শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত আবু বকর (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

১১-ফেব্রুয়ারি, ২০২২

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১১ই ফেব্রুয়ারি, ২০২২ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় সাম্প্রতিক ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় হযরত আবু বকর (রা.)’র ধারাবাহিক স্মৃতিচারণের ধারা অব্যাহত রাখেন রাখেন। খুতবার শেষাংশে হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত কতিপয় নিষ্ঠাবান আহমদীর স্মৃতিচারণ করেন ও নামাযান্তে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়ান।
তাশাহ্‌হুদ, তাআ’ঊয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, ইতিহাসে মক্কা-বিজয় সম্পর্কে হযরত আবু বকর (রা.)’র একটি স্বপ্নের উল্লেখ পাওয়া যায় যা তিনি মহানবী (সা.)-কে শুনিয়েছিলেন। তিনি (রা.) স্বপ্নে দেখেন, “তারা মক্কার কাছাকাছি পৌঁছলে একটি কুকুর ঘেউ ঘেউ করে তাদের দিকে ছুটে আসে; যখন তারা সেটির কাছাকাছি পৌঁছেন, তখন সেটি চিৎ হয়ে শুয়ে পড়ে এবং সেটির দুধ বইতে থাকে”। এর ব্যাখ্যায় মহানবী (সা.) বলেন, “কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের পক্ষ থেকে ক্ষতির আশংকা দূর হয়ে গিয়েছে; সে মুসলমানদের আত্মীয়তার দোহাই দিয়ে তাদের কাছে নিরাপত্তা চাইবে”। তিনি (সা.) নির্দেশ দেন, আবু সুফিয়ান এলে তাকে যেন হত্যা করা না হয়। অতঃপর মাররুয্ যাহরান-এ আবু সুফিয়ান ও হাকীম বিন হিযামের সাথে মুসলমানদের সাক্ষাৎ হয়; তারা মহানবী (সা.)-এর কাছে গিয়ে ইসলাম গ্রহণ করেন, যা হুযূর (আই.) গত খুতবায় বর্ণনা করেছেন। আবু সুফিয়ান যখন ফেরত যাচ্ছিল তখন হযরত আব্বাস (রা.) বলেন, আবু সুফিয়ানের ইসলাম গ্রহণ বিষয়ে তিনি সন্দিহান; তিনি তাকে ফিরিয়ে এনে ভালোভাবে ইসলাম অনুধাবন করা এবং মুসলিম বাহিনীর অবস্থা পর্যবেক্ষণ করা পর্যন্ত রেখে দেয়ার প্রস্তাব দেন। অপর এক বর্ণনামতে হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর কাছে তাকে ফিরিয়ে আনার প্রস্তাব দেন। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে হযরত আব্বাস (রা.) গিয়ে তাকে ফেরত যেতে বাধা দেন। এতে আবু সুফিয়ান সন্দেহ প্রকাশ করে বলে, তাহলে তাকে দেয়া নিরাপত্তার ঘোষণা কি ধোঁকা ছিল? আব্বাস (রা.) বলেন, মুসলমানরা কখনোই ধোঁকা দেয় না; তাকে কেবল সকাল পর্যন্ত থাকতে হবে যেন সে আল্লাহ্‌র প্রেরিত মুসলিম বাহিনীকে স্বচক্ষে দেখে নেয়। “সুবুলুল হুদা ওয়ার্‌ রিশাদ” পুস্তকে বর্ণিত আছে, সকালে আবু সুফিয়ান বিশাল মুসলিম বাহিনী দেখতে পায়। সেখানে আনসারদের প্রতি গোত্রের হাতে পৃথক পতাকা ছিল; এক হাজার বর্মাবৃত মুসলিম-সেনা ছিলেন- যাদের কেবল চোখ দেখা যাচ্ছিল। মহানবী (সা.) তাঁর পতাকা আনসার-নেতা সা’দ বিন উবাদাহ্ (রা.)’র হাতে তুলে দিয়েছিলেন। সা’দ যখন আবু সুফিয়ানকে দেখেন তখন বলেন, আজ ভয়ংকর রক্তপাতের দিন; আজ সব নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কুরাইশদের হত্যা ও লাঞ্ছিত করা হবে। আবু সুফিয়ান হযরত আব্বাস (রা.)’র কাছে এ বিষয়ে শংকা প্রকাশ করে বলে, তাকে রক্ষার দায়িত্ব হযরত আব্বাস (রা.)’র উপর। আবু সুফিয়ান বিশাল মুসলিম বাহিনী দেখতে থাকে, অবশেষে মহানবী (সা.) সেখানে উপস্থিত হন; তিনি (সা.) তাঁর কাসওয়া নামক উটে চড়ে এগিয়ে আসছিলেন, তাঁর দু’পাশে ছিলেন হযরত আবু বকর (রা.)ও হযরত উসায়েদ বিন হুযায়ের (রা.)।
আব্দুল্লাহ্ বিন উমর বর্ণনা করেন, মহানবী (সা.) যখন বিজয়ীর বেশে মক্কায় প্রবেশ করেন, তখন মক্কার নারীরা তাঁর সম্মানার্থে নিজেদের ঘোড়াগুলোর মুখে ওড়না দিয়ে আঘাত করে পথ থেকে সরিয়ে নিচ্ছিল। মহানবী (সা.) হাসিমুখে হযরত আবু বকর (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন, এই দৃশ্য নিয়ে হাসসান বিন সাবেত কী কবিতা লিখেছে। হযরত আবু বকর (রা.) তখন সেই কবিতা আবৃত্তি করেন যা হযরত হাসসান (রা.) এ উপলক্ষ্যে রচনা করেছিলেন। সেদিন মহানবী (সা.) যখন নিরাপত্তা বা সাধারণ ক্ষমার ঘোষণা দেন তখন হযরত আবু বকর (রা.) তাঁর কাছে নিবেদন করেন, আবু সুফিয়ান সম্মানিত হতে ভালোবাসে। মহানবী (সা.) তখন বলেন, যে তার বাড়িতে আশ্রয় নেবে, সে-ও নিরাপদ থাকবে; এভাবে তিনি (সা.) আবু সুফিয়ানকে সম্মানিত করেন। মহানবী (সা.)-এর নির্দেশে হুবল মূর্তিকে যখন ভূপাতিত করা হয়, তখন হযরত যুবায়ের বিন আওয়াম (রা.) আবু সুফিয়ানকে স্মরণ করান, উহুদের যুদ্ধের দিন সে তাদের বিজয় এই হুবলের প্রতি আরোপ করেই অহংকার করছিল। আবু সুফিয়ান লজ্জিত হয়ে বলে, “এসব কথা বাদ দাও, আমি এখন ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছি- মুহাম্মদ (সা.)-এর খোদা ছাড়া আর কোন খোদা নেই, থাকলে আজ এসব ঘটতো না”। সব মূর্তি অপসারণের পর মহানবী (সা.) কা’বাগৃহের একপাশে গিয়ে বসেন আর আবু বকর (রা.) তাঁর প্রহরার্থে উন্মুক্ত তরবারি-হাতে তাঁর শিয়রে দাঁড়িয়ে থাকেন।
হুযূর (আই.) মক্কা-বিজয়ের পরপরই সংঘটিত হুনায়নের যুদ্ধ সম্পর্কেও আলোচনা করেন, যা হাওয়াযিনের যুদ্ধ বা আওতাসের যুদ্ধ নামেও সুপরিচিত। হুনায়ন মক্কা থেকে ৩০ মাইল দূরে অবস্থিত এক উপত্যকা, যেখানে ৮ম হিজরীর শওয়াল মাসে মালেক বিন অওফ নামক এক ব্যক্তির নেতৃত্বাধীন বনু হাওয়াযিন, বনু সাকীফ, বনু জুশাম, বনু সা’দ বিন বকর ও বনু নাস্‌র গোত্রের লোকদের সাথে মুসলমানদের যুদ্ধ হয়। মহানবী (সা.) বার হাজার সেনাসহ অগ্রসর হয়ে প্রত্যুষে হুনায়ন পৌঁছলে আগে থেকেই ওঁৎ পেতে থাকা মুশরিক বাহিনী অকস্মাৎ মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করে বসে। তাদের নিক্ষেপ করা পঙ্গপালের ঝাঁকের মত তিরের মুখে মুসলিম বাহিনী বিক্ষিপ্ত হয়ে পড়ে; তখন মাত্র জনাকয়েক সাহাবী মহানবী (সা.)-এর সাথে উপস্থিত ছিলেন, যাদের মধ্যে হযরত আবু বকর (রা.), হযরত উমর (রা.), হযরত আলী (রা.), হযরত আব্বাস (রা.) প্রমুখ উল্লেখ্য। সদ্য ইসলাম-গ্রহণকারী মক্কাবাসীদের কারণেই এরূপ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, যারা নিজেদের রণনৈপুণ্য প্রদর্শনের লোভে আক্রমণের ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো করে বসে। হাওয়াযিনের দক্ষ তিরন্দাজরা যখন তির নিক্ষেপ করতে আরম্ভ করে, তখন তারা প্রাণভয়ে ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়ে, যা মুসলমানরা সাধারণত করেন না। অগ্রভাগের সেনাদের এরূপ বিশৃঙ্খলার কারণে পুরো বাহিনীর শৃঙ্খলাই ভেঙ্গে পড়ে। এরূপ কঠিন পরিস্থিতিতে হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর নিরাপত্তার খাতিরে তাঁর (সা.) বাহনের লাগাম ধরে তাঁকে অগ্রসর না হতে বিনীত অনুরোধ করেন। কিন্তু মহানবী (সা.) তখন অসাধারণ বীরত্ব দেখিয়ে নির্ভিকচিত্তে সামনে অগ্রসর হয়ে বলতে থাকেন, أَنَا النبيُّ لا كَذِبْ… أَنَا ابنُ عبدِ المُطَّلِبْ অর্থাৎ ‘আমি নবী, মিথ্যাবাদী নই; (আর) আমি আব্দুল মুত্তালিবের পুত্র।’ তাঁর কথার তাৎপর্য ছিল, যেহেতু তিনি সত্যবাদী নবী, তাই শত্রুরা সংখ্যায় যতই হোক না কেন- তিনি তাদের ভয় করেন না। তবে নির্ভিকতার কারণে কেউ যেন তাঁকে খোদা না ভাবে, বরং তিনিও মানুষ এবং আব্দুল মুত্তালিবের বংশধর। সেই যুদ্ধে হযরত আবু কাতাদা এক মুশরিককে হত্যা করেন। মহানবী (সা.) ঘোষণা দেন, কোন মুসলমান যদি কাফিরদের কাউকে হত্যা করে থাকে- তবে নিহত ব্যক্তির সাজসরঞ্জাম তিনি-ই প্রাপ্য হবেন। আবু কাতাদা তার হাতে নিহত ব্যক্তির কথা মহানবী (সা.)-কে জানালে কুরাইশের এক নব্য মুসলিম বলে, ঐ নিহত ব্যক্তির অস্ত্রশস্ত্র তার কাছে রয়েছে; সে আরও দাবী জানায়, এগুলো যেন তাকেই দেয়া হয় এবং আবু কাতাদাকে অন্য কিছু দিয়ে দেয়া হয়। তখন হযরত আবু বকর (রা.) দৃঢ়কণ্ঠে বলেন, “এটি কক্ষনো হতে পারে না যে, মহানবী (সা.) এক ভীরু কুরাইশকে তা দিয়ে দেবেন আর এর যোগ্য প্রাপককে বঞ্চিত করবেন- যে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের জন্য সিংহের মত লড়াই করেছে!” অতঃপর মহানবী (সা.) সেসব সামগ্রী আবু কাতাদাকে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন।
তায়েফের যুদ্ধাভিযান সম্পর্কে জানা যায়, হুনায়নের যুদ্ধে পরাজিত হাওয়াযিন ও সাকীফ গোত্রের লোকেরা মালেক বিন অওফের সাথে পালিয়ে তায়েফের দুর্গে আশ্রয় নেয়। মহানবী (সা.) অগ্রসর হয়ে তায়েফ অবরোধ করেন। অবরোধ কতদিন দীর্ঘ হয়েছিল- তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে; বিভিন্ন বর্ণনায় ১০ থেকে ৪০দিনের উল্লেখ রয়েছে। অবরোধ চলাকালে মহানবী (সা.) স্বপ্নে দেখেন- তাকে একবাটি মাখন দেয়া হয়েছে, কিন্তু একটি মোরগ তাতে ঠোকর দেয়ায় সব গড়িয়ে পড়ে গেছে। মহানবী (সা.) হযরত আবু বকর (রা.)-কে এই স্বপ্ন শোনালে তিনি মন্তব্য করেন, এই যুদ্ধে হয়তো সফলতা অর্জন সম্ভব হবে না। মহানবী (সা.)-ও সহমত পোষণ করেন এবং মুসলিম বাহিনী অবরোধ তুলে নিয়ে ফিরে যায়।
৯ম হিজরীর রজব মাসে তাবূকের যুদ্ধাভিযান সংঘটিত হয়। তাবূক মদীনা থেকে সিরিয়া যাবার পথে ওয়াদিউল কুরা ও সিরিয়ার মধ্যবর্তী একটি শহর; এটি আসহাবুল আইকাহ্’র শহর নামেও পরিচিত, যাদের প্রতি হযরত শুয়াইব (আ.) প্রেরিত হয়েছিলেন। এই যুদ্ধে হযরত আবু বকর (রা.) মহানবী (সা.)-এর সাথে সাথে ছিলেন; মহানবী (সা.) নিজের বড় পতাকাটি তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। এই যুদ্ধের প্রাক্কালে মহানবী (সা.) আর্থিক কুরবানীর জন্য সাহাবীদের প্রতি আহ্বান জানালে হযরত আবু বকর (রা.) বাড়ির সবকিছু ধর্মসেবার নিমিত্তে উপস্থাপন করেন, যা সর্বজনবিদিত একটি ঘটনা। মহানবী (সা.) যখন হযরত আবু বকর (রা.)-কে জিজ্ঞেস করেন যে, তিনি বাড়িতে কী রেখে এসেছেন, তখন তিনি (রা.) উত্তর দিয়েছিলেন, ‘আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলকে রেখে এসেছি।’ তাঁর দানকৃত সম্পদের মূল্যমান ছিল ৪ হাজার দিরহাম। অন্য সাহাবীগণও মুক্তহস্তে অনেক কুরবানী করেন; কেউ কেউ হযরত আবু বকর (রা.)’র চেয়েও বেশি অর্থ কুরবানী করেন, কিন্তু তার মত অসাধারণ কুরবানী কেউ করতে পারেন নি। হযরত উমর (রা.) বলতেন, সেদিন তিনি ভেবেছিলেন- আবু বকর (রা.)’র চেয়ে অগ্রসর হবার কোন সুযোগ যদি তার জীবনে থেকে থাকে, তবে এটিই সেই সুযোগ! তাই তিনি বাড়ির অর্ধেক জিনিসপত্র নিয়ে উপস্থিত হন। পরে যখন হযরত আবু বকর (রা.)’র কুরবানীর বিষয়ে জানতে পারেন, তখন তিনি ক্ষান্ত দিয়ে বলেন- আল্লাহ্‌র শপথ! আমি কখনোই তাঁর চেয়ে কোন বিষয়ে অগ্রসর হতে পারব না! হুযূর (আই.) হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.)’র একটি উদ্ধৃতি তুলে ধরেন, যাতে তিনি এই ঘটনার আলোকে জামা’তের সদস্যদের আর্থিক কুরবানীর প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেছেন। হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন মাসঊদ (রা.) বর্ণনা করেন, তাবূকের যুদ্ধের সময় একজন অত্যন্ত নিষ্ঠাবান সাহাবী আব্দুল্লাহ্ যুল-বিজাদাইন মৃত্যুবরণ করেন, স্বয়ং মহানবী (সা.) তার এরূপ নামকরণ করেছিলেন। গভীর রাতে মহানবী (সা.), হযরত আবু বকর (রা.)ও হযরত উমর (রা.) মিলে তার জন্য কবর খোঁড়েন ও তাকে সমাহিত করেন; মহানবী (সা.) নিজে তার কবরে অবতরণ করেছিলেন এবং তার জন্য খুব আবেগপূর্ণ ভাষায় দোয়া করেছিলেন।
তাবূকের যুদ্ধের পর মহানবী (সা.) হজ্জ্ব করার সংকল্প করেন; কিন্তু যখন তাঁকে বলা হয়, মুশরিকরা হজ্জ্বে এখনও অজ্ঞতাসুলভ বিভিন্ন উপায়ে উপস্থিত হয়, এমনকি উলঙ্গ হয়ে কা’বা প্রদক্ষিণ করে- তখন তিনি হযরত আবু বকর (রা.)-কে হজ্জ্ব পালনকারী জন্য আমীর নিযুক্ত করে পাঠান। হাজীদের কাফেলা যাত্রা করার পরই সূরা তওবার কিছু আয়াত অবতীর্ণ হয়, যাতে মুশরিকদের হজ্জ্বে আগমন নিষিদ্ধসহ বিভিন্ন নির্দেশ প্রদান করা হয়। মহানবী (সা.) তৎক্ষণাৎ হযরত আলী (রা.)-কে এই সংবাদ হজ্জ্বের সময় ঘোষণা করতে পাঠান। হযরত আলী (রা.) মুসলিম কাফেলার সাথে পথে মিলিত হলে হযরত আবু বকর (রা.) বিনয়ের পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে তাকে জিজ্ঞেস করেন, হযরত আলী (রা.) আমীর হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন কি-না? হযরত আলী (রা.) বলেন, তিনি হযরত আবু বকর (রা.)’র অধীনেই প্রেরিত হয়েছেন। অতঃপর আরাফাতের ময়দানে মতান্তরে মিনায় কুরবানীর স্থানে উক্ত আয়াতগুলো সবাইকে পড়ে শোনানো হয়। হুযূর (আই.) বলেন, এই স্মৃতিচারণ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে, ইনশাআল্লাহ্।
খুতবার শেষাংশে হুযূর (আই.) রাবওয়া থেকে প্রকাশিত আল্ ফযল পত্রিকার প্রাক্তন সহকারী সম্পাদক মরহুম শেখ খুরশীদ আহমদ সাহেবের সহধর্মিণী মোকাররমা আমাতুল লতীফ খুরশীদ সাহেবার গায়েবানা জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন ও তার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন। তিনি উচ্চশিক্ষিতা ছিলেন এবং মাত্র ১৩ বছর বয়স থেকে লাজনা ইমাইল্লাহ্‌র বিভিন্ন দায়িত্বে সেবা আরম্ভ করে দীর্ঘ ৭০ বছর পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে জামাতের মূল্যবান সেবা করেন। সন্তানদের উত্তম তরবীয়তসহ খিলাফত ও জামাতের নিযামের প্রতি তার একনিষ্ঠ আনুগত্যের কথা হুযূর (আই.) বিশেষভাবে উল্লেখ করে তার রূহের মাগফিরাত কামনা করেন ও পদমর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দোয়া করেন।