শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ: হযরত আলী বিন আবু তালিব (রা.)

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

১১-ডিসেম্বর, ২০২০

মসজিদ মুবারক, ইসলামাবাদ, টিলফোর্ড, লন্ডন

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ১১ই ডিসেম্বর, ২০২০ ইসলামাবাদের মসজিদে মুবারকে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায়ও তিনি হযরত আলী বিন আবু তালিব (রা.)’র জীবনের স্মৃতিচারণ করেন।
তাশাহহুদ, তাআ’ব্বুয ও সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর (আই.) বলেন, আজও হযরত আলী (রা.)’র স্মৃতিচারণ করব এবং আগামী কয়েকটি খুতবায়ও তার স্মৃতিচারণ করা হবে, ইনশাআল্লাহ্। উহুদের যুদ্ধের দিন ইবনে কামিয়া যখন হযরত মুসআব বিন উমায়ের (রা.)-কে শহীদ করে, তখন সে মনে করেছিল, সে হয়তো মহানবী (সা.)-কে হত্যা করেছে; কেননা তিনি দেখতে অনেকটা মহানবী (সা.)-এর মত ছিলেন। ইবনে কামিয়া উচ্ছ্বসিত হয়ে কুরাইশদের এই ভুল খবর দিতে যায়। হযরত মুসআব (রা.) শহীদ হলে মহানবী (সা.) হযরত আলী (রা.)’র হাতে পতাকা তুলে দেন। উহুদের যুদ্ধের দিন মুশরিকদের পতাকা-বাহক তালহা বিন আবু তালহা হযরত আলী (রা.)-কে লড়াই করার আহ্বান জানালে হযরত আলী (রা.) তার ওপর এমন প্রবল আক্রমণ করেন যে, এক আঘাতেই সে ধরাশায়ী হয়। হযরত আলী (রা.) সেদিন বীরত্বের সাথে একে একে কাফিরদের পতাকা-বাহকদের হত্যা করতে থাকেন। মহানবী (সা.) হযরত আলী (রা.)-কে কাফিরদের একটি দল দেখিয়ে তাদের ওপর আক্রমণ করতে বলেন, হযরত আলী (রা.) তাদের নেতা আমর বিন আব্দুল্লাহ্‌কে হত্যা করে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেন; এরপর মহানবী আরেকটি দলকে দেখালে হযরত আলী (রা.) তাদের নেতা শু’বা বিন মালেককে হত্যা করেন। হযরত জিব্রাঈল (আ.) তখন বলেন, ‘হে আল্লাহ্‌র রসূল, নিশ্চয়ই এ (অর্থাৎ আলী) প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য!’ মহানবী (সা.) বলেন, ‘অবশ্যই, আলী আমার থেকে আর আমি আলীর থেকে!’ তখন জিব্রাইল (আ.) বলেন, ‘আর আমি আপনাদের দু’জনের মধ্য থেকে!’
উহুদের যুদ্ধের দিন মহানবী (সা.)-এর কাছ থেকে সাহাবীরা যখন ছত্রভঙ্গ হয়ে পড়েন, তখন হযরত আলী (রা.) দ্রুত শহীদদের মধ্যে মহানবী (সা.)-এর লাশ খোঁজেন। সেখানে তিনি লাশ দেখতে না পেয়ে ভাবেন- ‘মহানবী (সা.) তো শত্রুদের ভয়ে পালিয়ে যাওয়ার লোক নন, আর তাঁর লাশও নেই! তাই আল্লাহ্ হয়ত আমাদের প্রতি অসন্তুষ্ট হয়ে তাঁর রসূলকে উঠিয়ে নিয়েছেন! কাজেই শত্রুদের সাথে লড়াই করতে করতে এখন আমার শহীদ হয়ে যাওয়াই শ্রেয়!’ এই ভেবে প্রবল বিক্রমে তিনি কাফিরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়লে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। আর তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে তিনি দেখতে পান, মহানবী (সা.) তাদের মাঝে চতুর্দিক থেকে শত্রুপরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছিলেন। এই ঘটনাটি থেকে প্রতীয়মান হয়, মহানবী (সা.)-এর প্রতি হযরত আলী (রা.)’র কত গভীর ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা ছিল। উহুদের যুদ্ধের দিন মহানবী (সা.) কাফিরদের আক্রমণে গুরুতর আহত হয়েছিলেন; তাঁর (সা.) মুখে গভীর ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছিল, শিরস্ত্রাণের আংটা তাঁর গালে বিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল, তাঁর পবিত্র দাঁত ভেঙ্গে গিয়েছিল এবং তিনি সংজ্ঞাহীন হয়ে পড়েছিলেন। হযরত আলী (রা.) নিজের ঢালে করে পানি এনে তাঁর (সা.) মাথায় ঢালছিলেন এবং হযরত ফাতেমা (রা.) তাঁর ক্ষতস্থান পরিস্কার করে দিচ্ছিলেন; যেহেতু রক্তপাত বন্ধ হচ্ছিল না, তাই হযরত ফাতেমা (রা.) এক টুকরো চট পুড়িয়ে ক্ষতস্থানে লাগিয়ে দেন, তখন রক্তপাত বন্ধ হয়। উহুদের যুদ্ধের দিন হযরত আলী (রা.) অত্যন্ত বীরত্বের সাথে যুদ্ধ করেন, সেদিন তার দেহে মোট ১৬টি আঘাত লেগেছিল। যুদ্ধশেষে হযরত আলী (রা.) হযরত ফাতেমাকে তার তরবারি দিয়ে বলেছিলেন, ‘এটা ধুয়ে দাও, এটা আজ অনেক কাজ করেছে!’ তখন মহানবী (সা.) বলেছিলেন, ‘কেবল তোমার তরবারি-ই কাজ করে নি, তোমার অমুক অমুক ভাইয়ের তরবারিও আজ চমক দেখিয়েছে।’
পঞ্চম হিজরীর শওয়াল মাসে পরিখার যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। কাফির নেতারা পরিখা দেখে আশ্চর্য হয়েছিল, কারণ আরবে পরিখার প্রচলন ছিল না। পরিখার পরামর্শ হযরত সালমান ফার্সী (রা.) মহানবী (সা.)-কে দিয়েছিলেন, পরিখা খনন ছিল পারস্যের যুদ্ধ কৌশল। কাফির নেতারা পরিখার মাঝে কোন সরু স্থান খুঁজছিল, যেন তা ডিঙিয়ে তারা একযোগে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ করতে পারে। অবশেষে তারা এমন একটি স্থান খুঁজে পায় যে সম্পর্কে মুসলমানরা অসতর্ক ছিল এবং ইকরামা বিন আবু জাহল, নওফেল বিন আব্দুল্লাহ্, যারার বিন খাত্তাব, আমর বিন আবদে উদ- এরা সেটি ডিঙিয়ে মুসলমানদের অংশে ঢুকে পড়ে। আমর বিন আবদে উদ খুব বড় মাপের একজন বীরযোদ্ধা ছিল, সে খুব দর্পভরে তার সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য কাউকে এগিয়ে আসতে বললে হযরত আলী (রা.) দূর থেকেই তার আহ্বানে সাড়া দেন। মহানবী (সা.) হযরত আলীর এই সংকল্প জানতে পেরে নিজের তরবারিটি তার হাতে তুলে দেন, আর তার মাথায় পাগড়ি বেঁধে দিয়ে দোয়া করেন, আল্লাহ্ তা’লা যেন তাকে সাহায্য করেন। হযরত আলী (রা.) তার সাথে লড়াইয়ের জন্য অগ্রসর হন এবং তাকে গিয়ে বলেন, ‘আমি শুনেছি, তুমি নাকি এই প্রতিজ্ঞা করে রেখেছ যে কোন কুরাইশ যদি তোমার কাছে দু’টি বিষয়ে আবেদন করে- তবে তুমি তার একটি অবশ্যই গ্রহণ করবে?’ আমর তাতে সায় দিলে হযরত আলী (রা.) প্রথমে তাকে ইসলাম গ্রহণ করে ঐশী পুরস্কারাদির ভাগী হওয়ার অনুরোধ করেন; আমর তাচ্ছিল্যের সাথে তা প্রত্যাখ্যান করে। তখন হযরত আলী (রা.) তাকে তার সাথে লড়াইয়ের আহ্বান জানান; আমর খুব আশ্চর্য হয় যে, তার সাথে লড়াই করতে সবাই ভয় পায়, অথচ আলী কি-না তাকে লড়াইয়ের আহ্বান জানাচ্ছে! সে হযরত আলী (রা.)’র পরিচয় জানতে চায়; যখন সে জানতে পারে, তিনি আবু তালিবের পুত্র, তখন সে বলে, ‘তুমি তো নিতান্ত শিশু, আমি তোমার রক্তপাত করতে চাই না! তুমি তোমাদের মধ্য হতে জ্যেষ্ঠ কাউকে পাঠাও।’ কিন্তু হযরত আলী (রা.) বলেন, সে যদিও তার প্রতি করুণা দেখিয়ে তাকে হত্যা করতে অনিচ্ছুক, কিন্তু হযরত আলী (রা.) তাকে হত্যা করতে বিন্দুমাত্রও কুণ্ঠাবোধ করবেন না। একথা শুনে আমর খুব ক্রোধান্বিত হয়ে হযরত আলী (রা.)’র ওপর প্রবলবেগে তরবারি চালায় এবং তা হযরত আলীর ঢাল ভেদ করে তার কপালে আঘাত হানে ও তাকে বেশ কিছুটা আহত করে; কিন্তু হযরত আলী (রা.)ও পাল্টা আঘাতে তাকে ভূপাতিত করেন এবং হত্যা করেন। আমরকে মরতে দেখেই তার সাথে আসা কাফিররা প্রাণ বাঁচাতে চম্পট দেয় বা পালিয়ে যায়।
হুদাইবিয়ার সন্ধির সময়ও হযরত আলী (রা.)’র বিশেষ সেবা করার সুযোগ হয়। মক্কার কুরাইশরা মহানবী (সা.)-এর সাথে সন্ধির প্রস্তাব দিলে তিনি (সা.) সানন্দে তা গ্রহণ করেন; তারা একের পর এক বাহ্যত অপমানজনক শর্ত চাপিয়ে দিচ্ছিল, অর্থাৎ- মুসলমানরা এবার উমরা করতে পারবে না, আগামী বছর মাত্র তিনদিনের জন্য মক্কায় অবস্থান করতে পারবে আর মক্কায় প্রবেশের সময় নিরস্ত্র হয়ে প্রবেশ করতে হবে, ইত্যাদি ইত্যাদি। কিন্তু মহানবী (সা.) শান্তির খাতিরে তাদের সব শর্তই মেনে নেন। অতঃপর হযরত আলী (রা.)-কে চুক্তিপত্র লেখার দায়িত্ব দেয়া হয়; তিনি তাতে সন্ধির এক পক্ষ হিসেবে ‘মুহাম্মদ রসূলুল্লাহ্ ও তাঁর সাহাবীগণ’ লিখেন, কাফিররা চট করে ‘রসূলুল্লাহ্’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি করে বলে, আমরা তো তাকে আল্লাহ্‌র রসূল মানি না, তাই এই শব্দ লেখা চলবে না! মহানবী (সা.) তা-ও মেনে নেন এবং আলী (রা.)-কে ‘রসূলুল্লাহ্’ শব্দটি কেটে দিতে বলেন। কিন্তু হযরত আলী (রা.) বলেন, তার পক্ষে এই শব্দটি কেটে দেয়া সম্ভব নয়! মহানবী (সা.) তার আবেগ বুঝতে পারেন এবং স্বহস্তে তা কেটে দেন।
হুদাইবিয়া থেকে ফেরত আসার পাঁচ মাস পরই মহানবী (সা.) খায়বার অভিমুখে যাত্রা করার সিদ্ধান্ত নেন, কারণ ইহুদীরা সেখান থেকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ষড়যন্ত্র রচনা করে যাচ্ছিল। খায়বার অত্যন্ত সুরক্ষিত এবং পাহাড়ের ওপর দূর্গ বেষ্টিত ছিল আর বাহ্যত এর পতনের কোন সম্ভাবনা-ই ছিল না; সেখানে মারহাব নামক এক ইহুদী যোদ্ধা ছিল, যে তার বীরত্বের জন্য সুপ্রসিদ্ধ ছিল। ইহুদীরা দূর্গের আড়ালে থেকে মুসলমানদের ওপর আক্রমণ চালিয়ে যায়। কিছুদিন খায়বার অবরুদ্ধ রাখার পর মহানবী (সা.) একদিন বলেন, ‘আজ আমি এমন একজনের হাতে তরবারি তুলে দিব যে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের প্রতি ঐকান্তিক ভালোবাসা রাখে; আর তার হাতেই এই দূর্গ জয় হবে!’ হযরত উমর (রা.) আশা করছিলেন যে, মহানবী (সা.) হয়তো তাকে নিজের তরবারি দিবেন, কিন্তু মহানবী (সা.) আলী (রা.)-কে ডেকে পাঠান। হযরত আলী (রা.)’র চোখ উঠেছিল এবং চোখে খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল আর ফুলেও গিয়েছিল; মহানবী (সা.) তার চোখে নিজের মুখের পবিত্র লালা লাগিয়ে দেন এবং আলী (রা.) আশ্চর্যজনকভাবে সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে যান। মহানবী (সা.) হযরত আলী (রা.)’র হাতে নিজের তরবারি ও পতাকা তুলে দেন। এরপর হযরত আলী (রা.) এবং অন্যান্য মুসলিম বীর যোদ্ধারা একযোগে আক্রমণ করেন। মারহাবের সাথে হযরত আলী (রা.)’র যুদ্ধ হয়; এক পর্যায়ে হযরত আলী (রা.) তাকে ভূপাতিত করে তার বুকের ওপর চড়ে বসেন, তখন মারহাব তার মুখে থুতু ছিটিয়ে দিলে হযরত আলী তৎক্ষণাৎ তাকে ছেড়ে দেন। এতে মারহাব খুবই আশ্চর্য হয় যে, হযরত আলী শত্রুকে সম্পূর্ণ কাবু করেও কেন ছেড়ে দিলেন! সে তার কাছে এর কারণ জানতে চাইলে হযরত আলী (রা.) বলেন, তিনি তার সাথে লড়ছেন শুধুমাত্র আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টির খাতিরে; কিন্তু মারহাব তার মুখে থুতু ছিটানোতে মারহাবের প্রতি তার ব্যক্তিগত আক্রোশ সৃষ্টি হয়েছে। যদি তিনি এই অবস্থায় তাকে হত্যা করতেন, তাহলে হয়তো আল্লাহ্‌র খাতিরে লড়াইয়ের সাথে ব্যক্তিগত আক্রোশও মিশ্রিত হয়ে যেতে পারে, তাই তিনি তাকে তখন ছেড়ে দিয়েছেন। ব্যক্তিগত ক্রোধ প্রশমিত হলে হযরত আলী (রা.) তাকে পরাজিত করে হত্যা করেন এবং খায়বার জয় করেন।
হযরত আলী (রা.) বিভিন্ন সময়ে ইসলামের অগণিত মূল্যবান সেবা করার সৌভাগ্য লাভ করেন। হজ্জ সংক্রান্ত সূরা তওবার প্রারম্ভিক আয়াতগুলো অবতীর্ণ হলে মহানবী (সা.) তাকেই স্বীয় প্রতিনিধি হিসেবে হজ্জের সময় সেই ঘোষণাগুলো পড়ে শোনানোর জন্য প্রেরণ করেন। মক্কা-বিজয়ের দিন হুয়াইরিস বিন উকায়েদ নামক এক চরম বিদ্বেষী ও অপরাধী, যাকে মহানবী (সা.) মৃত্যুদ- প্রদান করেছিলেন, সে পালিয়ে যেতে চাইলে হযরত আলী তাকে হত্যা করেন। হুনায়নের যুদ্ধের দিন মুহাজিরদের পতাকা হযরত আলী (রা.)’র হাতে ছিল, সেদিন বিপর্যয়ের পরও হযরত আলী (রা.)’র পরম বীরত্বের কারণে কাফিররা পরাভূত হয়েছিল। মহানবী (সা.) হযরত আলী (রা.)-কে ইয়েমেনেও পাঠিয়েছিলেন যেখানে পূর্বে হযরত খালিদ বিন ওয়ালীদ (রা.)-কে প্রেরণ করা হয়েছিল; হযরত আলী (রা.)’র তবলীগে ‘হামদান’ নামক স্থানের লোকেরা সবাই একযোগে ইসলাম গ্রহণ করেন, পরবর্তীতে ইয়েমেনবাসীরাও সবাই ইসলাম গ্রহণ করেন। মহানবী (সা.) তাকে ইয়েমেনে কাযী হিসেবেও প্রেরণ করেছিলেন এবং উভয় পক্ষের বক্তব্য শুনে সিদ্ধান্ত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মহানবী (সা.) আলীকে অত্যন্ত স্নেহ করতেন, কেউ যদি তার বিরুদ্ধে অযথা বা অন্যায় কোন অভিযোগ করতো তবে মহানবী (সা.) খুবই কষ্ট পেতেন এবং অসন্তুষ্ট হতেন। একবার তিনি (সা.) বলেছেন, ‘যে আলীকে কষ্ট দিয়েছে সে মূলত আমাকে কষ্ট দিয়েছে’। একবার লোকজন আলী (রা.)’র বিরুদ্ধে অভিযোগ করলে মহানবী (সা.) সবাইকে বলেন, ‘হে লোকসকল! তোমরা আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করো না! আল্লাহ্‌র কসম! সে আল্লাহ্‌র সত্তাকে অত্যধিক ভয় করে অথবা সে এটিকে অত্যন্ত ভয় করে যে আল্লাহ্‌র পথে তার নামে কোন অভিযোগ করা হোক!’
খুতবার শেষদিকে হুযূর পুনরায় জামাতের সদস্যদের দোয়ার প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ করেন; পাকিস্তান ও আলজেরিয়াতে কিছু সরকারি কর্মকর্তার পৃষ্ঠপোষকতায় আহমদীয়াতের চরম বিরোধিতা হচ্ছে এবং আহমদীদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রমূলক ও মিথ্যা অভিযোগ উত্থাপন করা হচ্ছে। আলজেরিয়াতে নিষ্পাপ আহমদীরা জেলেও বন্দি আছেন। আল্লাহ্ তা’লা এসব ষড়যন্ত্র ও শত্রুদের অনিষ্ট থেকে আহমদীদের সুরক্ষা করুন এবং এসব দুষ্কৃতিকারী, যাদের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে তারা হিদায়াত পাবার উপযুক্ত নয়, তাদেরকে দ্রুত ধৃত করুন (আমীন)। খুতবার শেষাংশে হুযূর কেন্দ্রীয় আরবী ডেস্কের মুরব্বী তাহের নাদিম সাহেবের পিতা মোকাররম রশীদ আহমদ সাহেবের গায়েবানা জানাযা পড়ানোর ঘোষণা দেন, যিনি গত ২৮ অক্টোবর ৭৬ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন, (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। হুযূর তার সংক্ষিপ্ত স্মৃতিচারণ করেন এবং তার রূহের মাগফিরাত কামনা করে দোয়া করেন।