ইসলাম-আহ্‌মদীয়াতের সমর্থনে অগণিত ঐশী নিদর্শন

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

০৯-ডিসেম্বর, ২০১৬

বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ৯ই ডিসেম্বর, ২০১৬ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “ইসলাম-আহ্‌মদীয়াতের সমর্থনে অগণিত ঐশী নিদর্শন”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন,

যাদের চোখের উপর পর্দা পড়ে রয়েছে, যারা এই সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছে যে আমরা মানবো না- তাদের চোখে আল্লাহ তা’আলার সাহায্য-সমর্থনও ধরা পড়ে না বা ঐশী নিদর্শনও তারা দেখতে পায় না। আর তারা নিদর্শন দেখেও সবসময় এটিই বলতে থাকে যে আমাদেরকে নিদর্শন দেখাও। আসলে তাদের সীমালংঘনের কারণে আল্লাহ তা’আলা তাদের হৃদয়কে বন্ধ করে দেন, ফলে তারা কখনোই সত্যকে অনুধাবন করতে পারে না। আর কখনো কখনো আল্লাহ তা’আলা নবীদের সমর্থনে উল্টো এদেরকেই শিক্ষনীয় নিদর্শনে পরিণত করেন। হযরত মসীহ মাওউদ (আ.)-এর ক্ষেত্রেও এমনটি ঘটেছে এবং অনেক শীর্ষস্থানীয় বিরুদ্ধবাদী শিক্ষনীয় নিদর্শনে পরিণত হয়েছে।

হযরত মসীহ মাওউদ (আ.)-এর সমর্থনে আল্লাহ তা’আলা অগণিত নিদর্শন প্রদর্শন করেছেন যা তিনি (আ.) বলেছেন বা মহানবী (সা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছেন যা সঠিক সময়ে পূর্ণ হয়েছে; কিন্তু তা সত্ত্বেও এসব নামধারী ধর্মনেতারা নিজেরা মানেই নি, জনসাধারণকেও পথভ্রষ্ট করেছে এবং আজ পর্যন্ত তা করে চলেছে। একই রমযানে চন্দ্রগ্রহন ও সূর্যগ্রহনের নিদর্শন যা দেখানোর জন্য মৌলভীরা কেঁদে কেঁদে দোয়া করত, তা যখন আল্লাহ তা’আলা প্রদর্শন করলেন তখন তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। বরং গোলাম মুর্তজা নামক এক মৌলভী আফসোস করে বলেছে যে, এখন তো সারা পৃথিবী পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে। এই ছিল তাদের বিরোধীতার মাত্রা। প্লেগ, খাল খনন হওয়া, পাহাড় দু’ভাগ হওয়া, পুস্তকের ব্যাপকতা, নতুন নতুন বাহন আবিষ্কার ইত্যাদি অসংখ্য নিদর্শন প্রদর্শিত হয়েছে; অথচ মানুষ মীর্যা সাহেবের পাগড়ি বাঁকা, তাঁর “ক্বাফ”-এর উচ্চারণ সঠিক না ইত্যাদি তুচ্ছাতিতুচ্ছ আপত্তি তুলে অস্বীকার করেছে। এসব নিদর্শন সামনে থাকার পরও যখন কোন লোক এসে মসীহ মাওউদ (আ.)-এর কাছে এসে নিদর্শন দেখানোর দাবী জানাতো তখন তিনি (আ.) জবাব দিতেন, আগের নিদর্শনগুলো দেখেও যখন লাভ হয়নি তো এখন আর কোন নিদর্শন দেখবে?

হযরত মুসলেহ মাওউদ (রা.) উল্লেখ করেন যে, আল্লাহ তা’আলা মসীহ মাওউদ (আ.)কেও বারংবার ইলহামের মাধ্যমে জানিয়েছেন যে তাঁর (আ.) জামাতকেও সেভাবেই কুরবানী দিতে হবে যেভাবে পূর্বে নবীদের জামাতগুলোকে দিতে হয়েছে। মসীহ মাওউদ (আ.)-এর এক স্বপ্নের মাধ্যমে জানা যায় যে আহমদীয়া জামাতের ব্যবস্থাপনা একদিন বিশ্বের সকল ব্যবস্থাপনার উপর ছেয়ে যাবে, কিন্তু এই বিজয় কখনো ভালবাসা ও সন্ধির মাধ্যমে অর্জিত হবে আবার কখনো শাহাদাত ও কুরবানীর মাধ্যমে অর্জিত হবে। আজ জামাত এই রীতি অনুসারেই কাজ করে যাচ্ছে। একদিকে শান্তির ও মীমাংসার বাণী জামাতই পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিচ্ছে, আর ধর্মের খাতিরেও ত্যাগ স্বীকার জামাতই করছে।

হুযুর (আই.) বলেন, বিরোধীতা ও অত্যাচার কখনোই আহমদীয়তকে ভীত করতে পারেনি বরং তা সর্বদাই আমাদের ঈমান বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। এরপর হুযুর (আই.) সম্প্রতি রাবওয়াতে তাহরিকে জাদীদের অফিসে ও যিয়াউল ইসলাম প্রেসে পুলিশি অভিযানের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় বিরোধীতার উল্লেখ করেন। হুযুর (আই.) রাবওয়ার আহমদীদের পত্রের বরাতে উল্লেখ করেন যে এসব বিরোধীতা উল্টো আহমদীদের ঈমান বৃদ্ধির কারণ হয়েছে। হুযুর (আই.) বলেন, তারা আহমদীদের উপর এজন্য অত্যাচার চালায় কারণ আহমদীরা তাদেরকে খোদার কথা স্মরণ করিয়ে সতর্ক করে। হুযুর আনোয়ার দোয়া করেন যে আল্লাহ তা’আলা এদেরকে বিবেক-বুদ্ধি দান করুন যেন তারা সত্যকে বুঝতে পারে আর দেশকে যেন আল্লাহ এই নৈরাজ্যবাদী মৌলভীদের হাত থেকে রক্ষা করেন। হুযুর নাইজেরিয়াতে বিরোধীতার উল্লেখ করে তাদের জন্যও দোয়া করেন।

হযরত মুসলেহ মাওউদ (রা.)-এর বরাতে হুযুর (আই.) বলেন, পৃথিবীতে সবচেয়ে ভয়াবহ বিরোধীতা হয় আত্মীয়দের মাধ্যমে। হযরত মসীহ মাওউদ (আ.)-এর আত্মীয়দের পক্ষ থেকেও চরম বিরোধীতা করা হয়। কিন্তু ফলতঃ তারা নিজেরাই মসীহ মাওউদ (আ.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে ধ্বংস ও নির্বংশ হয়ে গিয়েছে। তাঁর (আ.) বংশের কেবল সেই অংশই টিকেছে যারা তাঁর দৈহিক বা আধ্যাত্মিক বংশধর হয়েছেন। হুযুর (আই.) বেশ কিছু ঘটনাও উল্লেখ করেন।

হুযুর আকদাস হযরত মুসলেহ মাওউদ (রা.)-এর বরাতে মসীহ মাওউদ (আ.)-এর একটি স্বপ্নের উল্লেখ করেন যার মূল কথা হল, যদি মানুষ দোয়া না করে তবে সে আল্লাহর দৃষ্টিতে নিতান্তই মূল্যহীন এবং ধ্বংস হওয়ার যোগ্য। খ্রীষ্টানরা তো মসীহ নাসেরীর তিনশত বছর পর উন্নতি লাভ করেছিল। কিন্তু আহমদীয়ত তার চেয়ে অনেক আগেই উন্নতি লাভ করবে, ইনশাআল্লাহ। কিন্তু এজন্য শুধু মোবাল্লেগদের উপর নির্ভর করলে চলবে না যে তারা তবলীগ করবে আর এভাবে আহমদীয়তের প্রচার ও প্রসার ঘটবে। যদি এই উন্নতির অংশ আমরা হতে চাই তবে আমাদেরকেও দোয়ায় মনোনিবেশ করতে হবে, আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ হতে হবে এবং আল্লাহ তা’আলার সাথে নিবিড় সম্পর্ক সৃষ্টি করতে হবে; আর এগুলোই আহমদীয়তের বিরুদ্ধবাদীদের ব্যর্থ করে আমাদেরকে আহমদীয়াতের উন্নতির অংশ বানাবে। হুযুর (আই.) দোয়া করেন যে, আল্লাহ তা’আলা যেন আমাদেরকে এই পদমর্যাদা দান করেন। আমীন। সুম্মা আমীন।

খুতবার শেষদিকে হুযুর ইন্দোনেশিয়ার মোবাল্লেগ মোকাররম সূফী জাফর আহমদ সাহেবের যিকরে খায়ের করেন যিনি গত ৮ নভেম্বর ৭১ বছর বয়সে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে ইন্তেকাল করেন। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলায়হে রাজেউন।