প্রেস বিজ্ঞপ্তি
১০-সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জার্মানির ওয়াইবলিঙ্গেনে নতুন আহমদীয়া মসজিদের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত


“প্রত্যেক ধর্মের প্রবর্তক তাঁর অনুসারীদেরকে অন্যকে ভালোবাসার শিক্ষা প্রদান করে গেছেন। সুতরাং, আমাদের উচিত এ শিক্ষাকে গ্রহণ করা” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

৫ সেপ্টেম্বর ২০২৩, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) জার্মানির ওয়াইবলিঙ্গেনে নাসের মসজিদের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনায় মূল ভাষণ প্রদান করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পূর্বে হুযূর আকদাস একটি স্মারক ফলক উন্মোচন ও আল্লাহ্ তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে দোয়ার মাধ্যমে মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন।

এরপর, হুযূর আকদাস মসজিদে যোহর ও আসরের নামায পড়ান এবং নবনির্মিত স্থাপনা পরিদর্শন করার পর মসজিদের বাইরে একটি বৃক্ষ রোপণ করেন।


পরবর্তীতে, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ এবং মসজিদ সংলগ্ন স্থানীয় প্রতিবেশীসহ ১১০ জন অতিথি ওয়াইবলিঙ্গেন টাউন হলে আয়োজিত বিশেষ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

হুযূর আকদাস তাঁর মূল ভাষণে একটি শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সমাজ গঠনের ক্ষেত্রে মসজিদের ভূমিকা সম্পর্কে আলোচনা করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“মসজিদ এমন একটি স্থান যেখানে নারী, পুরুষ ও শিশুরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদির জন্য একত্রিত হয় যেগুলো কেবল তাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক প্রশিক্ষণের জন্যই উপকারী নয়, বরং সেগুলো জাগতিক পড়াশোনার প্রতিও তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এবং উৎকর্ষ অর্জনে উৎসাহিত করে থাকে। তাদেরকে রাষ্ট্রের আইন-কানুন পালনে ও ভালো নাগরিক হতেও উৎসাহিত করা হয়। তাদেরকে প্রতিবেশির যত্ন নেওয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তারা যখন মসজিদে আসে তখন এগুলো হলো সেই সকল বিষয়, যেগুলো, আল্লাহ্ তা’লার ইবাদতের পাশাপাশি, তাদেরকে শেখানো হয়।”

ইসলাম যেভাবে সকল মানুষের সমতার উপর জোর দেয় সে সম্পর্কেও হুযূর আকদাস কথা বলেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আমাদের মাঝে যে বিভিন্ন বর্ণ, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন জাতি ও বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করেন, এগুলো কেবল একটি পরিচয়। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে যে, এই যে গোত্র-বর্ণ-বংশ এগুলো তো তোমাদের পরিচিতির জন্য কতক বিষয়, প্রকৃতপক্ষে তো তোমরা এক। মানুষ হিসেবে তোমরা সবাই যে এক – এ বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করুন। আর যখন আমরা এর গুরুত্ব অনুধাবন করবো তখন (সমাজের) অনেক সমস্যা এমনিতেই দূর হয়ে যাবে।”

বর্তমান যুগে বিশ্ব যেসকল সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে তা উল্লেখ করে, হুযূর আকদাস বলেন, বেশিরভাগ সমস্যাই মানুষের কর্মের ফল।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী যেসকল আমরা সমস্যা দেখছি, তার অনেকগুলোই আমাদের নিজেদের কর্মের ফল। এর কারণ হলো, আমরা আমাদের সৃষ্টিকর্তাকে ভুলে যাচ্ছি এবং ধর্ম থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। এটি যদি আমরা অনুধাবন করতে পারি এবং ধর্মের সত্যিকার শিক্ষার দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করি তাহলে আমরা বুঝতে পারবো যে, কোনো ধর্মই এর অনুসারীদেরকে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার এবং অন্য মানুষের অধিকার হরণ করার শিক্ষা দেয় না। এটি ইসলামই হোক, খ্রিস্টধর্ম, ইহুদি ধর্ম, হিন্দু ধর্ম বা অন্য কোনো ধর্মই হোক না কেন। প্রত্যেক ধর্মের প্রবর্তক তাঁর অনুসারীদেরকে অন্যকে ভালোবাসার শিক্ষা প্রদান করে গেছেন। সুতরাং, আমাদের উচিত এ শিক্ষাকে গ্রহণ করা।”

শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে ইসলাম কীভাবে শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে সে সম্পর্কেও হুযূর আকদাস আলোচনা করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) জ্ঞান অর্জনের প্রতি এত গুরুত্ব সহকারে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, তিনি বলেন, একজন ব্যক্তির উচিত দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অর্জন করা। আপনাদের উচিত জ্ঞান অর্জনের চেষ্টা করা। কারণ, অধিকতর জ্ঞান আপনার অনুধাবন ক্ষমতা বাড়াবে এবং মনকে সমৃদ্ধ করবে। এটি আপনাকে উন্নত নৈতিকতা অর্জনের সহায়তা করবে এবং এর ফলে শান্তিপূর্ণ সমাজ গঠনে অধিক মনোযোগ নিবদ্ধ হবে।”

হুযূর আকদাস নারী শিক্ষার প্রতি ইসলামের অবস্থান স্পষ্ট করেন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর এক বাণী উল্লেখ করেন যেখানে তিনি (সা.) বলেছেন যে, যদি কোনো ব্যক্তির তিনটি কন্যা থাকে আর তিনি যদি তাদেরকে সুশিক্ষা প্রদান করেন ও তাদেরকে সমাজের জন্য কল্যাণকর সদস্যে পরিণত হওয়ার সুযোগ প্রদান করেন, তাহলে সেই ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“নারী ও তাদের শিক্ষাকে ইসলাম এমনই গুরুত্ব প্রদান করে থাকে। ইসলাম সাধারণভাবে শিক্ষার প্রতি আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে এবং বিশেষত, নারী শিক্ষার প্রতি, যেন আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। যখন এটি গ্রহণ করা হবে, তখন একজন মা যিনি তার সন্তানকে শিক্ষিত করবেন, তিনি জান্নাতে প্রবেশ করবেন এবং সেই শিশুরাও, যারা সঠিকভাবে শিক্ষা লাভ করবে, তারাও জান্নাতে প্রবেশ করবে আর পৃথিবীতেও একটি ভালো অবস্থানে থাকবে।”

প্রতিবেশীর প্রতি যত্নবান হওয়ার বিষয়ে ইসলামে যে গুরুত্ব প্রদান করা হয়েছে সে সম্পর্কেও হুযূর আকদাস আলোচনা করেন। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে প্রতিবেশী কমপক্ষে আশাপাশের চল্লিশটি ঘর পর্যন্ত বিস্তৃত। হুযূর আকদাস বলেন ইসলামে প্রতিবেশীর সংজ্ঞা এতই বিস্তৃত যে, এর মধ্যে কারো সহকর্মী ও সহযাত্রীও অন্তর্ভুক্ত।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আপনারা যদি এই সকল মানুষের সাথে প্রতিবেশীসুলভ আচরণ করেন তাহলে সমাজে শান্তি সৃষ্টি হবে এবং এর ফলে আপনাদের দেশের উন্নতি সাধিত হবে। এটি কেবল ব্যক্তি পর্যায়ে কল্যাণকর হবে না, বরং, এটি দেশকে আরও এগিয়ে যেতে সাহায্য করবে।”

হুযূর আকদাসের বক্তব্যের পূর্বে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত জামার্নির ন্যাশনাল আমীর জনাব আব্দুল্লাহ্ ওয়াগিসহাউসার মসজিদটির পরিচিতি তুলে ধরেন। এরপর, বাডেন-উর্টেমবার্গ মিনিস্ট্রির স্টেট সেক্রেটারি মি. লরেক, প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য মিসেস হাফনার, ফার্স্ট ডিস্ট্রিক্ট অফিসার মি. যার এবং কার্নেন শহরের মেয়র মি. পাওলোভিচ মসজিদটির সম্পর্কে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।