বুরকিনা ফাঁসোর শহীদগণ: আহমদীয়াতের উজ্জ্বল নক্ষত্র

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২০-জানুয়ারি, ২০২৩

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ২০শে জানুয়ারি, ২০২৩ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় বুর্কিনা ফাঁসোর ডোরিতে শাহাদতবরণকারী আহমদীয়াতের নয়জন উজ্জ্বল নক্ষত্রের বীরত্বপূর্ণ শাহাদতের বিবরণ করেন। খুতবার শেষাংশে হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত নিষ্ঠাবান আমেরিকা নিবাসী সূফী খোদা বখশ যিরভী সাহেবের পুত্র ডা. করীমুল্লাহ্ যিরভী সাহেব এবং তার সহধর্মিনী ও মালেক সাইফুর রহমান সাহেবের কন্যা আমাতুল লতীফ যিরভী সাহেবা’র স্মৃতিচারণ করেন। হুযূর (আই.) নামাযান্তে তাদের সকলের গায়েবানা জানাযা পড়ান।
তাশাহ্‌হুদ, তা’ঊয এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) সূরা বাকারার ১৫৫-১৫৭ আয়াত পাঠ করেন,

وَلَا تَقُولُوا لِمَنْ يُقْتَلُ فِي سَبِيلِ اللَّهِ أَمْوَاتٌ بَلْ أَحْيَاءٌ وَلَكِنْ لَا تَشْعُرُونَ * وَلَنَبْلُوَنَّكُمْ بِشَيْءٍ مِنَ الْخَوْفِ وَالْجُوعِ وَنَقْصٍ مِنَ الْأَمْوَالِ وَالْأَنْفُسِ وَالثَّمَرَاتِ وَبَشِّرِ الصَّابِرِينَ * الَّذِينَ إِذَا أَصَابَتْهُمْ مُصِيبَةٌ قَالُوا إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ

যার অনুবাদ হলো, ‘আর যারা আল্লাহ্‌র পথে নিহত হয় তাদেরকে তোমরা মৃত বলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝতে পারো না। আর আমরা অবশ্যই তোমাদের ভয়ভীতি, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, প্রাণ ও ফল-ফলাদির ক্ষতির মাধ্যমে পরীক্ষা করব, আর তুমি ধৈর্যশীলদের সুসংবাদ দাও, যারা তাদের ওপর বিপদ আসলে বলে, ‘নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্‌রই এবং নিশ্চয় আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব।’

আল্লাহ্ তা’লার পথে প্রাণ উৎসর্গকারীদের বিষয়ে এখানে আল্লাহ্ তা’লার অমোঘ ঘোষণা বিদ্যমান যে, তারা মৃত নয় বরং জীবিত। আহমদীয়া জামা’ত বিগত শত বছরের বেশি সময় ধরে যে আল্লাহ্‌র পথে প্রাণের কুরবানী উপস্থাপন করে চলেছে- সেগুলো কি বৃথা গিয়েছে? না! বরং আল্লাহ্ তা’লা একদিকে যেমন স্বীয় প্রতিশ্রুতি অনুসারে এই শহীদদের মর্যাদায় উন্নীত করেছেন, সেইসাথে জামা’তকেও পূর্বের চেয়ে অধিক উন্নতি দান করেছেন। পরকালের অনন্ত উন্নতির সাথে এই পৃথিবীতেও তাদের নাম চিরভাস্বর, আর আল্লাহ্‌র পথে তাদের প্রাণ উৎসর্গ করা জামা’তের জন্যও উন্নতি এবং জীবনলাভের মাধ্যম। এমতাবস্থায় তাদের মৃত কীভাবে বলা যায়? এই ধারা যা হযরত সাহেবযাদা আব্দুল লতীফ সাহেব শহীদের মাধ্যমে হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর জীবদ্দশাতেই আরম্ভ হয়েছিল তা সাধারণত আফগানিস্তান এবং উপমহাদেশের আহমদীদের ভাগ্যেই জুটছিল। ২০০৫ সালে কঙ্গোর এক নিষ্ঠাবান আহমদীর শাহাদতের মাধ্যমে আফ্রিকাও এই সৌভাগ্যের ভাগিদার হয়েছিল, কিন্তু সম্প্রতি আফ্রিকার এক দেশ বুর্কিনা ফাঁসোতে ভালোবাসা, বিশ্বস্ততা, নিষ্ঠা এবং দৃঢ় ঈমানে সজ্জিত সদস্যগণ সমষ্টিগতভাবে যে দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন তার কোনো তুলনাই হয় না। তাদেরকে সুযোগ দেয়া হয়েছিল- মসীহ্ মওউদ (রা.)-এর সত্যতাকে অস্বীকার করো আর মেনে নাও যে, ঈসা (আ.) আকাশে সশরীরে জীবিত আছেন এবং সেখান থেকে নেমে আসবেন, তাহলে তোমাদের প্রাণভিক্ষা দেয়া হবে; কিন্তু এঁরা, যাদের ঈমান পর্বতের চেয়েও অটল ছিল, তাদেরকে উত্তর দেন, জীবন তো সবারই একদিন অবসান হবে, সেটি রক্ষার জন্য আমরা নিজেদের ঈমান বিক্রি করতে পারি না! যে সত্য আমরা পেয়েছি সেটিকে তো ছাড়তে পারব না! এভাবে একে একে নয়জন আত্মাহুতি দিয়েছেন। তাদের স্ত্রী-সন্তানরাও এই বর্বর দৃশ্য দেখছিলেন, কিন্তু কেউ কোনো হৈচৈ বা কান্নাকাটি করেন নি। এঁরা সেসব মানুষ যারা শুধু আফ্রিকায়ই নয় বরং গোটা আহমদীয়াতের ভুবনে নতুন এক ইতিহাস রচনা করেছেন; দৈহিক প্রাণ উৎসর্গ করে চিরন্তন জীবনের অধিকারী হয়েছেন; বয়আতের অঙ্গীকার এমনভাবে পূর্ণ করেছেন যে, পরে এসেও পূর্বসূরীদের চেয়ে অগ্রগামী হয়ে গিয়েছেন।
হুযূর (আই.) এই শাহাদাতের বিবরণে বলেন, বুর্কিনা ফাঁসোর ডোরি শহরে মাহদীআবাদ জামা’তে গত ১১ জানুয়ারি, ২০২৩ এশার নামাযের সময়ে ৪টি মোটরসাইকেলে চড়ে ৮জন সশস্ত্র জঙ্গী আমাদের মসজিদে আসে। এখানে আসার আগে তারা নিকটস্থ ওয়াহাবী মসজিদে ছিল, কিন্তু সেখানে তারা কারো কোনো ক্ষতি করে নি। তারা আযানের সময় আমাদের মসজিদে আসে এবং আযান হয়ে গেলে সবাইকে মসজিদে ডেকে পাঠায়। সবাই এলে পরে তারা ইমাম এবং সহকারী ইমামের পরিচয় জানতে চায়? আলহাজ্জ ইব্রাহীম বিদিগা সাহেব এবং আগ উমর আগ আব্দুর রহমান সাহেব যথাক্রমে ইমাম ও সহকারী ইমাম হিসেবে নিজেদের পরিচয় দেন। নামাযের সময় হলে ইমাম সাহেব নামায পড়ার সুযোগ চান কিন্তু তারা অনুমতি দেয় নি। তারা আহমদীয়া জামা’তের আকীদা সম্পর্কে অনেক প্রশ্ন করে, ইমাম সাহেব অত্যন্ত সাহস ও দৃঢ়তার সাথে সেগুলোর উত্তর দেন। তারা ঈসা (আ.) সম্পর্কে জামা’তের বিশ্বাস জানতে চায়; উত্তরে যখন বলা হয় যে, তিনি স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন, তখন তারা অস্বীকৃতি জানিয়ে বলে, ঈসা (আ.) জীবিতাবস্থায় সশরীরে আকাশে রয়েছেন এবং আবার পৃথিবীতে এসে দাজ্জাল বধ করবেন। এরপর তারা জানতে চায়, ইমাম মাহদী কে? উত্তরে বলা হয়, হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আ.)-কে আল্লাহ্ তা’লা ইমাম মাহদী ও মসীহ্ মওউদ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। অবশেষে তারা বলে, আহমদীরা মুসলমান নয় বরং শক্ত কাফির। তারা ইমাম সাহেবকে মসজিদ সংলগ্ন আহমদীয়া সেলাই সেন্টারে নিয়ে যায় যেখানে মসীহ্ মওউদ (আ.) এবং খলীফাদের ছবি ছিল; সেগুলো নিয়ে আবার মসজিদে এসে প্রশ্ন করে। ইমাম সাহেব সবার পরিচয় তুলে ধরেন; তারা বলে, (নাউযুবিল্লাহ্) মির্যা গোলাম আহমদের নবুওয়্যতের দাবি মিথ্যা। সে সময় মসজিদে ষাট-সত্তর জন আহমদী ছিলেন। তারা শিশু, যুবক, বৃদ্ধদের পৃথক দলে বিভক্ত করে। এরপর বয়স্ক পুরুষদের মসজিদের প্রাঙ্গনে যেতে বলে। মসজিদে উপস্থিত দশজন আনসারের একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে তারা বাদ দেয়। মসজিদের উঠোনে দাঁড় করিয়ে ইমাম ইব্রাহীম বিদিগা সাহেবকে বলে, যদি তিনি আহমদীয়াত অস্বীকার করেন তবে তাকে ছেড়ে দেয়া হবে। কিন্তু তিনি বলেন, আমার শিরোচ্ছেদ করতে চাইলে করো, কিন্তু আমি আহমদীয়াত ছাড়তে পারব না; যে সত্য আমি লাভ করেছি তাত্থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়া সম্ভব নয়। ঈমানের বিপরীতে প্রাণের কি-ইবা মূল্য আছে? তখন জঙ্গীরা তার গলায় বড় ছুরি ধরে তাকে মাটিতে শুইয়ে জবাই করতে চায়। কিন্তু ইমাম সাহেব বলেন, আমি দাঁড়িয়ে থেকেই প্রাণ বিসর্জন দিতে চাই! তখন তারা গুলি করে ইমাম সাহেবকে শহীদ করে। জঙ্গীরা ইমাম সাহেবকে নির্দয়ভাবে হত্যা করে ভেবেছিল, অন্যরা এই নিষ্ঠুরতা দেখে ভয়ে ঈমান থেকে পিছু হটবে। পরের জনকে তারা বলে, আহমদীয়াত ছাড়বে, নাকি তোমার অবস্থাও তোমাদের ইমামের মতই করব? তিনিও নির্ভিকচিত্তে বলেন, আহমদীয়াত ছাড়া সম্ভব না! যে পথে আমাদের ইমাম সাহেব প্রাণ দিয়েছেন, আমরাও সেই পথেই চলব। তখন তাকেও মাথায় গুলি করে শহীদ করা হয়। এভাবেই একে একে সবাইকে প্রশ্ন করা হয় এবং তারা পর্বতসম দৃঢ়তা দেখিয়ে বীরত্বের সাথে শাহাদাতবরণ করেন, একজনও বিন্দুমাত্র দুর্বলতা দেখান নি। এই নৃশংস ও বর্বরতা মোটামুটি দেড় ঘণ্টা যাবৎ চলতে থাকে। মসজিদ থেকে বের হয়েও জঙ্গীরা অনেকক্ষণ সেই এলাকায় অবস্থান করে। তারা হুমকিও দিয়ে যায় যে, যদি সবাই আহমদীয়াত ত্যাগ না করে বা আবার মসজিদ খোলা হয় তবে তারা পুনরায় আক্রমণ করে সবাইকে হত্যা করবে। ঘটনার পর নিকটস্থ আর্মি ক্যাম্পে খবর দেয়া হলেও তারা বা নিরাপত্তা বাহিনীর কেউ সকাল পর্যন্ত আহমদীদের খোঁজ নিতে আসে নি। শহীদদের মরদেহ সারারাত উঠোনেই পড়ে থাকে, কারণ আবারো জঙ্গীদের আক্রমণ হবার সমূহ সম্ভাবনা ছিল। সকাল ১০টার দিকে তাদের দাফন করা হয়। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) তাযকেরাতুশ্ শাহাদাতাঈন পুস্তকে সাহেবযাদা আব্দুল লতীফ (রা.) শহীদের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে নিজের একটি স্বপ্নের উল্লেখ করে ব্যাখ্যা করেন, আল্লাহ্ তা’লা তাঁর আরো স্থলাভিষিক্ত সৃষ্টি করবেন। হুযূর (আই.) বলেন, আমরা সাক্ষী, আজ আফ্রিকার বাসিন্দারা সমষ্টিগতভাবে সেই দৃষ্টান্ত দেখিয়েছেন এবং স্থলাভিষিক্ত হবার সার্থকতা প্রমাণ করেছেন।
হুযূর (আই.) সংক্ষেপে মাহদীআবাদ জামা’তের ইতিহাস তুলে ধরেন। ১৯৯৮ সালের শেষদিকে অত্রাঞ্চলে জামা’তের গোড়াপত্তন হয় এবং ১৯৯৯ সালে তিকনেওয়েল গ্রামের অনেক মানুষ আহমদী হন। গ্রামের ইমাম আলহাজ্জ ইব্রাহীম বিদিগা সাহেব আহমদীয়াত গ্রহণের পূর্বে অত্র অঞ্চলের সবচেয়ে বড় ওয়াহাবী ইমাম ছিলেন। তিনি অনেক গবেষণা ও যাচাই-বাছাইয়ের পর বয়আত করেন; আহমদীয়াত গ্রহণের পর তিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে তবলীগের জন্য উৎসর্গ করেন। তবলীগের জন্য তার মাঝে এক প্রকার উন্মাদনা ছিল। তার মাধ্যমে অনেক মানুষ, অনেক বড় বড় আলেম আহমদীয়াতের ছায়াতলে আসেন। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী-গুণি ব্যক্তি ছিলেন, সৌদি আরবেও পড়াশোনা করেছেন, ভালো আরবী জানতেন। খিলাফতের প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা রাখতেন। ২০০৪ সালে এই অঞ্চলে স্বর্ণের খনি আবিষ্কৃত হলে মাইনিং কোম্পানীর লোকেরা অন্য স্থানে জনবসতি করে তাদের স্থানান্তরিত করে। এই নতুন গ্রামের জন্য আহমদীরা হুযূরের কাছে নাম চাইলে হুযূর গ্রামের নাম দেন মাহদীআবাদ। ২০০৮ সালে IAAAE-এর অধীনে এখানে মডেল ভিলেজ বা আদর্শ গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা হয় যা তাদের প্রথম প্রজেক্ট ছিল। হুযূর (আই.) শহীদদের পরিচয়ও সংক্ষেপে তুলে ধরেন। প্রথম শাহাদাতবরণ করেন ইমাম আলহাজ্জ ইব্রাহীম বিদিগা সাহেব, যার আহমদী হওয়াসহ বিভিন্ন ঘটনা অত্যন্ত চমকপ্রদ ও ঈমাবর্ধক। দ্বিতীয় ও তৃতীয় শহীদ যথাক্রমে আলহাসান আগ মালিয়েল সাহেব (৭১) হুসায়েন আগ মালিয়েল সাহেব (৭১), তারা দু’জন যমজ ভাই ছিলেন যারা একসাথে পৃথিবীতে এসেছিলেন, বিদায়ও একই সাথে নিয়েছেন। ৪র্থ হামীদু আব্দুর রহমান সাহেব (৬৭), ৫ম সুলে আগ ইব্রাহীম সাহেব (৬৭), ৬ষ্ঠ উসমান আগ সুদে সাহেব (৫৯), ৭ম আগ আলী আগ মাগোয়েল সাহেব (৫৩), ৮ম মূসা আগ ইদ্রাহী সাহেব (৫৩) এবং ৯ম আগ উমর আগ আব্দুর রহমান সাহেব (৪৪)। উমর সাহেবের বয়স তুলনামূলক কম হওয়ায় তাকে জঙ্গীরা বলেছিল, তুমি এখনো যুবক, নিজের প্রাণ বাঁচাও। কিন্তু তিনি নির্ভিকভাবে বলেন, যে পথে আমার জ্যেষ্ঠরা গিয়েছেন তা সত্যের পথ, আমিও তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে ঈমানের খাতিরে নিজের প্রাণ উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। তখন জঙ্গীরা নির্মমভাবে তার মুখমণ্ডলে গুলি চালিয়ে তাকে শহীদ করে। হুযূর বলেন, এঁরা আহমদীয়াতের উজ্জ্বল নক্ষত্র, যারা অতুলনীয় এক দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করেছেন; আল্লাহ্ তা’লা তাদের সন্তান এবং বংশধরদেরও নিষ্ঠা ও বিশ্বস্ততায় সমৃদ্ধ করুন। শত্রু মনে করে, এঁদেরকে শহীদ করার মাধ্যমে এই অঞ্চল থেকে আহমদীয়াতকে নিশ্চিহ্ন করে দেবে। কিন্তু ইনশাআল্লাহ্, এখানে আহমদীয়াত আগের চেয়ে আরো বেশি বৃদ্ধি পাবে এবং বিস্তৃত হবে। বুর্কিনা ফাঁসোর বিভিন্ন অঞ্চলে জঙ্গীদের দৌরাত্মের বিষয়ও হুযূর তুলে ধরেন এবং অন্য এক অঞ্চলের কায়েদ সাহেবের দোকানে গিয়ে জঙ্গীদের হুমকি প্রদান এবং তা সত্ত্বেও তার সাহসিকতার সাথে দোকানে মসীহ্ মওউদ (আ.) ও খলীফাদের ছবি টাঙিয়ে রাখার ঘটনা হুযূর বর্ণনা করেন। শেষদিকে হুযূর (আই.) হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর একটি উদ্ধৃতি পাঠ করেন যাতে তিনি (আ.) বলেন, “এটি মনে কোরো না যে, খোদা তোমাদের বিনষ্ট করবেন। তোমরা খোদার হাতের এক বীজ বিশেষ যা মাটিতে বপন করা হয়েছে। খোদা বলেছেন, এই বীজ বর্ধিত হবে, ফুল দেবে এবং চর্তুদিকে এর ডালপালা বিস্তার লাভ করবে এবং (এটি) এক মহা মহীরুহে পরিণত হবে, (ইনশাআল্লাহ্)। অতএব সৌভাগ্যবান তারা যারা খোদার কথায় ঈমান রাখে এবং মধ্যবর্তী বিপদাপদে ভীত হয় না, কারণ বিপদাপদ আসাও আবশ্যক যেন খোদা তোমাদের পরীক্ষা করেন।” হুযূর (আই.) বলেন, এই কুরবানী প্রদানকারীরা তো এই পরীক্ষায় সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছেন, এখন হলো বাকিদের নিজ নিজ ঈমান এবং একীনে উন্নতি করার পরীক্ষা। আল্লাহ্ তা’লা তাদের এবং আমাদেরও সামর্থ্য দিন, আমরা যেন নিজেদের ঈমান ও একীনে পূর্ণ থাকি। আল্লাহ্ তা’লা এই শহীদদের মর্যাদায় উন্নীত করতে থাকুন, তাদের কুরবানীকে এমনভাবে ফুলেফলে সুশোভিত করুন যেন হযরত মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ (সা.)-এর প্রকৃত শিক্ষা আমরা পৃথিবীতে দ্রুততম সময়ে বিস্তার লাভ করতে দেখি; অজ্ঞতা পৃথিবী থেকে দূর হয় এবং এক-অদ্বিতীয় খোদার প্রকৃত রাজত্ব পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠিত হয়। (আমীন)।
খুতবার শেষদিকে হুযূর (আই.) আরো দু’জন প্রয়াত নিষ্ঠাবান আহমদীর স্মৃতিচারণ করেন, তারা হলেন আমেরিকা নিবাসী সূফী খোদা বখশ যিরভী সাহেবের পুত্র ডা. করীমুল্লাহ্ যিরভী সাহেব এবং তার সহধর্মিনী ও মালেক সাইফুর রহমান সাহেবের কন্যা আমাতুল লতীফ যিরভী সাহেবা; হুযূর (আই.) তাদেরও সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন এবং তাদের রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।