‘শান্তি ও সৌহার্দ্যের ধর্ম ইসলাম’- সম্বর্ধনা: ব্রিটিশ হাউসেস অফ পার্লামেন্ট – ২০১৩

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস

১১-জুন, ২০১৩

ব্রিটিশ হাউসেস অফ পার্লামেন্ট, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

পটভূমি

১১ই জুন, ২০১৩ আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব প্রধান হযরত মির্যা মসরূর আহমদ, খলীফাতুল মসীহ্‌ আল খামেস (আই.) যুক্তরাজ্যে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত প্রতিষ্ঠার শতবর্ষ উদ্যাপন উপলক্ষ্যে লন্ডনের হাউসেস অফ পার্লামেন্ট-এ আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন। এ শতবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে ৩০ জন সংসদ সদস্য, হাউস অফ লর্ড্‌স-এর ১২ জন সদস্য, ৬ জন ক্যাবিনেট মন্ত্রী, ২ জন মন্ত্রী সহ ৬৮ জন গণ্যমান্য অতিথি অংশগ্রহণ করেন। এ ছাড়াও বিবিসি, স্কাই টিভি ও আইটিভি সহ বিভিন্ন সংবাদ সংস্থার প্রতিনিধিবৃন্দ এ অনুষ্ঠানের সংবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে উপস্থিত ছিলেন। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন জ্বালানী ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সেক্রেটারি অফ স্টেট রাইট অনারেবল এড ডেভী এমপি, উপ প্রধান মন্ত্রী রাইট অনারেবল নিক ক্লেগ এমপি, স্বরাষ্ট্র সেক্রেটারি রাইট অনারেবল থেরেসা মে এমপি, পররাষ্ট্র বিষয়ক শ্যাডো সেক্রেটারি রাইট অনারেবল ডগলাস আলেকজান্ডার এমপি, স্বরাষ্ট্র বিষয়ক সিলেক্ট কমিটির সভাপতি রাইট অনারেবল কীথ ভায এমপি এবং মিচহাম ও মর্ডেনের সংসদ সদস্য সিওভাইন ম্যাক্‌ডনা এমপি।

শান্তি ও সৌহার্দ্যের ধর্ম ইসলাম

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম – আল্লাহ্‌র নামে যিনি অযাচিত অসীম দাতা, বার বার দয়াকারী।

সকল সম্মানিত অতিথিবৃন্দ – আস্‌সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতাহু- আল্লাহ্‌ তা’লার শান্তি ও রহমত আপনাদের সকলের উপর বর্ষিত হোক।

আমি প্রথমে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের সেই সকল বন্ধুদের ধন্যবাদ জানাতে চাই যারা যুক্তরাজ্যে আমাদের সম্প্রদায়ের শতবার্ষিকী উপলক্ষ্যে মেহেরবানী করে আমাদের প্রতি তাদের বন্ধুত্ব ও কাছের সম্পর্ক প্রকাশের উদ্দেশ্যে খোদ হাউসেস অফ পার্লামেন্টের অভ্যন্তরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। আমি সেই সকল অতিথিদেরও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করতে চাই যারা আজ এখানে উপস্থিত হয়ে এ অনুষ্ঠানের সফলতা ও সার্থকতা নিশ্চিত করেছেন। আমি সন্তুষ্টচিত্তে লক্ষ্য করছি যে আপনারা উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় আপনাদের অন্যান্য ব্যস্ততা ও সভাসমূহ ছেড়ে আজ এখানে উপস্থিত হয়েছেন।

আপনাদের এ অভিব্যক্তির প্রত্যুত্তরে আমার ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন ছাড়াও আমি বলতে চাই যে, এটি আমার আন্তরিক আশা ও দোয়া এই যে, এই অনবদ্য ও রাজকীয় ভবনে যে সকল বিভাগ ও লোকজন কাজ করেন তারা যেন এ দেশ ও এর জনগণের সেবার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে। আমি আরো আশা ও দোয়া করি যে, তারা অপরাপর জাতির সাথে সুসম্পর্ক তৈরির উদ্দেশ্যে যেন সম্ভাব্য সর্বোত্তম পন্থা অবলম্বন করতে সক্ষম হয়, তারা যেন ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারে আর এভাবে যেন সেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে যা সকল পক্ষের জন্য কল্যাণকর হয়। যদি এ প্রেরণা অবলম্বন করা হয়, তবে সর্বোত্তম ফল লাভ হবে, যা হল ভালবাসা, সহমর্মিতা ও ভ্রাতৃত্ববোধের এবং যা পৃথিবীকে শান্তি ও সমৃদ্ধির প্রকৃত নীড়ে পরিণত হওয়ার পথে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

আমারা এ আকাঙ্ক্ষা সকল আহমদী মুসলমানের, কেননা আমরা বিশ্বাস করি যে, নিজ দেশ ও বৃহত্তর পরিসরে মানবতার জন্য এক গভীর ভালবাসা থাকা আবশ্যক। নিশ্চিতভাবে আহমদী মুসলমানেরা বিশ্বাস করে যে, নিজ দেশের প্রতি ভালবাসা ঈমানের এ অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ, কেননা ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) আমাদেরকে এ তাগিদপূর্ণ আদেশ ও শিক্ষাই দিয়ে গেছেন। তাই, আমি এ সুযোগে এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে চাই যে, যে কোন আহমদী মুসলমান যে ব্রিটিশ নাগরিক, তার জন্ম এখানে যুক্তরাজ্যেই হোক বা তিনি অন্য কোন দেশ থেকে অভিবাসী হিসেবে এখানে আগমন করে থাকুন না কেন, এ দেশের প্রতি সম্পূর্ণ বিশ্বস্ত ও এবং এর জন্য আন্তরিক ভালবাসা রাখেন। এ মহান দেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধিই তাদের একমাত্র কাম্য।

যুক্তরাজ্যে বর্তমানে অন্যান্য দেশ থেকে আগত মানুষের সংখ্যা অনেক এবং অনুমান করা হয় যে তা দেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ১৪-১৫% শতাংশ। আর তাই, স্থানীয় ব্রিটিশ জনগণ যেভাবে অভিবাসীদেরকে এ দেশের নাগরিক হিসেবে গ্রহণ করেছে এবং ব্রিটিশ সমাজের এক অংশ হিসেবে তাদেরকে স্থান দিয়েছে, তার জন্য তাদের উদারতা ও সহিষ্ণুতার মহান গুণাবলীর উল্লেখ এবং প্রশংসা না করে আমার পক্ষে অগ্রসর হওয়া সম্ভব নয়। তাই এ অর্থে যারা এদেশে বসতি স্থাপনের জন্য এসেছে তাদের উপর এ নৈতিক দায়িত্ব বর্তায় যে, তারা যেন নিজেদেরকে এদেশের বিশ্বস্ত নাগরিক হিসেবে সাব্যস্ত করেন এবং সরকার বিশৃংখলা ও দ্বন্দ্ব মোকাবেলার জন্য যে প্রয়াস গ্রহণ করে থাকে সেগুলোকে অবশ্যই সমর্থন করেন। যতদূর পর্যন্ত আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়ের সম্পর্ক এর সদস্যগণ যে দেশেই বাস করুক না কেন এ নীতির উপর আমল করে থাকেন।

যেমনটি আপনারা অবহিত আছেন, আমরা বর্তমানে যুক্তরাজ্যে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের শতবার্ষিকী উদ্যাপন করছি। বিগত ১০০ বছর এ প্রমাণ দেয় ও সাক্ষ্য বহন করে যে, আহমদীয়া সম্প্রদায়ের সদস্যগণ সর্বদা দেশের প্রতি বিশ্বস্ততার দাবি পূরণ করেছে ও সকল প্রকার চরমপন্থা, বিদ্রোহ ও বিশৃংখলা থেকে দুরে অবস্থান গ্রহণ করেছে। বাস্তবে দেশের প্রতি এ বিশ্বস্ত ও ভালভাসাপূর্ণ দৃষ্টিভঙ্গী পুরোপুরি এ কারণে যে. আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত একটি সত্য ইসলামী ধর্মীয় সম্প্রদায়। এক্ষেত্রে আমাদের সম্প্রদায় অন্য সকলের থেকে ভিন্ন যে, আমরা ক্রমাগতভাবে ইসলামের সত্য ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষাকে বিশ্বের মানুষের কাছে পরিচিত করেছি আর আমরা সব সময় চেষ্টা করেছি যেন ঐ সকল সত্য শিক্ষাগুলো ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হিসেবে গৃহিত হতে থাকে।

পরিচিতিমূলক এ কয়টি কথার পর আমি এখন আমার বক্তৃতার মূল বিষয়ের দিকে যাব। আমাদের জামা’ত শান্তি, সমঝোতা ও সৌহার্দ্যরে পতাকাবাহী, আর এ জন্যই আমাদের মূলমন্ত্র হল ‘ভালবাসা সবার তরে, ঘৃণা নয় কারো ’পরে’। যদিও কোন কোন অমুসলিম আমাদেরকে জানেন বা আমাদের সাথে আন্তরিক সম্পর্ক রাখেন, তারাও খুবই বিস্মিত হন যে, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত এ শান্তি ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ বাণীকে সরাসরি ইসলামের প্রতি আরোপ করে থাকেন। তাদের বিস্মিত ও হতবাক হওয়ার কারণ এই যে, তারা দেখে থাকেন যে, আরো অনেক তথাকথিত ইসলামী উলামা ও সংগঠন এর চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন আঙ্গিকে কথা বলে ও আচরণ করে থাকেন এবং এর চেয়ে খুবই ভিন্ন এক বাণীকে প্রচার করে থাকেন। এ পার্থক্যের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে প্রথমেই স্পষ্ট করি যে, আমরা আহমদী মুসলিমরা বিশ্বাস করি যে, এ যুগে ‘তরবারির সহিংস জিহাদ’-এর ধারণা সম্পূর্ণ ভুল এবং পরিত্যাজ্য, অথচ কতক মুসলিম আলেম এর প্রচার, এমনকি এর চর্চা করে থাকে। তাদের বিশ্বাসসমূহের কারণে বিশ্বের বিভিন্ন অংশে মুসলমানদের মাঝে বহুল সংখ্যক চরমপন্থী ও সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর জন্ম হয়েছে।

কেবল এই নয় যে, গোষ্ঠীসমূহের উদয় হচ্ছে, বরং আমরা এও দেখি যে, কত একক ব্যক্তিও এগুলোর সুযোগ নিচ্ছে এবং এ সকল ভ্রান্ত বিশ্বাসের উপর আমল করছে। এর সবচেয়ে সাম্প্রতিক উদাহরণ, নিঃসন্দেহে, লন্ডনের রাস্তায় এক নিরীহ ব্রিটিশ সৈন্যের নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এটি ছিল এমন এক হামলা যার সাথে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার দুরতম সম্পর্কও নেই; বরং ইসলামের শিক্ষা এমন কাজকে ঘোরতর নিন্দা জ্ঞাপন করে। এমন কুচক্র ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা এর সেই বিভ্রান্ত শিক্ষার মধ্যে পার্থক্যকে স্পষ্ট করে দেয় কতক তথাকথিত মুসলিম তাদের হীন উদ্দেশ্যসমূহ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে যার চর্চা করে আসছে। আমি আরো বলতে চাই যে, কতক স্থানীয় গোষ্ঠী এতে যে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে তা সঠিক নয় এবং তা সমাজের শান্তি বিনষ্ট করতে পারে।

আমরা ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে যে বিশ্বাসের দাবি করছি তার সপক্ষে কী দলিল রয়েছে? অন্তর্নিহিত যে বিষয়টি বিবেচনা করা আবশ্যক তা এই যে, ইসলামে অস্ত্র ধারণ বা বল প্রয়োগের অনুমতি কেবল তখনই দেয়া হয়েছে যখন ইসলামের বিরুদ্ধে ধর্মযুদ্ধের সূচনা করা হয়। আজকের পৃথিবীতে কেউই, কোন দেশ বা কোন ধর্ম ইসলামের বিরুদ্ধে কেবল ধর্মীয় ভিত্তিতে বাহ্যিক যুদ্ধ পরিচালনা করছে না। তাই, মুসলমানদের পক্ষে ধর্মের নামে অন্য কারো উপর আক্রমণ পরিচালনা করা যুক্তিসঙ্গত নয়, কেননা এটি কুরআনের শিক্ষার স্পষ্ট লঙ্ঘন।
কুরআন কেবলমাত্র তাদের বিরুদ্ধে বল প্রয়োগের অনুমতি দেয় যারা ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সূচনা করে ও তরবারী ধারণ করে। আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল যদি কোন নাগরিক তার নিজ দেশ বা স্বদেশীর কোন প্রকার ক্ষতি সাধনে প্রয়াসী হয় তবে সে স্পষ্টতঃ ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী আচরণ করে। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন যে, যে ব্যক্তি কোন নিরীহ ব্যক্তির রক্তপাত করে সে মুসলমান নয়। মহানবী (সা.) এমন ব্যক্তিকে ঈমানে দূর্বল ও পাপিষ্ঠ হিসেবে গণ্য করেছেন।

আমি এখন ইসলামের অন্য কতক আঙ্গিকের দিকে দৃষ্টি ফেরাবো যেগুলো প্রমাণ করে যে এর শিক্ষাসমূহ আসলেই কতটা আলোকিত ও বিশুদ্ধ। আমি ব্যাখ্যা করবো যে, যেভাবে কতক তথাকথিত মুসলিম গ্রুপ ইসলামকে উপস্থাপন করে থাকে তা কোনক্রমেই এ ধর্মের প্রকৃত শিক্ষার প্রতিনিধিত্ব করে না। এটি স্পষ্ট হয়ে যাবে যে, তাদের কর্মকাণ্ডের একমাত্র উদ্দেশ্য ইসলামের নামের মিথ্যা ব্যবহার করে তাদের ঘৃণাপূর্ণ কাজকে বৈধততা দান করা।

ধর্মীয় সহিষ্ণুতার গুরুত্বের উপর ইসলাম এতখানি জোর দিয়ে থাকে যে অন্য কোথাও এর এত উচ্চ মান পাওয়া অসম্ভব হবে। অন্যান্যদের মধ্যে এ বিশ্বাসের প্রবণতা দেখা যায় যে, অন্যান্য ধর্মকে মিথ্যা সাব্যস্ত না করা পর্যন্ত তাদের নিজ ধর্মকে সত্য প্রমাণ করা সম্ভব নয়। ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গী অত্যন্ত ভিন্ন কেননা এটি শিক্ষা দেয় যে, একদিকে যেমন ইসলাম সমগ্র মানবজাতির জন্য প্রেরিত সত্য ধর্ম, কিন্তু প্রকৃত বিষয় এই যে, বিশ্বের সকল দেশের সকল জাতির মানুষের কাছে খোদা তা’লার পক্ষ থেকে নবীগণ প্রেরিত হয়েছিলেন। পবিত্র কুরআনে এ কথা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। আল্লাহ্‌ তা’লা বলেন যে, সকল নবীকে ভালবাসা ও সৌহার্দ্যের শিক্ষা দিয়ে তিনিই পাঠিয়েছেন, আর তাই সকল প্রকৃত মুসলমানের জন্য তাদেরকে স্বীকৃতি দান করা আবশ্যক। অন্য কোন ধর্ম এত স্বতঃস্ফূর্তভাবে ও এত খোলাখুলি সকল ধর্মবিশ্বাস ও সকল জাতির প্রশংসা করে নি। যেহেতু মুসলমানেরা বিশ্বাস করে যে, সকল দেশের সকল জাতির কাছে নবী প্রেরিত হয়েছে, তাদের পক্ষে তাদেরকে মিথ্যা বিবেচনা করাও সম্ভব নয়। তাই মুসলমানদের পক্ষে খোদা তা’লার কোন নবীকে অসম্মান, বিদ্রূপ বা অবমাননা করা সম্ভব না, আর না তাদের পক্ষে কোন ধর্মের অনুসারীদের অনুভূতিতে আঘাত হানা সম্ভব।

তথাপি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে কোন কোন অমুসলিমের দৃষ্টিভঙ্গী এর একেবারে বিপরীত। ইসলাম ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা (সা.) কে ঘোরতর বিদ্রূপ ও অপমান করার কোন সুযোগ তারা হাতছাড়া করে না, আর এভাবে মুসলমানদের অনুভূতিকে গভীরভাবে বিক্ষত করে। আমরা আমাদের অনুসৃত বিশ্বাসের কারণেই সত্য সত্যই ধর্মীয় সহিষ্ণুতা ও পারস্পরিক সমঝোতা কামনা করি। কিন্তু, দুর্ভাগ্যজনকভাবে, যখন কতক শ্রেণী মুসলমানদের অনুভূতি নিয়ে খেলা করে, এর পরিণামে কতক তথাকথিত মুসলিম এ উস্কানীর উত্তরে এক সম্পূর্ণ ভুল ও দায়িত্বহীন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করে। তাদের প্রতিক্রিয়া ও প্রত্যুত্তরের সাথে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার কোন সম্পর্ক নেই আর আপনারা দেখবেন যে কোন আহমদী মুসলমান, তাদেরকে যতই উস্কানী দেয়া হোক না কেন, কখনই এমন নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করবে না।

আরেকটি বড় অভিযোগ যা ইসলামের প্রতিষ্ঠাতা (সা.) এবং কুরআনের বিরুদ্ধে করা হয় তা এই যে, ইসলামে চরমপন্থিতার শিক্ষা দেয়া হয়েছে আর ইসলামের বাণীর প্রচারের জন্য বল প্রয়োগকে উৎসাহিত করা হয়েছে। এ অভিযোগটি যাচাই করে প্রকৃত বাস্তবতার অনুসন্ধানে আসুন আমরা কুর’আনের মধ্যেই দৃষ্টিপাত করি। আল্লাহ্‌ তা’লা বলেন:

এবং যদি তোমার প্রভু ইচ্ছা করতেন তাহলে ভূ-পৃষ্ঠে যত লোক আছে তারা ঈমান আনতো। সুতরাং তুমি কি লোকদেরকে ঈমান আনতে বাধ্য করবে? (১০:১০০)

এ আয়াতে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে সকল শক্তির অধিকারী খোদা তা’লা সহজেই সকল মানুষকে বাধ্য করতে পারতেন একই ধর্ম গ্রহণ করতে; কিন্তু, এর বদলে, তিনি পৃথিবীর মানুষকে নিজের পথ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিয়েছেন – বিশ্বাস করার বা না করার।
আর যদি খোদা তা’লা মানুষকে এ নিজের পথ বেছে নেয়ার স্বাধীনতা দিয়ে থাকেন, তবে মহানবী (সা.) বা তাঁর কোন অনুসারীর পক্ষে সম্ভব জোরপূর্বক বা বল প্রয়োগ করে কাউকে মুসলমান বানানো কিভাবে সম্ভব হতে পারে? আল্লাহ্‌ তা’লা কুরআনে আরো বলেন:

এটি তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে সমাগত সত্য; অতএব যার ইচ্ছা ঈমান আনুক, আর যার ইচ্ছা অস্বীকার করুক(১৮:৩০)

এটিই ইসলামের বাস্তবতা। এটিই এর প্রকৃত শিক্ষা। যদি কোন ব্যক্তির অন্তর আকাক্সক্ষা করে তবে সে ইসলাম গ্রহণ করার স্বাধীনতা রাখে, কিন্তু যদি তাদের হৃদয় না চায়, তবে তারা একে অস্বীকার করার বিষয়েও স্বাধীন। তাই ইসলাম পরিপূর্ণভাবে বলপ্রয়োগ ও চরমপন্থিতার বিরোধী; বরং, এটি সমাজের সকল পর্যায়ে শান্তি ও সৌহার্দ্য বজায় রাখার তাগিদ দিয়ে থাকে। ইসলামের পক্ষে সন্ত্রাস বা বলপ্রয়োগের শিক্ষা দেয়া খুবই অসম্ভব কেননা খোদ ‘ইসলাম’ শব্দের অর্থই হল শান্তিতে থাকা এবং অন্য সকলের জন্য শান্তির ব্যবস্থা করা। তথাপি যখন আমাদের ধর্মীয় অনুভূতির উপর বিদ্রূপাত্মক আঘাত করা হয়, এটি আমাদের জন্য গভীর মর্মপীড়া ও বেদনার কারণ হয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে অসম্মানজনক কোন উচ্চারণ আমাদের হৃদয়গুলোকে বিদীর্ণ ও ক্ষত-বিক্ষত করে।

এটিতো ইসলামের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা (সা.)-ই ছিলেন যিনি আমাদের অন্তরে খোদা তা’লার জন্য ভালবাসা ও তাঁর সৃষ্টির জন্য ভালবাসার জন্ম দিয়েছেন। তিনিই তো সেই ব্যাক্তিত্ব যিনি আমাদের মাঝে সমগ্র মানবজাতি ও সকল ধর্মের প্রতি ভালবাসা ও শ্রদ্ধা গেঁথে দিয়েছেন ও প্রতিষ্ঠা করেছেন। ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষার সপক্ষে মহানবী (সা.) যখন ইসলামের বাণী তাঁর বিরুদ্ধবাদীদের নিকট প্রচার করেন তখন তাদের প্রদত্ত উত্তরের চেয়ে বড় প্রমাণ আর কীইবা হতে পারে। তারা এ কথা বলে নি যে, ইসলাম গ্রহণের আমন্ত্রণ জানিয়ে মহানবী (সা.) তাদেরকে কোন অন্যায় বা নিষ্ঠুরতায় নিয়োজিত হতে আহ্বান করছেন। বরং তাদের উত্তর এই ছিল যে, যদি তারা নবীর শিক্ষাকে গ্রহণ করে নেয়, নির্দয় লোকেরা তাদের সম্পদ ও সামাজিক অবস্থান কেড়ে নেবে, কেননা মহানবী (সা.) কেবল শান্তি ও সৌহার্দ্যরে উপর জোর দিয়েছেন। তারা তাদের একটি শংকার কথা স্বীকার করেছেন যদি তারা ইসলাম গ্রহণ করে তবে শান্তি অবলম্বন করার কারণে পার্শ্ববর্তী জনগণ, গোত্রসমূহ বা জাতিসমূহ এর সুযোগ নিবে এবং তাদেরকে ধ্বংস করবে। সংক্ষেপে, যদি ইসলাম সন্ত্রাসের শিক্ষা দিয়ে থাকতো, আর যদি এটি মুসলমানদেরকে তরবারি ধারণ ও যুদ্ধ করার আহ্বান জানাতো, তবে স্পষ্টতঃই অবিশ্বাসীরা এ যুক্তি উপস্থাপন করতো না। তারা বলতো না যে, তারা ইসলামকে এ জন্য গ্রহণ করতে পারছে না যে, তাদের আশঙ্কা যে ইসলামী শান্তিপূর্ণ শিক্ষা দুনিয়াদারী লোকদের হাতে তাদের ধ্বংসের কারণ হবে।

পবিত্র কুরআন ঘোষণা করে যে আল্লাহ্‌ তা’লার একটি গুণবাচক নাম হল ‘আস-সালাম’, যার অর্থ হল তিনি ‘শান্তির উৎস’। স্বভাবতঃই যদি খোদা তা’লা প্রকৃতই ‘শান্তির উৎস’ হয়ে থাকে তবে তাঁর শান্তি, কোন নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না হয়ে, তাঁর সকল সৃষ্টি ও সমগ্র মানবজাতিকে পরিবেষ্টন করা উচিত। যদি খোদা তা’লার শান্তি কেবল কতক মানুষকে রক্ষা করার জন্যই হয়ে থাকে তবে এ কথা বলা যায় না যে তিনি সমগ্র বিশ্বের জন্য এক খোদা। আল্লাহ্‌ তা’লা এ বিষয়টির উত্তর পবিত্র কুরআনে দিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তা’লা বলেন:

তাঁর এই (বারংবার) আর্তনাদের কসম, যখন তিনি বলেছিলেন, “হে আমার প্রতিপালক! এরা এমন এক জাতি যারা ঈমান আনছে না।” সুতরাং, তুমি তাদের উপেক্ষা কর, এবং বল ‘সালাম’; অতঃপর অচিরেই তারা জানতে পারবে। (৪৩:৮৯-৯০)

এ কথাগুলো স্পষ্ট করে যে মহানবী (সা.) এমন এক শিক্ষা এনেছিলেন যা সকল মানুষের জন্য দয়া ও সহানুভূতির উৎস ছিল আর তাই সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যম ছিল। এ আয়াত আরো বলে যে, মহানবী (সা.) এর শান্তির বাণীর প্রত্যুত্তরে তাঁর বিরোধীরা কেবল তাঁর শিক্ষাকেই অস্বীকার করে নি; তারা এমনকি তাঁকে বিদ্রূপ ও অপমানও করেছে। বরং, তারা আরো অগ্রসর হয়ে শত্রুতামূলক মনোভাবের সাথে তাঁর বিরোধিতা করেছে এবং বিশৃংখলা ও অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। এ সব কিছুর পর মহানবী (সা.) আল্লাহ্‌ তা’লার কাছে মিনতি করেছেন যে, আমি তাদেরকে শান্তি দিতে চাই, কিন্তু তারা আমাকে শান্তি দেয় না। কেবল তাই নয়, তারা আমাকে যন্ত্রণা ও মনোকষ্ট দেয়ার জন্যও জোর চেষ্টা চালাতে থাকে।

উত্তরে আল্লাহ্‌ তা’লা তাঁকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বলেন তারা যা বলে তা উপেক্ষা কর আর তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও। তোমার কাজ কেবল ছড়িয়ে দেয়া এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। তাদের ঘৃণা আর সীমালঙ্ঘনের প্রত্যুত্তরে কেবল বলবে “তোমাদের উপর শান্তি বর্ষিত হোক” আর তাদেরকে জানাবে যে তাদের জন্য তুমি শান্তি নিয়ে এসেছো।

তাই, মহানবী (সা.) তাঁর পুরোটা জীবন বিশ্বে কেবল শান্তি বিস্তার করেই কাটান। এটিই ছিল তাঁর মহান উদ্দেশ্য। নিশ্চিতভাবে একদিন আসবে যখন পৃথিবীর মানুষ বুঝবে এবং অনুধাবন করবে যে, তিনি চরমপন্থিতার কোন শিক্ষা নিয়ে আসেন নি। তারা অনুধাবন করবেন যে, তিনি যা নিয়ে এসেছিলেন তা ছিল শান্তি, ভালবাসা ও দয়ার এক বাণী।

উপরন্তু, যদি এ মহান রসূলের অনুসারীরাও নিষ্ঠুরতা ও অন্যায়-অবিচারের উত্তর একই রকমের প্রীতি ও ভালবাসার সাথে দেন, তবে সন্দেহাতীতভাবে ঐসকল ব্যক্তি যারা ইসলামের মহান শিক্ষার বিরুদ্ধে আপত্তি উত্থাপন করে থাকেন, তারা একদিন এর সত্যতা ও সৌন্দর্য্যের বিষয়ে নিশ্চিত হবে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত এ শিক্ষাসমূহ অনুসরণ ও ধারণ করে থাকে। এটি এই সমঝোতা, সহিষ্ণুতা ও সহানুভূতির শিক্ষা বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে যার প্রচার ও প্রসার আমরা করে থাকি। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর প্রদর্শিত দয়া ও মহানুভবতার ঐতিহাসিক ও অতুলনীয় দৃষ্টান্তের অনুসরণ আমরা করে থাকে যেখানে বছরের পর বছর সবচেয়ে কঠিন ও বিভীষিকাময় অত্যাচার ও নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার পর তিনি মক্কার গলিতে বিজয়ীর বেশে প্রত্যাবর্তন করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বহু বছর, তাঁকে এবং তাঁর অনুসারীদেরকে খাদ্য ও পানির মত মৌলিক চাহিদা পূরণ করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে আর বহু দিন বুভুক্ষু অবস্থায় তাঁদেরকে দিনাতিপাত করতে হয়েছে। তাঁর অনুসারীদের অনেকেই আক্রমণের শিকার হয়েছেন আর কতককে এমন বর্বর ও নির্দয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে যা কল্পনা করাও কারো জন্য সম্ভব নয়। মুসলিম বৃদ্ধ, নারী ও শিশুদেরও ছাড় দেয়া হয় নি; বরং তাদের সাথেও বীভৎস ও নিষ্ঠুর আচরণ করা হয়েছে। তবু যখন মহানবী (সা.) বিজয়বেশে মক্কা প্রত্যাবর্তন করলেন, তিনি প্রতিশোধ চান নি। বরং এর বিপরীতে তিনি ঘোষণা দিলেন যে, আজ তোমাদের কারো উপর শাস্তি নয়, কেননা আমি তোমাদের সবাইকে ক্ষমা করেছি। আমি ভালবাসা ও শান্তির দূত। আল্লাহ্‌ তা’লা গুণবাচক নাম ‘শান্তির উৎস’-এর সর্বোচ্চ জ্ঞান আমার নিকট-তিনিই সেই সত্ত্বা যিনি শান্তি দান করেন। তাই আমি তোমাদের সকল অতীত সীমালঙ্ঘনকে ক্ষমা করছি আর আমি তোমাদেরকে শান্তি ও নিরাপত্তার এক নিশ্চয়তা প্রদান করছি। তোমরা মক্কায় বসবাস করার বিষয়ে স্বাধীন, আর নিজ ধর্ম পালন করতে স্বাধীন। কারো উপর কোন প্রকার জবরদস্তি বা বল প্রয়োগ করা হবে না।

অস্বীকারকারীদের মধ্যে সবচেয়ে কট্টর কয়েকজন মক্কা ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন শাস্তির ভয়ে, কেননা তারা জানতেন যে মুসলমানদের উপর নিষ্ঠুরতায় তারা সকল সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু, সহমর্মিতা ও অনুগ্রহের এ অতুলনীয় দৃষ্টান্ত ও শান্তি ও সৌহার্দ্যরে অনন্য নিদর্শন দেখে, ঐসব কাফেরদের আত্মীয়-স্বজন তাদেরকে ফিরে আসার পয়গাম পাঠান। তাদেরকে জানানো হয় যে, মহানবী (সা.) শান্তি ও নিরাপত্তা ছাড়া আর কিছুই বণ্টন করেন নি, আর তাই তারা মক্কায় ফিরে আসলেন। যখন তারা, যারা ইসলামের সবচেয়ে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ শত্রু ছিলেন, স্বচক্ষে মহানবী (সা.) এর মহানুভবতা ও অনুগ্রহ প্রত্যক্ষ করলেন, তখন তারা স্বেচ্ছায় ইসলাম গ্রহণ করলেন।

আমি যা বর্ণনা করেছি তা সংরক্ষিত ইতিহাসের অংশ এবং অ-মুসলিম ঐতিহাসিক ও প্রাচ্যবিদদের সংখ্যাগরিষ্ঠ এর সঠিক হওয়ার বিষয়টি সত্যায়ন করেছেন। এগুলোই ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মহান উদাহরণ। আর তাই ইসলাম ও এর পবিত্র প্রতিষ্ঠাতার উপর সন্ত্রাসের তকমা লাগানো আর এমন সব অভিযোগ আনা এক নিষ্ঠুর অন্যায়। এতে কোন সন্দেহ নাই যে, যেখানেই এমন মিথ্যা অভিযোগ করা হয়, আমরা গভীরভাবে বিক্ষুব্ধ হই।

আমি আজ এটা আবার বলবো যে, আজ এটি আমাদের সম্প্রদায়, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত যা ইসলামের আদি ও শান্তিপূর্ণ শিক্ষা অনুসরণ করে তদনুযায়ী জীবন যাপন করছে। আর আমি আবারো বলবো যে, কতক চরমপন্থী সংগঠন বা একক ব্যক্তিরা যে ঘৃণাপূর্ণ অপকর্ম করে থাকে তার সাথে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষার দূরতম সম্পর্কও নাই।

প্রকৃত ন্যায় এটি দাবি করে যে, কতক ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর ক্ষুদ্র স্বার্থকে তাদের ধর্মের শিক্ষার উপর আরোপ যেন করা না হয়। এমন আচরণকে কোন ধর্মের বা তার প্রতিষ্ঠাতা উপর অন্যায় অভিযোগের বাহানা বানানো উচিত না। সময়ের জরুরী দাবি এই বিশ্ব শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার মানসে, সকল মানুষ একে অপরের এবং সকল ধর্মের প্রতি যেন পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রকাশ করে। নতুবা যে বিকল্প পরিণতি যেগুলো রয়েছে সেগুলো অত্যন্ত ভয়াবহ।

আজ পৃথিবী এক বিশ্ব পল্লীতে পরিণত হয়েছে আর তাই পারষ্পরিক শ্রদ্ধাবোধের অভাব এবং শান্তির প্রয়াসে একতাবদ্ধ না হতে পারার ফলে কেবল স্থানীয় এলাকা, নগরী বা দেশ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না বরং পরিণামে পুরো বিশ্বের ধ্বংসের কারণ হবে। আমরা সকলে গত দুই বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ সম্পর্কে অবহিত আছি। কতক দেশের আচরণের কারণে এ চিহ্ণ আজ প্রকাশিত যে, আরেকটি বিশ্বযুদ্ধে আজ দিগন্তরেখায় উঁকি দিচ্ছে।

যদি একটি বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হয়ে যায় তবে পশ্চিমা জগতও এর সদূরপ্রসারী ও ভয়াবহ পরিণাম দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হবে। আসুন আমরা আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে যুদ্ধের বিভীষকাময় বিধ্বংসী পরিণাম থেকে রক্ষা করি। স্পষ্টতঃই সবচেয়ে ভয়াবহ যুদ্ধ হবে পরমাণু যুদ্ধ, আর নিঃসন্দেহে যেভাবে বিশ্ব সেদিকে অগ্রসর হচ্ছে তাতে একটি নিউক্লিয়ার যুদ্ধের সূত্রপাত হওয়ার বাস্তবসম্মত ঝুঁকি রয়েছে। এ বিভীযিকাময় পরিণাম এড়াতে হলে, আমাদের ন্যায়, সাধুতা ও সততা অবলম্বন করা উচিত আর সেই সকল গোষ্ঠী যারা ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়ে বিশ্বশান্তি বিনষ্ট করতে চায় তাদের দমন ও বিফল করতে সমবেতভাবে কাজ করা উচিত।

এটি আমারা প্রত্যাশা ও দোয়া যে আল্লাহ্‌ তা’লা বিশ্বের বড় বড় পরাশক্তিকে এ লক্ষ্যে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সবচেয়ে ন্যায়সঙ্গত ও সুবিচারপূর্ণভাবে পালন করার সৌভাগ্য দান করবেন – আমিন।

শেষ করার পূর্বে আমি আরো একবার এ অনুষ্ঠানে যোগদানের জন্য আপনারা যে সময় ও সামর্থ্য ব্যয় করেছেন তার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আল্লাহ্‌ তা’লা আপনাদের সকলকে আশীষমণ্ডিত করুন।

আপনাদের সকলকে অনেক ধন্যবাদ।

অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শামস বিন তারিক