হযরত প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর সত্যতা ও ডাঃ আলেকজান্ডার ডুই-এর পরিণাম


সালেহ আহমদ

জন আলেকজান্ডার ডুই ১৮৪৭ সনে স্কটল্যান্ডের Edinburgh এ জন্ম গ্রহণ করে। তার পরিবার ১৮৬০ সনে অষ্ট্রেলিয়া চলে যায়। ১৮৬৭ সনে ডুই শিক্ষা গ্রহণের জন্য পুনরায় স্কটল্যান্ডে চলে আসে। এখানে সে দুই তিন বছর ধর্মীয় শিক্ষা গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সিডনির নিকটবর্তী শহর নিউটন এ অবস্থিত Congregational church এ যোগ দেয়। কিছুদিন পর মেলবোর্ন চার্চ এ Minister এর পদে মনোনীত হয়। ১৮৭৮ সনে সে International Healing Association প্রতিষ্ঠা করে এবং ঘোষণা দিতে শুরু করে যে, সে অসুস্থদের সুস্থ করে তুলবে। ইতোমধ্যে মৌলবাদ ও উগ্রতামূলক আচরণের জন্য তাকে কয়েকবার জেলে যেতে হয়।

১৮৮৮ সনের জুলাই মাসে ডুই আমেরিকা চলে আসে। সেখানে সানফ্রান্সসিসকোতে সে নিজের তথাকথিত “আরোগ্যদানের” কর্মসূচী শুরু করে। ১৮৯৬ সনে সে একটি পৃথক ধর্মীয় গোষ্ঠীর ভিত্তি রাখে। নাম রাখে Christian Catholic church (ক্রিশ্চান ক্যাথোলিক চার্চ)। ১৮৯৭ সনে Zion (জাইঅ্যান) শহর বানিয়ে সেখানে কেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনা করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে শিকাগো হ’তে ৪২ মাইল দূরে দক্ষিণ দিকে জমি ক্রয় করা হয়।
সর্বপ্রথম সেখানে একত্রিত হবার স্থান Assembly Hall বানানো হয়। পরবর্তী বছরের প্রারম্ভে সে তার শিষ্যদের তার প্রস্তুত – কৃত Assembly Hall এ রাত কাটানোর নির্দেশ দেয়। রাত ১২টায় ডুই ২৫ ফুট লম্বা ও ২৫ ফুট চওড়া ফলক উন্মোচন করে। এতে তার পরিকল্পিত “Zion City” বা জাইঅ্যান শহরের নকশা ছিল। এই শহরের জন্য মিশিগন হ্রদের প্রান্তে ১৬৬০০ একর জমি ক্রয় করা হয়। এখান থেকেই ডুইয়ের উত্থান। সে দ্রুতগতিতে খ্যাতি ও উন্নতি লাভ করে। পরবর্তী সাত বছরে তার শিষ্যদের সংখ্যা “বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। পত্র-পত্রিকা ও গণমাধ্যমে বিপুলভাবে প্রশংসিত ও আলোচিত হয়। আর এভাবে ইউরোপের সীমা রেখা ছাড়িয়ে তার খ্যাতি সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে।

Divine Healing Doctrinate “ঐশী আরোগ্যদান”কে ডুই নিজের বিশ্বাসরূপে প্রকাশ করে। এবং Evangelism কে (মুক্তি আমলে নয় বরং বিশ্বাসকে সঠিক করণে) গ্রহণ করে। ডুই Zion শহরকে বানানোর জন্য “বার্টন যে এশলে” কে ইঞ্জিনিয়ার নিযুক্ত করে, এই ইঞ্জিনিয়ার Zion city-কে সুন্দরভাবে বানানোর প্লান তৈরি করে। ১২০০ একর জমির উপর একটি পার্ক বানানো হয়। এর নাম Shilon House অর্থাৎ মসীহর ঘর রাখা হয়।
শহরের মাঝখানে গীর্জা বানানো হয়। এর চতুর্দিকে সড়ক ছিল। ডুই Zion শহরের ডাক টিকেটও বানিয়ে ছিলো। শহরের প্রতিটি রাস্তার নাম বাইবেল হ’তে নেয়া হয়েছিল। দু’টি রাস্তার নাম ভিন্ন ছিল। একটি “ক্যালিডোনিয়া” যা স্কটল্যান্ডের পুরানো নাম ও ডুই এর জন্মভূমি। দ্বিতীয়টি ‘এডিনা’ যা এডিনবার্গ এর সংক্ষেপ এখানে ডুই এর জন্ম হয়েছিল। ডুই-এর পঁচিশ কক্ষ বিশিষ্ট ঘর পঁচাত্তর হাজার ডলারে প্রস্তুত করা হয়েছিল। এ খরচ ১৯০১ সনের। একটি গোপন সুরঙ্গ Shiloh House হ’তে ‘ডুই বারন’ পর্যন্ত ছিল। যেখানে ডুই এর সেবাদাসগণ থাকতো।

এ গুপ্ত পথের মাঝে একটি কক্ষ ছিল যেখানে ডুই মদ সংরক্ষণ করে রেখেছিল এবং তা পান করত। কিন্তু Zion city তে মদ নিষিদ্ধ ছিল। একটি হোটেলও বানানো হয়েছিল যার নাম ছিল Elijah Hospice । পরবর্তীতে এই হোটেলটি আর্থিক অভাবে ভেঙ্গে ফেলা হয়। বর্তমানে এই অট্টালিকার একটি গুম্বুজ অবশিষ্ট আছে। ১৯০২ সনে হোটেলটি ৯০ হাজার ডলারে নির্মাণ করা হয়েছিল। এতে ১৩৫০ জন লোক একই সময়ে অবস্থান করতে পারতো। ইহা সে সময়ে আমেরিকার সবচেয়ে বড় Frame Building ছিল। ডুই ১৯০২ সনে একটি সরকারী সীল প্রস্তুত করায় (Official Seal) যার মধ্যে ক্রুশ, কবুতর, তরবারী ও মুকুটের ছাপ ছিল। মতবাদ প্রচারের জন্য দু’টি পত্রিকা চালু করেন। প্রথমটির নাম “Leaves of Healing” আর দ্বিতীয়টির নাম ‘Theocrat’ এ পত্রিকার মাধ্যমে ডুই তার মতবাদের প্রকাশের সাথে সাথে ইসলামের উপরও আক্রমণ শুরু করে। ডুই “এলীয়া নবী”র দাবী করে এবং ঘোষণা দেয় যে, দোয়ার মাধ্যমে ও স্পর্শ করার মাধ্যমে সে আরোগ্য দিতে পারে। “এলীয়া নবী” দাবী করার পর তার প্রতি বিরূপ মনভাবের সৃষ্টি হয়।

ডুই এর দাবী সমূহঃ

১। ২২শে জানুয়ারী, ১৮৯৬ সনে সে তার দলের ভিত্তি রাখে ও স্বয়ং এ দলের নেতা হবার ঘোষণা দেয়।

২। জুন মাসের দু’ তারিখ ১৯০১ সনে সে এলীয়া নবী হবার দাবী করে। সে দাবী করে যেভাবে ইউনুস (আঃ) এলীয়ার বুরুয হয়ে এসেছিলেন আমাকেও আল্লাহতাআলা এলীয়া বানিয়ে প্রেরণ করেছেন।

৩। ১৮ই সেপ্টেম্বর, ১৯০৪ সনে সে তার প্রতিষ্ঠিত দলের First Apostle (প্রথম রসূল) হবার দাবী করে,

৪। অন্যান্য খৃষ্টীয় দলের জন্য ঘোষণা দেয় যে, The purpose of the Christian catholic church in Zion is to snatch every other church in existence, অর্থাৎ Zion শহরে যে ক্রিশ্চান ক্যাথলিক চার্চ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এর মূল উদ্দেশ্য হলো অন্যান্য সকল … দলগুলিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। চার্চ ও মার্মন চার্চ যারা আমেরিকাতে খুবই জনপ্রিয় তাদের সম্বন্ধে বলে, I will not be liked to these wicked men (Leaves of Healing, vol XII p. 66) অর্থাৎ আমি এই দুষ্ট লোকদের পসন্দ করি না।

ডুই তার পত্রিকা Leaves of Healing এ ইসলাম ও ইসলামের সম্মানিত প্রতিষ্ঠাতার বিরুদ্ধে নানা ধরনের কুকথা ও মিথ্যা রটনা প্রতিনিয়ত প্রকাশ করতে লাগলো এবং দাবী করতে লাগলো Zion will have to distory Mohammadanism

অর্থাৎ জাইঅ্যানের উদ্দেশ্য হলো ইসলামকে নিশ্চিত করে দেয়া। সে তার পত্রিকায় ইসলাম, ইসলামী বিশ্বাস ও মহানবী (সঃ)-এর জন্য নাউযুবিল্লাহ্ খুবই জঘন্য ভাষা ব্যবহার করত।

ঐতিহাসিক ঘটনা:
হযরত মসীহ মাওউদ ও ইমাম মাহদী (আঃ) ডুই নামের এই মিথ্যা নবীর ব্যাপারটি ১৯০৩ সনে জানতে পারেন। হযরত মুফতী মুহাম্মদ সাদেক সাহেব (রাঃ)-এর ভাষায় ঘটনাটি বর্ণনা করছি: 

“সম্ভবতঃ ১৯০৩ সনের ঘটনা, (আসলে সনটি ১৯০২-লেখক) আমি কলকাতা হ’তে খৃষ্টান সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘এপি ফেলি’ পেলাম তাতে উল্লেখ ছিল যে, আমেরিকাতে ডুই নামক এক ব্যক্তি নবী হবার দাবী করেছে। এটা পড়ার পর আমি ডুইকে পত্র লিখি। সে উত্তরে আমাকে বই পত্র পাঠায়, যা আমি হযরত মসীহ্ মাওউদ (আঃ)-এর সামনে উপস্থাপন করি। হুযূর (আঃ) বললেন, তার পত্রিকা আনান এবং আপনি তা আমাকে পড়ে শুনাবেন। আমার যতটুকু মনে পড়ে হযরত (আঃ) আমাকে ১২ টাকা দেন। এ টাকা পাঠিয়ে তার ইংরেজী পত্রিকা “লিভস্ অফ হিলিং” আনাতে শুরু করি। এই ব্যক্তি ছিল পাদ্রী। অষ্ট্রেলিয়ায় বসবাস করছিলো কিন্তু পরবর্তীতে আমরিকায় চলে যায় এবং শিকাগোতে নিজ দল গড়ে। সে দোয়া ও আধ্যাত্মিক দৃষ্টি দ্বারা আরোগ্য দানের দাবী করে। এর পর সে এলীয়া নবী হবার দাবী করে। সে দাবী করে যে, আমি তৃতীয়বার মসীহ্‌র দ্বিতীয় আগমনের প্রস্তুতির জন্য এসেছি” (যিকরে হাবীব)। পরবর্তীতে হযরত মুফতী মুহাম্মদ সাদেক সাহেব ডুই এর ইংরেজী সাপ্তাহিক পত্রিকা রীতিমত হুযুর (আঃ)-কে শুনাতেন। ডুই তার পত্রিকায় ক্রমাগতভাবে আম্বিয়া কেরামকে গালমন্দ দিতে থাকে বিশেষভাবে ইসলাম ও মুসলমানদেরকে।

৬ই আগষ্ট, ১৯০২ সনের সন্ধ্যার ঘটনা। এরপর আমেরিকার মিথ্যা দাবীদার ইলিয়াস ডুই এর পত্রিকা মুফতী মুহাম্মদ সাদেক সাহেব অনেক দিন ধরে পড়ে শুনাচ্ছিলেন। এতে ডুই তার বিরোধী গোষ্ঠী, বাদশাহ্ ও রাষ্ট্রের সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করে যে, এরা সবাই ধ্বংস হয়ে যাবে।” ইহা শুনার পর হযরত আকদস (আঃ) বললেন, “মিথ্যা রটনাকারী মিথ্যাবাদী ইসলামের ঘোর শত্রু- এটাই উত্তম যে, বর্তমানে ইসলাম ছাড়া আর কোন ধর্ম সত্য
নয়। তার নামে একটি খোলা চিঠি ছাপিয়ে পাঠানো হোক এবং তাকে মোকাবেলার আমন্ত্রণ দেয়া হোক ইসলামের পক্ষেই শুধু কল্যাণ ও নিদর্শন প্রদর্শিত হয়। আমার বিশ্বাস যদি এই মিথ্যাবাদী আমার মোকাবেলা করে তবে সে প্রকাশ্যে পরাজিত হবে। সময় এসে গেছে, খোদাতাআলা তার এই মিথ্যা রটনার শাস্তি দিবেন” যাই হোক এটা সিদ্ধান্ত হলো ৭ই আগস্ট হযরত আকদস (আঃ) এই মিথ্যাবাদীকে একটি চিঠি লিখবেন এবং তাকে  নিদর্শন দেখানোর জন্য আহ্বান জানাবেন। আর এর ইংরেজীতে অনুবাদ করে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রেরণ করা হবে ও ছাপা হবে (মলফুযাত, দ্বিতীয় খন্ড, ২৩৪ পৃঃ)।

হযরত মুফতী মুহাম্মদ সাদেক সাহেব (রাঃ) ইউরোপ ও আমেরিকার পত্র-পত্রিকায় ইহা প্রেরণ করেন যা সেখানকার পত্রিকাগুলিতে হযরত প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর ছবিসহ ছাপানো হয়।

প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আঃ)-এর সাথে ডুই এর মোকাবেলা: 

হযরত মির্যা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (আঃ) যিনি প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ হবার দাবী করেছেন ১৯০২ সনের সেপ্টেম্বরে ডুইকে দোয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়ে “রিভিউ অফ রিলিজনস্” এ বিজ্ঞাপন দেন, তার কিছু অংশ উদ্ধৃত করছিঃ

“আজকাল আমরিকাতে ডুই নামক ইয়াসু মসীহর এক রসূলের জন্ম হয়েছে। তার দাবী হলো ইয়াসু মসীহ্ তাকে খোদারূপে এ পৃথিবীতে প্রেরণ করেছে যেন সে সকল মানুষকে মসীহ্ ব্যতিরেকে কোন খোদা নেই এ বিষয়ে একত্রিত করতে পারে। … সে বার বার তার পত্রিকায় এ বিষয়টি লিখছে যে খোদা ইয়াসূ মসীহ্ তাকে অবগত করেছে সকল মুসলমান ধ্বংস ও লাঞ্ছিত হয়ে যাবে। যারা মরিয়মের পুত্রকে খোদা ও ডুইকে খোদার রসূল বলে মানবে না তারা সবাই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে… সুতরাং আমি ডুই সাহেবকে জানাচ্ছি, কোটি কোটি মুসলমান মারার কী প্রয়োজন? একটি সহজ পদ্ধতি রয়েছে যদ্বারা নির্ণয় করা যাবে যে, ডুই এর খোদা সত্য নয় আমাদের খোদা সত্য। আর তা হলো বারবার মুসলমানদের নিশ্চিহ্ন হবার কথা না বলে ডুই সাহেব শুধু আমাকে সামনে রেখে দোয়া করে আমাদের মধ্যে যে মিথ্যাবাদী সে যেন আগে মারা যায় কেননা ডুই ইয়াসূ মসীহকে খোদা মানেন আর আমি তাকে খোদার এক বিনয়ী নবী হিসেবে মানি। এখন বিচারযোগ্য বিষয় হলো আমাদের মধ্য হ’তে কে সত্য তার উচিত সে যেন এই দোয়ার চ্যালেঞ্জকে ছাপিয়ে দেয় ও এক হাজার লোককে সাক্ষী রাখে। যখন এই দোয়া প্রকাশিত হয়ে আমার নিকট পৌঁছবে তখন আমি এর উত্তরে অনুরূপ দোয়া করবো এবং এক হাজার লোককে সাক্ষী রাখবো। আমি বিশ্বাস রাখি ভুই এর এরূপ মোকাবেলা সকল খৃষ্টানদের জন্য সত্য পথ নির্ণয় করার দরজা খুলে দিবে। দোয়া করার কথা আমি প্রথমে বলি নি বরং ডুই বলেছে। তার এই আস্ফালন দেখে আত্মমর্যাদাভিমানী খোদা আমার মাঝে আবেগের সৃষ্টি করেছেন। স্মরণ রাখার বিষয় হলো, আমি এ দেশের কোন সাধারণ মানুষ নই বরং আমি সেই প্রতিশ্রুত মসীহ্ যার অপেক্ষা ডুই করছে। ডুই বলছে, সেই মসীহ্ ২৫ বছরের মধ্যে জন্ম নিবে। আর আমি সুসংবাদ দিচ্ছি সেই মসীহর জন্ম হয়ে গেছে আর সে হলো আমি। আমার সত্যতার শতশত নিদর্শন আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে প্রকাশিত হয়েছে। এক লাখেরও অধিক অনুসারীসহ আমার জামাত দ্রুত গতিতে উন্নতি করছে” (রিভিউ অফ রিলিজিনস্ – সেপ্টেম্বর, ১৯০২)। 

ডুই প্রকাশ্য দেয়ার এই চ্যালেঞ্জকে এড়িয়ে যায় এবং এর কোন উত্তর দেয় নি। তবে পত্র পত্রিকায় জোড়ালোভাবে লেখা-লেখি শুরু হয়। ডুইয়ের উপর চাপ আসতে লাগলো, সে যেন এর উত্তর দেয়। ১৯০৩ সনের ১৪ই ফেব্রুয়ারী ডুই ঘোষণা দেয়। “আমি খোদার নিকট দোয়া করছি সেদিন যেন দ্রুত নিকটবর্তী হয়, যখন ইসলাম ধরাপৃষ্ঠ হ’তে মিটে যাবে। হে খোদা! তুমি আমার এ দোয়া কবুল কর, হে খোদা তুমি ইসলামকে ধ্বংস কর” (লিভস অফ হিলিং ১৪-২-১৯০৩)।

হযরত ইমাম মাহদী ও প্রতিশ্রুত মসীহ্ ২৩-৮-১৯০৩ সনে আরেকটি বিজ্ঞাপন প্রকাশ করেন তাতে তিনি লিখেন,
“আমরিকার জন্য খোদাতাআলা আমাকে এক নিদর্শন দিয়েছেন, পাদ্রী ডুই সাহেব যদি আমার সাথে মোবাহালাতে অগ্রসর হয়, অথবা প্রত্যক্ষভাবে বা পরোক্ষভাবে আমার মোকাবেলা করে তাহলে দেখতে দেখতে এই ব্যক্তি অত্যধিক যন্ত্রণাদায়ক দুঃখ-কষ্টে নিপতিত হয়ে ইহলীলা ত্যাগ করবে।”

তিনি (আঃ) পাদ্রী ডুইকে পুনরায় চ্যালেঞ্জ প্রদান করে বলেন, “আমার চ্যালেঞ্জের উত্তর দেবার জন্য পাদ্রী ডুই সাহেবকে ৭ মাস সময়ের অবকাশ দেয়া হলো”। অতঃপর হযরত আকদস (আঃ) এ-ও ঘোষণা করলেন, “তোমরা দৃঢ়-বিশ্বাস রাখ যে, শীঘ্রই তার (ডুই) জাইআন শহরে আরেকটি বিপদ অবতীর্ণ হবে।”

হযরত মসীহ্ মাওউদ (আঃ)-এর এসব ঘোষণা পশ্চিমা জগতে ব্যাপকভাবে প্রচারিত হ’তে লাগলো। যে সকল পত্রিকায় এ ব্যাপারে বিস্তারিত সংবাদ পরিবেশন করা হয় তাদের মধ্যে ‘নিউইয়র্ক টাইম’ ‘গ্লাসগো হ্যারল্ড ইন্ট্রাভিশন, শিকাগো ও বোস্টন ডেইলী’ অন্যতম। যা হোক ভক্তবৃন্দের ও পত্র পত্রিকার চাপে ২৭শে ডিসেম্বর, ১৯০৩ সনে ডুই সাহেব তার “লিভস অফ হিলিং” পত্রিকায় ঘোষণা দিল, “তোমরা কি এরূপ ধারণা কর যে, আমি এ ধরনের মশা মাছির আস্ফালনের কোন প্রকার জবাব দিব? তাদের উপর যদি আমি আমার পা রাখি তবে পদদলিত ও নিষ্পেষিত করে দিতে পারি। কিন্তু এখন আমি তাকে সময় দিচ্ছি, সে যেন আমার দৃষ্টির বর্হিভূত অবস্থায় আরো কিছু  দিন বেঁচে থাকতে পারে।

হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) খোদায়ী ফয়সালার অপেক্ষায় থাকলেন। অতঃপর আল্লাহ্‌র নিদর্শন দেখুন, যে মুখ দ্বারা ডুই সাহেব খোদা প্রেরিত প্রতিশ্রুত মসীহ্‌অর বিরুদ্ধে অশ্লীল ভাষা ব্যবহার করেছিল, যে পা দ্বারা মুহাম্মদী মসীহ্ (আঃ)-কে পদদলিত করার ঘোষণা করেছিল ১৯০৫ সনের সেপ্টেম্বর মাসে ‘শেলেটবার নিকেল’ গীর্জা হলে জনাকীর্ণ অধিবেশনের সমাপ্তি ভাষণের সময় হঠাৎ করে তার দু’টি হাত ও দু’টি পা পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয় | ক্রমান্বয়ে তার হাত পা অকেজো হয়ে গেল। অচল হবার পর দুই নিগ্রো ভূত তাকে কাঁধে বহন করে এখানে সেখানে নিয়ে যেত। এমতাবস্থায় সমুদয় কাজ-কর্ম অন্যান্য কর্মকর্তাদের হাতে ন্যস্ত করে সে আরোগ্যের জন্য বিভিন্ন দীপাঞ্চলে অবস্থান করল। কিন্তু আরোগ্যের পরিবর্তে তার …অবস্থার অবনতি এবং সমস্ত শরীর আক্রান্ত হলো। পূর্ণাঙ্গ পক্ষাঘাতের ফলে তার শরীরের স্বাভাবিক গঠন বিকৃত হয়ে বাঁকা গঠনের একটি কীটের আকার ধারণ করল। আল্লাহর প্রেরিত প্রতিশ্রুত মসীহকে যে মশামাছি রূপ কীট সদৃশ্য বলে বিদ্রুপ করেছিল সে স্বয়ং যেন তখন কীট হয়ে গেল।

এখানেই শেষ নয়। ডুই সাহেব তাদের শিষ্যদের সর্বদাই মাদক দ্রব্য সেবন হারাম বলে উপদেশ দিত, অথচ তদন্ত করে তারই খাস কামরাতে ও স্টোর রূপে বহু মদের বোতল ও মদ্যভান্ডার আবিষ্কৃত হলো। তার স্ত্রী ও ছেলে সাক্ষ্য দিল ডুই সাহেব চুপিসারে মদ্যপান করতো।  নারী ঘটিত বিষয়ও প্রকাশ পায়। এসব হঠকারিতা প্রকাশ পাওয়াতে অধিকাংশ শিষ্যই প্রকাশ্যে তাকে বর্জন করলো। এবং জাইঅ্যান সিটি গীর্জাতে ভক্তদের উপস্থিতি শোচনীয়ভাবে ভাটা পড়ে গেল। তার স্ত্রী পুত্র এমনকি তার পিতাও তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যায়।

এখানেই শেষ নয় ৬ই এপ্রিল, ১৯০৬ সনে জাইঅ্যান সিটির গভর্নিং বডির মিটিং এ জানানো হয় যে, পাদ্রী ডুই সাহেবের কর্মতৎপরতা দুর্নীতিতে ভরপুর। জাইঅ্যান ইন্ড্রাষ্টির শেয়ার বিক্রি বাবদ বিশ লাখ ডলার ও মিষ্টি তৈরীর কারখানায় সতরো হাজার ডলার আত্মসাৎ করেছে। সুতরাং এরূপ দুর্নীতি ও প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত করে গভর্নিং বডি ডুই সাহেবকে সর্বাধিনায়ক পদ হতে অপসারণ করে। ডুই সাহেব আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালতও তার বিরুদ্ধে রায় দেয়। আর এভাবে ডুই সাহেব নিঃস্ব, নিঃসঙ্গ ও অসহায় অবস্থায় ৯ই মার্চ, ১৯০৭ সনে মারা যায়। তার এহেন মৃত্যুতে পশ্চিমা গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে এ সংবাদ পরিবেশন করে যে, কাদিয়ানের
মসীহর দাবীদার জিতে গেছে। আর এভাবে কুরআন বর্ণিত আল্লাহর অঙ্গীকার পূর্ণ হয় ঃ “আল্লাহ্ অবধারিত করে রেখেছেন যে, তিনি ও তাঁর প্রেরিত পুরুষ অবশ্যই জয়যুক্ত হবেন”।

মাওলানা সালেহ আহমদ

মুরব্বী সলসিলাহ্

পাক্ষিক আহ্‌মদী – নব পর্যায় ৬৪বর্ষ | ১৪তম সংখ্যা | ৩১শে জানুয়ারী ২০০২ইং | পৃষ্ঠা: ২৯