প্রেস বিজ্ঞপ্তি
১২-ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

তকদীর, হিজাব, আর ইসলামের ৭৩ ফিরকা: হুযূর আকদাসের কাছে দিকনির্দেশনার প্রত্যাশী হলো যুক্তরাজ্যের আহমদী মুসলিম শিশুরা


৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর সাথে এক ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভায় মিলিত হওয়ার সুযোগ লাভ করলো ওয়াকফে নও স্কীমের অন্তর্ভুক্ত যুক্তরাজ্যের সদস্যবৃন্দ।
নয় থেকে এগারো বছর বয়সের ছেলে-মেয়েরা যুক্তরাজ্যের মর্ডেন, সারে-তে অবস্থিত বায়তুল ফুতূহ মসজিদে কমপ্লেক্সের ‘তাহের হল’-এ সমবেত হন। হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে সভার সভাপতিত্ব করেন।
প্রাথমিক আনুষ্ঠানিকতার পর শিশুরা বিস্তৃত পরিসরে বিভিন্ন বিষয়ে হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করে।

মাধ্যমিক শিক্ষায় প্রবেশের সময়ে হিজাব পরিধানের ক্ষেত্রে দশ বছর বয়সী এক বালিকা তার সহপাঠীদের প্রতিক্রিয়া নিয়ে শঙ্কিত হয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তিনি হুযূর আকদাসের নিকট এ বিষয়ে পরামর্শ চান।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ইসলাম যদি সত্য ধর্ম হয়ে থাকে, তাহলে আল্লাহ্ তা’লা পবিত্র কুরআনে বলেছেন যে, মেয়েরা যখন বয়ঃসন্ধিকালে পদার্পণ করে, তখন তাদের উচিত হিজাব অবলম্বন করা। সুতরাং, যদি কেউ ইসলামের সত্যতায় বিশ্বাসী হয় তাহলে তার উচিত আল্লাহ তা’লার নির্দেশ মান্য করা। আর, যখন আমরা তাঁর নির্দেশ মান্য করি, তখন আমাদের অন্য কাউকে ভয় করার কোন প্রয়োজন নেই। আমরা যা-ই করি, আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টির জন্য করে থাকি।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“প্রকৃতপক্ষে তুমি যদি আল্লাহ্ তা’লাকে খুশি করতে চাও, তাহলে অন্যদেরকে ভয়ের কোনো কারণ নেই। নিজের ঈমানকে দৃঢ় করো। লজ্জা এবং ভয় পাবে না। আমরা সত্যবাদী, আমাদের ধর্ম সত্য এবং আমরা আমাদের ঈমানে অটল।”

অপর এক বালিকা প্রশ্ন করেন: “মুসলমানদের মধ্যে কীভাবে ৭৩টি দল হলো?”

উত্তরে হুযূর আকদাস বলেন যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী সময়ের সাথে ধীরে ধীরে মুসলমানরা ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো ভুলে যাবে এবং পবিত্র কুরআনের শিক্ষার উপর আমল করা বন্ধ করে দিবে। প্রত্যেক নেতার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি থাকবে এবং বিভিন্ন দল গড়ে উঠবে। এমন সময়ে মসীহ্ মওউদ (আ.) আসবেন, সকল দলকে একত্র করবেন এবং তারা প্রকৃত মুসলমান হবে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“সুতরাং, এ কারণে ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ৭২টি দল হয়েছে, আর ৭৩তম দলটি হলো আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত যা সঠিক এবং মহানবী (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী ও আল্লাহ্ তা’লার প্রতিশ্রুতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।”

একজন প্রশ্নকারী জিজ্ঞেস করেন যে, যদি আল্লাহ্ তা’লা ভবিষ্যতে কী ঘটবে জেনে থাকেন, তাহলে তিনি মানুষকে কাঠিন্যের মধ্যে ফেলেন কেন?

হযরত মির্যা মাসরূর আহমদ (আই.) উত্তর প্রদান করেন:

“আল্লাহ্ তা’লা জানেন তোমার সঙ্গে কী ঘটতে যাচ্ছে, কিন্তু তিনি তোমাকে সুযোগ প্রদান করেছেন। আল্লাহ্ তা’লা ইচ্ছা করে কারো ওপর কাঠিন্য আরোপ করেন না।”

হুযূর আকদাস ব্যাখ্যা করেন আল্লাহ্ তা’লা ভাল ও মন্দ কাজের মধ্যে পার্থক্য করেছেন এবং তিনি জানেন কোন ব্যক্তি সৎকর্ম বা পাপাচার করবেন কিনা। কিন্তু, ব্যক্তির উপরই একটি পথ বেছে নেওয়ার চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নির্ভর করে। আল্লাহ্ তা’লা কোনো ক্ষেত্রেই কাউকে বাধ্য করেন না।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আল্লাহ্ তা’লা কাউকে খারাপ কাজ করার উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেন নি। তিনি আমাদের উপর কাঠিন্য আরোপ করেন না, বরং তা আমরা নিজেরা নিজেদের উপর করে থাকি। আল্লাহ্ তা’লা আমাদের ভাল কাজ করার নির্দেশ দিয়েছেন যেন আমরা কষ্টে না পড়ি।”

প্রিয় দেশ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“প্রত্যেক দেশেই ভালো এবং নেক আহমদী মুসলমান রয়েছেন এবং প্রত্যেক দেশেরই নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও সৌন্দর্য রয়েছে। প্রত্যেক জাতির নিজস্ব গুণ রয়েছে। যেমনটি আমি বলেছি খাঁটি আহমদী প্রত্যেক দেশেই রয়েছেন। যখন আহমদীরা ভালো হয়, তখন দেশও ভালো হয়! তাই আমার কাছে প্রত্যেক দেশই ভালো।”

হুযূর আকদাস আরও বলেন:

“তোমরা যারা যুক্তরাজ্যে বসবাস করছো তারা ভাল, আর তেমনটিই যারা জার্মানি, হল্যান্ড, বেলজিয়াম, ফ্রান্স, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, নিউজিল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকার দেশসমূহে বসবাস করছে। আফ্রিকায় বসবাসরত আহমদী শিশুরা ও বড়রা ধর্মভীরু এবং বিশ্বস্ত, আর তাদের মাঝে গভীর ভালোবাসার প্রকাশ দেখা যায়। দেখো সম্প্রতি বুরকিনা ফাসোতে কী হলো – আহমদী যারা শহীদ হয়েছেন, ধর্মের খাতিরে তাদের কুরবানী কতই না অসাধারণ! সুতরাং, এ ঘটনার পর, নিশ্চিতভাবে আফ্রিকানদের সবচেয়ে প্রিয় অবস্থানে রাখতে হবে। আহমদী মুসলমান, যারাই ধর্মের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেন এবং ধর্মের উপর দৃঢ় থাকেন, তারা যেখানেই থাকুন না কেন, সেই দেশ আমার কাছে ভালো।”