প্রেস বিজ্ঞপ্তি
০৩-মার্চ, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো বাংলাদেশ লাজনার ছাত্রী সদস্যাবৃন্দ


“একজন মুসলমান হিসেবে, তোমার প্রতিদিন পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত করা উচিত”
– হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, লাজনা ইমাইল্লাহ্‌ (আহমদীয়া মুসলিম নারী অঙ্গ-সংগঠন) বাংলাদেশের ছাত্রী সদস্যাবৃন্দের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর এক ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর লাজনা সদস্যাবৃন্দ ঢাকার দারুত তবলীগ মসজিদ থেকে ভার্চুয়ালভাবে সভায় সংযুক্ত হন।

একটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশনের পর উপস্থিত লাজনা ইমা’ইল্লাহ্‌র সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।
একজন অংশগ্রহণকারী উল্লেখ করেন যে, তিনি প্রাণীবিদ্যায় পড়াশোনা করছেন এবং হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করেন, একজন মুসলমান হিসেবে ধর্মীয় জ্ঞানের চর্চা কীভাবে জাগতিক পড়াশোনাকে সমৃদ্ধ করতে পারে।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“একজন মুসলমান হিসেবে তোমাকে প্রতিদিন কুরআন তিলাওয়াত করতে হবে। পাশাপাশি কুরআনের অর্থও পড়তে হবে। তখন তুমি জানতে পারবে কুরআন থেকে কী পড়ছো এবং এর অর্থ কী। যেহেতু তুমি প্রাণীবিদ্যা পড়ছো সেহেতু তোমার চেষ্টা করা উচিত কুরআনের সেসব আয়াত খুঁজে বের করা যেগুলো বিজ্ঞান, মানুষের অস্তিত্ব ও পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ সম্পর্কিত। তখন তুমি উক্ত আয়াতগুলোর সঙ্গে তোমার পঠিত বিষয়ের সংযোগ স্থাপন করতে পারবে এবং কুরআন থেকে তোমার পঠিত বিষয়ে আরও আলোকিত হতে পারবে। তাই তোমাকে এতে কিছু সময় দিতে হবে। কুরআনের কিছু তফসীরও পড়ে নাও।
অপর এক লাজনা সদস্যা হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞাসা করেন, যদি তিনি হুযূরের নিকট কোনো দিকনির্দেশনা চেয়ে পত্র লিখে থাকেন, কিন্তু, যথাসময়ে উত্তর না পান এবং তাকে সেই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে হয়, সেক্ষেত্রে তার কী করা উচিত।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) তাকে পরামর্শ প্রদান করেন এবং বলেন:
“এক্ষেত্রে তোমার জন্য যেটি উৎকৃষ্ট হয় কিংবা তোমার মন সায় দেয় তা করবে। কোনো নির্দিষ্ট বিষয়ে ভর্তির বিষয়ে তুমি যদি জিজ্ঞাসা করে থাকো যে, ‘আমি এই বিষয়ে ভর্তি হবো নাকি ওই বিষয়ে, অথবা ব্যাচেলর্স বা মাস্টার্সে আমি এই কোর্স নেবো নাকি ঐ কোর্স?’ এবং যদি যথাসময়ে উত্তর না পাও, তাহলে আমার পরামর্শ বা উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে তোমার উচিত হবে নিজেই সিদ্ধান্ত নিয়ে ভর্তি হয়ে যাওয়া। যদি পরবর্তীতে তুমি উত্তর পাও এবং আমার পরামর্শ তোমার গৃহিত সিদ্ধান্ত থেকে ভিন্ন হয়ে থাকে, তাহলে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। কেবল আমাকে লিখে জানাবে যে, যেহেতু যথাসময়ে আমি পত্র পাই নি এবং সময়ের স্বল্পতা ছিল, তাই আমি ইতোমধ্যে একটি বিষয় বেছে নিয়েছি। এভাবে আমাকে জানিয়ে দাও তুমি কোন বিষয়ে পড়াশোনা করছো। এতে ঘাবড়ানোর কোনো প্রয়োজন নেই।”

একজন অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন, যখন একজন এমন বিষয় পড়াশোনার জন্য বেছে নেয় যা তাকে সফল ক্যারিয়ারের দিকে নিয়ে যেতে পারে, কিন্তু এর দ্বারা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের কোনো সেবা করা সম্ভব হবে না। এমন পরিস্থিতিতে তার কী করা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন যে, পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনার পর তার শিক্ষক হওয়ার বাসনা রয়েছে।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“তুমি যদি শিক্ষক হও তাহলে তা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের জন্য বেশ হিতকর (সাব্যস্ত হবে)। তুমি যদি একজন সত্যিকার মুসলমান নারীর পরিচয় বহন করো তাহলে তোমার সহকর্মীবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা জানবে যে, তিনি ইসলামী শিক্ষার একজন সত্যিকার ধারক এবং একই সাথে একজন ভালো শিক্ষিকা। তার উন্নত নৈতিক গুণাবলি রয়েছে, ধর্মীয় জ্ঞান রয়েছে এবং সময়মতো তিনি নামায আদায় করে থাকেন। এটিও মানুষকে ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা তুলে ধরার, ইসলামকে ও আহমদীয়াতকে জানানোর দরজা খুলে দেয়। সুতরাং, প্রত্যেক বিষয়ই আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের জন্য দরকারী। তাই এটি ভাববে না, পদার্থবিজ্ঞানে পড়ার কোনো মূল্য নেই। ব্যক্তির দ্বারা পড়াশোনার বিষয়টি কল্যাণকর হয়ে ওঠে কিংবা উঠতে ব্যর্থ হয়।”
অপর এক অংশগ্রহণকারী উল্লেখ করেন যে, ডাক্তারের আনুষ্ঠানিকতার কারণে তার গর্ভবতী বোন নিজের সন্তান হারান। তিনি হুযূর আকদাসকে প্রশ্ন করেন, একজন ব্যক্তি যিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান চর্চা করছেন তার আনুষ্ঠানিকতাকে নাকি নৈতিকতাকে প্রাধান্য দেওয়া উচিত।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আনুষ্ঠানিকতা পরবর্তীতেও সম্পন্ন করা যায়। প্রথমে ব্যক্তির জীবন বাঁচানোকে অগ্রাধিকার প্রদান করতে হবে – এটি ডাক্তারদের নীতি ও কর্তব্য। একজন ডাক্তারকে উন্নত নৈতিক গুণাবলি প্রদর্শন করতে হবে। নৈতিকতা এবং পেশাদার নীতিবোধ সর্বোপ্রথম অগ্রগণ্য। উভয়ই হাসপাতালে ভর্তিতে সময়ক্ষেপণের পরিবর্তে রোগীকে প্রাধান্য দান করতে বলে এবং এ ক্ষেত্রে আনুষ্ঠানিকতার প্রতি অগ্রাধিকার প্রদান করাটা ভুল। যেসব ডাক্তাররা আনুষ্ঠানিকতা নিয়ে পড়ে থাকে, রোগীকে তাৎক্ষণিক সেবা প্রদান করে না, সহানুভূতি প্রদর্শন করে না তারা ডাক্তার নয়; বরং, কসাইয়ের মতো। একজন ডাক্তারের দাপ্তরিক আনুষ্ঠানিকতার পরিবর্তে সর্বপ্রথম অগ্রাধিকার প্রদান করা উচিত মানুষের জীবনকে।”