শ্রেষ্ঠ মহাপুরুষ – নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীগণ – মহানবী (সা.)-এর উপর যাদু’র প্রভাবের বাস্তবতা

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৮-মার্চ, ২০১৯

মসজিদ বাইতুল ফুতুহ্, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) গত ৮ মার্চ, ২০১৯ইং লন্ডনের বায়তুল ফুতুহ মসজিদে প্রদত্ত জুমুআর খুতবায় পূর্বের ধারা অনুসরণে নিষ্ঠাবান বদরী সাহাবীদের বর্ণাঢ্য জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। এ খুতবায় তিনি হযরত কায়েস বিন মিহসান (রা.) ও হযরত জুবায়ের বিন আইয়াস (রা.)’র জীবনের স্মৃতিচারণ করেন। একই সাথে তিনি (আই.) মহানবী (সা.)-এর যাদুর প্রভাব ঘটনার প্রকৃত ব্যাখ্যা করেন।

হুযূর (আই.) বলেন, হযরত কায়েস বিন মিহসান (রা.) একজন আনসারী সাহাবী ছিলেন, তিনি বনু যুরায়েক গোত্রের সদস্য ছিলেন। তার মায়ের নাম ছিল আনিসা বিনতে কায়েস ও পিতার নাম মিহসান বিন খালেদ। তিনি বদর ও উহুদের যুদ্ধে অংশ গ্রহণ করেন।

দ্বিতীয় সাহাবী হলেন, হযরত জুবায়ের বিন আইয়াস (রা.)। তার পিতার নাম আইয়াস বিন খালেদ। তিনি বদরের যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। তিনি খাযরাজ গোত্রের শাখা বনু যুরায়কের সাথে সম্পর্ক রাখতেন। কথিত আছে, একবার কোন এক ইহুদী (নাউযুবিল্লাহ্) মহানবী (সা.)-এর ওপর যাদু-টোনা করেছিল; চিরুনির মধ্যে চুল গিঁট দিয়ে তা উরওয়ান নামক কূপে ফেলে দিয়ে এই যাদু করা হয়েছিল, যা পরবর্তীতে মহানবী (সা.) সেখান থেকে তুলিয়েছিলেন। সহীহ বুখারীর শরাহ্ বা ভাষ্যগ্রন্থ ফাতহুল বারী’র বর্ণনানুসারে হযরত জুবায়ের বিন আইয়াস কুঁয়ো থেকে সেই চিরুনি তুলে এনেছিলেন; অন্য আরেকটি বর্ণনামতে হযরত কায়েস বিন মিহসান সেই চিরুনি তুলেছিলেন। হুযূর (আই.) বলেন, এজন্যই আজ আমি এই দু’জনের স্মৃতিচারণ একসাথে করছি। তাদের মধ্যে কে সেই চিরুনি উঠিয়েছিলেন তা অতটা গুরুত্বপূর্ণ নয়; গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, মহানবী (সা.)-এর ওপর আদৌ যাদুর কোন প্রভাব পড়েছিল কি-না বা আসলেই তিনি যাদুগ্রস্ত হয়েছিলেন কি-না; আর এ বিষয়ে আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি কী। এটা আমাদের মনে রাখতে হবে, যেসব বিষয় নিয়ে মহানবী (সা.)-এর সত্ত্বার ওপর আপত্তি উঠতে পারে বা আপত্তি করা হয়, আমাদেরকে সেগুলোর যথাযথ জবাব দিতে হবে। এজন্য আমি এ বিষয়ে জামাতের সাহিত্যে যে বিস্তারিত বিবরণ রয়েছে, তার থেকে কিছুটা উল্লেখ করব; এই দু’জন সাহাবীর স্মৃতিচারণের বরাতে আজ এ বিষয়টিই স্পষ্ট করা হবে।

হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) সূরা ফালাকের তফসীরের ভূমিকায় এ ঘটনাটি তুলে ধরেছেন। সেখানে তিনি (রা.) হাদীসে হযরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক ঘটনাটির যে বর্ণনা প্রদান করা হয়েছে তা উল্লেখ করেন। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ইহুদীদের পক্ষ থেকে মহানবী (সা.)-এর ওপর যাদু-টোনা করা হয়েছিল। এর ফল যা হয়েছিল তা হল, তিনি (সা.) কখনো কখনো মনে করতেন যে অমুক কাজ তিনি করেছেন, অথচ তিনি (সা.) তা করেন নি। একদিন তিনি (সা.) আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করলেন, অনেক দোয়া করলেন। পরে তিনি (সা.) হযরত আয়েশাকে বললেন, ‘হে আয়েশা, আমি আল্লাহ্‌র কাছে যা চেয়েছিলাম, তা তিনি আমাকে দান করেছেন।’ আয়েশা (রা.) যখন জিজ্ঞেস করেন যে, তা কী, তখন মহানবী (সা.) বলেন, আমার কাছে দু’জন ব্যক্তি আসে এবং তাদের একজন আমার শিয়রের পাশে ও অন্যজন আমার পায়ের কাছে আসন গ্রহণ করেন। তাদের একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করে, এই ব্যক্তির [অর্থাৎ মহানবী (সা.)-এর] কী হয়েছে? অপরজন উত্তর দেয়, তার ওপর যাদু-টোনা করা হয়েছে। তখন প্রথমজন বলে, কে যাদু করেছে? অপরজন জবাব দেয়, লবীদ বিন আসেম নামক এক ইহুদী। প্রথমজন বলে, কী দিয়ে যাদু করা হয়েছে? অপরজন বলে, চিরুনি ও মাথার চুল দিয়ে, যা খেজুরের মঞ্জরী বা খোসার ভেতরে রয়েছে। প্রথমজন জিজ্ঞেস করে, এগুলো কোথায় আছে? অপরজন জবাব দেয়, এগুলো যী উরওয়ানের কূপের ভেতর আছে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) এরপর সাহাবীদের নিয়ে সেই কূপের কাছে যান; ফেরত এসে বলেন, ‘আয়েশা, সেই কূপের পানি মেহেদীর রসের মত লালচে।’ এটা ইহুদীদের রীতি ছিল, যখন তারা কারও ওপর যাদু-টোনা করতো, তখন নিজেরাই এভাবে কুঁয়ার পানিতে মেহেদীর রস ইত্যাদি মিশিয়ে তা লাল করে দিত, যেন সবাই ভাবে যে, যাদুর প্রভাবে এমনটি হয়েছে। হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি বললাম, হে আল্লাহ্‌র রসূল! আপনি সেগুলো পুড়িয়ে দিলেন না কেন?’ মহানবী (সা.) বলেন, আল্লাহ্ তা’লা যেহেতু আমাকে আরোগ্য দান করেছেন, তাই আমি সমস্যা সৃষ্টি হয় এমন কোন কাজ করতে অপছন্দ করলাম। তবে, আমি সেগুলো মাটিতে পুঁতে ফেলতে বলেছি। হযরত মুসলেহ্ মওউদ (রা.) বলেন, যে দু’জন ব্যক্তির কথোপকথনের উল্লেখ মহানবী (সা.) করেছেন, তারা আসলে ফিরিশ্তা ছিলেন। আর হযরত আয়েশার এই বর্ণনার মর্মার্থ কেবল এতটুকু- আল্লাহ্ তা’লা ফিরিশতার মাধ্যমে মহানবী (সা.)-কে ইহুদীদের যাদু-টোনা করার বিষয়টি জ্ঞাত করে দিয়েছিলেন; এর মানে কখনোই এটি নয় যে, তাঁর (সা.) ওপর এই যাদুর কোন প্রভাব পড়েছিল। তবুও মহানবী (সা.) সেই জিনিসগুলো উঠিয়ে মাটিতে পুঁতে ফেলেন, তখন ইহুদীরা বুঝতে পারে যে, তাদের যাদু-টোনা কোনই কাজে আসেনি। অন্যদিকে আল্লাহ্ তা’লা মহানবী (সা.)-কে আরোগ্যও দান করেন। এই ঘটনা থেকে একদিকে যেমন ইহুদীদের মহানবী (সা.)-এর প্রতি শত্রুতার বিষয়টি জানা যায়, অন্যদিকে এটিও প্রতীয়মান হয় যে, তিনি (সা.) আল্লাহ্‌র সত্য রসূল ছিলেন; কেননা আল্লাহ্ তা’লা তাকে (সা.) সেই গোপন ষড়যন্ত্র সম্পর্কে বিস্তারিত জানিয়ে দেন যা ইহুদীরা করছিল।

সাহেবযাদা হযরত মির্যা বশীর আহমদ সাহেব (রা.)ও এ বিষয়ে এক প্রবন্ধে বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। তিনি লিখেন, বলা হয়ে থাকে, হুদাইবিয়ার সন্ধির পর এক ইহুদী মহানবী (সা.)-এর ওপর যাদু-টোনা করেছিল, যাতে তিনি (সা.) বেশ কিছুদিন আক্রান্ত ছিলেন (নাউযুবিল্লাহ্)। আর এতে তাঁর (সা.) যে সমস্যা হয়েছিল তা হল, তিনি (সা.) কিছুটা ভুলোমনা হয়ে গিয়েছিলেন; মনে করতেন যে, কোন কাজ তিনি (সা.) করেছেন, অথচ বাস্তবে তিনি সেটি করেন নি। এরপর তো আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে (সা.) স্বপ্নের মাধ্যমে বিস্তারিত অবগত করেন এবং ঘটনাটির যবনিকাপাত ঘটে। কিন্তু কিছু হাদীস ও ইতিহাস গ্রন্থে এই ঘটনাকে ঘিরে এত আজগুবি কাহিনীর জাল বোনা হয়েছে যে, আসল ঘটনা উদঘাটন করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। এসব কথা যদি সত্য বলে ধরে নেয়া হয়, তবে স্বীকার করতে হবে যে, (নাউযুবিল্লাহ্) মহানবী (সা.)-এর পবিত্র সত্তা মানুষ হিসেবে অত্যন্ত দুর্বল ছিল, যাকে তার শত্রুরা অন্তত শারীরিকভাবে যেমনটা চাইত পরিবর্তন করতে পারত। কিন্তু একথা আদৌ ঠিক নয়। যদি এসব বর্ণনাকে যুক্তি দিয়ে বিশ্লেষণ করা হয়, তাহলে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়- এটি কেবল বিস্মৃতিপরায়ণতা বা ভুলে যাওয়ার রোগ ছিল, যা কিছু সাময়িক দুশ্চিন্তা ও শারীরিক দুর্বলতার কারণে মহানবী (সা.)-এর হয়েছিল। আর কতিপয় বিদ্বেষ-পরায়ণ শত্রু এই অসুস্থতাকে পুঁজি করে এ গুজব ছড়িয়ে দেয় যে, আমরা মুসলমানদের নবীর ওপর যাদু করে তাকে অসুস্থ করে দিয়েছি। কিন্তু আল্লাহ্ তা’লা শীঘ্রই তাঁকে (সা.) আরোগ্য দান করেন এবং শত্রুদের ষড়যন্ত্রের জাল ফাঁস করে তাদেরকে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ করে দেন। পৃথিবীতে শয়তানী শক্তির বিরুদ্ধে যে নবী সবচেয়ে বড় বিজেতা, যার ভেতরকার শয়তানও মুসলমান হয়ে গিয়েছিল বলে তিনি তাঁর দুহিতাকে জানিয়েছিলেন, সেই তিনিই সামান্য এক ইহুদীর শয়তানী যাদুর আক্রমণের শিকারে পরিণত হয়েছিলেন- এমন ধারণা সম্পূর্ণভাবে বিবেক-বুদ্ধি বিবর্জিত ও কল্পনা প্রসূত। প্রথম কথা হল, এই ঘটনাটি হুদাইবিয়া সন্ধির পরের ঘটনা। যেহেতু এই সন্ধির কতিপয় শর্ত বাহ্যত মুসলমানদের জন্য অপমানজনক ছিল আর তারা সে যাত্রায় উমরাহ্ করা থেকে বঞ্চিত হয়েছিলেন, তাই কাফির ও মুনাফিকরা এটি নিয়ে বেশ হাসি-ঠাট্টা বা মশকরা করছিল এবং এটিকে ইসলামের পরাজয় বলে অপপ্রচার করছিল। দুর্বল ঈমানের মুসলমানরা তো বটেই, শীর্ষ পর্যায়ের কোন কোন সাহাবীও এই সন্ধিকে নিজেদের জন্য অপমানজনক মনে করেছিলেন। দুর্বল ঈমানের মুসলমানদের ওপর এই ঘটনার কী কুপ্রভাব পড়বে, তা নিয়ে মহানবী (সা.) খুবই চিন্তিত ছিলেন আর স্বাভাবিকভাবেই তা মহানবী (সা.)-এর স্বাস্থ্যের ওপরও বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। এ কারণেই তিনি কিছুটা ভুলোমনা হয়ে গিয়েছিলেন। দ্বিতীয়ত: তাঁর এই অসুস্থতা দেখে ইহুদীরা এক হীন ষড়যন্ত্র করে এ বিষয়টিকে খুব চাউর করে, যেন এটিকে কাজে লাগিয়ে তারা একটি নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে পারে। তৃতীয়ত: তারা তাদের এই ষড়যন্ত্রকে বাহ্যিক রূপ দেয়ার জন্য লবীদ নামক এক ব্যক্তিকে দিয়ে এমন কাজও করায় যাতে মনে হয় যে, এটা আসলে যাদুরই প্রভাব এবং এই যাদুর প্রভাবেই তিনি (সা.) এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। চতুর্থত: মহানবী (সা.) আল্লাহ্ তা’লার কাছে ব্যাকুলচিত্তে দোয়া করেন যেন আল্লাহ্ তা’লা এই নৈরাজ্য দূর করে দেন এবং শত্রুদের ষড়যন্ত্র তাঁর (সা.) কাছে প্রকাশ করে দেন, যেন তিনি (সা.) এর একটা বিহিত করে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করতে পারেন। পঞ্চমত: আল্লাহ্ তাঁর এই দোয়া কবুল করেন এবং যাবতীয় বিষয় তাঁকে (সা.) অবগত করেন, যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি (সা.) যাদুর সেই বাহ্যিক উপকরণগুলোও বিনষ্ট করেন। অন্যদিকে আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে শারীরিকভাবেও আরোগ্য দান করেন যেন যাদু-সংক্রান্ত কোন ধারণারই আর অবকাশ না থাকে।

হুযূর বলেন, এখন প্রশ্ন আসতে পারে, মহানবী (সা.)-এর মত এত মহান নবী, যিনি খাতামান্নাবীঈন ও দু’জাহানের পথ-প্রদর্শক, তিনি কেন এমন এক অসুখের কবলে পড়লেন যা বাহ্যত তার মহান দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে মানুষের মনে সন্দেহের উদ্রেক ঘটাতে পারে? সংক্ষেপে এর জবাব হল, প্রত্যেক নবীরই দু’টো পরিচয় থাকে; একদিক থেকে তিনি আল্লাহ্‌র নবী ও রসূল, এজন্য তিনি আল্লাহ্‌র সাথে বাক্যালাপের সম্মানে ভূষিত হন আর নিজ অনুসারীদের জন্য শিক্ষক হয়ে থাকেন। অন্যদিকে, তিনি একজন রক্ত-মাংসের সাধারণ মানুষও বটে, যে কারণে মানবসুলভ বৈশিষ্ট্য, অসুখ-বিসুখের শিকার হওয়ার ক্ষেত্রে তিনিও আর দশটা সাধারণ মানুষের মতই হয়ে থাকেন। এ কারণেই তিনি (সা.) ভুলে যাওয়ার রোগে সাময়িকভাবে আক্রান্ত হয়েছিলেন। কেউ যদি বলে, কুরআনে তো বলা আছে ‘সানুকরিউকা ফালা তানসা’ অর্থাৎ ‘নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে এমন এক শিক্ষা প্রদান করব, যা তুমি ভুলবে না’-এই প্রতিশ্রুতির পরও কেন মহানবী (সা.)-এর বিস্মৃতিপরায়ণতার অসুখ হল? এর জবাবে মনে রাখতে হবে, এই প্রতিশ্রুতি কেবল কুরআনী ওহী সংক্রান্ত, সাধারণ নিত্য-নৈমিত্তিক বিষয়াদির কথা এখানে বলা হয় নি। এই প্রতিশ্রুতি আল্লাহ্ রক্ষা করেছেন আর মহানবী (সা.) কুরআনী ওহীর সামান্য পরিমাণও কখনো ভুলেন নি। আর প্রতিশ্রুতি অনুসারে কিয়ামত পর্যন্ত আল্লাহ্ তা’লা এই ঐশী বিধানের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন।

খুতবার শেষদিকে হুযূর (আই.) এ বিষয়ে এই যুগের হাকাম ও আদাল (অর্থাৎ ন্যায়বিচারক ও মিমাংসাকারী) হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-এর বক্তব্য উপস্থাপন করেন, যা এক্ষেত্রে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত বলে বিবেচিত। হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.)-কে একবার এ বিষয়ে প্রশ্ন করে এর সত্যতা জানতে চাওয়া হলে তিনি (আ.) বলেন, “যাদু তো শয়তানের পক্ষ থেকে হয়ে থাকে; নবী-রসূলদের ওপর যাদুর কোন প্রভাব সৃষ্টি হবে- এটি তাদের মর্যাদা পরিপন্থী, বরং তাদের দেখে যাদু পালিয়ে যায়; …. একথা একেবারেই ভুল যে, মহানবী (সা.)-এর প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যাদু-টোনা জয়ী হয়ে গিয়েছিল; আমরা এটা কখনো মানতে পারি না। … আল্লাহ্ তা’লা তো বলেছেন- ‘ইয ইয়াকুলুয্ যালিমুনা ইন তাত্তাবিউনা ইল্লা রাজুলাম্ মাসহুরান’ অর্থাৎ “যখন যালেমরা বলে, ‘তোমরা তো কেবল এক যাদুগ্রস্ত ব্যক্তির অনুসরণ করছ’।” এসব কথা যারা বলে তারা তো যালেম, মুসলমান নয়!

হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন, আলহামদুলিল্লাহ্, আমরা যুগের ইমামকে মানার কারণে মহানবী (সা.)-এর সুমহান মর্যাদা ও মাহাত্ম্য সম্পর্কে জানতে ও বুঝতে পেরেছি। অতঃপর হুযূর মহানবী (সা.)-এর উপর দরূদ পাঠ করে খুতবা সমাপ্ত করেন।