দ্যা ক্যানেডিয়ান ট্যুর ২০১৬

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ - খলীফাতুল মসীহ্‌ আল্‌ খামেস (আই.)

১৮-নভেম্বর, ২০১৬

বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদ, লন্ডন, যুক্তরাজ্য

জুমুআর খুতবার সারমর্ম


এই জুমু’আর খুতবার সারাংশটিতে কোনো প্রকার ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকলে তার দায়ভার আহ্‌মদীয়া বাংলা টীম গ্রহণ করছে।

নিখিল বিশ্ব আহমদীয়া মুসলিম জামাতের বর্তমান ইমাম হযরত মির্যা মসরূর আহমদ খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস (আই.) গত ১৮ই নভেম্বর, ২০১৬ইং রোজ শুক্রবার লন্ডনের বাইতুল ফুতুহ্ মসজিদে “দ্যা ক্যানেডিয়ান ট্যুর ২০১৬”- সম্পর্কে জুমুআর খুতবা প্রদান করেন।

তাশাহুদ, তাঊয, তাসমিয়া এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর হুযূর আনোয়ার (আই.) বলেন,

প্রায় ছয় সপ্তাহ দীর্ঘ কানাডা সফর করে এসেছি। আল্লাহ্‌ তা’আলার শুকরিয়ায় এই সফর, জামাতী অনুষ্ঠান এবং জামাতের বাইরের অনুষ্ঠান, উভয় দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত বরকতমন্ডিত ছিল। জলসা উপলক্ষ্যে বিভিন্ন অতিথি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অনুভূতির উল্লেখ জলসা পরবর্তী জুমআয় করেছি, আজকের খুতবায় হুযুর অন্যান্য অনুষ্ঠান ও এগুলোতে আগত অতিথিদের অনুভূতির উল্লেখ করব।

হুযুর (আই.) বলেন, কানাডার জামাত নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার দিক থেকে অগ্রগণ্য জামাতগুলোর মধ্যে অন্যতম। তরুণ ছেলে ও মেয়েরা জামাতের কাজের ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতামূলকভাবে সক্রিয়। প্রচারমাধ্যম, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সরকারী পদস্থ কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে যুবকরা খুব সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। কিন্তু ফলাফল যা সৃষ্টি হয়েছে তা থেকে এ বিষয়টি স্পষ্ট যে প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্‌ তা’আলা স্বয়ং এসব ঘটিয়েছেন, কর্মীরা কেবল হাত লাগিয়েছেন আর আল্লাহ্‌ অসাধারণ ফলাফল সৃষ্টি করেছেন। পূর্বে মিডিয়া কাভারেজ পাবার জন্য আহমদীরা অনুরোধ করত কিন্তু মিডিয়া আসত না, আর এবার মিডিয়া পিছনে লেগে ছিল হুযুরের সাক্ষাৎকারের জন্য কিন্তু সময় স্বল্পতার কারণে অনেককে ফিরিয়ে দিতে হয়েছে।

হুযুর (আই.) এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে অতিথিদের অনুভূতি সংক্ষেপে তুলে ধরেন। কানাডাতে তিনটি নতুন মসজিদের উদ্বোধন হয়েছে, কিন্তু দুটির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে অ-আহমদীদের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সংসদেও একটি অনুষ্ঠান হয়েছে, ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে হুযুর বক্তৃতা করেছেন, টরন্টোতে ও ক্যালগেরিতে শান্তি সম্মেলন হয়েছে। হুযুর (আই.) বলেন, এসব অনুষ্ঠানে অ-আহমদীদের সামনে ইসলামী শিক্ষা তুলে ধরার সৌভাগ্য হয়েছে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার অপার কৃপায় সর্বত্র মানুষ ইসলামী শিক্ষার সৌন্দর্যের কথা স্বীকার করেছে।

টরন্টোর মিডিয়া কাভারেজ সম্পর্কে হুযুর (আই.) বলেন, সেখানে তিনটি সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে। গ্লোবাল নিউজ যা কানাডার খুব প্রসিদ্ধ সংবাদ মাধ্যম তারা হুযুরের একটি সাক্ষাৎকার প্রচার করে যার দর্শকসংখ্যা অনলাইন দর্শকসহ ৪ লক্ষ। ২য় সাক্ষাৎকার সেখানকার জাতীয় সংবাদ চ্যানেল সিবিসি নিয়েছে, এর প্রধান প্রতিনিধি পিটার ম্যান্সব্রিজ এটি নেন এবং তারা এডিটিং করে আধা ঘন্টার সাক্ষাৎকার সম্প্রচার করে। অন্যতম জাতীয় পত্রিকা গ্লোবাল মেইলও একটি সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বক্তৃতার খবরও ৫ লক্ষ মানুষের কাছে পৌঁচেছে।

জলসার পর অটোয়াতে সংসদে দিনব্যাপী অনুষ্ঠান হয়। প্রধানমন্ত্রীসহ কয়েকজন মন্ত্রীর সাথে পৃথক সাক্ষাৎসহ অনেকের সাথে সাক্ষাৎ ছিল। পরবর্তীতে সংসদের একটি হলে যে অনুষ্ঠান হয় সেখানে ৬জন মন্ত্রী, ৫৭জন সাংসদ ও ১১টি দেশের রাষ্ট্রদূতসহ সমাজের নীতিনির্ধারক পর্যায়ের অনেক ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। তাদের সামনে ইসলামী শিক্ষা তুলে ধরাসহ হুযুর তাদের দ্বৈত নীতির কারণে পৃথিবীতে সৃষ্ট অশান্তির বিষয়ে বলিষ্ঠ বক্তব্য রাখেন। শ্রোতারা তাদের ভাবাবেগ প্রকাশ করতে গিয়ে কেউ শান্তি প্রতিষ্ঠায় ইসলামী শিক্ষার অতুলনীয় বৈশিষ্ট্যের, ধর্মীয় সহমর্মিতার, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও ধর্মের ব্যাপারে সরকারের হস্তক্ষেপের অসমীচীনতার, অশান্তি সৃষ্টিতে তাদের দূর্বলতার উল্লেখের তারা ভূয়সি প্রশংসা করেন। প্রচারমাধ্যমের কল্যাণে ৪৫ লক্ষ মানুষ এই অনুষ্ঠান সম্পর্কে জানতে পারে।

টরন্টোর আইওয়ানে তাহের-এ শান্তি সম্মেলনে সবরকম শ্রেণী-পেশার ৬১৪জন অ-আহমদী মেহমান যোগ দেন। বিভিন্ন ধর্মের মাঝে সমমূল্যবোধই বেশি এর উল্লেখ, পৃথিবীজুড়ে আহমদীদের শান্তি প্রতিষ্ঠায় কর্মতৎপরতা, পার্লামেন্টে হুযুরের নির্ভীক বক্তব্য, হযরত রসূলে পাক (সা.)-এর শান্তিপূর্ণ শিক্ষা ও আদর্শ ইত্যাদির ভূয়সি প্রশংসা করেন অতিথিরা।

ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয় যা কানাডার তৃতীয় বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয়, সেখানে হুযুরের বক্তৃতার প্রেক্ষিতেও শ্রোতারা তাদের অকপট অনুভূতির প্রকাশ করেন। অতিথিরা হুযুরের বক্তব্যে প্রতিবেশীদের সাথে আচরণ, নারী অধিকার বিষয়ে ইসলামী শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ের ভূয়সি প্রশংসা করেন।

সাসকাটুনে সংবাদ সম্মেলন ও জামাতি অনুষ্ঠান যে মিডিয়া কাভারেজ পেয়েছে তার মাধ্যমে ১৭ লক্ষ লোক পর্যন্ত জামাতের সংবাদ পৌঁচেছে। রেজাইনার মসজিদ উদ্বোধন উপলক্ষ্যে আয়োজিত রিসিপশনে সাসকাচুয়ান প্রদেশের প্রধানমন্ত্রী, বিভিন্ন শহরের মেয়র, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতৃবর্গসহ সব শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন যারা শান্তি প্রতিষ্ঠায় হুযুরের বক্তব্যে প্রদত্ত দিকনির্দেশনা, ইসলাম সম্পর্কে বিভিন্ন ভুল ধারণার অপসারণ ইত্যাদি বিষয়ের ভূয়সি প্রশংসা করেন।

ক্যালগেরিতে যে অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় এতে ৬৪৪জন অ-আহমদী অতিথি অংশ নেন যাদের মধ্যে সাবেক প্রধানমন্ত্রী স্টিফেন হার্পারও ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, পুলিসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সকলেই হুযুরের বক্তব্যে তুলে ধরা সঠিক ইসলামী শিক্ষার ভূয়সি প্রশংসা করেন।

হুযুর (আই.) বলেন যে কানাডা সফরে প্রচারমাধ্যমে মোটমাট আমাদের জামাতের যে প্রচার হয়েছে তাতে টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে ৪ কোটি, রেডিওর মাধ্যমে ৮ লক্ষ, পত্রপত্রিকার মাধ্যমে ৪৮ লক্ষ, অন্যান্য মাধ্যমে ১ কোটি ৪৬ লক্ষ লোকের কাছে জামাতের পয়গাম পৌঁচেছে। সব একত্র করলে ৬ কোটি লোকের কাছে আহমদীয়াতের বাণী পৌঁচেছে আর এটি কেবলমাত্র আল্লাহ্‌ তা’আলারই কৃপা। হুযুর বলেন, আমাদের সবসময় নিঃসার্থভাবে ইসলামী শিক্ষা ও আহমদীয়াতের প্রচার এবং রসূলুল্লাহ (সা.) এর পতাকাকে উঁচু করার ও আল্লাহ্‌র একত্ববাদকে পৃথিবীতে প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে কাজ করতে হবে। তাহলেই আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের প্রতিটি কাজকে আশিষমন্ডিত করবেন। শেষে হুযুর পিস ভিলেজের আহমদীদেরকে তাদের উন্নত আদর্শ স্থাপনের এবং হুযুর চলে যাওয়ার পরও তাদের কাজে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বজায় রাখার উপদেশ প্রদান করে দোয়া করেন যেন আল্লাহ্‌ তা’আলা আমাদের সবাইকে এই তৌফিক প্রদান করেন। আল্লাহুম্মা আমীন। সুম্মা আমীন।