প্রেস বিজ্ঞপ্তি
০৭-জুলাই, ২০২৩

বৈশ্বিক মুসলিম নেতা বললেন, মুসলমানদের নিপীড়ন এবং ইসলামকে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু করার সুযোগ করে দিচ্ছে মুসলমানদের অনৈক্য


ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন ও সুইডেনে কুরআন পোড়ানোর ঘৃণ্য আচরণে নিন্দা জ্ঞাপন করার পাশাপাশি ফ্রান্সের দাঙ্গা নিয়ে বক্তব্য প্রদান করলেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

মুসলিম বিশ্বের মাঝে ঐক্যের অনুপস্থিতি নিয়ে দুঃখ প্রকাশ ও আফসোস করে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) তার অভিমত ব্যক্ত করলেন যে, মুসলিম উম্মাহ্‌র দুর্বলতার সুযোগে ইসলামের শত্রুগণ মুসলমানদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করছে।

৭ জুলাই, ২০২৩ টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে মুবারক মসজিদে তাঁর জুমুআর খুতবায় হুযূর আকদাস ফিলিস্তিনি মুসলমানদের ওপর চলমান নিপীড়ন, সুইডেনে কুরআন পোড়ানোর ঘটনা এবং পুলিশের হাতে কিশোর নাহেল মারজুক-এর নিহত হওয়ার পরবর্তী ফরাসি দাঙ্গার বিষয়ে আলোকপাত করেন।

এ সকল ঘটনার প্রেক্ষাপটে, হুযূর আকদাস বলেন যে, ইসলামকে অন্যায়ভাবে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করার বিষয়টি সমাপ্ত করার জন্য মুসলমানদের হাতে একটিই রাস্তা রয়েছে, আর তা এই যে, বিশ্বজনীন মুসলিম সম্প্রদায় যেন একতাবদ্ধ হয়ে সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ও বিভক্তির ইতি টানে।

ফিলিস্তিনের চলমান পরিস্থিতি সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ফিলিস্তিনি মুসলমানদের জন্য দোয়া করুন। আল্লাহ্ তা’লা তাদের জন্য স্বাচ্ছন্দ্য সৃষ্টি করুন। অত্যাচারিতদের পরিত্রাণ দান করুন। তিনি তাদেরকে এমন নেতৃত্ব দান করুন যারা তাদের অধিকার রক্ষা করেন, তাদেরকে সঠিক পথ প্রদর্শন করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অন্যায়-অবিচার থেকে তাদেরকে মুক্ত করেন। অনেক বেশি অত্যাচার তাদের ওপর পরিচালিত হয়েছে, কিন্তু আজ পর্যন্ত তাদেরকে সামলানোর বা পথপ্রদর্শনের জন্য কেউ নেই। মুসলমানগণ যদি একতাবদ্ধ হয়ে যায়, তবে তারা (ফিলিস্তিনিরা) এই বিপর্যয় থেকে মুক্তি লাভ করতে পারে।”

গত সপ্তাহে সুইডেনে সংঘটিত পবিত্র কুরআন পোড়ানোর সর্বশেষ ঘটনায় তীব্র নিন্দা জ্ঞাপন করে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“সুইডেনে এবং অন্যান্য কিছু দেশে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার নামে মন্দ আচরণকারী মানুষের (ইসলামের বিরুদ্ধে) যা খুশি তাই বলার জন্য পরিপূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। এই বাহানায়, তারা মুসলমানদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে খেলা করে প্রায়শই এমন আচরণ করছে যা মুসলমানদের অনুভূতিতে আঘাত হানছে। তাদের আচরণ অত্যন্ত ঘৃণ্য, যেখানে তারা পবিত্র কুরআনের অবমাননা করে অথবা মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সম্পর্কে কুৎসিত ভাষা ব্যবহার করে। আল্লাহ্ তা’লাই তাদের পাকড়াও-এর উপকরণ প্রস্তুত করুন। এক্ষেত্রে, মুসলমান সরকারসমূহেরও একটি দায় রয়েছে, যাদের অনৈক্যের সুযোগ নিয়ে ইসলাম-বিরোধী শক্তিসমূহ এমন ঘৃণ্য আচরণ করে থাকে। যদি মুসলমানগণের কোন প্রতিক্রিয়া থেকে থাকে, তবে সেটিও কেবল একটি সাময়িক প্রতিক্রিয়া হবে যার কোন দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব থাকবে না। সুতরাং, মুসলমান নেতৃবর্গ এবং উম্মাহ্‌র জন্য অনেক দোয়া করুন। এর অত্যন্ত গভীর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।”

কিশোর নাহেল মারজুক-এর হত্যাকাণ্ডের ফলে ফ্রান্সে সংঘটিত সাম্প্রতিক দাঙ্গাসমূহ নিয়ে আলোচনা করতে গিয়ে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ফ্রান্সেও মুসলমানদেরকে আক্রমণের লক্ষ্যে পরিণত করা হচ্ছে। আর মুসলমানদের এবং তাদের সাথে যারা যুক্ত হয়েছেন তাদের সহিংস প্রতিক্রিয়াও সঠিক পদ্ধতি নয়। ভাঙচুর করার মাধ্যমে কোন কিছুই অর্জন হবে না। বরং, মুসলমানদের প্রতিক্রিয়া ইসলামের শিক্ষার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া উচিত। যখন মুসলমানদের কথা ও কাজ ইসলামের শিক্ষার সাথে সঙ্গতিপূর্ণ হবে, তখনই সাফল্য অর্জিত হবে। যাহোক, আমরাতো কেবল দোয়া করতে পারি, বিশেষভাবে মুসলমানদের জন্য এবং বিস্তৃত পরিসরে পুরো পৃথিবীর জন্য দোয়া করুন; যেন আল্লাহ তা’লা সকলকে অন্যায়-অবিচার থেকে রক্ষা করেন এবং বিশ্বে যেন শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হয়, আর যেন মানুষ একে অপরের অধিকার রক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে। অন্যথায়, যেমনটি আমি অনেকবার বলেছি, বিশ্ব এক অনেক বড় ধ্বংসযজ্ঞের দিকে অগ্রসর হচ্ছে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“এমন দাবি করা হচ্ছে যে, (ফ্রান্সে) নিহত কিশোরের সমর্থনে অনেক কিছু করা হচ্ছে। কিন্তু, জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া একটি সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র উপস্থাপন করে। বর্ণিত হয়েছে যে, নিহত কিশোর এবং সেই পুলিশ অফিসার উভয়ের জন্যই তহবিল সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনলাইনে প্রয়াস গ্রহণ করা হয়েছে। প্রাপ্ত রিপোর্ট অনুযায়ী, কিশোরের জন্য সংগৃহীত তহবিল পুলিশ অফিসারের সমর্থনে সংগৃহীত তহবিলের একটি ভগ্নাংশ মাত্র। আল্লাহ তা’লা দয়া পরবরশ হোন এবং এই সকল মানুষকে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার তৌফিক দান করুন আর মুসলমানগণ একতাবদ্ধ হোক।”