শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

২৭-আগস্ট, ২০২১

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌, আমীরুল মু’মিনীন হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ২৭শে আগস্ট, ২০২১ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় সাম্প্রতিক ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)’র স্মৃতিচারণ করেন। খুতবার শেষদিকে হুযূর (আই.) ঘোষণা করেন, জুমুআর নামাযের পর তিনি তুর্কি ইন্টারনেট রেডিও চ্যানেল উদ্বোধন করবেন যার নাম ‘ইসলাম আহমেদীয়েতীন সিসি’; এটি ২৪ ঘন্টা সম্প্রচারিত হবে এবং এই রেডিওর সার্বিক সাফল্য কামনা করে দোয়া করেন। হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত কতিপয় নিষ্ঠাবান আহমদীর স্মৃতিচারণ করেন ও নামাযান্তে তাদের গায়েবানা জানাযা পড়ান।

তাশাহ্‌হুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, হযরত উমর (রা.)’র যুগের ঘটনাবলীর স্মৃতিচারণ চলছে। তাঁর যুগে একটি যুদ্ধ সংঘটিত হয় যা রে’র যুদ্ধ নামে খ্যাত। ‘রে’ একটি শহরের নাম, এই শহরের বাসিন্দাদের রাযী বলা হয়; বিখ্যাত তফসীর-প্রণেতা ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী এই শহরের বাসিন্দা ছিলেন। ‘রে’ শহরের তৎকালীন শাসক মুসলমানদের সম্ভাব্য আক্রমণ প্রতিরোধে তাবারিস্তান, কুমিস, জুরজান প্রভৃতি স্থানের অধিবাসীদের কাছে সাহায্য আহ্বান করে এবং তাদের পক্ষ থেকে সাহায্যকারী বাহিনী রে-তে উপস্থিত হয়। ‘রে’ যাওয়ার পথে একজন ইরানী নেতা আবুল ফারখান মুসলমানদের সাথে সখ্য স্থাপন করতে আসে। মুসলমানরা ‘রে’ পৌঁছে দেখেন, শত্রুবাহিনী এত বড় যে, মুসলিম-বাহিনীর সাথে এর তুলনাই চলে না। আবুল ফারখান তখন নু’য়ায়েম বিন মুকাররিনকে প্রস্তাব দেয় যে, তার সাথে একদল অশ্বারোহীকে পাঠালে সে গোপন পথে তাদেরকে শহরের ভেতর নিয়ে যাবে, আর নু’য়ায়েম বাইরে থেকে আক্রমণ করবেন- তবেই তারা জয়লাভ করতে সমর্থ হবেন। তার পরামর্শ অনুসারেই পরদিন যুদ্ধ হয় এবং শত্রুপক্ষ পরাজিত হয়। শহরের অধিবাসীদের লিখিত নিরাপত্তানামা প্রদান করা হয়। ২২ হিজরীতে মুসলমানরা কুমিস ও জুরজান-ও জয় করেন। হযরত উমর (রা.) ‘রে’ জয়ের সংবাদ পেয়ে নু’য়ায়েমকে নির্দেশ দেন, তিনি যেন তার ভাই সুয়ায়েদ বিন মুকাররিনকে কুমিস জয়ের জন্য প্রেরণ করেন। কুমিসের বাসিন্দারা কোনরকম প্রতিরোধ করে নি; সুয়ায়েদ তাদের নিরাপত্তা ও সন্ধির চুক্তিপত্র লিখে দেন। একইসাথে তিনি জুরজান-ও জয় করেন যা তাবারিস্তান ও খোরাসানের মধ্যবর্তী বৃহৎ একটি শহর ছিল। তাবারিস্তানের বাসিন্দারাও সুয়ায়েদের কাছে দূত পাঠিয়ে জিযিয়া বা কর প্রদানের শর্তে সন্ধি করার প্রস্তাব দেয়; সুয়ায়েদ এসব এলাকার মানুষদের জন্য নিরাপত্তা ও সন্ধির চুক্তিপত্র লিখে দেন। ইতিহাসের নিরিখে হুযূর (আই.) মন্তব্য করেন, ধর্ম নিয়ে তখন কোন কথা হয় নি, যারাই সন্ধির হাত বাড়িয়েছে তাদের সাথে সন্ধি করে নেয়া হয়েছে।

২২ হিজরীতে মুসলমানরা আযারবাইজানও জয় করে। হযরত উমর (রা.)’র পক্ষ থেকে এই অভিযানের পতাকা উতবাহ্ বিন ফারকাদ ও বুকায়ের বিন আব্দুল্লাহ্‌র হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল; তিনি (রা.) তাদেরকে দু’দিক থেকে আক্রমণ করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। বুকায়ের বিন আব্দুল্লাহ্ সৈন্যদল নিয়ে অগ্রসর হন এবং জারমীযান নামক স্থানের নিকটে রুস্তমের ভাই আসফান্দিয়াযের বাহিনীর সাথে যুদ্ধ হয়; শত্রু পরাজিত হয় এবং আসফান্দিয়ায বন্দি হয়। আসফান্দিয়ায হযরত বুকায়ের (রা.)-র কাছে জানতে চায় যে, তিনি যুদ্ধ চান নাকি সন্ধি চান; জবাবে বুকায়ের সন্ধির উল্লেখ করলে সে নিজেকে তার কাছেই বন্দি রাখার অনুরোধ করে। এভাবে বুকায়ের আরও অগ্রসর হন ও বিভিন্ন অঞ্চল জয় করেন। উতবাহ্ বিন ফারকাদ অপরদিক থেকে আক্রমণ করেন, তার পথে বাধা দেয় আসফান্দিয়াযের ভাই বাহরাম; কিন্তু সে যুদ্ধে পরাজিত হয়ে পালিয়ে যায়। এই সংবাদ জানার পর আসফান্দিয়ায বলে, এবার যুদ্ধের আগুন নিভেছে ও সন্ধির সময় এসেছে। অতঃপর সে আযারবাইজানবাসীর পক্ষ থেকে সন্ধি করে এবং চুক্তিপত্র লেখা হয়; চুক্তিপত্রে তাদের সবার প্রাণ, সম্পদ, ধর্ম ও ধর্মীয় বিধানের নিরাপত্তা দেয়া হয়।

এই বিজয়ের পর বুকায়ের বিন আব্দুল্লাহ্ আর্মেনিয়া অভিমুখে অগ্রসর হন, তার সহায়তার জন্য হযরত উমর (রা.) সুরাকা বিন মালেকের নেতৃত্বে একটি সেনাদল প্রেরণ করেন এবং সম্মিলিত বাহিনীর নেতৃত্বও তাকে প্রদান করেন; অগ্রবর্তী বাহিনীর নেতৃত্বে ছিলেন আব্দুর রহমান বিন রবীআহ্। আব্দুর রহমান দ্রুত অগ্রসর হয়ে বুকায়েরকে অতিক্রম করে বাব নামক স্থানে পৌঁছে যান যেখানে আর্মেনিয়ার শাসক শাহরাবরায অবস্থান করছিল। এই ব্যক্তি ইরানী ছিল; সে পত্র মারফৎ আব্দুর রহমানের কাছ থেকে নিরাপত্তা নিয়ে নেয় এবং সাক্ষাতে গিয়ে সন্ধির প্রস্তাব দেয়। সে জিযিয়া বা কর প্রদানের পরিবর্তে প্রয়োজন অনুযায়ী সামরিক সহযোগিতা প্রদানের প্রস্তাব দেয়, যাতে সুরাকা সম্মতি দেন এবং বিনা যুদ্ধে মুসলমানরা আর্মেনিয়া জয় করে। এরূপ সন্ধির বিস্তারিত জানার পর হযরত উমর (রা.) তা শুধু অনুমোদনই করেন নি, বরং অত্যন্ত আনন্দও প্রকাশ করেন। সুরাকা এরপর আশেপাশের পাহাড়ি অঞ্চলে বিভিন্ন সৈন্যদল প্রেরণ করেন, তারাও সেসব স্থানের বাসিন্দাদের সাথে সন্ধিচুক্তি করে আসেন। এসব সন্ধির চুক্তিপত্রে স্থানীয়দের ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয়টি স্পষ্টভাবে উল্লেখ ছিল, অথচ তা সত্ত্বেও আপত্তি করা হয় যে, ইসলাম নাকি তরবারির জোরে বিস্তৃত হয়েছে! আদতে এই আপত্তি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন ও ভ্রান্ত।

২২ হিজরীতে খোরাসানও বিজিত হয়। হুযূর খোরাসান অভিযানের প্রেক্ষাপটও সংক্ষেপে তুলে ধরেন। ইরান সম্রাট ইয়াযদাজরদ বিভিন্ন ঘাত-প্রতিঘাতের পর খোরাসান এলাকায় যেতে মনস্থ করে ও মারভ-এ গিয়ে অবস্থান নেয়। এখান থেকে সে মুসলমানদের বিজিত বিভিন্ন অঞ্চলের ইরানীদের ও হরমুযানকে চুক্তি ভঙ্গ করে বিদ্রোহ করার উস্কানি দিতে থাকে, যার প্রেক্ষিতে তারা এবং আরও বিভিন্ন স্থানে ইরানীরা চুক্তিভঙ্গ করে বিদ্রোহ করে বসে। এসব ঘটনার প্রেক্ষিতে হযরত উমর (রা.) মুসলিম বাহিনীকে ইরানী অঞ্চলগুলোতে বহিরাক্রমণের অনুমতি প্রদান করেন এবং কূফা ও বসরার মুসলমানগণ অগ্রসর হয়ে আক্রমণ করেন। আহনাফ বিন কায়েস খোরাসান অভিমুখে যাত্রা করেন। তিনি বিভিন্ন শহর জয় করে অগ্রসর হতে থাকেন, যার মধ্যে মেহেরজান, ইস্পাহান, হেরাত প্রভৃতি উল্লেখ্য। আহনাফ বিন কায়েস যখন মারভ-শাহজাহান নামক স্থানের কাছাকাছি পৌঁছে যান, তখন সম্রাট ইয়াযদাজরদ মার্ভরুয পালিয়ে যায়; এখানে এসে সে বিদেশি বিভিন্ন সম্রাটকে পত্র মারফৎ সাহায্যের আবেদন জানায়। আহনাফ মার্ভরুয অভিমুখে অগ্রসর হলে ইয়াযদাজরদ বালখ্ -এ পালিয়ে যায়, আহনাফ তখন বালখ্ অভিমুখে অগ্রসর হন। অবশেষে বালখ্-এ কূফাবাসী ও ইয়াযদাজরদ এর বাহিনীর মাঝে তুমুল লড়াই হয় ও মুসলমানরা জয়ী হয়। ইয়াযদাজরদ অবশিষ্ট দলবল নিয়ে নদী অতিক্রম করে পালিয়ে যায়। আহনাফ বিন কায়েস, রবী বিন আমরকে তাখারিস্তান শাসনের দায়িত্বভার প্রদান করে মার্ভরুয-এ ফিরে যান। হযরত উমর (রা.) যখন খোরাসান জয়ের সংবাদ পান তখন মন্তব্য করেন যে, তিনি ইরানীদের সাথে যুদ্ধ করতে চাইতেন না, বরং চাইতেন- তাদের ও মুসলমানদের মধ্যে এক দুর্লঙ্ঘ্য প্রতিবন্ধক হোক। হযরত উমর (রা.)’র এই মন্তব্যে আশ্চর্য হয়ে হযরত আলী (রা.) জানতে চান, বিজয় সত্ত্বেও তিনি এমন কথা কেন বলছেন? উত্তরে হযরত উমর (রা.) বলেন, কারণ এ অঞ্চলের মানুষ তিনবার আমাদের সাথে চুক্তিভঙ্গ করবে এবং তৃতীয় দফায় তাদের বিহিত করা আবশ্যক হয়ে পড়বে। হযরত উমর (রা.) আহনাফ বিন কায়েসকে নদী অতিক্রম করে অগ্রসর হতে নিষেধ করেন বিধায় আহনাফ ফিরে আসেন। ইয়াযদাজরদ প্রতিবেশী সাম্রাজ্যে গিয়ে নিজের সাম্রাজ্য পুনরুদ্ধারে তাদের সাহায্যপ্রার্থী হয়। তুর্কি সম্রাট খাকান তার ডাকে সাড়া দেয় ও নিজ বাহিনী নিয়ে বালখ্-এ উপস্থিত হয়; কিন্তু আহনাফ যখন তার বাহিনীর তিনজন অশ্বারোহীকে হত্যা করেন, তখন সে সেটিকে অশুভ লক্ষণ গণ্য করে ফিরে যায়। চীনা সম্রাট প্রথমে মুসলিম বাহিনী ও তাদের বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ-খবর নেয়। এরপর ইয়াযদাজরদকে জানিয়ে দেয়, তোমার দূত মুসলমানদের যে বৈশিষ্ট্য বলেছে তা যদি সঠিক হয়ে থাকে, তবে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে গেলে আমি তো তাদের কিছুই করতে পারব না, উল্টো নিজের সিংহাসনটাও হারাব; তুমি বরং তাদের সাথে সন্ধি করে নাও। ইয়াযদাজরদ সাহায্যের আশায় বিভিন্ন শহরে ঘুরতে থাকে ও অবশেষে হযরত উমর (রা.)’র খিলাফতকালেই নিহত হয়। বিজয়ের সংবাদ পেয়ে হযরত উমর (রা.) যে খুতবা দিয়েছিলেন তাতে তিনি মুসলিম বাহিনীকে বিশেষভাবে কুরআন এবং মহানবী (সা.)-এর উপদেশ ও আদর্শের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছিলেন। তিনি এ-ও স্মরণ করান যে, পূর্বেও অনেক জাতি এরূপ সামরিক ক্ষমতার অধিকারী ছিল কিন্তু আজ তাদের কোন অস্তিত্বই নেই; কাজেই নিজেদের উন্নত নৈতিক মানে কোন পরিবর্তন এনো না, নতুবা আল্লাহ্ তোমাদের স্থলে অন্য কোন দল নিয়ে আসবেন। ইস্তাখ্র, যা ইরানের প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ একটি শহর, উসমান বিন আবুল আস-এর নেতৃত্বে মুসলমানরা এই শহর জয় করেন। এই জয়ের সময় একটি বিশেষ ঘটনা ঘটে; উসমান বিন আবুল আস যুদ্ধলদ্ধ সম্পদ ব্যতীত ছিনিয়ে নেয়া সব জিনিস ফিরিয়ে দিতে সৈন্যদের নির্দেশ দেন এবং নিজ ভাষণে বলেন, আমরা ততদিন পর্যন্ত জয়ী হতে থাকব ও সব বিপদ থেকে নিরাপদ থাকব, যতদিন পর্যন্ত আমরা চুরি ও বিশ্বাসঘাতকতা থেকে বিরত থাকব; যুদ্ধলদ্ধ সম্পদে অবিশ্বস্ততা করলে তা আমাদের সবাইকে ডোবানোর কারণ হবে।

২৩ হিজরীতে হযরত উমর (রা.) ফাসা ও দারাবাজেরদ শহরের উদ্দেশ্যে সারিয়া বিন যুনায়েম-এর নেতৃত্বে একটি বাহিনী প্রেরণ করেন। সেখানকার অধিবাসীদের সাথে যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী কোণঠাসা হয়ে পড়ে এবং সবাই শত্রুর হাতে নিহত হওয়ার উপক্রম হয়। হযরত উমর (রা.) তখন মদীনায় খুতবা দিচ্ছিলেন, এর মাঝেই হঠাৎ তিনি বলে ওঠেন- ‘ইয়া সারিয়া, আল-জাবাল’ অর্থাৎ হে সারিয়া, পাহাড়ের দিকে যাও। হাজারো মাইল দূর থেকেও হযরত উমর (রা.) সেই যুদ্ধক্ষেত্র দেখতে পাচ্ছিলেন এবং যুদ্ধের ডামাডোলের মধ্যেও মুসলিম সৈন্যদল তাঁর নির্দেশ শুনতে পায় ও সে অনুযায়ী কাজ করে। অতঃপর মুসলিম বাহিনী রক্ষা পায় ও পরবর্তীতে জয়ী হয়। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) ঘটনাটিকে সাহাবীদের এলহাম লাভের প্রমাণরূপে উপস্থাপন করেন, কারণ এভাবে এতদূর থেকে যুদ্ধক্ষেত্রের অবস্থা একমাত্র আল্লাহ্ তা’লাই তাকে দেখিয়েছেন এবং তাঁর নির্দেশও সৈন্যদলকে আল্লাহ্ তা’লাই পৌঁছে দিয়েছেন। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.)-ও ঘটনাটি থেকে অনুরূপ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

২৩ হিজরীতে সুহায়েল বিন আদীর নেতৃত্বে কিরমান জয়ের ঘটনা ঘটে; সিজিস্তান বা শিস্তান ও মাকরান বিজয়ের ঘটনাও ২৩ হিজরীতেই ঘটে। তাবারীর মতে হযরত উমর (রা.)’র যুগে মাকরান পর্যন্তই মুসলিম সাম্রাজ্য বিস্তৃত হয়েছিল, অবশ্য আল্লামা শিবলী অপর কিছু সূত্রমতে তার যুগের বিজয় সিন্ধু ও ভারতবর্ষ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছিল বলে মন্তব্য করেন।

খুতবার শেষদিকে হুযূর (আই.) ঘোষণা করেন, জুমুআর নামাযের পর তিনি তুর্কি ইন্টারনেট রেডিও চ্যানেল উদ্বোধন করবেন যার নাম ‘ইসলাম আহমেদীয়েতীন সিসি’; এটি ২৪ ঘন্টা সম্প্রচারিত হবে। এতে ৪ ঘন্টার অনুষ্ঠানমালা ৬বার করে প্রতিদিন পুনঃপ্রচার করা হবে। ২০টির অধিক দেশ এই রেডিও থেকে তবলীগ ও তরবীয়ত সংক্রান্ত বিষয়ে উপকৃত হতে পারবে যার মধ্যে আযারবাইজান, জর্জিয়া, ভূতপূর্ব সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশ রয়েছে, যেখানে তুর্কি ভাষাভাষীদের বসবাস। জার্মানির তবলীগ বিভাগ এই রেডিও চ্যানেল প্রস্তুতের সৌভাগ্য লাভ করেছে; হুযূর (আই.) এই রেডিওর সার্বিক সাফল্য কামনা করে দোয়া করেন।

খুতবার একদম শেষাংশে হুযূর (আই.) সম্প্রতি প্রয়াত কয়েকজন নিষ্ঠাবান আহমদীর গায়েবানা জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন এবং তাদের স্মৃতিচারণ করেন; তারা হলেন যথাক্রমে, মরক্কো নিবাসী অসাধারণ নিষ্ঠাবান ও বুযূর্গ মুহাম্মদ আল-মুখতার কাবতাহ সাহেব, কাদিয়ানের মসজিদ মোবারক ও মসজিদে আকসার প্রাক্তন খাদেম মাহমুদ আহমদ সাহেব, কেরালা-নিবাসী আব্দুর রহমান সাহেবের সহধর্মিণী সওদা সাহেবা ও ফয়সালাবাদ-নিবাসী শেখ আব্দুল মাজেদ সাহেবের সহধর্মিণী সাঈদা মজীদ সাহেবা। হুযূর (আই.) তাদের রূহের মাগফিরাত ও শান্তি কামনা করে দোয়া করেন। তাদের স্মৃতিচারণের পূর্বে হুযূর (আই.) সম্প্রতি ঘানায় শাহাদত বরণকারী সৈয়দ তালে’ আহমদ সাহেবের উল্লেখ করে বলেন, তার মরদেহ লন্ডনে এলে হুযূর (আই.) তার জানাযা পড়াবেন ও স্মৃতিচারণ করবেন, (ইনশাআল্লাহ্)।