প্রেস বিজ্ঞপ্তি
৩০-আগস্ট, ২০২৩

জার্মানির ফ্লোরস্টাডে নতুন আহমদীয়া মসজিদের উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা অনুষ্ঠিত


“যখন আমরা খোদা তা’লার অধিকারসমূহ পূরণ করি, তখন তা আমাদের মাঝে মানবতার সহায়তায় এগিয়ে আসার প্রেরণা সৃষ্টি করে” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

২৮ আগস্ট ২০২৩, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) জার্মানির ফ্লোরস্টাডে মুবারক মসজিদ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনায় মূল ভাষণ প্রদান করেন।

সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের পূর্বে হুযূর আকদাস একটি স্মারক ফলক উন্মোচন ও আল্লাহ্ তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করে দোয়ার মাধ্যমে মসজিদটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। এরপর হুযূর আকদাস মসজিদে যোহর ও আসরের নামায পড়ান এবং নবনির্মিত স্থাপনা পরিদর্শন করেন।

পরবর্তীতে, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, রাজনীতিবিদ এবং মসজিদ সংলগ্ন স্থানীয় প্রতিবেশীসহ ১২০ জন অতিথি ফ্লোরস্টাডের আরালিয়া হলে বিশেষ অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

এ সময়ে তাঁর মূল বক্তব্যে হুযূর আকদাস বলেন কীভাবে ইসলাম সকল মানুষের অধিকার রক্ষা করে এবং সকল বিশ্বাসের মানুষের ধর্মীয় স্বাধীনতা অক্ষুণ্ণ রাখে।

মসজিদের প্রকৃত উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ইসলামের শিক্ষা অনুসারে মসজিদ আল্লাহর ঘর। মসজিদ এমন একটি জায়গা যেখানে মানুষ এক খোদার ইবাদত এবং খোদা তা’লার শিক্ষা অনুসারে একে অপরের প্রতি সহানুভূতি ও সৌহার্দ্য প্রকাশে অনুপ্রাণিত করার জন্য সমবেত হয়। … কোন ব্যক্তি, যিনি সত্যিকার অর্থে মসজিদের অধিকার রক্ষা করেন, তার পক্ষে এটি অসম্ভব যে, তিনি এমন কোন কাজ করবেন যা আল্লাহ তা’লার ইবাদতের অধিকার এবং মানবজাতির অধিকারের বিরুদ্ধে যায়।”

হুযূর আকদাস পবিত্র কুরআনের সূরা আল হাজ্জ-২২:৪১ আয়াত উল্লেখ করেন, যেখানে ইসলামের প্রাথমিক যুগে মুসলমানদের প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের অনুমতি প্রদান করে বলা হয়েছে যে, এমন করা না হলে, “মঠ, গির্জা, ইহুদীদের উপাসনালয় এবং মসজিদসমূহ – যেখানে আল্লাহর নাম অধিক স্মরণ করা হয় – তা অবশ্যই ধ্বংস করে দেওয়া হত”। কুরআনের আয়াতের এই শব্দগুলো সাক্ষ্য দেয় যে, ইসলাম সকল ধর্মের অধিকার সংরক্ষণ করে।

আয়াতটির ব্যাখ্যা করতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“সকল ধর্মের সুরক্ষা করা এবং সকল ধর্মবিশ্বাসের সম্মান করা ইসলামের একটি মৌলিক শিক্ষা। এ কারণেই আমরা বলি যে, আমরা মুসা নবী, ঈসা নবী, হিন্দু এবং বৌদ্ধদের নবী (আলাইহিমুস সালাম – তাদের সকলের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক) সকলকেই সম্মান করে থাকি। বিশ্বে আগত প্রতিটি ধর্মকে আমরা সম্মান করি। আমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে আমরা যেন সকল মানুষকে সম্মান করি। পবিত্র কোরআন বলে যে, তোমরা এমনকি তাদের উপাস্য প্রতিমাগুলোকেও গালি দিবে না, কেননা, তাহলে তারা এর প্রত্যুত্তরে এক খোদাকে গালি দিবে। সুতরাং, যদি তারা খোদাকে গালি দেয়, তবে তা অশান্তি এবং সংঘাতের এক পরিমণ্ডল সৃষ্টি করবে। সত্যিকার মসজিদের জন্য এই হল ইসলামের নীতি নির্ধারণী শিক্ষা।”

মসজিদের অবস্থান সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“মসজিদটি শহরের প্রাণকেন্দ্রে নির্মিত হয়েছে যেখানে দোকানপাট রয়েছে এবং বস্তুবাদী বাণিজ্যের এক বৃহত্তর মাত্রা রয়েছে। কিন্তু, এমন স্থানেও, ধর্মের প্রতিনিধিত্ব থাকা উচিত যেন মানুষ সত্যিকার আধ্যাত্মিক শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত হতে পারে এবং খোদা তা’লা মানুষের ওপর [আধ্যাত্মিক প্রাচুর্য] যা বর্ষণ করছেন তার সাথে পরিচিত হতে পারে। এমন এক স্থানে মসজিদ প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে, মানুষকে স্মরণ করানো হচ্ছে যে, পার্থিব প্রাচুর্য থেকে কল্যাণ লাভ করার পাশাপাশি, তাদের নিজেদের স্রষ্টার প্রতিও কৃতজ্ঞ থাকা উচিত এবং সকল সময়ে তাঁকে তাদের হৃদয়ে স্থান দেওয়া উচিত; আর ইসলামের শিক্ষা এও যে, তোমরা যদি আল্লাহ্‌ তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকো, তাহলে তিনি তোমাদের ওপর তাঁর অনুগ্রহরাজিকে বাড়িয়ে দিবেন। সুতরাং, আমি বিশ্বাস করি যে, বিভিন্ন ব্যস্ত স্থানে, যেখানে মানুষ ব্যবসা-বাণিজ্য ও অন্যান্য পার্থিব কাজে ব্যস্ত থাকে, সেসব স্থানেও মসজিদ এবং অন্যান্য উপাসনালয় থাকা উচিত, যেন মানুষ দুনিয়াদারিতে সম্পূর্ণভাবে নিমজ্জিত না হয়ে যায় এবং যেন খোদা তা’লার দিকেও তাদের মুখ ফেরানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়।”

বক্তৃতার শেষাংশে হুযূর আকদাস ইসলামের শিক্ষার পূর্ণাঙ্গতা এবং কীভাবে তা সর্বাবস্থায় মানুষের অধিকার রক্ষা করতে চায় তার উল্লেখ করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন যে, আমাদেরকে সব সময় অন্যায়ের বিষয়ে নিন্দা প্রকাশ করা উচিত এবং অত্যাচারী ও অত্যাচারিত উভয়কে সহায়তা করা উচিত। তাঁর সাহাবীগণ বলেন যে, তারা এটা তো বুঝতে পারেন অত্যাচারীর হাত থেকে রক্ষা করে তারা কীভাবে অত্যাচারিতকে সাহায্য করবেন; কিন্তু অত্যাচারীকে কীভাবে সাহায্য করতে হবে তা তাদের বোধগম্য নয়। মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেন যে, অত্যাচারীকে তার নিষ্ঠুরতা পরিচালনা থেকে বিরত করার মাধ্যমে তাকে সাহায্য করতে হবে; কেননা, যদি সে এই অন্যায়-অবিচার চালিয়ে যায়, তাহলে সে খোদার কোপের মুখোমুখি হবে, এবং নিজের ইহকাল ও পরকালকে বিনষ্ট করবে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন:

“সুতরাং, একজন ধর্মপরায়ণ মানুষ কেবল ইহকালের দিকে তাকায় না; বরং, তার দৃষ্টি পরকালের ওপরও নিবদ্ধ থাকে। একজন ধার্মিক মানুষ কেবল তার নিজের খেয়াল রাখে না; বরং, তার এই উদ্বেগও থাকে যে, মানুষকে যেন খোদার অসন্তুষ্টি অর্জন করা থেকে এবং পরকালের শাস্তি থেকে রক্ষা করা যায়। এ কারণেই আমরা আমাদের ইবাদতের দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট থাকি। আর যখন আমরা খোদার অধিকারসমূহ রক্ষা করি, এটি আমাদের মধ্যে মানবজাতির সেবার প্রেরণা সৃষ্টি করে। এটি আমাদের মধ্যে অত্যাচারিত এবং অত্যাচারী, উভয়কে সাহায্য করার এক বাসনা জাগ্রত করে।”

হুযূর আকদাসের বক্তব্যের পূর্বে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত জার্মানির ন্যাশনাল আমীর জনাব আব্দুল্লাহ্ ওয়াগিসহাউসার মসজিদটির পরিচিতি তুলে ধরেন। এরপর ফ্লোরস্ট্যাডের মেয়র হারবার্ট উঙ্গার, পার্শ্ববর্তী শহর নিডাটালের মেয়র মাইকেল হান এবং হেসিয়ান পার্লামেন্টের সদস্য টোবিয়াস উটার মসজিদটি সম্পর্কে তাদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করেন এবং স্থানীয় সমাজের জন্য আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

হুযূর আকদাস দোয়ার মাধ্যমে অনুষ্ঠানটি সমাপ্ত করেন।