হযরত মির্যা সাহেবের মৃত্যুতে বিখ্যাত মনীষীরা কি বলেছিলেন?


(ক) এ উপমহদেশের সুবিখ্যাত দার্শনিক ও চিন্তাবিদ আল্লামা স্যার মোহাম্মদ ইকবাল তার এক নিবন্ধে লিখেছেনঃ

অর্থাৎঃ “বর্তমান যামানার Theory of Logos সম্পর্কে মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী নূতনভাবে আলোকপাত করেছেন”। তিনি আরও বলেছেন, “আমার ধারণায় ভারতবর্ষের মুসলমানদের মধ্যে মির্যা গোলাম আহমদ ছিলেন একজন শীর্ষস্থানীয় দীনি মুফাক্কের” (ধর্মীয় চিন্তাবিদ) -“ইন্ডিয়ান এন্টিকাভেরী’, ১৯০০ খৃঃ

(খ) এরূপ আলিগড় বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৯১০ সনের কনভোকেশনে প্রদত্ত ভাষণে আল্লামা ইকবাল হযরত মির্যা সাহেব কতৃক প্রতিষ্ঠিত আহমদীয়া জামাত সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন:

“এ যমানায় খাটি ইসলামী জীবনাদর্শ প্রবর্তনে পাঞ্জাবে একটি নির্ভেজাল আন্দোলন পরিলক্ষিত হচ্ছে যাকে ফেরকায়ে কাদিয়ানী বলে আখ্যা দেয়া হয়।” – (কনভোকেশন Address, আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয়, ১৯০০ সন)

(ক) হযরত মসীহ্ মাওউদ (আঃ)-এর একজন প্রবীণ সাহাবী হযরত মুফতী মোহাম্মদ সাদেক সাহেব হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ)-এর পুস্তকাবলী থেকে ইসলামের সৌন্দর্য সম্পর্কে হুযুরের কিছু লেখা ইংরেজী ভাষায় অনুবাদ করে রাশিয়ার বিখ্যাত চিন্তাবিদ “কাউন্ট টলস্টয়”-এর নিকট পাঠিয়েছিলেন। যার প্রাপ্তি সংবাদ টলস্টয় সাহেব তাকে দিয়েছিলেন। এবং তন্মধ্যে রিভিউ অফ রিলিজিয়ন্স ইংরেজীর ২/১ টি সংখ্যা এবং সেই সাথে হযরত আহমদ (আঃ)-এর একটি ফটো ও কাশ্মীর শ্রীনগরের যীশু খৃষ্টের কবরের ফটোও পাঠিয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে কাউন্ট টলস্টয়-এর সঙ্গে একাধিক পত্রাদি তার আদান-প্রদান হয়েছিল।

এ প্রসঙ্গে লাহোরের “জমিদার” পত্রিকার মালিক ও প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা জাফর আলী খাঁর পিতা মৌলবী সিরাজ উদ্দীন সাহেব তার পত্রিকায় মুফতী সাহেবের নামে লেখা টলস্টয় সাহেবের কিছু পত্রাদি প্রকাশ করেছিলেন। তিনি লিখেছিলেন যে,
“কুরআন শরীফের সমুদয় শিক্ষাই যুক্তিসঙ্গত। আশা করি যে, মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী কুরআনের অকাট্য যুক্তিসমূহ কাউন্ট টলস্টয়কে বুঝাতে সক্ষম হবেন। অধিকাংশ মুসলমানরাই তো মির্যা সাহেবের ঘোর বিরোধী ও তাকে কাফের বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। কিন্তু আশ্চর্যের ব্যাপার যে, এই কাফের ব্যক্তিই অমুসলমানদের নিকট ইসলামের বাণী প্রচার করছেন।” – (‘জমিদার’ পত্রিকা, লাহোর ১৬ আগস্ট, ১৯০৬)

(খ) উক্ত ঘটনার কয়েক বৎসর পর মির্যা সাহেবের তবলীগের ফলে কাউন্ট টলস্টয় সাহেবের ইসলাম সম্পর্কে যে উচ্চ ধারণা সৃষ্টি হয়েছিল তা ভারতবর্ষের রাঁচি শহর হতে প্রকাশিত “The sentinel” নামক ইংরেজী পত্রিকার সম্পাদক সাহেব তার এক নিবন্ধে লিপিবদ্ধ করেছিলেন যে, “কাদিয়ানের নূর ও বরকত সম্পর্কে উহাকে সীমাবদ্ধ করার প্রয়োজন অনাবশ্যক।” সমগ্র পৃথিবীই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এখন উহার স্বীকৃতি দান করেছে। কিছুদিন পূর্বে এই স্থানটি ছিল পৃথিবীবাসীর সম্মুখে অপরিচিত, কিন্তু ৬১ বৎসর পূর্বে এই গন্ডগ্রামে এক রূহানী ব্যক্তির আবির্ভাব ঘটেছিল।
যার পূত নাম মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী। কাউন্ট টলস্টয়ের মত রুশী চিন্তাবিদও তার জ্ঞান ও উচ্চ ধারণার প্রস্রবণ হতে উপকৃত না হয়ে পারেন নি।

তিনি নিজেরও এই অভিমত প্রকাশ করেছিলেন যে, “যে ব্যক্তি কাদিয়ান হতে তার বাণী প্রচার করছেন তিনি কোন সাধারণ ব্যক্তি নন, সত্যি কথা এই পৃথিবীর বড় বড় চিন্তাবিদগণ যারা মির্যা সাহেবের পুস্তকাবলী ও তার নিরলস শিক্ষা সম্পর্কে গবেষণা করার সুযোগ লাভ করেছেন, তারা তার অলৌকিক শক্তি ও সত্যিকার শান্তি অনুভব করছেন। বর্তমান যুগে আল্লাহ্ ও মানবজাতির মধ্যে যে দূরত্ব বিদ্যমান রয়েছে তা দূরীভূত করাই মির্যা সাহেবের আগমনের মুখ্য উদ্দেশ্য।” – (The sentinel -রচি, ১৯৫১)

“আলিগড় ইনষ্টিটিউট গেজেট” নামক পত্রিকার ১৯০৮ সনের জুন-এর সংখ্যায় উহার সম্পাদক জনাব মৌলানা সৈয়দ অহীদুদ্দীন সাহেব তার এক
সম্পাদকীয় নিবন্ধে লিখেছেনঃ
“১৮৭০ সন হতে ১৮৭৬ সন পর্যন্ত খৃষ্টান পাদরী, আর্যসমাজী এবং ব্রাহ্মদের বিরুদ্ধে মির্যা গোলাম আহমদ সাহেব তার অসীক্বপ কলমকে পরিচালনা করেছিলেন। ————– তিনি তার রচিত বিখ্যাত ৮০ খানা কেতাব রেখে গেছেন, যার মধ্যে ২০টি কেতাব আরবী ভাষায় প্রণয়ন করেছিলেন। ——– নিঃসন্দেহে মরহুম মির্যা সাহেব ইসলামে এক জবরদস্ত পাহলোয়ান ছিলেন।”

উপমহাদেশের একজন বিখ্যাত জার্নালিষ্ট ও লক্ষ্ণৌ এর নিগার’ পত্রিকার সম্পাদক আল্লামা নিয়াজ ফতেহপুরী সাহেব হযরত মির্যা সাহেব সম্পর্কে তার এক নিবন্ধে লিখেছেন:
(ক) “উপমহাদেশে যে যমানায় মুসলমানদের চরম অধঃপতন ও দুঃসময় চলছিল, তখন তাদের কাণ্ডারী হয়ে মির্যা সাহেবই একজন ক্ষণজন্মা মহাপুরুষ হিসেবে পৃথিবীতে আবির্ভূত হয়েছিলেন।”

তিনি আরো উল্লেখ করেছেন:

“মুসলমানদের এরূপ নাজুক সময়ে (তাদেরকে রক্ষার জন্য) কাদিয়ানে একজন “মর্দেগায়েব” তথা অদৃশ্যপুরুষ রুখে দাড়ালেন, যিনি লেখনী, লেকচার, বক্তৃতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে ইসলামের উপরে ইসলামের শত্রুগণের শুধু নগ্ন হামলাকেই প্রতিহত করেন নি বরং মুসলমানদের মধ্যে একটি আদর্শবাদী কর্মদক্ষ জামাতও সৃষ্টি করে দিলেন যা সব সুধী মহলই অবগত রয়েছেন।”

‘আমি তাকে খতমে রিসালতের স্বীকারকারী এবং প্রকৃত অর্থে আশেকে রসূলরূপেই পেয়েছি। তৎসঙ্গে মির্যা সাহেবের জীবন অনুসন্ধান করে যা আমি জানতে পেরেছি তা হল তিনি (মির্যা সাহেব) নিঃসন্দেহে অত্যন্ত সৎকর্মশীল ও সৎসাহসী ব্যক্তি ছিলেন এবং তিনি ধর্মের প্রকৃত উদ্দেশ্যকে উপলব্ধি করে তার এমন আমলী শিক্ষাকে পেশ করেছেন যা একমাত্র নবী ও খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগেই পাওয়া যেত।”
– (মাসিক নিগার – নভেম্বর ১৯৬১)

এরূপ অমৃতসরের উকিল পত্রিকার সম্পাদক মৌলানা আবদুল্লাহ্ আল এমাদী হযরত মির্যা সাহেবের চরিত্র সম্পর্কে লিখেছেনঃ
“চরিত্রের দিক দিয়ে মির্যা সাহেবের আঁচলে একটি ক্ষুদ্র দাগও দৃষ্টিগোচর হয়নি। তিনি এক পবিত্র জীবন যাপন করতেন।” – (উকিল পত্রিকা, ৩০শে মে, ১৯০৮ সন)

এরূপ “সিয়াসত” নামক লাহোরের একটি পত্রিকার সম্পাদক মৌলানা সৈয়দ হাবিব সাহেব যিনি একজন উচ্চ স্তরের জার্ণালিষ্ট ছিলেন তদরিচত “তাহরীকে কাদিয়ান” নামক পুস্তকের ২১০ পৃষ্ঠায় লিখেছেন: “যে সময় আর্য সমাজ ও খৃষ্টানগণ ইসলামের উপর ব্যাপক আক্রমণ চালিয়ে যাচ্ছিল, সে যুগে কালে-ভদ্রে কোন কোন আলেমদীন ঐসব হামলার বিরুদ্ধে মোকাবিলার প্রয়াস চালিয়েছেন বটে, কিন্তু শত্রুদের প্রচন্ড হামলার মোকাবিলায় তাতে তেমন কোন উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হয়নি।
ঠিক সে সময়ই মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী ময়দানে অবতীর্ণ হলেন এবং খৃষ্টান পাদরীগণ ও আর্য সমাজী উপদেশকগণের মোকাবিলায় ইসলামের স্বপক্ষে স্বীয় বক্ষঃ

প্রশস্ত করে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে বদ্ধপরিকর হয়েছিলেন। ………… “দ্ব্যর্থহীন ভাষায় বিনা দ্বিধায় আমি স্বীকার করছি যে, এতদ্বিষয়ে মির্যা সাহেব তার দায়িত্ব খুব যোগ্যতার সাথেই পালন করেছেন ও ইসলামের শত্রুদের ইসলাম বিরোধী ষ্টুনকো অভিযোগ-সমূহকে অকাট্য যুক্তির ধারাল অস্ত্র দ্বারা বানচাল করে দিয়ে তাদেরকে দাঁতভাঙ্গা জওয়াব দিয়েছেন।” – (তাহ্‌রীকে কাদিয়ান, ২১০ পৃষ্ঠা)

শামসুল উলামা জনাব সৈয়দ মমতাজ আলী সাহেব সম্পাদক “তাহযীবে নেসওয়াঁ এলাহাবাদ,  হযরত মির্যা সাহেবের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার পত্রিকায় তিনি লিখেছিলেনঃ
– মির্যা সাহেব ছিলেন নেহায়েতই একজন পবিত্র পুরুষ ও উচ্চ পর্যায়ের বুযর্গানে দীনের অন্যতম। নেক কর্মে নিজেকে বিলীন করে দেওয়ার ব্যাপারে তিনি এমনই ক্ষমতাসম্পন্ন ছিলেন যে, পাষাণ থেকে পাষাণ হৃদয়কেও তিনি বশীভূত করে নিতেন। তিনি এমনই একজন অত্যধিক বা-খবর আলেম, উক্ত মর্যাদাসম্পন্ন ধর্মসংস্কারক এবং পবিত্র জীবনের অধিকারী ছিলেন যে, তাকে তো আমরা “মসীহে মাওউদ” বলে স্বীকার করি না বটে, তবে তার হেদায়াত ও ধর্মীয় নির্দেশনার ফলে (রূহানীভাবে) মৃত আত্মাসমূহের জন্য তিনি মসীহী শক্তির অধিকারী ছিলেন। – (তাহযীবে নেসওয়াঁ -এলাহাবাদ, জুন, ১৯০৮)

‘দি আহমদীয়া মুভমেন্ট’ পুস্তকের মন্তব্য

লাহোরের ওয়াই. এম. সি. এ নামক একটি_প্রখ্যাত আন্তর্জাতিক খৃষ্টান সংস্থার সেক্রেটারী মিষ্টার “ওয়ালটার” * সাহেব যিনি একজন কট্টর পাদ্রী ছিলেন, হযরত মির্যা সাহেবের মৃত্যুর পর_১৯১৬ সনে আহমদীয়া মুভমেন্ট সম্পর্কে গবেষণা চালাবার উদ্দেশ্যে কাদিয়ান এসেছিলেন। কাদিয়ান ভ্রমণের পর তিনি স্বীয় অভিজ্ঞতার “… “The Ahmadia Movement” নামক একখানা পুস্তক লিখেছিলেন। উক্ত পুস্তকে হযরত মির্যা সাহেবের ব্যক্তিগত চরিত্র এবং আহমদীয়া জামাত সম্পর্কে তিনি লিখেছেনঃ

“প্রত্যেক দিক থেকে বিবেচনা করলে দ্বিধাহীনভাবে স্পষ্টতঃ এটাই প্রমাণিত হয় যে, ব্যক্তিগত চরিত্রের দিক দিয়ে মির্যা সাহেব ছিলেন একাত্ত সরল-স্বভাব পরহিতাকাঙ্খী এবং সর্বস্তরের হিতৈষী ব্যক্তিত্বের অধিকারী। তার ঘোর শত্রুদের মোকাবিলায়ও তিনি সাহসিকতাপূর্ণ চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হতেন যার ফলে তার মজ্জাগত চিরশত্রুগণ পর্যন্ত তার প্রশংসা না করে পারেননি। অসাধারণ চৌম্বিক আকর্ষণীয় শক্তিসম্পন্ন এবং এক মহান চরিত্রের অধিকারী ব্যক্তি ব্যতিরেকে এমনভাবে অপরাপর ব্যক্তিদ্বয়ের বন্ধুত্ব ও মিত্রতা অর্জন করা সম্ভবপর নয়।

উক্ত পুস্তকে তিনি আরও লেখেন যে, তার ভক্ত প্রিয় শিষ্যদের মধ্যে নূন-কল্পে অন্ততঃ তার যে দুইজন বিশিষ্ট আফগানী শিষ্য স্বীয় ধর্মবিশ্বাসে অচল-অটল থাকতে গিয়ে বিনা দ্বিধায় অম্লানবদনে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছিলেন, তবুও অন্ততঃ এক মুহুর্তের জন্যও তারা মির্যা সাহেবের আঁচল ত্যাগ করেননি।

… … … … মির্যা সাহেবের মৃত্যুর প্রায় দীর্ঘ আট বছর পরেও যখন একবার আমি কাদিয়ান গিয়েছিলাম, তার প্রতিষ্ঠিত এমন একটি বলিষ্ঠ কর্মদক্ষ সংঘ দেখে আসলাম যাদের মধ্যে ধর্মসেবা ও ধর্ম বিস্তারের এমনই এক অকৃত্রিম স্পৃহা বিদ্যমান দেখতে পেলাম সাধারণতঃ যা অন্য কারো মধ্যে কুত্রাপি দৃষ্টিগোচর হয় না।”
– (The Ahmadia Movement By Mr. Walter, Secretary Y M. C. A. Lohore, 1916)

আহমদীয়া জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ)-এর মৃত্যুর পর তার সম্বন্ধে সর্বভারতীয় কংগ্রেসের প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট মৌলানা আবুল কালাম আযাদ * লিখেছেনঃ
“তিনি এক মহান ব্যক্তিত্বের অধিকারী ছিলেন। তার লেখনী ও কথার মধ্যে যাদু ছিল। তার মস্তিস্ক ছিল মূর্তিমান বিস্ময় ………. তার অঙ্গুলি সংকেতে বিপ্লব সংঘটিত হত ………… তিনি প্রলয় বিষাণ হয়ে নিদ্রিতকে জাগ্রত করতেন।….. ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের মোকাবেলায় তিনি যেরূপ বিজয়ী সেনাপতির ন্যায় কর্তব্য সম্পাদন করেছেন তাতে আমরা একথা স্বীকার করতে বাধ্য যে, যে মহান আন্দোলন আমাদের শত্রুগণকে দীর্ঘকাল যাবৎ বিপর্যস্ত ও পর্যুদস্ত করে রেখেছিল তা যেন ভবিষ্যতেও কায়েম থাকে। খৃষ্টান এবং আর্যদের বিরুদ্ধে মির্যা সাহেব যে সকল পুস্তক রচনা করে গেছেন,
জনগণের মধ্যে ঐগুলো অত্যধিক সমাদৃত হয়েছে। – (উকিল পত্রিকা -২৩শে জুন, ১৯০৮ই)

টীকাঃ ১৯০৫ সনে মৌলানা আবুল কালাম আযাদ ও তার জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা মৌলানা নাসার সাহেব কাদিয়ান গমন করে হযরত আকদসের সাথে সাক্ষাৎ করেন। মৌলানা আবু নাসার সাহেব হযরত আকদসের হাতে বয়াত গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু মৌলানা আবুল কালাম আযাদ সাহেব হুযুরের সাক্ষাতে অতীব প্রভাবান্বিত হয়েছিলেন বটে, কিন্তু বয়াত না করেই কাদিয়ান হতে ফিরে যান।

১০

হযরত খাজা গোলাম ফরীদ (রাঃ)-এর শ্রদ্ধাঞ্জলী

বৃটিশ শাসিত ভারত উপমহাদেশের অন্তর্গত সাবেক পাঞ্জাব প্রদেশে “বাহাওয়ালপুর ষ্টেটকে” একটি স্বাধীন সামন্ত রাজ্য হিসেবে গণ্য করা হত।
বাহাওয়ালপুর ষ্টেটের প্রধান শাসনকর্তা “নওয়াব” উপাধিতে বিভূষিত ছিলেন। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর যমানায় এই প্রখ্যাত নওয়াব পরিবারের পীর ছিলেন এক নিষ্ঠাবান বুযর্গ ব্যক্তি যার নাম ছিল হযরত খাজা গোলাম ফরীদ, যিনি “চাচড়া শরীফ-এর পীর” বলে খ্যাত ছিলেন। তার লক্ষ লক্ষ মুরিদান ছিল। রুইয়া-কাশফের মাধ্যমে তিনি হযরত আহমদ (আঃ)-এর ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ মাওউদ-এর দাবীর সত্যতা সম্পর্কে জ্ঞাত হয়েছিলেন। হযরত পীর চাচড়া শরীফ (আলায়হের রহমত) আরবী ভাষায় হযরত আহমদ (আঃ)-কে স্বয়ং যে পত্র দিয়েছিলেন তা তিনি যমীময়ে আঞ্জামে আথম’ নামক পুস্তকের ৩৬ পৃষ্ঠায় প্রকাশ করে গেছেন। উক্ত আরবী ভাষায় লিখিত পত্রের বঙ্গানুবাদ নিম্নে দেয়া হলঃ

“হে আমার প্রিয় হতেও প্রিয় বুযর্গ, আপনি অবশ্যই জ্ঞাত আছেন যে, প্রথম থেকেই এই অধম আপনার যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করে আসছে যেন আল্লাহতা’লা হতে আমি পুণ্যের অধিকারী বলে গণ্য হতে পারি। অবশ্যই আমি এরূপ বিশ্বাস পোষণ করে থাকি যে, আপনি আল্লাহতা’লার বিশেষ সালেহ ও নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত এবং ইসলামের স্বপক্ষে আপনার যাবতীয় কর্মকাণ্ড আল্লাহর দরবারে প্রশংসিত। আল্লাহ অবশ্যই আপনাকে পুরস্কৃত করবেন এবং আপনার উপর আল্লাহ্তা’লার ফযল ও করুণা বর্ষিত হবে। অনুগ্রহপূর্বক এই অধমের আকেবাত বিল খায়ের অর্থাৎ শুভ ও উত্তম পরিণতির জন্য আপনাকে দোয়া করার অনুরোধ জানাচ্ছি।”

অতঃপর হযরত গোলাম ফরীদ চাঁচড়া শরীফ (আলায়হের রহমত) তারই মলফুযাতে যা ‘এরশাদাতে ফরীদী’ নামে প্রকাশিত হয়েছে, উহারই তৃতীয় খণ্ডের ৬৯ পৃষ্ঠায় তিনি আরো লিখে গেছেনঃ

“হযরত মির্যা সাহেব তাঁর দৈনন্দিন জীবনের সমুদয় সময় থাকেন আল্লাহ্‌ তা’লার এবাদতে মশগুল, অথবা কুরআন শরীফের তেলাওয়াত ও গবেষণায় নিমগ্ন। তার অন্যান্য কর্মতৎপরতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ড হচ্ছে যে, দীন ইসলামের স্বপক্ষে সদা-সর্বদাই তিনি কলমের সংগ্রামে লিপ্ত থাকেন। এমনকি ভারত সম্রাজ্ঞী ও রাজ রাজেশ্বরী মহারানী ভিক্টোরিয়াকেও তিনি দীনে মুহাম্মদীর দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। তদনুরূপ মহাপ্রতাপশালী রাশিয়ার “যার” এবং ফ্রান্সের অধিপতিকেও তিনি ইসলামের দিকে দাওয়াত দিয়েছেন। জীবনে এটাই তার একমাত্র এবং সর্বশ্রেষ্ঠ ব্রত যে, ত্রিত্ববাদ ও সলীব ধর্মের ডাহা মিথ্যা আকিদাকে বর্জন করে জগদ্বাসী যেন খোদাতা’লার একত্ববাদের উপর বিশ্বাস আনয়ন করে।

কিন্তু এটা বড়ই পরিতাপের বিষয় যে, বর্তমান যুগে ওলামাদের এ অবস্থা দাড়িয়েছে যে, মিথ্যা ধর্মাবলম্বীদের কর্মতৎপরতার বিরোধিতা না করে তারা কেবল এরূপ এক পুণ্যবান ব্যক্তির পিছনে বিরুদ্ধাচরণ করতে মেতে উঠেছেন যিনি প্রকৃতপক্ষে একজন পাক্কা “আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতের অন্তর্ভুক্ত” এবং সিরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত রয়েছেন। আর যিনি সর্বদাই জনসাধারণকে হেদায়াতের দিকে আহবান করে থাকেন। হায় আক্ষেপ ! এরূপ এক ব্যক্তির উপরেই ওলামাগণ কুফরী ফতওয়া লাগাচ্ছে। তোমরা অন্ততঃ তারই রচিত আরবী কালামগুলোকে একটু (চোখ বুলিয়ে)

পাঠ করে দেখে নাও যা মানুষের শক্তির উর্ধ্বে এবং তার সমুদয় কালাম কেবল “মায়ারেফ, হাকায়েক ও হেদায়াতে ভরপুর” – ‘এরশাদাতে ফরীদী’ ৩য় খন্ডের ৬৯ পৃঃ মুফীদে আম প্রেস, আগ্রা হতে প্রকাশিত, ১৩২০ হিঃ)।

১১

ব্রিটিশ আমলে উত্তর ভারতের বিখ্যাত শহর এলাহাবাদ হতে পাইওনিয়ার’ নামে একটি ইংরেজী দৈনিক পত্রিকা প্রকাশ হত। এই প্রখ্যাত দৈনিক পত্রিকাটির সম্পাদক, মালিক ও ম্যানেজার সবাই ইউরোপীয়ান পৃষ্টান ছিলেন। হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর এন্তেকালের পর উপরোক্ত পাইওনিয়ার’ পত্রিকা তার সম্পর্কে যে শ্রদ্ধাঞ্জলী প্রকাশ করেছিল তার সংক্ষিপ্ত বিবরণ নিম্নে সন্নিবেশিত করা হলঃ

“অতীতকালের ইস্রাঈলী নবীদের মধ্যে কেউ যদি এ যুগে স্বর্গ হতে অবতরণ করে বর্তমান যুগের নব্য পরিবেশের মধ্যে স্বীয় মতবাদ পুনঃ প্রচার করা শুরু করতেন তবে তদবস্থায় এই বিংশ শতাব্দীতে মির্যা গোলাম আহমদ খান * কাদিয়ানী সাহেবের দাবী উপেক্ষা করে যাওয়া তাদের জন্য মোটেই সম্ভবপর ছিল না। (এর একমাত্র কারণ হচ্ছে যে, মির্যা সাহেবের দাবীর সাথে সংঘটিত ঘটনাসমূহ এবং ইস্রাঈলী নবীদের সব কর্মকাণ্ড যেন একই সূত্রে গাঁথা এবং পরস্পরের মধ্যে অভিন্ন সামঞ্জস্য বিদ্যমান ছিল)।”

ইহা অবধারিত সত্য যে, মির্যা সাহেবের আলেমান হায়সিয়ত (জ্ঞানের পরিসর) সম্পর্কে কোনরূপ মন্তব্য পেশ করার মত এমন কোন যোগ্যতার অধিকারী আমরা নই। তবে দ্ব্যর্থহীন ভাষায় আমরা বলতে পারি যে, নিজ দাবী সম্পর্কে মির্যা সাহেবের অন্তরে কোন প্রকার সন্দেহ, ও দ্বিধা-দ্বন্দ্বের লেশমাত্রও বিদ্যমান ছিল না। একান্ত দৃঢ়চিত্তে তিনি হৃদয়ে এরূপ বিশ্বাসই পোষণ করতেন যে, তার উপরে স্বয়ং আল্লাহই বাণী অবতীর্ণ করেন এবং অস্বাভাবিকরূপে তিনি আল্লাহ প্রদত্ত একটি (অজেয়) শক্তির অধিকারী ছিলেন।

“একদা বিশপ ‘ওয়েলডেন’ সাহেবকে ঐশী নিশান প্রদর্শনার্থে তার মোকাবিলা করার জন্য জোরালো ভাষায় চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, যা পেয়ে “ওয়েলডেন” সাহেব একেবারে হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন।

ইলিয়াস নবী যেভাবে ‘বাল’ নামক মূর্তিপূজার পুরোহিতগণকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন, মির্যা সাহেবের উপরোক্ত চ্যালেঞ্জও প্রকৃতপক্ষে তদনুরূপই ছিল।”

* টীকাঃ পাইওনিয়ার “এর সম্পাদক সাহেব হযরত আকদসের নামের সাথে খান শব্দটি ভুলক্রমে ব্যবহার করেছেন। আমরা কোন শুদ্ধি না করে হুবহু এর মধ্যে তাদের ভাষারই ব্যবহার করেছি। – (গ্রন্থকার)

 

“মির্যা সাহেবের এ ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখ্য উদ্দেশ্য এ ব্যতীত আর কিছুই ছিল না যে, ইসলামই একমাত্র সত্য ও জীবিত ধর্ম। তাছাড়া মির্যা সাহেব এজন্য সর্বদাই প্রস্তুত থাকতেন যে, যে প্রকারেই হোক যুগের চাহিদা অনুযায়ী পাদরী সাহেবানরা নিজের একটা এতমিনান (satisfaction) হাসেল করে নিতে পারেন যেন ইসলামের স্বপক্ষে কোন ঐশী নিদর্শন প্রদর্শনের ব্যাপারে কোন প্রকার সন্দেহেরই অবকাশ না থাকে।
যেসব উচ্চ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন ক্ষণজন্মা ধর্মযাজকবৃন্দ যারা ধর্মীয় ব্যাপারে পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টি করে থাকেন তাদের মধ্যে বর্তমান যুগে কাদিয়ানের মির্যা গোলাম আহমদ খানই সবচেয়ে অধিকতর সামঞ্জস্যপূর্ণ সাদৃশ্য রাখেন, যেরূপ ধর্মীয় ব্যাপারে অথরিটি তথা অথেনটিসিটি (Authenticity) প্রদর্শনের জন্য ইংল্যান্ডের কোন কোন লাট-পাদরী সাহেবানদের দৃষ্টান্ত দেওয়া হয়ে থাকে।”

উক্ত পত্রিকাটি এ-ও মন্তব্য করেছে যেঃ “আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফ্রান্সের সাহিত্যিক মিষ্টার আর্ণেষ্ট রিন (Arnest Rin) সাহেবের মত লোকও যদি বিগত বিশ বৎসরের ভিতরে ভারতবর্ষে পদার্পণ করতেন তবে অবশ্যই তিনি মির্যা সাহেবের নিকট পৌছে যেতেন এবং মির্যা সাহেবের উচ্চমানের প্রতিভাময় অবস্থাকে অবশ্যই স্বীয় গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত করে ফেলতেন যার ফলে অতীতের ইস্রাঈলী নবীদের জীবনে সংঘটিত আশ্চর্যজনক অলৌকিক ঘটনা প্রবাহের উপর এক নূতন আলোকের সন্ধান পেয়ে যেতেন।
যাহোক, এরূপ গবেষণামূলে কাদিয়ানের এই নবী তাদের মধ্যেই গণ্য হয়ে যেতেন, সাধারণতঃ যারা সদা-সর্বদা এবং সর্ব যুগে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয় না।” – (‘দি পাইওনিয়ার’, এলাহাবাদ-১৯০৮ সনের জুন সংখ্যা)

১২

একজন ভারত বিখ্যাত আলেম মৌলবী নূর মুহাম্মদ কাদেরী, নকশবন্দী, চিশতী, যিনি মৌলানা আশরাফ আলী থানবী সাহেবের লেখা “তাফসীরুল কুরআন”-এর ভূমিকা লিখেছিলেন, তিনি উক্ত তাফসীরুল কুরআনের ভূমিকায় হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ) সম্বন্ধে লিখেছেন যেঃ

“বিলাত থেকে ইংরেজরা পাদ্রীদিগকে বহু টাকা-পয়সা দিয়ে ভারতে পাঠিয়েছিলেন এবং ভবিষ্যতে আরো অর্থ সাহায্য দেওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তারা ভারতে এসে মুসলমানদের খৃষ্টধর্মে দীক্ষিত করার জন্য তোলপাড় আরম্ভ করে দিলেন। তখন (পাঞ্জাবের) মৌলবী গোলাম আহমদ কাদিয়ানী তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাড়ালেন এবং পাদ্রী লেফ্রাই ও তার সহচরগণকে বল্লেন যে, তোমরা যে ঈসা (আঃ)-এর কথা বলছ তিনি অন্যান্য মানুষের ন্যায় ইহলীলা ত্যাগ করে সমাধিস্থ হয়ে গিয়েছেন, এবং যে ঈসা (আঃ)-এর আগমনের সংবাদ আছে, আমিই সেই ব্যক্তি। সুতরাং তোমরা যদি পুণ্যবান হও তাহলে আমাকে গ্রহণ কর।

এ পন্থা অবলম্বন করে তিনি পাদরী লেফ্রাই সাহেবকে এরূপ নাজেহাল করলেন যে, তার পরিত্রাণের কোন পথ বাকী রইল না। একই উপায়ে তিনি ভারত হতে আরম্ভ করে সুদূর ইংল্যাণ্ডের পাদরীগণকে পর্যুদস্ত ও পরাস্ত করলেন”-(“মোজেযন্মা কুরআন শরীফ মৌলানা আশরাফ আলী থানবী, ভূমিকা পৃষ্ঠা ৩০, প্রথম সংস্করণ)।

১৩

দিল্লীর “কার্জন গ্যাজেট” পত্রিকার সম্পাদক ও বিখ্যাত জার্নালিস্ট মির্যা হায়রাত দেহলবী তার পত্রিকায় লিখেছেনঃ

“আর্যসমাজে ধৃষ্টানগণের মোকাবেলায় মরহুম হযরত মির্যা সাহেব যে ইসলামী খেদমত করেছেন, তা বস্তুতঃই অত্যন্ত প্রশংসাযুক্ত। তিনি ধর্মীয় বিতর্কের রূপকে সম্পূর্ণরূপে পাল্টে দিয়েছেন এবং হিন্দুস্থানে এক নতুন সাহিত্যের বুনিয়াদ কায়েম করেছেন। একজন মুসলমান হিসেবে এবং গবেষণাকারীরূপে আমি ইহা স্বীকার করছি, যে, কোন বড় হতে বড় আর্যসমাজ পণ্ডিত অথবা খৃষ্টান-পাদ্রীর এই ক্ষমতা ছিল না যে, মরহুম মির্যা সাহেবের মোকাবেলায় তারা মুখ খুলতে পারতো। যদিও মরহুম মির্যা সাহেব পাঞ্জাবী ছিলেন, কিন্তু তার কলমে এরূপ অপূর্ব শক্তি ছিল যে, আজ সারা পাঞ্জাবেই নয় বরং সমগ্র হিন্দুস্থানে তার পর্যায়ের শক্তিশালী লেখক দৃষ্টিগোচর হয় না।
তার রচনা নিজ সাজে সম্পূর্ণ অপূর্ব এবং বস্তুতঃ তার কোন কোন লেখা পড়লে আত্মবিভোর হতে হয়। তিনি তার শত্রুদের ধ্বংসের ভবিষ্যদ্বাণী, বিরুদ্ধাচরণ এবং কু-সমালোচনার অগ্নিসাগর পার হয়ে আপন পথ পরিষ্কার করেছিলেন এবং উন্নতির উচ্চমার্গে উপনীত হয়েছিলেন” – (“কার্জন গ্যাজেট” – দিল্লী ১লা জুন, ১৯০৮)।

১৪

পাক-ভারতের একজন বিখ্যাত জার্নালিষ্ট ও বিচক্ষণ আলেম মৌলবী সুজাউল্লাহ্ খান সাহেব তাঁর নিজস্ব “মিল্লাত” নামক পত্রিকায় হযরত মির্যা সাহেব সম্পর্কে একটি গবেষণামূলক নিবন্ধ “আবুল ফযল” ছদ্মনামে লিপিবদ্ধ করেছিলেন। উক্ত নিবন্ধে মৌলানা সুজাউল্লাহ খান সাহেব হযরত মির্যা গোলাম আহমদ সম্পর্কে সাক্ষ্য প্রদান করেছেন –

“মরহুম মির্যা গোলাম আহমদ সাহেবের কলমে যাদু ছিল। তার একাধিক দুরারোগ্য ব্যাধি থাকা সত্ত্বেও তিনি যত লেখনীর কাজ করে গেছেন এবং ধর্মীয় জগতে তাঁর লেখনীর মাধ্যমে যে বিরাট প্রভাব বিস্তার করে গেছেন সেদিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলে তাকে ‘সুলতানুল কলম’ অর্থাৎ লেখনী সম্রাট আখ্যা দিলে কোন অতৃক্তি হবে না। এই বুযর্গ ব্যক্তি তার জ্ঞান ও তার বক্তৃতাসমূহের মাধ্যমে যেরূপ প্রভাব জনসাধারণের উপর বিস্তার করতেন তাতে তার ঘোর বিরোধী মহলেও যাদু বলে ধোকার ধারণা হয়ে যেত।” – (‘মিল্লাত’ দিল্লী, ১৯১০ সন এবং আল হাকাম’ পত্রিকা ৭ই জানুয়ারী, ১৯১১ সনঃ পৃষ্ঠা ১৩-১৫)

১৫

দিল্লীর অপর আরেকজন সাহিত্যিক ও জার্নালিষ্ট মৌলানা আবদুল হালীম “সারার” লিখেছেন, “মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানীর আহমদীয়া মতবাদ ইসলামী শরীয়তকে পূর্ণ শক্তি ও শানের সাথে অবলম্বন করে উহার তবলীগ ও প্রসারে নিয়োজিত আছে।
-সংক্ষেপে এই যে ইরানের বাহাই ও বাবীধর্ম যেমন ইসলামকে ধ্বংস করার জন্য সৃষ্টি করা হয়েছিল অপরদিকে আহমদীয়ত ইসলামকে শক্তিশালী করার জন্য এবং উহার আশিসকে চিরস্থায়ী করার জন্য কায়েম করা হয়েছে। আহমদী মতবাদের সঙ্গে আমার কিছু মতভেদ থাকা সত্ত্বেও আমি ইহা স্বীকার করতে বাধ্য যে, আহমদীগণ যেরূপ ইসলামের খাঁটি সেবা এবং অকৃত্রিম খেদমত করছেন অন্য মুসলমানরা তা হতে বঞ্চিত।” – (মাসিক পত্রিকা “দিলগুদাজ” লক্ষ্ণৌ, জুন, ১৯২৬ সংখ্যা)

সীরাতে সুলতানুল কলম’ পৃষ্ঠা: ১১৫ – ১২৪