শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

১১-জুন, ২০২১

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১১ই জুন, ২০২১ইং ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.)’র স্মৃতিচারণ করেন।

তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, বিগত খুতবায় হযরত উমর (রা.)’র স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে হুদায়বিয়ার সন্ধির উল্লেখ করা হয়েছিল। এই সন্ধির বিষয়ে এ-ও বর্ণিত আছে যে, কুরাইশদের মিত্র বনু বকর গোত্র এই সন্ধিচুক্তি ভঙ্গ করে যখন মুসলমানদের মিত্র বনু খুযাআ গোত্রের ওপর আক্রমণ করে, এতে কুরাইশরাও অস্ত্র ও বাহন দিয়ে সাহায্য করেছিল। তা সত্ত্বেও আবু সুফিয়ান মদীনায় আসে এবং হুদায়বিয়ার সন্ধি নবায়ন করতে চায়। কিন্তু মহানবী (সা.) তার কথার কোন উত্তর না দিয়ে প্রকারান্তরে বুঝিয়ে দেন, তিনি (সা.) এই বিষয়ে কোন আপোস করবেন না। আবু সুফিয়ান তখন হযরত আবু বকর (রা.)’র কাছে গিয়ে এ বিষয়ে মহানবী (সা.)-এর সাথে আলোচনা করতে অনুরোধ করে, কিন্তু তিনিও কোন আলাপ করতে সম্মত হন নি। তখন আবু সুফিয়ান হযরত উমর (রা.)’র শরণাপন্ন হয়; হযরত উমর (রা.) তাকে বলেন, ‘আমি মহানবী (সা.)-এর কাছে তোমার পক্ষে সুপারিশ করব? আল্লাহ্র কসম! যদি আমার জীবনের একটি দিনও অবশিষ্ট থাকে তবে সে সময়ও আমি তোমাদের সাথে যুদ্ধ করব!’

মক্কা-বিজয় সম্পর্কেও হুযূর (আই.) কতিপয় বর্ণনা তুলে ধরেন যাতে হযরত উমর (রা.)’র ভূমিকা বর্ণিত হয়েছে। মহানবী (সা.) যখন মুসলিম বাহিনী নিয়ে মক্কার নিকটবর্তী হন তখন আবু সুফিয়ান খুব চিন্তিত হয়ে পড়ে। মহানবী (সা.)-এর চাচা হযরত আব্বাস (রা.) যেহেতু একদা তার বন্ধু ছিলেন, তাই তিনি তাকে মহানবী (সা.)-এর কাছে নিরাপত্তা প্রার্থনার পরামর্শ দেন। হযরত আব্বাস (রা.) মহানবী (সা.)-এর খচ্চরে চড়ে আবু সুফিয়ানের সাথে দেখা করতে গিয়েছিলেন; তিনি আবু সুফিয়ানকে নিজের পেছনে বসতে বলেন এবং তাকে আশ্বস্ত করেন যে, তিনি মহানবী (সা.)-এর সমীপে তাকে নিরাপত্তা প্রদান করার অনুরোধ জানাবেন। তখন ছিল রাতের বেলা; হযরত আব্বাস (রা.) তাকে নিয়ে মুসলিম শিবিরের ভেতর দিয়ে যাওয়ার সময় অনেকেই বুঝতে পারছিলেন না আব্বাস (রা.)’র পেছনে কে; কিন্তু মহানবী (সা.)-এর খচ্চরে হযরত আব্বাস (রা.)-কে দেখে কোন বাধাও দিচ্ছিলেন না। যখন তারা হযরত উমর (রা.)’র কাছে গিয়ে পৌঁছেন তখন উমর (রা.) কাছে এসে দেখেন এবং বলেন, ‘এটা কে? আল্লাহ্র শত্রু আবু সুফিয়ান নাকি?’ হযরত উমর (রা.) তাকে হত্যা করতে চাইলেন, কিন্তু হযরত আব্বাস (রা.) তাকে নিয়ে মহানবী (সা.)-এর কাছে চলে যান। হযরত উমর (রা.)ও তাদের সাথে মহানবী (সা.)-এর তাঁবুতে প্রবেশ করেন এবং আবু সুফিয়ানকে হত্যার অনুমতি প্রার্থনা করেন। কিন্তু হযরত আব্বাস (রা.)’র অনুরোধে ও তার সম্মানার্থে মহানবী (সা.) আবু সুফিয়ানকে সেখান থেকে সরিয়ে নিতে বলেন এবং তাকে নিরাপত্তা প্রদান করেন।

৭ম হিজরীর শাবান মাসে মহানবী (সা.) হযরত উমর (রা.)’র নেতৃত্বে ত্রিশজন মুসলমানের একটি অভিযাত্রী দল তুরাবা নামক স্থানে বনু হাওয়াযিন গোত্রের একটি শাখার উদ্দেশ্যে প্রেরণ করেছিলেন। মহানবী (সা.) যখন খায়বারের ইহুদীদের সাথে যুদ্ধের জন্য খায়বার প্রান্তরে পৌঁছেন তখন তিনি (সা.) হযরত উমর (রা.)’র হাতে নিজের পতাকা দেন, যা কালো রঙয়ের বড় পতাকা ছিল এবং খায়বারের যুদ্ধেই সর্বপ্রথম এই পতাকা ব্যবহৃত হয়; এর আগ পর্যন্ত কেবল ছোট পতাকা ব্যবহৃত হতো। সেদিন প্রচ- যুদ্ধ হলেও মুসলমানরা দুর্গ জয় করতে ব্যর্থ হয়। মহানবী (সা.) দিনশেষে বলেন, ‘কাল আমি এমন ব্যক্তির হাতে পতাকা তুলে দিব, যার মাধ্যমে আল্লাহ্ তা’লা বিজয় দান করবেন।’ পরদিন মহানবী (সা.) হযরত আলী (রা.)’র হাতে সেই পতাকা তুলে দেন এবং আল্লাহ্র কৃপায় মুসলমানরা দুর্গ জয় করেন। ইহুদীরা দেশান্তরের শর্তে আত্মসমর্পণ করে, তাদের স্থাবর সম্পত্তি মুসলমানদের হস্তগত হয়। তবে মহানবী (সা.) তাদের প্রতি দয়াপরবশ হন এবং তাদেরকেই সেসব জমিতে চাষাবাদ করার অনুমতি দেন, শর্ত ছিল ফসলের অর্ধেক তারা খাজনাস্বরূপ প্রদান করবে। ইহুদীরা সানন্দে এই প্রস্তাব গ্রহণ করে। মহানবী (সা.) হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন রওয়াহা (রা.)-কে ফসল ভাগাভাগি করার জন্য খায়বার পাঠাতেন ও ন্যায্য বণ্টন নিশ্চিত করতেন। মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর হযরত আবু বকর (রা.)ও এই রীতি অব্যাহত রাখেন। হযরত উমর (রা.)ও প্রথমে এই ধারাই বজায় রাখেন; পরবর্তীতে তিনি জানতে পারেন, মহানবী (সা.) মৃত্যুর পূর্বে বলে গিয়েছিলেন, আরব উপদ্বীপে দু’টি ধর্ম একত্রে থাকতে পারবে না। হযরত উমর (রা.) এ বিষয়ে নিশ্চিত হবার পর খায়বারের ইহুদীদের পত্র-মারফৎ জানিয়ে দেন, যাদের কাছে মহানবী (সা.)-এর পক্ষ থেকে কোন চুক্তিপত্র আছে, তারা ছাড়া অবশিষ্ট ইহুদীদের দেশান্তরিত হতে হবে। এক বর্ণনা থেকে জানা যায়, হযরত আব্দুল্লাহ্ বিন উমর (রা.) খায়বার গেলে ইহুদীরা রাতের অন্ধকারে তার ওপর আক্রমণও করেছিল।

মহানবী (সা.) মক্কা-বিজয়ের জন্য যাত্রার পরিকল্পনা করলে একজন সাহাবী হযরত হাতেব (রা.) মক্কাবাসীকে সতর্ক করার জন্য গোপনে একজন মহিলার মাধ্যমে একটি পত্র প্রেরণ করেন, যা মক্কা পৌঁছুবার পূর্বেই খাখ নামক বাগান থেকে উদ্ধার করা হয়। মহানবী (সা.) হাতেব (রা.)-কে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠালে তিনি বিষয়টি স্বীকার করেন এবং এর কারণ ব্যাখ্যা করেন; তিনি আরও বলেন, তিনি মুনাফিক নন বা তার ঈমানে কোন ঘাটতি নেই। হযরত উমর (রা.) তার এরূপ রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের জন্য তাকে হত্যা করার অনুমতি চান; কিন্তু মহানবী (সা.) হাতেব (রা.)’র কথা বিশ্বাস করেন এবং বদরী সাহাবী হওয়ায় তাকে ক্ষমা করে দেন।

হযরত ইবনে উমর (রা.) বর্ণনা করেন, হুনায়েনের যুদ্ধ থেকে ফেরার পথে হযরত উমর (রা.) মহানবী (সা.)-এর কাছে নিজের একটি মানতের বিষয়ে প্রশ্ন করেন যে, সেটি পূর্ণ করতে হবে কি-না; তিনি ইসলাম গ্রহণের পূর্বে অজ্ঞতার যুগে এ’তিকাফ করার মানত করেছিলেন। যেহেতু এটি কোন ইসলামী শিক্ষার বিরোধী নয়, তাই মহানবী (সা.) তাকে তা পূর্ণ করতে বলেন।

তাবূকের যুদ্ধের প্রাক্কালে মহানবী (সা.) এক বিশেষ আর্থিক কুরবানী ও চাঁদার আহ্বান জানালে হযরত উমর (রা.) এটিকে হযরত আবু বকর (রা.)’র চাইতে অগ্রগামী হওয়ার সুবর্ণ সুযোগ মনে করে নিজের যাবতীয় সম্পদের অর্ধেক নিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু পরে দেখা যায়, হযরত আবু বকর (রা.) নিজের সবকিছ্ইু চাঁদা হিসেবে নিয়ে উপস্থিত হয়েছেন। হযরত উমর (রা.) তখন পরাজয় স্বীকার করে আবু বকর (রা.)-কে বলেছিলেন, আমি কখনোই কোন বিষয়ে আপনার চেয়ে অগ্রগামী হতে পারলাম না! হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) এবং হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) এই ঘটনাটি বিভিন্ন উপলক্ষ্যে বর্ণনা করেছেন, হুযূর (আই.) এ বিষয়ে তাদের উদ্ধৃতিও খুতবায় উপস্থাপন করেন।

মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের সময় ঘনিয়ে এলে একদিন মহানবী (সা.) তাঁর কক্ষে উপস্থিতদের বলেন, আমি তোমাদের কিছু লিখে দিচ্ছি, যার পর তোমরা পথভ্রষ্ট হবে না। সেখানে হযরত উমর (রা.)ও উপস্থিত ছিলেন; তিনি বলেন, মহানবী (সা.) প্রচণ্ড অসুস্থ, এছাড়া তোমাদের কাছে আল্লাহ্‌র কিতাব কুরআন রয়েছে, সেটি-ই তোমাদের জন্য যথেষ্ট। কিন্তু কক্ষে উপস্থিতদের মধ্যে এটি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়; কারো কারো অভিমত ছিল, মহানবী (সা.)-কে দিয়ে ওসীয়্যত লিখিয়ে নেয়া প্রয়োজন, অবশিষ্টরা হযরত উমর (রা.)’র সাথে একমত ছিলেন। বিতর্কের মাত্রা বৃদ্ধি পেলে মহানবী (সা.) তাদের সবাইকে সেখান থেকে বেরিয়ে যেতে বলেন। হযরত ইবনে আব্বাস (রা.)’র মতে হযরত উমর (রা.)’র কারণে সবাই মহানবী (সা.)-এর ওসীয়্যত থেকে বঞ্চিত থেকে যায়। এই বিতর্কের সমাধান হুযূর (আই.) হযরত সৈয়্যদ যয়নুল আবেদীন শাহ্ সাহেবের বরাতে উপস্থাপন করেন; তিনি ব্যাখ্যা করেন যে, মহানবী (সা.) আসলে হযরত উমর (রা.)’র সাথে একমত ছিলেন, পবিত্র কুরআনেও একথার উল্লেখ রয়েছে যে, প্রয়োজনীয় সবকিছুই এতে রয়েছে। এজন্যই তিনি (সা.) এই ঘটনার পর আরও কয়েকদিন আয়ু লাভ করা সত্ত্বেও কোন ওসীয়্যত লিখান নি, বরং কার্যত হযরত উমর (রা.)’র কথাকেই সমর্থন করেন। আর হযরত উমর (রা.) তো ভাবতেই পারেন নি যে, মহানবী (সা.)-এর মৃত্যু সন্নিকট; বরং যখন মহানবী (সা.) মৃত্যুবরণ করেন তখনও তিনি জোর গলায় ঘোষণা করেছিলেন, রসূলুল্লাহ্ (সা.) মৃত্যুবরণ করেন নি, যে বলবে তিনি (সা.) মারা গিয়েছেন তাকে উমর হত্যা করবে। হযরত আবু বকর (রা.) তখন মদীনায় ছিলেন না। তিনি মদীনায় ফিরে এসে নিশ্চিত হন যে, মহানবী (সা.) আল্লাহ্‌র কাছে ফিরে গিয়েছেন। অতঃপর তিনি এসে সবাইকে বলেন, মুহাম্মদ (সা.) একজন মরণশীল মানুষ ছিলেন, তাই তিনি মৃত্যুবরণ করেছেন; কিন্তু আমাদের আল্লাহ্ চিরঞ্জীব ও অবিনশ্বর। আবু বকর (রা.) সূরা আলে ইমরানের ১৪৫নং আয়াত পাঠ করলে সবাই সম্বিৎ ফিরে পায় এবং বুঝতে পারে যে, মহানবী (সা.) আসলেই আর আমাদের মাঝে নেই! এই ঘটনাটি হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) বারংবার বিভিন্ন পুস্তকে উল্লেখ করেছেন এবং প্রমাণ করেছেন, মহানবী (সা.)-এর পর এটিই সাহাবীদের প্রথম ইজমা ছিল যে, মহানবী (সা.)-এর পূর্বের সকল রসূলই মৃত্যুবরণ করেছেন; এই আয়াত এবং এই ইজমার পর কোনভাবেই বলা যায় না যে, হযরত ঈসা (আ.) জীবিতাবস্থায় সশরীরে আকাশে বসে আছেন। যদি একজন নবীও বেঁচে থাকতেন তাহলে সেদিন সাহাবীদের মধ্যে কেউ না কেউ অবশ্যই আবু বকর (রা.)’র উত্থাপিত যুক্তির বিরোধিতা করতেন, অন্ততপক্ষে হযরত উমর (রা.) তো অবশ্যই পাল্টা যুক্তি দিতেন এবং ঈসা (আ.)-এর জীবিত থাকার বিশ্বাস উপস্থাপন করতেন। কাজেই, মহানবী (সা.)-এর মৃত্যু পরবর্তী ঘটনাবলী ও সাহাবীদের কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে যে, মহানবী (সা.)-এর পূর্বের সকল রসূল অবশ্যই গত হয়েছেন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন।

মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর খিলাফত প্রতিষ্ঠিত হওয়ার ঘটনাতেও হযরত উমর (রা.)’র মূল্যবান ভূমিকা রয়েছে। আনসাররা সা’দ বিন উবাদাহ্ (রা.)’র বাড়িতে একত্রিত হয়ে খিলাফতের বিষয়ে আলোচনা করছিলেন এবং বলছিলেন, আনসার ও মুহাজির উভয় পক্ষ থেকেই একজন করে খলীফা হোক। হযরত আবু বকর (রা.), উমর (রা.) ও আবু উবায়দাহ্ বিন জাররাহ্ (রা.) সেখানে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে বুঝান। হযরত উমর (রা.) মনে মনে কথা গুছিয়ে নিয়েছিলেন এবং আনসারদের সামনে জোরালো বক্তব্য প্রদান করতে চাইছিলেন, কিন্তু হযরত আবু বকর (রা.) তাকে থামিয়ে দিয়ে স্বয়ং বক্তব্য উপস্থাপন করেন এবং খোদ উমর (রা.)’র মতে, তার চাইতেও অসাধারণ বক্তব্য উপস্থাপন করেন; আনসাররা স্বীকার করতে বাধ্য হয় যে, খলীফা মুহাজিরদের মধ্য থেকেই হবেন। হযরত আবু বকর (রা.) তাদেরকে হযরত উমর (রা.) বা আবু উবায়দাহ্ (রা.)’র মধ্য থেকে একজনের হাতে বয়আত করতে বললে হযরত উমর (রা.) তৎক্ষণাৎ বলে ওঠেন, আমাদের মাঝে আপনিই সবচেয়ে বেশি উত্তম এবং মহানবী (সা.)-এর সবেচেয়ে বেশি প্রিয়ভাজন তাই আমরা কেবল আপনার হাতেই বয়আত করতে প্রস্তুত; অতঃপর উমর (রা.) নিজেও এবং অন্যরাও হযরত আবু বকর (রা.)র হাতে বয়আত করেন।

মহানবী (সা.)-এর তিরোধানের পর বিশাল সংখ্যক মুসলমান মুরতাদ হয়ে যায় এবং যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। হযরত আবু বকর (রা.) তাদের বিরুদ্ধে জিহাদের সিদ্ধান্ত নিলে উমর (রা.) বলেছিলেন, তারা যেখানে আল্লাহ্‌র প্রতি বিশ্বাস রাখে, সেখানে আপনি কীভাবে তাদের সাথে যুদ্ধ করবেন? হযরত আবু বকর (রা.) বলেছিলেন, যারা নামায ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করবে, অর্থাৎ কুরআনের শরীয়তের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবে- তিনি অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবেন। অতঃপর এই বিশৃঙ্খলা স্তিমিত হয়, ইসলাম পুনরায় সুসংহত হয়। মহানবী (সা.) মৃত্যুর পূর্বে হযরত উসামা (রা.)’র নেতৃত্বে যে মুসলিম বাহিনী প্রেরণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, হযরত আবু বকর (রা.)ও তা বহাল রাখেন। হযরত উমর (রা.)ও এই বাহিনীতে ছিলেন, তবে আবু বকর (রা.) হযরত উসামা (রা.)’র কাছে তাকে অর্থাৎ হযরত উমর (রা.) -কে রেখে যাওয়ার অনুরোধ করেন এবং উসামা (রা.) তা সানন্দে মেনে নেন।

ইয়ামামার যুদ্ধে যখন সত্তরজন কুরআনের হাফিয শহীদ হন, তখন হযরত উমর (রা.) আশঙ্কা করেন যে, এভাবে চলতে থাকলে কুরআনের কোন কোন অংশ হারিয়ে যেতে পারে; তাই তিনি বারংবার কুরআন সংকলন ও সুবিন্যস্ত করার পরামর্শ দিতে থাকেন। আবু বকর (রা.)ও এর গুরুত্ব অনুধাবন করেন এবং হযরত যায়েদ বিন সাবেত (রা.)-কে এই গুরুদায়িত্ব প্রদান করেন। যায়েদ বিন সাবেত (রা.) দায়িত্বের গুরুত্ব উপলদ্ধি করে ভীত হন, কিন্তু খলীফার নির্দেশ মাথা পেতে নেন এবং কেবলমাত্র আল্লাহ্ তা’লার কৃপা ও সাহায্যে এই অসাধ্য সাধন করেন; কুরআন একস্থানে সংকলিত হয়। এরপর সেই কপিটি হযরত আবু বকর (রা.)’র কাছে গচ্ছিত থাকে, তার পরে এটি হযরত উমর (রা.)’র কাছে গচ্ছিত থাকে; হযরত উমর (রা.)’র মৃত্যুর পর তা তাঁর কন্যা ও উম্মুল মু’মিনীন হযরত হাফসা (রা.)’র কাছে গচ্ছিত থাকে, যার কাছ থেকে হযরত উসমান (রা.) তা নিয়ে একাধিক কপি করিয়েছিলেন। এই অসাধারণ ও মহান সেবার পেছনে হযরত উমর (রা.)’র পরামর্শের ভূমিকা অপরিসীম। হযরত উমর (রা.)’র স্মৃতিচারণ আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে হুযূর (আই.) ঘোষণা করেন।