প্রেস বিজ্ঞপ্তি
১১-অক্টোবর, ২০২৩

মজলিস আনসারুল্লাহ্ যুক্তরাজ্যের জাতীয় ইজতেমার সমাপনী অধিবেশনে ভাষণ দিলেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান


“শান্তিপূর্ণ উপায়সমূহ অবলম্বন করে পুরো বিশ্বকে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পতাকা-তলে সমবেত করুন” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

৮ অক্টোবর ২০২৩, এক ঈমানোদ্দীপক ভাষণের মধ্য দিয়ে আহমদীয়া মুসলিম চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষদের সংগঠন, মজলিস আনসারুল্লাহ্ যুক্তরাজ্যের জাতীয় ইজতেমা (বার্ষিক সম্মেলন) সমাপ্ত করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।

বায়তুল ফুতূহ মসজিদে অনুষ্ঠিত তিন দিনের এ আয়োজনে ৩,৪০০ এর অধিক পুরুষ যোগদান করেন, যা অংশগ্রহণকারীদের নিবেদিতচিত্তে ধর্ম পালনে অনুপ্রেরণা যোগায়।

হুযূর আকদাস, তাঁর ভাষণ চলাকালে, বিশ্বকে ইসলামের প্রকৃত শান্তিপূর্ণ শিক্ষা অবগত করা এবং পরবর্তী প্রজন্মকে বরকতময় খিলাফত-ব্যবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত রাখা নিশ্চিত করতে তাদের মৌলিক দায়িত্বাবলির কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে আনসার সদস্যদের নিকট খুবই তাৎপর্যপূর্ণ একটি অঙ্গীকার গ্রহণ করেন।

এক সপ্তাহ পূর্বে মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া যুক্তরাজ্যের বার্ষিক ইজতেমায় তাদের সদস্যবৃন্দের কাছ থেকেও একই অঙ্গীকার গ্রহণ করা হয়েছিল।

হুযূর আকদাস তাঁর বক্তৃতা শুরু করেন ‘আনসারুল্লাহ্’ নামের অন্তর্নিহিত দর্শন তুলে ধরার মাধ্যমে, যার অর্থ আল্লাহর সাহায্যকারী।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের দ্বিতীয় খলীফা হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.), যিনি মজলিস আনসারুল্লাহ্ প্রতিষ্ঠা এবং নামকরণ করেছেন, এর বরাতে কথা বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“অনেক ভাবনা-চিন্তার পরই আনসারুল্লাহ্ নামটি আপনাদেরকে দেওয়া হয়েছে। ১৫ থেকে ৪০ বছর তারুণ্য ও উচ্ছ্বাসের বয়স হয়ে থাকে। তাই, উক্ত বয়সের সদস্যদের সংগঠনটির নাম ‘খোদ্দামুল আহমদীয়া’ (আহমদীয়াতের সেবক) রাখা হয়েছে যেন সৃষ্টির সেবায় তারা সর্বোচ্চ সময় নিয়োগ করতে পারে। চল্লিশোর্ধ্ব বয়সীদের সংগঠনের নাম ‘আনসারুল্লাহ্‌’ রাখা হয়েছে। এ বয়সে মানুষ নিজের কাজে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, আর যদি কোথাও কর্মরত থাকে, তবে সেখানে এক প্রকার জ্যেষ্ঠতা অর্জন করে, আর এ যোগ্যতা লাভ করে যে, নিজ সন্নিধান থেকে ধর্মের সেবায় পূর্বের চেয়ে বেশি অগ্রসর হতে পারে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“আপনাদের নাম আনসারুল্লাহ্ এ জন্য রাখা হয়েছে যে, আপনারা যেন যত দূর সম্ভব ধর্মের সেবায় মনযোগী হন, আর এ মনযোগ আর্থিক কুরবানির ক্ষেত্রেও, আর ধর্মীয় কাজের ক্ষেত্রেও। ধর্মীয় কাজের মধ্যে আপনাদের জন্য আবশ্যক, বেশি থেকে বেশি সময় আল্লাহ্ তা’লার ইবাদতে রত থাকুন। আর, ধর্মের চর্চা বেশি থেকে বেশি করুন, নিজেদের আমলের মাধ্যমে, আর ধর্মের বাণী প্রচারের মাধ্যমে, যেন আপনাদেরকে দেখে আপনাদের সন্তান-সন্ততির মাঝেও নেকির জন্ম হয়। সুতরাং, এই বাস্তবতা প্রত্যেক নাসেরের (আনসারুল্লাহ্‌র সদস্য) অনুধাবন করা উচিত যে, নিজ ইবাদতের মানকে উন্নীত করতে হবে, নিজের নামাযের সুরক্ষা করতে হবে, বা’জামাত নামায আদায়ে বিশেষ মনোযোগী হতে হবে।”

নামায আদায়ের ধরন নিয়ে বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আল্লাহ্‌র নিকট অনেক আবেগ ও ব্যাকুলতা নিয়ে দোয়া করুন। তাহলে এমন এক অবস্থা সৃষ্টি হবে যে, নামাযে গাফিলতির প্রশ্নই উঠবে না। আমরা যদি নিজেদের মধ্যে এমন অবস্থা তৈরিতে সক্ষম হই, তাহলে আমাদের ব্যবহারিক দৃষ্টান্তের মাধ্যমে তাদেরকে জবাব দিতে পারবো, যারা বলে যে, কিছু মানুষ নামাযও পড়ে, আবার পাপাচারেও লিপ্ত থাকে। যারা এমনটি করে তারা নামাযও যদি পড়ে, তবে কেবল দায় সারার জন্য। এমন মানুষ যারা হৃদয়ে আল্লাহ্‌র কোনো ভয় না রেখে তাঁর সামনে রুজু না হয়ে ও নামাযের শর্ত আদায় না করে নামায পড়ে, আর পাপে লিপ্ত থাকে বা অন্যের অধিকার আদায় করে না, আল্লাহ্ তা’লা তো স্বয়ং ঘোষণা করেছেন যে, এমন নামায তাদের ধ্বংসের কারণ এবং এটি তাদের মুখের ওপর ছুঁড়ে মারা হবে। সুতরাং, কোনো রিপোর্ট ফরম পূর্ণ করার জন্য, অন্যদের দেখানোর জন্য কিংবা রীতি পালনের মতো করে আমাদের নামায আদায় করা উচিত নয়। বরং, একমাত্র আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নামায আদায় করতে হবে। এমন নামায ফল বয়ে আনে।”

হুযূর আকদাস অংশগ্রহণকারীদের স্মরণ করিয়ে দেন তাদের সামনে বিশাল কাজ বিদ্যমান।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আমাদের অনেক চিন্তা করা উচিত, আল্লাহ্ তা’লা আমাদের ওপর অনেক বড় দায়িত্ব অর্পণ করেছেন। আমাদের কেবল নিজেদের ও সন্তানদের সংশোধন সাধন করলেই চলবে না, আল্লাহ্‌ তা’লার একত্ববাদ ও মহানবী (সা.)-এর আদেশাবলির ওপর কেবল নিজেদের ও সন্তানদের প্রতিষ্ঠিত রাখলেই চলবে না, বরং, পুরো বিশ্ববাসীকে মহানবী (সা.)-এর পতাকা-তলে সমবেত করতে হবে, আর পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্‌ তা’লার তওহীদ প্রতিষ্ঠা করতে হবে।”

হুযূর আকদাস বলেন, ধার্মিকতা ও নীতি-নৈতিকতা ব্যতিরেকে এগুলোর কোনোটিই অর্জিত হতে পারে না।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“যদি ইসলামের সেবা করার সৌভাগ্য পেতে চান, এটি কোনো তুচ্ছ বিষয় নয়, বরং, অনেক বড় সৌভাগ্য। যদি বিশ্বে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর পতাকা ওড়ানোর সৌভাগ্য পেতে চান, এটি অনেক বড় সৌভাগ্য। যদি বিশ্বের বুকে আল্লাহ্ তা’লার একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার সৌভাগ্য অর্জন করতে চান, এটি এক সুমহান দায়িত্ব। তাহলে এই সম্মান ও সৌভাগ্য লাভের শর্ত হলো তাক্ওয়া (খোদাভীরুতা), আর যখন তাক্‌ওয়া সৃষ্টি হয়ে যাবে, তখন আল্লাহ্ তা’লার দৃষ্টিতে নিশ্চিতভাবে আপনারা এই অধিকার রাখবেন যে, নিজেদেরকে ‘আনসারুল্লাহ্’ বলে অভিহিত করেন, আর পৃথিবীতে আল্লাহ্‌র তাওহীদ প্রতিষ্ঠাকারী হন, আল্লাহ্‌র দ্বীনের প্রসার ও প্রচার করে আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহরাজি লাভ করেন।”

হুযূর আকদাস বলেন, “প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.) এবং তাঁর জামা’ত অবশ্যই আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহে বিজয় অর্জন করবে। কিন্তু, কেউ যদি এই গৌরবময় বিজয়ের অংশ হতে চায়, তাহলে তাদেরকে “তাক্ওয়ার পথে চলতে হবে, কথা ও কাজে এক হতে হবে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আজ প্রত্যেক নাসের (আনসারুল্লাহ্ সদস্য)-এর এই প্রতিজ্ঞা করা উচিত যে, পৃথিবীতে আল্লাহ্ তা’লার একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা ও তাঁর মহিমা সমুচ্চ করার জন্য নিজ তাক্ওয়ার মানকে উন্নীত করবেন। ওই সকল মানুষের অন্তর্ভুক্ত হবেন যারা বিশ্বের মানুষের প্রতি অনুগ্রহ প্রদর্শন করে থাকেন; আর বিশ্বের সেই সকল মানুষ, যারা পার্থিবতার পঙ্কিলতায় ডুবে আছে, তাদের প্রতি অনুগ্রহ করে তাদেরকে সেই পঙ্কিলতা থেকে বের করে নিয়ে আসবেন। যখন আমরা এই প্রতিজ্ঞা করবো যে, প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.)-এর মিশনকে পূর্ণ করার জন্য সম্ভাব্য সকল প্রয়াস গ্রহণ করবো, পৃথিবীর বুকে আল্লাহ্ তা’লার একত্ববাদ প্রতিষ্ঠা করবো, প্রতিটি মানুষের নিকট ইসলামের বার্তা পৌঁছাবো; তখন আমাদের কতটা উদ্বেগের সাথে নিজেদের অবস্থার উন্নতি করতে হবে, আমাদের নিজেদের কতটা তাক্ও‌য়ার পথে চলতে হবে?”

হুযূর আকদাস বলেন যে, মহানবী (সা.)-এর ইসলামের পতাকা তুলে রাখার দায়িত্ব তাদের ওপর বেশি বেশি বর্তায় যারা বয়সে পরিণত এবং যাদেরকে নিজেদের ‘আনসারুল্লাহ্’ উপাধির মর্যাদা রক্ষা করতে হবে।

এরপর, বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে, আবেগঘন পরিবেশে, হুযূর আকদাস মজলিস আনসারুল্লাহ্‌র সদস্যদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার গ্রহণ করেন, যারা “প্রত্যেক বড় থেকে বড় কুরবানী পেশ করে কিয়ামত পর্যন্ত ইসলামের পতাকাকে সকল দেশে উড্ডীন রাখা”-র প্রতিজ্ঞা করেন।