প্রেস বিজ্ঞপ্তি
০৪-সেপ্টেম্বর, ২০২৩

জলসা সালানা জার্মানি ২০২৩-এর নারী অধিবেশনে ভাষণ দিলেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান


“ধর্মের প্রচারে নারীদের অংশগ্রহণ আবশ্যকীয়” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

২ সেপ্টেম্বর ২০২৩, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) জলসা সালানা জার্মানির নারী অংশে ভাষণ প্রদান করেন এবং এতে ইসলামে নারীর ভূমিকা ও অধিকার সম্পর্কে আলোচনা করেন।

বক্তৃতা জুড়ে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) অতীতের আদর্শ-স্থানীয় ও ধার্মিক মুসলমান নারীদের ঈমানোদ্দীপক আত্মত্যাগ ও চরম নিপীড়নের মুখে ঈমানকে সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রে তাদের অসাধারণ ধৈর্যের কথা বর্ণনা করেন। হুযূর আকদাস ব্যাখ্যা করে বলেন, এ সকল দৃষ্টান্ত নারী-পুরুষ সকলকে ঈমানে অগ্রসর হওয়ার বিষয়ে স্মরণ করিয়ে দেয়।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) তাঁর বক্তৃতার শুরুতে সেই সকল মহিয়সী নারীর চরিত্র, আত্মত্যাগ ও রেখে যাওয়া দৃষ্টান্ত পেশ করেন যারা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর আশিসমণ্ডিত সাহচর্যে অসাধারণ কল্যাণ লাভ করেছিলেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“(ইসলামের প্রাথমিক যুগে) এসকল মুসলমান নারী তাঁদের জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে ইসলামী শিক্ষার প্রকৃত চিত্র ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন – তা আল্লাহ্ তা’লার আনুগত্য, ইবাদতের উন্নত মান, ঘর ও সমাজের দায়িত্বাবলি, সন্তানদের তরবিয়ত, জান-মালের কুরবানী কিংবা ইসলামের খাতিরে সাহিসকতা প্রদর্শনের সুযোগের ক্ষেত্রেই হোক। এভাবে, এসকল নারী তাদের জীবনের প্রতিটি সুযোগ ও স্তরে আদর্শিক নমুনা স্থাপন করেছেন।”

হুযূর আকদাস উল্লেখ করেন কীভাবে অগ্রগামী নারীরা ইসলামের জন্য অভিযানে গিয়েছিলেন এবং সফর করেছেন। আহমদী মুসলমান নারীরাও এমনটি করছেন।

আহমদী মুসলমান নারীদের নিজেদের সক্ষমতার সর্বোচ্চটুকু দিয়ে ইসলামের সেবা করার উপদেশ দিতে গিয়ে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“জগতের উপর ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়ার শপথ বারবার নিছক না আওড়িয়ে আমাদের প্রত্যেককে মূল্যায়ন করতে হবে আমরা সত্যিকার অর্থে এই শপথ পালন করছি কিনা।”

হুযূর আকদাস ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর বক্তব্য প্রদান করেন এবং ইসলামের প্রাথমিক সময় থেকেই নারীদেরকে প্রদত্ত এই অধিকারের উদাহরণ উপস্থাপন করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“কোনোভাবেই ইসলাম নারীদেরকে ঘরে আবদ্ধ করে রাখার আদেশ প্রদান করে না এবং ইসলামের প্রাথমিক যুগের নারীরাও এমনটি করে নি; বরং তারা মহানবী (সা.)-এর ভাষণাদি শুনতে এসেছেন, যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন, আহতদের সেবা করেছেন, ঘোড়া ও উটে চড়ে অভিযান করেছেন, পুরুষদের কাছ থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন এবং অন্যদেরকে শিক্ষা প্রদানও করেছেন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও গুরুত্বারোপ করেন যে, উল্লিখিত কাজগুলো করার সময়ে নারীরা পর্দার নির্দেশ মেনে চলেছেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“এভাবে তারা (নারীরা) পূর্ণ ব্যবহারিক স্বাধীনতা ভোগ করেছেন। কেবল নির্দেশ ছিল, যেন তারা মাথা, গলা ও মুখমণ্ডলের সেই অংশ, যা মাথা ও গলা সংলগ্ন, তা ঢেকে রাখেন, যেন যেসকল রাস্তা পাপের পথে পরিচালিত করে সেগুলো বন্ধ থাকে। আর যদি তারা আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন, তাহলে যেন নিকাব পরিধান করে নেন। কিন্তু, গৃহবন্দী হয়ে থাকা, জ্ঞানার্জন ও তরবিয়তী কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন থাকা – এটি ইসলামের শিক্ষাও নয়, আর অতীতে কখনো এরূপ প্রচলনও ছিল না।”

পরিশেষে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) পুনরায় অংশগ্রহণকারীদেরকে বর্তমান সময়ে ব্যক্তিগত উন্নতির জন্য তাদের দায়িত্বাবলির কথা স্মরণ করিয়ে দেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“বর্তমান যুগের যুদ্ধ হলো কলমের জিহাদ, ধর্মীয় সাহিত্য বিতরণের জিহাদ, তবলীগ (ধর্ম প্রচার)-এর জিহাদ। সুতরাং, নারীদের দায়িত্ব – তবলীগে বেশি বেশি অংশগ্রহণ করুন, আর সেই আধ্যাত্মিক অস্ত্রে সজ্জিত হোন যা তবলীগের জন্য আবশ্যক। পবিত্র কুরআনের জ্ঞান অর্জন করুন, হাদীস থেকে জ্ঞান অর্জন করুন, হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর লেখনী থেকে জ্ঞান অর্জন করুন, ধর্মীয় জ্ঞান অন্বেষণ করুন, আর উত্তম দৃষ্টান্ত স্থাপন করে নিজেদের অবস্থাকে ইসলামী শিক্ষার অনুসরণে সজ্জিত করুন। কেবল তখনই আপনারা ইসলামের সেবা করতে সক্ষম হবেন।”