মির্যা সাহেবের মৃত্যু সম্পর্কিত অপবাদ খণ্ডন


বিরুদ্ধবাদীগণ সর্বদাই জঘন্য মিথ্যা রটনা করে আল্লাহর প্রিয় নবী-রসূলদের
বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে এবং এটা একটি চিরন্তন বিধান। যেরূপ আমাদের প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধে সেই যুগেই বিরুদ্ধবাদীগণ তাকে যাদুকর, ভন্ড নবী, ছলনাকারী আখ্যা দিয়েছিল (নাউযুবিল্লাহ)। হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ)-এর বিরুদ্ধেও কোন কোন বিরুদ্ধবাদী এরূপ একটি জঘন্য মিথ্যা ও অবাস্তব কথাও রটনা করে থাকে যে, “কলেরা রোগে মির্যা সাহেবের মৃত্যু হয়েছিল এবং দুই তিন দিন তার লাশ মৃত্যু স্থানেই পড়েছিল। তার অন্তেষ্টিক্রিয়ার ব্যবস্থা করার কোন লোকজন ছিল না” ইত্যাদি। (নাউযুবিল্লাহ)। এটা একটা জঘন্য মিথ্যা ছাড়া কিছুই নয়।

লা’নাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন। মিথ্যাবাদীদের উপরে আল্লাহর অভিশাপ বর্ষিত হোক।

পূর্বেই বলা হয়েছে যে মৃত্যুকালে তার স্ত্রী, পুত্র পরিবার এবং তার শিষ্যমন্ডলীর মধ্যে ডাঃ মির্যা ইয়াকুব বেগ সাহেব, হযরত মৌলানা নূরুদ্দীন সাহেব ও গণ্যমান্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন তার সহচরগণ সেখানে উপস্থিত ছিলেন। সুতরাং এরূপ মিথ্যা ও অবাস্তব কথার কোন অস্তিত্ব থাকতে পারে না।

বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম নবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর বিরুদ্ধেও শত্রুগণ জঘন্য মিথ্যা
রচনা করে গেছেন। যথাঃ

বিখ্যাত খৃষ্টান ধর্মযাজক “হেনরী স্মিথ” যিনি রানী এলিজাবেথের সময়কার লোক ছিলেন, তিনি নিম্নলিখিত গল্পটির উল্লেখ করেছেন (নাউযুবিল্লাহ্‌)

“একদা পানোন্মত্ত অবস্থায় মোহাম্মদ তাঁহার প্রাসাদে বসিয়া আছেন এমন সময় তাহার পুরাতন রোগটির আক্রমণের আশঙ্কা করে তিনি খুব তাড়াতাড়ি সেখান হইতে উঠিয়া গেলেন। যাওয়ার সময় সকলকে বলিয়া গেলেন যে, কোন দেবদূতের আহ্বানে তিনি উঠিয়া যাইতেছেন। এ অবস্থায় কেহ যেন তাহার অনুসরণ না করে, অন্যথায় দেবদূতের কোপে পড়িয়া নিধনপ্রাপ্ত হইতে হইবে। রোগাক্রমণের ফলে মাটিতে পড়িয়া যেন আঘাতপ্রাপ্ত না হন এই উদ্দেশ্যে তিনি একটি গোবর গাদার উপর উঠিয়া বসিলেন। সেই সময় রোগাক্রমণের ফলে তিনি সেখানে পড়িয়া ছটফট করিতে লাগিলেন। ইহা দেখিতে পাওয়া মাত্র একপাল শূকর সেখানে ছুটিয়া আসিল ও তাহাকে
খন্ড-বিখন্ড করিয়া ফেলিল এবং এইরূপে মোহাম্মদের জীবনলীলার অবসান হইয়া গেল।
এই সময়ে শূকরের চিৎকার শুনিয়া তাহার স্ত্রী ও অন্যান্য পরিজনবর্গ সেখানে ছুটিয়া আসিয়া দেখিলেন যে, তাহাদের প্রভুর শরীরের অধিকাংশই শূকরদল খাইয়া ফেলিয়াছে। তখন তাহারা দেহের অবশিষ্টাংশ সংগ্রহ করিয়া সেগুলিকে একটি স্বর্ণ রৌপ্য খচিত কাষ্ঠ পেটিকার মধ্যে স্থাপন করিলেন এবং সকলে একত্র হইয়া ঘোষণা করিয়া দিলেন, যে স্বর্গের দেব-দূতরা প্রভুর শরীরের অল্পাংশ মাত্র মর্ত্যবাসীদিগের জন্য রাখিয়া আনন্দ কোলাহল সহকারে তাহার দেহের অধিকাংশ স্বর্গধামে লইয়া গিয়াছেন।
মুসলমান জাতির শূকরের প্রতি ঘৃণার মূল কারণ ইহাই।”
(নাউযুবিল্লাহ মিন যালিক, লা’নাতুল্লাহে আলাল কাযেবীন)

(বাংলার স্বনামধন্য আলেম মৌলানা মুহাম্মদ আকরাম খাঁ সাহেব কর্তৃক লিখিত ‘মোস্তফা চরিত’ তৃতীয় সংস্করণ, ১০৬ পৃঃ দৃষ্টব্য।)

এবং

–(Flowers of History ১ম খন্ড, ৭৪ পৃষ্ঠা; Bohn, 1819)
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, আমাদের প্রিয় নবী (সাঃ) ও নবীকুল শিরোমণি সম্পর্কে এরূপ জঘন্য মিথ্যা রটনার পরেও তার মহান চরিত্রের উপর কোন কালিমা লেপন করা যেরূপ বিরুদ্ধবাদীগণের পক্ষে সম্ভব হয়নি সেরূপই হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-এর মৃত্যু সম্পর্কে কোন প্রকার মিথ্যা অপবাদের দ্বারা তার উপর কোনরূপ কলঙ্ক লেপন করা বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষে সম্ভব হয়নি এবং আদৌ হবে না।

সীরাতে সুলতানুল কলম’ পৃষ্ঠা: ১০২ – ১১০