প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২১-মে, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো লাজনা ইমাইল্লাহ্ ইতালির সদস্যাগণ


“যখন যুগ-খলীফা আপনার সৎকর্ম সম্পর্কে অবহিত হন, তিনি যারপরনাই খুশি হন।”
– হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

১৪ মে ২০২৩, লাজনা ইমাইল্লাহ (আহমদীয়া মুসলিম নারী অঙ্গ-সংগঠন) ইতালির সদস্যাবৃন্দের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর এক ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা অনুষ্ঠিত হয়।

হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর লাজনা আমেলা (কার্যনির্বাহী পরিষদ) সদস্যাবৃন্দ ইতালির বুলোনিয়ার নিকটবর্তী সান পিয়েত্রো ইন কাসালে-তে অবস্থিত বায়তুত তাওহীদ মসজিদ থেকে সভায় সংযুক্ত হন।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর উপস্থিত সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।

একজন অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়ে জিজ্ঞেস করেন এবং জানতে চান এটি কীভাবে সন্তানদের উপর প্রভাব ফেলে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“বিয়ের পর সাধারণত পুরুষরা, কখনো কখনো নারীরাও, একে অপরের প্রতি কৃত অঙ্গীকারের কথা ভুলে যায়। তাই আপনাদের অনুধাবন করতে হবে যে, এখন আপনাদের জীবন কেবল নিজের জন্য নয়; আপনাদের কাঁধে অপরের জীবনের দায়িত্বও রয়েছে। তাদেরকে ইসলামী শিক্ষা অনুসারে গড়ে তুলতে হবে। যদি আপনারা একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শন না করেন, ইসলামী শিক্ষা অনুসারে জীবনযাপন না করেন, আল্লাহ্ তা’লার প্রতি দায়িত্ব পালন না করেন, আল্লাহর নির্দেশনাবলি অনুসরণ না করেন, উত্তম গুণাবলি প্রদর্শন না করেন, তাহলে এটি আপনাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“নিজেদেরকে প্রাধান্য দেওয়ার পরিবর্তে হৃদ্যতাপূর্ণ আপসের মাধ্যমে যেকোনো পারস্পরিক সমস্যার সমাধান করা উচিত; যেন সন্তানরাও শিক্ষা নিতে পারে, কীভাবে আমাদের একে অপরের প্রতি আচরণ করা উচিত। এভাবে তারা খাঁটি ইসলামী শিক্ষা অনুসারে বেড়ে উঠবে … এটি পরস্পরের প্রতি সম্মান দেখানোর বিষয়। তাই, যদি স্বামী ও স্ত্রী উভয়ই তাদের দায়িত্ব বুঝতে পারে তাহলে অপর থেকে নিজেকে শ্রেষ্ঠ মনে করার বিষয়টি কখনো ঘটবে না।”

এরপর একজন অংশগ্রহণকারী বলেন তিনি হুযূর আকদাসকে বলতে শুনেছেন যে, তিনি (আই.) ঘুমানোর পূর্বে আহমদীরা বাস করে এমন সকল দেশে তাঁর কল্পনার মাধ্যমে বিচরণ করেন এবং তাদের জন্য দোয়া করেন। তিনি হুযূর আকদাসের নিকট জিজ্ঞেস করেন ইতালির কথা স্মরণ করার সময় তাঁর মনে কেমন ছবি ভেসে উঠে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ স্নেহের সঙ্গে বলেন:

“অন্যান্য দেশের মতোই ইতালির জন্য আমি দোয়া করি। আমি আল্লাহ্ তা’লার নিকট দোয়া করি যেন তিনি ইতালির আহমদীদেরকে তাঁর আশ্রয়ে সুরক্ষিত রাখেন, সকল প্রকার কষ্ট থেকে যেন রক্ষা করেন, তারা যেন শান্তিপূর্ণভাবে নিদ্রাযাপন করতে যেতে পারেন এবং উদ্দীপ্ত হয়ে ঘুম থেকে উঠতে পারেন। তারা যেন আল্লাহ্ তা’লাকে স্মরণকারী হন এবং সৎকর্ম সম্পাদনে উৎকর্ষ অর্জন করতে পারেন। আল্লাহ্ তা’লা তাদেরকে সকল প্রকার খারাপ কাজ থেকে হেফাজত করুন। সুতরাং, অনেক রকম দোয়া আমি করে থাকি এবং আপনাদের জন্যও করি।”

এরপর, ওয়াকফে নও না হয়েও ধর্মের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে জামা’তের সেবার করার বিষয়ে হুযূর আকদাসের পরামর্শ চান অপর এক অংশগ্রহণকারী। তিনি জিজ্ঞেস করেন কীভাবে খিলাফতের জন্য “চোখের প্রশান্তি”র কারণ হতে পারেন।

হুযূর আকদাস তার উচ্চাকাঙ্ক্ষার প্রশংসা করেন এবং বেশ কিছু উদাহরণ পেশ করেন যারা ওয়াকফে নও না হওয়া সত্ত্বেও তাদের ধর্মের জন্য বিরল সেবা প্রদান করেছেন; যেমন, নারীরা ধর্মের জন্য নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, আহমদী মুসলিম জামা’তের স্কুলে পড়াচ্ছেন এবং আফ্রিকায় অন্যান্য দাতব্য প্রকল্পে অংশগ্রহণ করছেন।

জীবন উৎসর্গকারী হিসেবে কারো দায়িত্বাবলি সম্পর্কে হুযূর আকদাস আরও দিকনির্দেশনা প্রদান করেন এবং লাজনা সদস্যাদের ধর্মের প্রচারে, মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর শিক্ষা অনুসরণে, কুরআন ও হাদীস শিক্ষার প্রতি জোর আহ্বান জানান।

যুগ-খলীফাকে কীভাবে সন্তুষ্ট করা যায় এ সম্পর্কে বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“যখন যুগ-খলীফা আপনার সৎকর্ম সম্পর্কে অবহিত হন, তিনি যারপরনাই খুশি হন। ফলে তিনি আপনার জন্য দোয়া করেন আর বস্তুত এটিই “চোখের প্রশান্তি”-র কারণ হিসেবে বিবেচ্য।”

অপর এক অংশগ্রহণকারী হুযূর আকাদসকে জিজ্ঞেস করেন যে, অ-আহমদী বন্ধু থাকার অনুমতি আছে কিনা আর থেকে থাকলে ইসলামের বাণী প্রচারের সময় একজনের কীরূপ আচরণ করা উচিত।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) উত্তরে বলেন:

“আপনি যদি অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব না করেন তাহলে কীভাবে তাদেরকে ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষা সম্পর্কে জানাবেন? অবশ্যই, আপনাকে মুসলিম ও অ-মুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে হবে। তখন আপনি যদি আমলকারী মুসলমান হন, ইসলামী শিক্ষা মেনে চলেন, পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায়কারী হোন এবং আলোচনার সময় কুরআনে বর্ণিত নারীর অধিকার, অপরের অধিকার সম্পর্কে কথা বলেন, তাহলে এটি তাদের কাছে ইসলামের বার্তা পৌঁছানোর দুয়ার খুলে দিবে।”

একজন লাজনা সদস্যা হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন যদি কোনো দম্পতি বিবাহ-বিচ্ছেদের দিকে অগ্রসর হয় তাহলে তাদের কি উচিত সন্তানদেরকে বিষয়টি বুঝিয়ে বলা?

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) উত্তরে বলেন:

“শিশুরা খুবই বুদ্ধিদীপ্ত হয়ে থাকে। তারা ইতোমধ্যে জেনে থাকবে তাদের মা-বাবার মাঝে কোনো দ্বন্দ্ব হয়েছে। তাই আপনারা যদি বিবাহ-বিচ্ছেদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন এবং সন্তানরা জানতে চায় কেন এমনটি করছেন তাহলে তাদেরকে এর কারণ বুঝিয়ে বলুন। এতে কোনো ক্ষতি নেই। তারা বুদ্ধিমান, তারা বুঝবে। কিন্তু, একই সাথে মা-বাবা উভয়ই তাদেরকে বলুন যে, যদিও আমরা পৃথক হয়ে যাচ্ছি, কিন্তু, পিতা-মাতা উভয়ের সঙ্গে ভাল আচরণ করা আল্লাহ্ তা’লার নির্দেশ।”

এরপর একজন অংশগ্রহণকারী অনুপ্রেরিত হয়ে বিবাহ সংক্রান্ত প্রশ্ন করেন। তিনি জিজ্ঞেস করেন একজন নারী কি বিবাহ বন্ধনে নিজেকে সমান অংশীদার ভাবতে পারেন এবং উল্লেখ করেন কীভাবে কিছু পুরুষ নিজেকে নারীর উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করে থাকে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বিষয়টি ব্যাখ্যা করেন এবং বলেন:

“এটি ঠিক যে, আপনার অধিকার, আপনাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আপনারা সমান। আপনাদের সমান অধিকার রয়েছে। একই সাথে ইসলাম স্বামী ও স্ত্রীর জন্য বেশ কিছু দায়িত্ব নির্ধারণ করে দিয়েছে। স্বামী সংসার পরিচালনার ও সকলের নিত্য-নৈমিত্তিক চাহিদা পূরণের জন্য দায়িত্বপ্রাপ্ত। স্ত্রী যদি কাজ করেন, স্বামীর উচিত হবে না স্ত্রীকে এই কথা বলা যে, ‘যেহেতু তুমিও কাজ করছো, ঘরের খরচে আমার মতো তোমারও অংশ নেয়া উচিত।’ এটি [সংসারের ব্যয় নির্বাহ করা] স্বামীর কর্তব্য। স্ত্রী যা আয় করে তা থেকে সংসারের জন্য, সন্তানদের জন্য কিংবা অন্যান্য কাজে খরচের সিদ্ধান্ত তার নিজের।”

হযরতে মির্যা মসরূর আহমদ আরও বলেন:

“স্ত্রীর দায়িত্ব হল ঘরের দৈনন্দিন কার্যক্রম ইসলামী শিক্ষা অনুসারে সম্পাদন করা … আপনাকে আপনার সন্তানের দেখাশোনা করতে হবে, সর্বোত্তম উপায়ে তরবিয়ত (নৈতিক প্রশিক্ষণ) প্রদান করতে হবে। যখন তারা স্কুল থেকে ফিরবে তারা যেন জানে যে, তাদের মা বাড়িতে রয়েছেন, ‘তিনি আমাকে স্বাগত জানাবেন, আমার জন্য খাবার প্রস্তুত করে রাখবেন এবং আমার লালন-পালনের প্রয়োজনীয় সবকিছুই করবেন।’ আপনারা উভয়ই (স্বামী ও স্ত্রী) যদি নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কে অবগত হন তাহলে কোনো দ্বন্দ্ব থাকবে না। আপনাদের সংসার নির্ঝঞ্ঝাট ও সুখে-শান্তিতে চলতে থাকবে।”

একজন লাজনা সদস্য হুযূর আকদাসকে আরও জিজ্ঞেস করেন কীভাবে তারা সে সকল মানুষকে সাহায্য করতে পারেন যারা নিজেদের লিঙ্গ পরিচয় নিয়ে সন্তোষবোধ করেন না। পাশাপাশি যারা নিজেদের লিঙ্গ পুনরায় নির্ধারণ করতে শল্যচিকিৎসা করান।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“যখন একজন শিশু দেখে যে তাদের ভাইবোনের মাঝে কারো প্রতি ভিন্ন আচরণ করা হচ্ছে তখন তাদের মনে এমন চিন্তা জেগে উঠে। মাঝে মাঝে তারা বাইরের জগৎ, স্কুলের পরিবেশ এবং লিঙ্গ পরিচয় সম্পর্কে শিক্ষকের বক্তব্য দ্বারা প্রভাবিত হয়ে পড়ে। বাইরের প্রভাব তাদের আবেগ-অনুভূতি উপর প্রভাব ফেলে। ফলে তারা তাদের লিঙ্গ পরিচয় পরিবর্তন করতে চায়। তারা মনে করে যদি আমরা আমাদের লিঙ্গ পরিচয় বদলিয়ে ফেলি তাহলে আমরা আরও প্রশংসিত হবো এবং শ্রদ্ধা পাবো। সুতরাং, এটি একটি মানসিক বিষয়। তারা চাইলে বিষয়টি মানসিকভাবে মূল্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু, আজকাল বিষয়টি খুবই কঠিন হয়ে পড়ছে। যারা পনেরো বা ষোলো বছর বয়সে এমন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে, তারা খুব একগুঁয়ে হয়ে যায়। যখন তারা মনে করে তারা এমনই থাকবে, তখন কেউই কিছু করতে পারে না। তাই, আমরা কেবল তাদের জন্য দোয়া করতে পারি এবং তাদেরকে বুঝাতে পারি।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) পুনরায় পিতা-মাতার দায়িত্বাবলি তুলে ধরে বলেন:

“এটি পিতা-মাতার দায়িত্ব যে, তারা যেন তাদের সন্তানদেরকে সম্মানের সঙ্গে লালন পালন করেন এবং একেবারে বাল্যকাল থেকে প্রত্যেককে যথাযথ সম্মান প্রদান করেন এবং তাদেরকে ধর্মীয় শিক্ষা সমন্ধে উপদেশ প্রদান করতে থাকেন।”