প্রেস বিজ্ঞপ্তি
৩১-আগস্ট, ২০২৩

জার্মানির কার্বেনে নতুন আহমদীয়া মসজিদের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত


৩০ অগাস্ট ২০২৩, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) জার্মানির কার্বেনে সাদিক মসজিদ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনায় মূল ভাষণ প্রদান করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পূর্বে হুযূর আকদাস একটি স্মারক ফলক উন্মোচন ও আল্লাহ্ তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে দোয়ার মাধ্যমে মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর হুযূর আকদাস মসজিদে যোহর ও আসরের নামায পড়ান এবং নবনির্মিত স্থাপনা পরিদর্শন করেন।

পরবর্তীতে, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ এবং মসজিদ সংলগ্ন স্থানীয় প্রতিবেশীসহ ৯০ জন অতিথি কার্বেন টাউন হলে আয়োজিত বিশেষ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

হুযূর আকাদাস তাঁর মূল ভাষণে মসজিদের তাৎপর্য ও ইসলামে অভাবীদের সাহায্য করার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন।

শহরের কেন্দ্র সংলগ্ন মসজিদটির অবস্থান সম্পর্কে বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“মসজিদটি শহরের কেন্দ্রে অবস্থিত এবং এটি খুবই ভালো হয়েছে; কেননা, শহরে জাগতিক উদ্দেশ্য পূরণের যেমন সুযোগ রয়েছে, তেমনি এমন স্থানও থাকা বাঞ্ছনীয় যেখানে যারা খোদাকেও স্মরণ করতে চান, তারা একত্রিত হতে পারেন এবং এক আল্লাহর ইবাদত করতে পারেন। শহরে মসজিদ, গির্জা এবং অন্যান্য উপাসনালয়ও থাকা উচিত। যখন সকল ধর্মবিশ্বাসের মানুষ একত্রিত হবেন, তখন এটি প্রকাশ পাবে যে, ধর্মগুলো এর অনুসারীদেরকে একত্রিত হতে এবং পরস্পরের সঙ্গে সম্প্রীতিতে বসবাসের শিক্ষা দেয়। প্রধান ধর্মসমূহের প্রবর্তকরা কেউই তাদের অনুসারীদেরকে চরমপন্থী হওয়ার কিংবা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার শিক্ষা দেন নি।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“আমাদের শিক্ষা অনুসারে সকল নবীরা আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে প্রেরিত এবং তাদের প্রেরণ করা হয়েছে আল্লাহ্ তা’লার ইবাদত এবং অন্যদের অধিকার পূর্ণ করার শিক্ষা মানুষের নিকট পৌঁছানোর জন্য। একইভাবে, ভালো হয়েছে আমরা শহরের কেন্দ্রে মসজিদের জন্য স্থান পেয়েছি, যার ফলে আমরা আমাদের পার্শ্ববর্তী মানুষজনকে ইসলামের সুন্দর শিক্ষা সম্পর্কে অবগত করতে পারবো।”

অন্যের অধিকার আদায়ের ক্ষেত্রে ইসলাম প্রদত্ত গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) নিজের অধিকারের চেয়ে অন্যের অধিকারকে প্রাধান্য দেওয়ার অনন্য নীতির বিষয়টি তুলে ধরেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“অপরের অধিকার রক্ষা করা ইসলামের একটি মৌলিক শিক্ষা। ইসলাম বলে না যে, তুমি কেবল নিজের অধিকারের জন্য চেষ্টা করে যাও; বরং আদেশ দান করে যে, আমাদের অবশ্যই অপরের অধিকার আদায় করতে হবে। যখন আপনি অন্যের অধিকার রক্ষা করতে সচেষ্ট হবেন, তখন বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং সংহতি ও সম্প্রীতির পরিবেশ বিরাজ করবে। এটিই বর্তমানে পৃথিবীতে আমাদের প্রয়োজন।”

হুযূর আকদাস পৃথিবীর কোথাও কোথাও ধর্মের নামে করা অন্যায়-অবিচার নিয়ে পূর্বের এক বক্তার করা মন্তব্যের উল্লেখ করেন।

ইসলামের শিক্ষার আলোকে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের অনুসৃত কার্যধারা তুলে ধরতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ধর্ম কখনো মানুষকে রক্তপাতের অনুমতি দেয় না। বরং, ধর্ম অন্যের সেবা করার নির্দেশ দেয়। যেখানেই আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, সেখানে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে আমরা মানুষের সেবা করে থাকি। … আফ্রিকায় আমরা স্কুল, হাসপাতাল এবং মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা করেছি যেন পানিসহ নানা সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা করা যায়। এসকল কার্যক্রমের ফলে যারা উপকৃত হচ্ছে তাদের অন্তত শতকরা আশি ভাগ মানুষজনই আহমদী নন।”

পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের দুঃখ-দুর্দশার কথা বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“উন্নত বিশ্বে আমরা বিশুদ্ধ পানির গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পারি না, যদিও সরকার আমাদের প্রতিনিয়ত সচেতনতার সঙ্গে পানি ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি স্মরণ করাচ্ছে। উন্নয়নশীল দেশসমূহে যাদের নিকট পানির সরবরাহ নেই তাদের সন্তানদের পানি আনার জন্য কয়েক কিলোমিটার যেতে হয়। তারা তাদের মৌলিক চাহিদা পূরণ করার জন্য, মাথায় করে পানি ভর্তি বালতি বহন করে। এসকল মানুষকে স্বস্তি প্রদান করার জন্য আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের স্বেচ্ছাসেবকরা এ ধরনের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছেন এবং তাদের গ্রামে পানি সরবরাহের ব্যবস্থা করেন।”

পানির ব্যবস্থা করার পর বঞ্চিত মানুষজন কেমন বোধ করে এর চিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“মানুষজন যখন তাদের বাড়ির নিকটেই বিশুদ্ধ পানির কল দেখে তারা আনন্দে আত্মহারা হয়ে যায়। এসকল মানুষজন সহজলভ্য বিশুদ্ধ খাবার পানি দেখে যতটা আনন্দিত হন, হয়তো উন্নত বিশ্বের মানুষেরা বিশাল অংকের অর্থ অর্জন করলেও এতটা খুশি হবেন না। তারা আনন্দিত হয় এই ভেবে যে, তাদেরকে পানির জন্য নোংরা পথ দিয়ে দূরবর্তী স্থানে হেঁটে যেতে হবে না; বরং, তাদের ঘরের নিকটেই বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা হয়েছে।”

হুযূর আকদাস আফগানিস্তানে নারীদের প্রাপ্য অধিকার প্রদান না করা নিয়ে আরেকজন বক্তার করা মন্তব্যেরও উল্লেখ করেন।

ইসলামের শিক্ষা স্পষ্ট করতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ইসলাম এবং কুরআন আমাদেরকে নারীদের প্রতি দয়ার শিক্ষা দেয়। উপরন্তু, আমাদেরকে নারীদের প্রতি সর্বোচ্চ নৈতিক আচরণ প্রদর্শনেরও শিক্ষা প্রদান করে। ইসলাম এটি পরিষ্কারভাবে বলে যে, নারীদেরও পুরুষের মতো একই রকম আবেগ-অনুভূতি রয়েছে। তাই, পুরুষদের উচিত তাদেরকে সম্মানের সঙ্গে দেখাশোনা করা এবং তাদের প্রয়োজনীয়তাসমূহ পূরণের জন্য চেষ্টা করা। অন্যদিকে, ইসলামের শিক্ষা অনুসারে নারীদের স্বাধীনতা ও সম-অধিকার রয়েছে। অনেক আহমদী মুসলমান নারী ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, কৃষিবিদ, অর্থনীতিবিদসহ নানা পেশায় রয়েছেন এবং তারা মানুষকে সেবা প্রদান করছেন ও মানবতার জন্য তাদের সময় ও জীবন পেশ করছেন। উত্তরাধিকার সূত্রে সম্পত্তিসহ ইসলাম নারীদের সকল ধরনের অধিকার প্রদান করেছে।”

হুযূর আকদাসের বক্তব্যের পূর্বে, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত জামার্নির ন্যাশনাল আমীর জনাব আব্দুল্লাহ্ ওয়াগিসহাউসার মসজিদটি পরিচিত করিয়ে দেন। এরপর, জার্মান ফেডারেল পার্লামেন্টের সদস্য ন্যাথালি পউলিক, হেসিয়ান স্টেট পার্লামেন্টের সদস্য টোবিয়াস উটার এবং কারবেনের মেয়র গুইডো রান মসজিদটির সম্পর্কে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন এবং স্থানীয় সম্প্রদায়ের জন্য আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিভিন্ন প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।