়াচ্ছে। তা হল – নফল, মুস্তাহাব কিছু এবাদতকে ফরজতুল্য মনে করা। শুধু তাই নয় ফরজ প্রতিষ্ঠার জন্য নূন্যতম প্রচেষ্টা যেখানে অনুপস্থিত সেই সব নফল মুস্তাহাব প্রতিষ্ঠায় রীতিমত তারা জেহাদ ঘোষণা করছে। ফলে মুসলিম উম্মাহর মধ্যে দেখা দেয় অনৈক্য ও প্রতিহিংসা। এ কি আশ্চার্যজনক কীর্তিকলাপ নয়”? (মাসিক মদীনা পৃঃ ২৮ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৯)। “বর্তমান মুসলিম বিশ্বে নেতৃত্বের সংকট অত্যন্ত চরম আকার ধারণ করেছে। এক কথায় বলতে গেলে মুসলিম বিশ্ব আজ নেতৃত্বহীন হয়ে পড়েছে এমন কোন নেতা বা নেতৃত্ব নেই যা বিশ্ব প্রতিনিধিত্ব করতে সক্ষম। ফলে মুসলিম বিশ্বের জন্য সৃষ্টি হয়েছে চরম সংকট। ধনবল, জনবল ও ভৌগলিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে থেকেও তারা আজ নির্যাতিত নিষ্পেষিত একটি উদ্বাস্তু জাতির মত ঘুর পাক কাচ্ছে” (মাসিক মদীনা পৃঃ ১২ মার্চ, ১৯৯৯)।

“সহীহ হাদীসের একাধিক বর্ণনায় এরূপ একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য রয়েছে যে, আখেরী জামানার এক পর্যায়ে মুসলমানদের অবস্থা যখন নানা কারণে খুবই শোচনীয় হয়ে পড়বে, তখন তাদের মধ্যে এমন একজন আদর্শ মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটবে যার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মুসলিম উম্মাহ তাদের হৃত গৌরব ফিরে পাবে এবং দুনিয়াতে নতুন করে শান্তি ফিরে আসবে। এই নেতৃত্ব পূরুষকেই “আল ইমাম আল মাহদী” বলে অভিহিত করা হবে। যার সরল অর্থ হচ্ছে আদর্শ নেতা। এই আদর্শ নেতা বা ইমাম আল মাহদীর আসল নাম কি হবে সে সম্পর্কে হাদীস শরীফে সুস্পষ্ট কোন বর্ণনা নাই। কোন কোন দুর্বল বর্ণনায় তার নাম বলা হয়েছে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ” (মাসিক মদীনা পৃঃ৫১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৯)। “ইমাম মাহদীকে আল্লাহ তাআলা পাঠাবেন সত্যিকার ইসলাম কি তা জানাতে যাতে এই উম্মত তেহাত্তর  ফেরকায় বিভক্ত না থাকে, তিনি মানুষের চরিত্র সংশোধন করবেন। মিথ্যা ধ্বংস করে সত্য প্রতিষ্ঠিত করবেন” (মাসিক মদীনা পৃষ্ঠা ১৫ ফেব্রুয়ারী, ১৯৯৯)।

মুসলমান জাতি যে আজ বহুধা বিভক্ত, নাই কোন নেতা, নাই একতা, নাই ভ্রাতৃত্ব, এক মুসলমান আরেক মুসলমানের ভাই একথা শুধু যে কেতাবেই লিখিত আছে, এ বিষয়ে আর ব্যাখা করে বুঝিয়ে বলার প্রয়োজন রাখে না। এই অবস্থায় আল্লাহতাআলার প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-কে আখেরী জামানার প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ ইমাম মাহদী ও মসীহ মাওউদ (আঃ) রূপে কাদিয়ানে আবির্ভূত করলেন। এবং তার মাধ্যমে মুসলমান জাতির মধ্যে পুনরায় নবুওয়তের পদ্ধতিতে খিলাফত প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি আহমদীয়া জামাত নামে এক সংগঠন স্থাপন করতঃ মিথ্যা বেদাত, শিরক ইত্যাদি অধর্মীয় ক্রীয়াকলাপ মিটিয়ে দেওয়ার কাজে রত হয়ে যখন শতধা বিভক্ত মুসলমান জাতিকে ঐক্যের ডাক দিলেন, তখনই ধর্ম নষ্ট হয়ে যাচ্ছে বলে ভি.সি. সাহেবগণ নানা প্রকার মিথ্যা অপবাদ ছড়িয়ে জনসাধারণকে তার বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজে হলেন লিপ্ত। এমন কোন মিথ্যা অপবাদ নেই যা প্রয়োগ করতে বিন্দু পরিমাণ ত্রুটি করেছেন। তাই আফসোস করে পাক কালামে আল্লাহতাআলা বলেন, “হায়! বড়ই পরিতাপ মানবের জন্য এমন কোন মহাপুরুষ আগমন করে নি যাকে নিয়ে তারা হাসি-বিদ্রপ না করেছে” (সূরা ইয়াসীন)।

ভি.সি সাহেব তার বক্তব্যে বলেছেন, “আমি দু’জন বিখ্যাত কাদিয়ানী ব্যক্তিত্বের সঙ্গে আলোচনা করবার সুযোগ পেয়েছিলাম। তাদের একজন হচ্ছেন স্যার মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান, আরেক জন হচ্ছেন কাদিয়ানীদের খলীফা মির্যা বশীর উদ্দিন মাহমুদ। বশির উদ্দিন মাহমুদ ছিলেন কাদিয়ানীদের ধর্মীয় নেতা মির্যা গোলাম আহমদের কনিষ্ঠতম পুত্র।” তিনি খলীফাতুল মসীহ সানী (রাঃ)-কে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর কনিষ্ঠতম পুত্র বলে উল্লেখ করেছেন। প্রশ্ন এই যে, যার সংগে আলোচনা করবার সুযোগ তিনি পেয়েছিলেন, তার সঠিক পরিচয় তিনি জানেন না এতেই কি প্রমাণিত হয় না যে, এটা তার একটা ভাওতা বাজী? হযরত মির্যা বশীর উদ্দিন মাহমুদ আহমদ (রাঃ) হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর কনিষ্ঠতম পুত্র নন। তার পরেও তিন জন পুত্র সন্তান ছিলেন। হযরত মির্যা বশীর উদ্দিন মাহমুদ আহমদ (রাঃ) ১৯৬৫ সনে ৭৬ বৎসর বয়সে ইন্তিকাল করেন। স্যার মোহাম্মদ জাফরুল্লাহ খান (রাঃ) ইন্তিকাল করেন ১৯৯১ সনে ৯২ বৎসর বয়সে। ভি. সি. সাহেবের বক্তব্যে মনে হয় যেন তিনি তাদের সম-সাময়িক ব্যক্তি। প্রশ্ন এই যে, বর্তমানে ভি সি সাহেবের বয়স কত? তিনি কি যবনিকার এপারে বসেই মাসিক মদীনায় তার বক্তব্যটি পাঠিয়েছেন অথবা ওপার থেকে লিখে পাঠিয়েছেন, কি না এটা মিথ্যা ধোকাবাজী? ভি.সি সাহেব বলেছেন, কাদিয়ানীদের অনূদিত কুরআন মজীদ পরীক্ষা করে দেখেছি। বিভিন্ন জায়গায় পবিত্র কালামের অর্থ বিকৃত করা হয়েছে। আয়াতের ব্যাখ্যা সূত্রে মির্যা গোলাম আহমদের নাম ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে, এ অনুবাদটি অবিলম্বে বাজেয়াপ্ত হওয়া উচিত ইত্যাদি। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ) খ্রীষ্টানদের নবী যীশু (ঈসা আঃ)-এর মৃত্যু প্রমাণ করতে গিয়ে কাশ্মীরে তার কবর দেখিয়েছেন। তাদের ক্রুশীয় মতবাদকে দজ্জালী ফেতনা বলে উল্লেখ করেছেন।

মুসলমান মৌলবীগণ থ্রীষ্টানদের নবী যীশু (ঈসা -আঃ)-কে আসমানে জীবিত আছেন বলে বিশ্বাস করে এবং তিনিই আবার আসমান থেকে নেমে এসে মুসলমান জাতিকে উদ্ধার করার কল্পিত ধারণা ও তার উপর বিভিন্ন খোদায়ী শক্তি প্রয়োগ করে খ্রীষ্টানদের হাতে হাত মিলিয়ে তাদের প্রচার শক্তিকে দিয়েছিলো এগিয়ে প্রচলিত তফসীরগুলিতে হযরত ঈসা (আঃ) সম্পর্কীয় বর্ণনাগুলিকে সত্য ও সঠিক মনে করে বহু আলেম খীষ্ট ধর্ম গ্রহণ করতঃ হয় উল্টা পথের যাত্রী। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ) এই সম্পর্কে ক্রটিপূর্ণ তফসীরের ভুল-ত্রুটিগুলি অকাট্য যুক্তি ও দলিল প্রমাণাদির দ্বারা সংশোধন করতঃ ক্রুশীয় মতবাতকে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিয়ে ইসলামের উপর খ্রীষ্টান পাদ্রীদের আক্রমণকে প্রতিহত করেছেন। আহমদী জামাত কর্তৃক প্রকাশিত পবিত্র কুরআন করীমের তফসীরে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর প্রদত্ত সেই সকল অকাট্য যুক্তি ও দলিল প্রমাণই তুলে ধরা হয়েছে মাত্র। ভি.সি. সাহেব আহমদী জামাতকে হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর প্রবর্তিত ধর্ম সম্প্রদায় বলেছেন। আহমদ জামাত হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর প্রবর্তিত কোন নতুন ধর্ম সম্প্রদায় নহে। এটা ভি.সি সাহেবের বিকৃত মন-মানসিকতারই পরিচয়ক। আহমদ জামাত সর্ব শক্তিমান আল্লাহতাআলার মনোনিত এবং মানব কূল শ্রেষ্ঠ খাতামান্নাবীঈন হযরত মুহাম্মদ (সঃ)-এর প্রবর্তিত ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। একথা শুধু ভি.সি. সাহেবের ন্যায় মৌখিক দাবী নহে। বিশ্বাস এবং তদনুযায়ী কার্যাবলীই তার পরিচয় বহন করে চলেছে। আহমদীয়া জামাত কর্তৃক অনূদিত কুরআন মজীদের তফসীর বাজেয়াপ্ত করার আস্ফালন করে কোন লাভ হবে না। কেননা, এ পর্যন্ত পৃথিবীর বহু ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে ছড়িয়ে গেছে। এগুলিকে একত্রিত করা ভি.সি. সাহেবের মত ব্যক্তির পক্ষে সম্ভবপর নয়। এগুলিকে একত্রিত করলে পর্বত সমান উঁচু হবে। আমরা এই অমূল্য তফসীরটি নিরপেক্ষভাব পাঠ করার জন্য প্রতিটি জ্ঞানবান, চিন্তাশীল, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ভাইকে আহ্বান জানাচ্ছি। অবশেষে ভি.সি সাহবেকে বলতে চাই যে, আল্লাহতাআলার ভয়
ভীতি হৃদয়ে রেখে সত্যের অপলাপ করে বাকা পথে না চলে সরল, সঠিক ও সোজা পথে আসুন। করুণাময় আল্লাহতাআলা বড়ই মেহেরবানীপূর্বক বিবেক নামক যে কষ্টি পাথর আপনাকে দান করেছেন, যে কারণে একদিন আপনাকে মহান আল্লাহতাআলার দরবারে বিচারের সম্মুখীন হতে হবে। সেই বিবেক দ্বারা যাচাইয়ের কাজে লেগে যান। দল, মত নির্বিশেষে সকল মুসলমান আখেরী যামানার প্রতিশ্রুত হযরত ইমাম মাহদী (আঃ)-এর আগমনে বিশ্বাসী। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ) সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষ ইমাম মাহদী (আঃ) হবারই দাবী করেছেন। আমরা আমাদের জ্ঞান, বিবেক, বুদ্ধি দ্বারা যাচাই করতঃ গ্রহণ করেছি। প্রশ্ন এই যে, যদি তিনি সত্যবাদী হন, অবশ্যই তিনি সত্যবাদী, তাহলে আপনাদের অবস্থা ইহুদীদের ন্যায় হবে নাকি?

বাকী রইল হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) নবী হবেন কিনা। হ্যা, তিনি নবী হবেন, তবে স্বাধীন, স্বতন্ত্র নবী হবেন না। হযরত রসূল করীম (সঃ)-এর অনুসারী উম্মতী নবী হবেন। তিনি নবুওয়ত প্রাপ্ত হবে বলে স্বয়ং হযরত রসূল করীম (সঃ) বলেছেন যে, “ নওয়াতের পদ্ধতিতে পুনরায় তিনি পৃথিবীতে খিলাফত প্রতিষ্ঠিত করবেন” (আহমদ – বায়হাকী) হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে যে, “হযরত মূসা (আঃ) আল্লাহতাআলার নিকট আরয করলেন যে, তাকে যেন উম্মতে মুহাম্মদীয়ার নবী বানিয়ে দেয়া হয়। তখন আল্লাহতাআলা এর উত্তরে বললেন, ঐ উম্মতের নবী তাদের নিজেদের মধ্যে থেকেই হবে” (হুলিয়া, আবু নায়ীম, খাসায়েসে কুবরা)। মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ শফী রচিত ‘খতমে নবুওয়াত পুস্তকে বলেছেন, “ এ উম্মতের মহান ব্যক্তিত্বের মধ্যে নবুওয়াতের যোগ্যতা রয়েছে” (খতমে নবুওয়াত ১৯৯ ও ৩০০ পৃঃ)। তিনি আরও বলেছেন, “ অবশ্যই হযরত (সঃ)-এর পরে তার উম্মতের সংস্কার ও পরিশুদ্ধির উদ্দেশ্যে যিনি আবির্ভূত হবেন তিনি স্বীয় নবুওয়াত পদে বহাল থেকে আঁ হযরত (সঃ)-এর প্রবর্তিত আদর্শ ও শিক্ষা-দীক্ষার অনুসারী হয়েই এ উম্মতের পরিশুদ্ধি ও সংস্কারের দায়িত্ব পালন করবেন” (মা’রেফুল কুরআন ৭ম খন্ড ১৭৬ পৃঃ)। “এ ব্যাপারে তোমাদেরকে নাক গলানোর কোন অধিকার নেই যে, আল্লাহর বন্টন তোমাদের হাতে নয় যে, কাউকে নবী করার পূর্বে তোমাদের মত নিতে হবে। এটা সম্পূর্ণরূপে আল্লাহর হাতে। তিনিই মহান। উপযোগিতা অনুযায়ী একাজ সমাধা করেন” (মা’রেফুল কুরআন- ৭ম খন্ড ৮০০ পৃঃ) পরিশেষে প্রার্থনা করি, সত্যকে বোঝার এবং তা গ্রহণ করার জন্য আল্লাহতাআলা সকলের হৃদয়-দ্বার উন্মুক্ত করে দিন, (আমীন)।

সরফরাজ এম.এ. সাত্তার রঙ্গু চৌধুরী
পাক্ষিক আহ্‌মদী – নব পর্যায় ৬১বর্ষ | ১৯তম সংখ্যা | ১৫ই এপ্রিল ১৯৯৯ইং | পৃষ্ঠা: ২৮