এমটিএ – এক মহান ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা – এম.টি.এ আন্তর্জাতিক সম্মেলন – ২০২১

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস

২৭-জুন, ২০২১

এমটিএ – এক মহান ভবিষ্যদ্বাণীর পূর্ণতা
এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ২০২১ এর সমাপনী অধীবেশনে প্রদত্ত হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আল-খামেস এর ভাষণের বঙ্গানুবাদ

রবিবার, ২৭ জুন ২০২১, এমটিএ (মুসলিম টেলিভিশন আহমদীয়া) ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্সের সমাপনী অধীবেশনে মূল ভাষণ প্রদান করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)। হুযূর আকদাস যুক্তরাজ্যের টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে তার নিজস্ব কার্যালয় থেকে এই সমাপনী অধীবেশনের সভাপতিত্ব করেন আর এতে অংশগ্রহণকারীরা লন্ডনের বাইতুল ফুতূহ মসজিদ এবং বিশ্বজুড়ে বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত এমটিএ ইন্টারন্যাশনালের অন্যান্য কতিপয় স্টুডিও থেকে ভার্চুয়ালি যোগদান করেন। এই কনফারেন্সে ত্রিশটি দেশের ছয় শতাধিক ব্যক্তি ভার্চুয়ালি অংশ নেন। এতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির জন্য প্রশিক্ষণ এবং ভবিষ্যৎ লক্ষ্য নির্ধারণ অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই অনুষ্ঠানে হুযূর আকদাস প্রদত্ত ভাষণের অফিসিয়াল প্রতিলিপির বঙ্গানুবাদ নিম্নে পেশ করা হলো।
তাশাহুদ, তাআব্বুয ও তাসমীয়ার পর আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
আলহামদুলিল্লাহ্ [সমস্ত প্রশংসা আল্লাহ্‌র], এই সপ্তাহান্তে এমটিএ তাদের ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স/আন্তর্জাতিক সম্মেলন-এর আয়োজন করতে পেরেছে এবং আমি আশা করি ও দোয়া করি যে, এতে অনুষ্ঠিত বিভিন্ন প্রোগ্রাম এবং প্রশিক্ষণ থেকে আপনারা সকলেই উপকৃত হয়ে থাকবেন।
এই যুগে, হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-কে আল্লাহ্‌ তাআলা পাঠিয়েছেন পবিত্র কুরআন এবং মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সত্য শিক্ষাকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য এবং এই মহান শিক্ষাকে বিশ্বের সকল প্রান্তে পৌঁছে দেওয়ার জন্য। এদিক থেকে হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.) স্বয়ং বলেছেন যে, মহানবী (সা.)-এর যুগটি ছিল হেদায়াতের পরিপূর্ণতার (তকমীলে হেদায়াত) যুগ, আর পূর্বের যুগে অনুপস্থিত আধুনিক প্রযুক্তি ও সুযোগ-সুবিধার সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে হেদায়াতের পূর্ণ প্রচার (তকমীলে ইশাআতে হেদায়াত) তাঁর [মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর] যুগের জন্য নির্ধারিত ছিল। সংক্ষেপে বলা যায় যে, মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর মহান লক্ষ্য ছিল মহানবী (সা.)-এর শিক্ষাকে সকল দেশের সকল মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া, এবং এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণাদি আল্লাহ্‌ তাআলা স্বয়ং প্রদান করেছেন।
নিজ জীবদ্দশায়, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) ইসলামের শিক্ষা প্রচারের জন্য এবং বিরুদ্ধবাদীদের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে উত্থাপিত অগণিত মিথ্যা অভিযোগ ও আপত্তির উত্তর প্রদানের জন্য অনেক বই লিখেছেন। তাঁর প্রতিটি বই ইসলামের আদি-অকৃত্রিম এবং চমৎকার শিক্ষাকে সময়ের বেড়াজাল পেরিয়ে আলোকোজ্জ্বলভাবে পরিবেশন করেছে। মসীহ্‌ মওউদ (আ.) বিশ্ববাসীকে অবহিত করেছেন যে, এখন কেবলমাত্র ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর শিক্ষার অনুসরণের মাধ্যমে মানবজাতির সাথে তার স্রষ্টার এক প্রীতিপূর্ণ ও পবিত্র বন্ধন সৃষ্টি করা সম্ভব। কেবলমাত্র ইসলামের মাধ্যমে মানবজাতির পক্ষে খোদা তাআলার অধিকার সত্যিকার অর্থে পূরণ করা সম্ভব।
অনুরূপভাবে, তিনি শিখিয়েছেন যে কেবলমাত্র ইসলামের শিক্ষার ব্যবহারিক প্রয়োগের মাধ্যমেই একজন বিশ্বাসী আশেপাশের অন্যান্য মানুষের অধিকার পরিপূর্ণভাবে আদায় করতে পারেন। এটি ছিল ইসলামের এই সকল পরিপূর্ণ শিক্ষা যা হযরত মসীহ্ মওউদ (আ.) তাঁর বই-পুস্তক, বক্তৃতা ও অন্যান্য আলোচনায় নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করেছেন। এক শতাব্দীরও বেশি কাল পূর্বে, তাঁর যুগের পরিস্থিতি অনুসারে, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) তবলীগের (প্রচারের) এক অসাধারণ কর্ম-পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিলেন এবং ইসলামের বাণী প্রচারের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমকে কাজে লাগিয়েছিলেন।
যেহেতু ততদিনে মুদ্রণ-মাধ্যম প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এবং তথ্য আদান-প্রদানের ও কারো ধর্ম-বিশ্বাস অন্যের নিকট পৌঁছানোর একটি কার্যকর মাধ্যম ছিল, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) নিয়মিত প্রবন্ধসমূহ ও বিভিন্ন বিবৃতি সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন আকারে প্রকাশ করতেন, যেন ইসলামের বাণী এবং প্রকৃত শিক্ষা দূর-দূরান্তে বিস্তার লাভ করতে পারে। উপরন্তু, ইসলামের প্রচারের স্বার্থে, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) তাঁর অনুসারীদের এই নির্দেশনা প্রদান করেছিলেন যে, তারা যেন তাদের ধর্ম-বিশ্বাস সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন এবং এরপর এর প্রচার এবং প্রসারের উদ্দেশ্যে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেন। নিশ্চিতভাবে, নিজের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) ইসলামের শিক্ষাকে কেবল তার নিজ দেশে নয়, বরং এর সীমানা পেরিয়ে সকল মহাদেশ ছড়িয়ে দেওয়ার তাঁর ঐশী দায়িত্ব পালনের জন্য চেষ্টা করে গেছেন।
নিশ্চিতভাবে ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) এর বাণী বিভিন্ন প্রকারের গণমাধ্যমের দ্বারা তাঁর জীবদ্দশাতেই যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ এবং যুক্তরাজ্যে পৌঁছে যায়। উদাহরণস্বরূপ, ইসলামের বিরুদ্ধবাদীদের উদ্দেশ্যে তিনি যে-সকল উন্মুক্ত চ্যালেঞ্জ ঘোষণা করেছিলেন সেগুলো সম্পর্কে পাশ্চাত্য জগতের প্রসিদ্ধ সংবাদপত্রগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ সকল ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ এ মুহূর্তে প্রদান করা আবশ্যক নয়, কিন্তু এটুকু বলাই যথেষ্ট যে, এটি সুস্পষ্ট যে, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) নিয়মিতভাবে মুদ্রণ মাধ্যমকে ইসলামের সেবা এবং এর শিক্ষাকে এক বিশাল জনগোষ্ঠীর কাছে পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে ব্যবহার করেছেন।
অতঃপর, এ পৃথিবী হতে তাঁর তিরোধানের পর, আল্লাহ্‌ তাআলা খিলাফতে আহমদীয়া প্রতিষ্ঠা করলেন। একেবারে শুরু থেকেই মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর মিশনকে জারি রাখার জন্য এবং ইসলামের শিক্ষা যেন বিশ্বের সকল প্রান্তে পৌঁছে যায় তা নিশ্চিত করার জন্য জোর প্রয়াস গ্রহণ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আউয়াল (রা.)-এর যুগে, (আহমদীয়া মুসলিম) জামা’তের একজন মুবাল্লেগ (ধর্মপ্রচারক) যুক্তরাজ্যে প্রেরণ করা হয় যেন প্রকৃত ইসলামের শিক্ষা এবং বিশ্বাসের সাথে ব্রিটিশ জনগণকে পরিচিত করানো যায়। এরপর, দ্বিতীয় খলীফার যুগে, তবলীগী (ধর্ম প্রচারের) প্রয়াসে দ্রুত গতি সঞ্চারিত হয় এবং জামা’তের বাণী দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়ে এবং অনেকগুলো ইউরোপীয় ও আফ্রিকান দেশে, এমনকি উত্তর আমেরিকা এবং আরো অন্যান্য দেশে ও দ্বীপসমূহে, পৌঁছে যায়।

জামা’তের ক্রমাগত উন্নতি এবং বিস্তৃতির সাথে সাথে বড় বড় পদক্ষেপ গৃহীত হয়। তথাপি, আমাদের সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে, দ্বিতীয় খিলাফতের সূচনালগ্নের দিনগুলোতে আহমদীয়াতের বাণী বিশ্বের সকল প্রান্তে পৌঁছানো সম্ভব হয় নি। তথাপি, জামা’তের যা-ই সীমিত সামর্থ্য ছিল আল্লাহ্‌ তাআলা সেটাকেই বহুগুণে আশিসমণ্ডিত করেছেন। সেই প্রাথমিক যুগেও, ইসলামের শিক্ষার প্রচার ও প্রসারের সবচেয়ে কার্যকর মাধ্যম ছিল মুদ্রণ মাধ্যম এবং সাহিত্যের প্রকাশনা।
এরপর ১৯৩৮ সালে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়, যখন প্রথমবারের মতো একজন খলীফাতুল মসীহ্‌ লাউড স্পিকার ব্যবহার করে কথা বলেন এবং সরাসরি এক বৃহৎ জনসমাগমের নিকট তাঁর কথা পৌঁছায়। এই ঐতিহাসিক সন্ধিক্ষণে, খলীফাতুল মসীহ্ সানী (রা.) কাদিয়ানের মসজিদে আকসা-তে একটি ভাষণ প্রদান করেন। সেই সময়ে তাঁর কণ্ঠস্বরকে লাউড স্পিকারের মাধ্যমে জোরালো করে দূর-দূরান্তে পৌঁছানোর বিষয়টিই উন্নতির এক বৈপ্লবিক মাধ্যম এবং ইসলামের শিক্ষা প্রচারের এক আকর্ষণীয় পদ্ধতি বলে গণ্য করা হয়েছিল। কিন্তু, সেই সময়ে, যখন মানুষ লাউড স্পিকার নিয়ে আনন্দিত ছিল, তখন খলীফাতুল মসীহ্ সানী (রা.) ভবিষ্যদ্বাণী করে ঘোষণা করেন, সেই সময় নিঃসন্দেহে সন্নিকটে যখন যুগ-খলীফা কাদিয়ানে একটি বক্তৃতা করবেন, আর তাঁর কণ্ঠস্বর প্রত্যেক দেশে এবং বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সাথে সাথে শোনা যাবে।
এর পরবর্তী বছরগুলোতে সেই আশিসমণ্ডিত ভবিষ্যতের কিছু ঝলক আমাদের সামনে আসে, যখন মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর বাণী এবং যুগ-খলীফার কণ্ঠস্বর আরো দূর-দূরান্তে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। উদাহরণস্বরূপ, জামা’তের ধর্মপ্রচারকগণকে এবং যুগ-খলীফার মনোনীত অন্যান্য প্রতিনিধিবৃন্দকে বিভিন্ন দেশে পাঠানো হয় যেখানে তারা রেডিও ব্যবহার করে ইসলামের বাণী প্রচারে সমর্থ হন। আমাদের ধর্মপ্রচারকগণ বিভিন্ন সরকারি ও বাণিজ্যিক রেডিও স্টেশনে সময়ে সময়ে কিছু সুযোগ লাভ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। সেই সময়ে, এমন প্রচেষ্টাসমূহ আহমদী মুসলমানদের মাঝে অন্যের নিকট ইসলামের বাণী পৌঁছানোর জন্য এক অনন্য মাধ্যম হিসেবে গর্ব ও আনন্দ উদযাপনের এক কারণ বলে বিবেচিত হতো। আমার সেই সময়ের কথা স্মরণ আছে যখন মুবাল্লেগগণ তাদের রেডিও অনুষ্ঠানের রিপোর্ট মরকযে (কেন্দ্রে) প্রেরণ করতেন তখন তা মহা উৎসাহে আল-ফযলসহ জামা’তের পত্রিকাগুলোতে প্রকাশ করা হতো, এবং এর ওপর বিশেষ জোর দেয়া হতো।
এখন আমরা যদি এক লাফে বর্তমান সময়ে চলে আসি, আমরা দেখি কীভাবে আল্লাহ্‌ তাআলার ফযলে, এখন পরিস্থিতি আর এমন নয় যে আমরা মাঝে-মধ্যে রেডিওতে সময়ের স্লট পাওয়ার জন্য অন্যদের উপর নির্ভরশীল; বরং এখন, আফ্রিকার কিছু দেশে এবং এখানে যুক্তরাজ্যে আমরা আমাদের নিজস্ব রেডিও স্টেশনের এবং চ্যানেলের মাধ্যমে আহমদীয়াতের বাণী প্রচার করতে সক্ষম। অবশ্য আমরা এখন আর রেডিওতে সীমাবদ্ধ নই, বরং আল্লাহ্‌ তাআলার অসীম অনুগ্রহে আমরা এখন টেলিভিশনের মাধ্যমে ইসলামের বাণী প্রচার করতে সক্ষম হচ্ছি।
প্রথম যখন টিভির সূচনা হয় তখন এটি অত্যন্ত সীমিত একটি মাধ্যম ছিল যেখানে সংবাদ এবং তথ্য একটি দেশের সীমানার মধ্যে স্থানীয় পর্যায়ে টিভি চ্যানেলে সম্প্রচার করা হতো। কিন্তু, যখন আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের জামা’তকে তার নিজস্ব টিভি চ্যানেল প্রতিষ্ঠার প্রেরণা, সামর্থ্য ও যোগ্যতা দান করলেন, তিনি এর পাশাপাশি স্যাটেলাইট সম্প্রচার প্রযুক্তির উদ্ভবের মাধ্যমে সেই সুযোগও সৃষ্টি করে দিলেন যেন আমাদের চ্যানেল ইসলামের অনুপম শিক্ষাকে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে সম্প্রচার করতে পারে। প্রশ্নাতীতভাবে এটি মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর নিকট আল্লাহ্‌ তাআলার এক মহান প্রতিশ্রুতি ও ইলহামের পরিপূর্ণতা যে,
“আমি তোমার প্রচারকে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছে দিবো।”
আলহামদুলিল্লাহ্ (সকল প্রশংসা আল্লাহ্‌র) যে, কেবল আল্লাহ্‌রই অনুগ্রহে, এবং এই ইলহাম এবং ভবিষ্যদ্বাণীর পরিপূর্ণতায় আজ বিশ্বজুড়ে ১৯টি এমটিএ স্টুডিও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তারা এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল এর কেন্দ্রীয় ব্যবস্থাপনার তদারকিতে এবং খলীফাতুল মসীহ্‌-এর দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ অনুযায়ী কাজ করছেন। যেমনটি আপনারা সকলেই অবহিত আছেন, মূল আন্তর্জাতিক স্টুডিও এখানে যুক্তরাজ্যে; যেখান থেকে এমটিএ-র অধিকাংশ প্রোগ্রাম সম্প্রচারিত হয়ে থাকে।
তবে, এর অতিরিক্ত, আমরা কাদিয়ান, ঘানা, গাম্বিয়া, তানজানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জার্মানি, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, কাবাবীর, মরিশাস, বাংলাদেশ, অস্ট্রেলিয়া এবং উগান্ডায় পূর্ণাঙ্গ স্টুডিও স্থাপন করেছি। আইনগত বাধানিষেধের কারণে বর্তমানে আমাদের এমটিএ পাকিস্তান স্টুডিও তুলনামূলকভাবে কম সক্রিয়। কিন্তু, একদিকে যেখানে এ সকল অন্যায় এবং নিষ্ঠুর নিষেধাজ্ঞা জারি করে তারা আমাদের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে, অপরপক্ষে আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদেরকে বিশ্বজুড়ে অনেকগুলো স্টুডিও প্রদান করেছেন; যার প্রত্যেকটি নতুন নতুন এবং উন্নত মানের অনুষ্ঠানাদি প্রস্তুত করে চলেছে। এ সকল পূর্ণাঙ্গ স্টুডিও ছাড়াও সিয়েরা লিওন, নাইজেরিয়া এবং আরো বেশকিছু জামা’তে উন্নত মানের প্রোডাকশন যন্ত্রপাতি নিয়ে সজ্জিত এমটিএ টিম গঠন করা হয়েছে। তারাও ক্ষুদ্রতর পরিসরে এমটিএ-র জন্য বিভিন্ন প্রতিবেদন প্রস্তুত করে চলেছে।
আল্লাহ্‌র ফযলে, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লাইভ প্রোগ্রাম বর্তমানে নিয়মিত কাদিয়ান এবং ঘানার আব্দুল ওয়াহাব স্টুডিও থেকে নিয়মিত সম্প্রচারিত হচ্ছে। অনুরূপভাবে, এমটিএ জার্মানি স্টুডিও জার্মান ভাষায় কিছু নতুন অনুষ্ঠানের সূচনা করেছে। বস্তুত, আমাদের ইংরেজি এবং উর্দু অনুষ্ঠানাদি ছাড়াও, আরো বিভিন্ন ভাষায় অনুষ্ঠানাদি প্রস্তুত করা হচ্ছে; যেমন, ফরাসি, সোয়াহিলি, তুর্কি প্রভৃতি। সুতরাং, আল্লাহ্‌র ফযলে, প্রকৃত ইসলামের বাণী এমটিএ-র মাধ্যমে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছাচ্ছে।
যদি আমরা আমাদের আর্থিক এবং মানবসম্পদ সংক্রান্ত সামর্থের বিশ্লেষণ করি তবে বিশুদ্ধ পার্থিব সমীকরণে, বাস্তবতা এই যে, আমাদের পক্ষে কখনই এতকিছু আমাদের নিজেদের শক্তি-সামর্থের দ্বারা অর্জন করা সম্ভব ছিল না। প্রকৃতপক্ষে, যা-ই অর্জিত হয়েছে তা ঐশী প্রতিশ্রুতি ও ইলহাম:
“আমি তোমার প্রচারকে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছে দিবো”
— এরই পূর্ণতার ফলাফল।

প্রতিটি দিন আমরা আমাদের নিজেদের চোখে আল্লাহ্‌ তাআলার সাহায্য ও অনুগ্রহের মহান বিকাশ দেখতে পাচ্ছি। যেখানে প্রাথমিকভাবে কেবলমাত্র একটি এমটিএ চ্যানেল ছিল, এখন আল্লাহ্‌ তাআলা এমটিএ-কে বেশ কয়েকটি চ্যানেল চালু করার সক্ষমতা দান করেছেন যেগুলো বিভিন্ন ভাষায় সারা বিশ্বজুড়ে সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। আমাদের রয়েছে এমটিএ-১ ওয়ার্ল্ড, যা এমটিএ-র মূল চ্যানেল এবং যা বিশ্বজুড়ে দেখা হয়।
এছাড়াও, রয়েছে এমটিএ-২ ইউরোপ, এমটিএ-৩ আল-আরাবিয়া, এমটিএ-৪ আফ্রিকা, এমটিএ-৫ আফ্রিকা, এমটিএ-৬ এশিয়া, এমটিএ-৭ এশিয়া এবং এমটিএ-৮ উত্তর আমেরিকা। এই এমটিএ চ্যানেলগুলো স্মার্ট টিভি, মোবাইল ডিভাইস, ডেস্কটপ কম্পিউটার এবং এমটিএ-র স্ট্রীমিং প্লাটফর্ম এবং অ্যাপের মাধ্যমে দেখা যায়। অনলাইন স্ট্রীমিং-এর মাধ্যমে, যে-কোন ব্যক্তি, বিশ্বের যে-কোন অংশ থেকে, এমটিএ-র যে চ্যানেল তিনি দেখতে আগ্রহী হন না কেন, নিজের পছন্দনীয় ভাষায় তা দেখতে পারেন। এছাড়াও, সুরিনাম ও গাম্বিয়ার ন্যায় কয়েকটি দেশের এমটিএ বর্তমানে টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশনেও সম্প্রচারিত হচ্ছে। সম্প্রতি এমটিএ ঘানার সম্প্রচারও টেরেস্ট্রিয়াল টেলিভিশনে শুরু হয়েছে। এ দেশগুলোতে, জাতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর পাশাপাশি কোন প্রকারের স্যাটেলাইট ডিশের প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই এমটিএ সম্প্রচারিত হচ্ছে আর এ রকম টেরেস্ট্রিয়াল সম্প্রচার অন্যান্য দেশেও বিস্তৃত করার জন্য প্রচেষ্টা চলমান রয়েছে।
(অনুষ্ঠানমালার) আধেয় এর দিক থেকে, আল্লাহ্‌র ফযলে, এমটিএ-তে সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানমালা বিশ্বের মানুষকে ইসলামের প্রকৃত এবং সুন্দর শিক্ষা সম্পর্কে অবহিত এবং আলোকিত করে চলেছে। উদাহরণস্বরূপ, ধর্মীয়, শিক্ষামূলক এবং অন্যান্য ধরনের আকর্ষণীয় তথ্যচিত্র বর্তমানে এমটিএ-তে প্রস্তুত এবং সম্প্রচার করা হচ্ছে। তদুপরি, শিশুদের শিক্ষা ও পথ-প্রদর্শনের লক্ষ্যকে সামনে রেখে আরও অধিক আধেয় প্রস্তুত করা হচ্ছে। উপরন্তু, বিভিন্ন ধরনের আলোচনা অনুষ্ঠান রয়েছে, যেগুলোর লক্ষ্য দর্শকদেরকে ধর্ম, এবং এর পাশাপাশি সমসাময়িক বিষয়াবলী সম্পর্কে অবহিত করা। এমন অনুষ্ঠানাদি রয়েছে যেখানে হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর পুস্তকাবলী পাঠ করে এর ব্যাখ্যা প্রদান করা হয়। দিন জুড়ে বিভিন্ন সময়ে পবিত্র কুরআন তেলাওয়াত সম্প্রচার করা হয়। আরো অনেক অনুষ্ঠান রয়েছে, যেগুলো জামা’তের সদস্যদের নৈতিক, আধ্যাত্মিক এবং ধর্মীয় প্রশিক্ষণের চাহিদা পূরণ করছে এবং অত্যন্ত কল্যাণকর সাব্যস্ত হচ্ছে। এমটিএ-র অনুষ্ঠানমালা জামা’তের বাইরের মানুষের কাছেও অতি উত্তমভাবে ইসলামের শিক্ষাকে পরিচিত করছে। সুতরাং, একদিকে যেখানে এমটিএ জামা’তের সদস্যদের তরবিয়তের (নৈতিক প্রশিক্ষণ) স্থায়ী মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে, অপরপক্ষে এটি তবলীগের (প্রচার) জন্য একটি চমৎকার মঞ্চ হিসেবে কাজ করছে।
উপরন্তু, গত ১৮ মাসের অধিক সময় জুড়ে, যখন বিশ্বের দেশগুলো কোভিড-১৯ বিশ্বজনীন মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই করেছে, আমরা এমটিএ এর সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকার অসাধারণ কল্যাণ পূর্বাপেক্ষা অনেক বেশি প্রত্যক্ষ করেছি। এ সময়কালে, আমি কোন শহরে যেতে পারি নি, আর আহমদীগণও এসে আমার সঙ্গে সাক্ষাত করতে পারেন নি। তবু এমটিএর কল্যাণে, খলীফাতুল মসীহের সাথে জামা’তের সদস্যদের সরাসরি সম্পর্ক এবং যোগাযোগ কেবল যে অবিচ্ছিন্ন ছিল তাই নয়; বরং, সামনে অগ্রসর হয়ে নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ, সরাসরি সারা পৃথিবীতে সম্প্রচারিত সাপ্তাহিক জুমুআর খুতবা ছাড়াও মুলাকাতের (সাক্ষাত) একটি নতুন ধারা — ভার্চুয়াল মুলাকাত — এই সময়কালে আত্মপ্রকাশ করেছে।
এসব মিথস্ক্রিয়ামূলক মুলাকাতের মধ্য দিয়ে আমি সারা বিশ্বের জামা’তের সদস্যদের সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারছি এবং পদাধিকারীদের সাথে সভা করতে পারছি। একদিন আমি অস্ট্রেলিয়ার আহমদীদের সাথে সাক্ষাত করছি, আর পরের দিন ইন্দোনেশিয়া অথবা যুক্তরাষ্ট্র, অথবা কাদিয়ান, ইউরোপ, আফ্রিকা, কানাডা এবং পৃথিবীর অন্যান্য অংশের সাথে। এইখানে ইসলামাবাদে বসে যুগ-খলীফার মুখনিঃসৃত শব্দাবলী এবং কণ্ঠস্বর পৃথিবীর প্রতিটি প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছে। আমরা যতই এসব অনুগ্রহ অবলোকন করি এবং এই দ্রুত অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করি, হযরত মুসলেহ্‌ মওউদ (রা.)-এর সেই ভবিষ্যদ্বাণী স্মরণ করা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না, যার উল্লেখ আমি আগেও করেছি, যেখানে তিনি বলেছিলেন যে, এমন একসময় আসছে যখন যুগ-খলীফার কণ্ঠস্বর সরাসরি সারা পৃথিবীতে শোনা যাবে।
যেভাবে আমি উল্লেখ করেছি, প্রতি সপ্তাহে, যুগ-খলীফার জুমুআর খুতবা সরাসরি বিশ্বের সকল প্রান্তে সম্প্রচারিত হয়। এর অতিরিক্ত, যুগ-খলীফার আরো অনেক কর্মসূচি বা অনুষ্ঠান এমটিএতে সম্প্রচারিত হয়। উদাহরণস্বরূপ, এমটিএ নিয়মিত একটি অনুষ্ঠান প্রস্তুত করছে যেখানে বিভিন্ন ভার্চুয়াল মুলাকাত থেকে তবলীগ (প্রচার) এবং তরবিয়ত (চরিত্র গঠন)-এর দৃষ্টিকোণ থেকে নির্বাচিত বিষয়সমূহ পরিবেশন করা হয়। আল্লাহ্‌র ফযলে এটি দর্শকদের জন্য অত্যন্ত কল্যাণকর সাব্যস্ত হচ্ছে।
অনেক ব্যক্তি তাদের প্রতিক্রিয়া পাঠান যে, মুলাকাতগুলো দেখে তাদের ঈমান এবং খিলাফতের সাথে তাদের বন্ধন আরো সুদৃঢ় হয়েছে; অথবা, তারা নতুন কিছু বিষয় শিখতে পেরেছেন; যা তাদের নৈতিক ও আধ্যাত্মিক উন্নতিতে সহায়ক হবে। অন্যরা লেখেন যে, তারা এসব অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে জামা’তের প্রশাসনিক ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আবার কেউ লেখেন যে, তাদের মনে দীর্ঘদিন ধরে পুষে রাখা প্রশ্নের উত্তর মুলাকাতগুলোতে পাওয়া গেছে।

মানুষ আরো লেখে যে, ধর্মীয় ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে যুগ-খলীফার দৃষ্টিভঙ্গি এবং অভিমত সম্পর্কে তারা এর মাধ্যমে আরো ভালোভাবে অনুধাবন করতে সমর্থ হয়েছেন। অনেকে এমনও বর্ণনা করেন যে, এই অনুষ্ঠানগুলো কীভাবে তাদেরকে নিজেদের ব্যক্তিগত সংশোধন এবং উন্নতির জন্য উদ্বুদ্ধ করেছে এবং জামা’তের সেবায় আরো এগিয়ে আসতে এবং জামা’তের ঐক্য যেন সর্বদা শক্তিশালী হতে থাকে তা নিশ্চিত করতে তাদের ভূমিকা পালন করতে উৎসাহিত করেছে।
এর ফলস্বরূপ, আধ্যাত্মিক এবং প্রশাসনিক, উভয় আঙ্গিক থেকে, যুগ-খলীফার কণ্ঠস্বরকে শক্তিশালী করতে এবং তা দূর-দূরান্তে পৌঁছে দিতে এমটিএ এক মহান ভূমিকা পালন করছে। এটি দূরত্ব ঘোচাচ্ছে, বাধা দূরিভূত করছে এবং সর্বোপরি এটা নিশ্চিত করছে যে, হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.) এর জামা’ত যেন খিলাফতের হাতে একতাবদ্ধ থাকে এবং বিশ্বজুড়ে আহমদীগণ যেন হুবহু একই ধর্মীয় শিক্ষা ও বিশ্বাসের অনুসরণ করে চলে। বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে — এশিয়া থেকে ইউরোপ, আফ্রিকা থেকে দুই আমেরিকা মহাদেশে, দূরপ্রাচ্য থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দ্বীপসমূহে, পূর্ব থেকে পশ্চিমে, উত্তর থেকে দক্ষিণে — মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর শিক্ষা এবং যুগ-খলীফার দিকনির্দেশনা এমটিএ-র মাধ্যমে সকল দেশ ও জাতির মানুষের নিকট পৌঁছাচ্ছে।
একই সাথে, সকল আহমদীর তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা উচিত যারা এমটিএ-তে সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে স্থায়ী কর্মী এবং কর্মকর্তা রয়েছেন যারা অসাধারণ আত্ম-নিবেদন ও আন্তরিকতার সাথে সেবা করে চলেছেন। তাদেরকে যে ভাতা বা বেতন প্রদান করা হয়, তা তারা পার্থিব কোন পরিমণ্ডলে কাজ করলে যা উপার্জন করতেন তার তুলনায় অতি নগণ্য। উপরন্তু, বিশ্বজুড়ে আমাদের বিভিন্ন স্টুডিওতে, শত শত এমনকি হাজার হাজার স্বেচ্ছাসেবক রয়েছেন, যারা বেতনভুক কর্মচারী না হয়েও নিরলসভাবে অত্যন্ত আত্মনিবেদনের সাথে কাজ করে চলেছেন।
তারা সময়, শ্রম এবং দক্ষতা নিয়ে যে অবদান রাখছেন, তাতে এ কথা বললে কোন অত্যুক্তি হবে না যে, প্রতিবছর তাদের কর্ম-প্রয়াসের মধ্য দিয়ে তারা জামা’তের কয়েক মিলিয়ন পাউন্ড সাশ্রয় করছেন।
এমটিএ চালাতে বার্ষিক প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লক্ষ পাউন্ড বা কখনো তার চেয়েও কিছু বেশি খরচ হয়, আর এর বড় অংশ খরচ হয় উপগ্রহের পিছনে, এবং অন্যান্য দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহের পিছনে। একইসাথে, আমরা সমপরিমাণ অর্থ আমাদের স্বেচ্ছাসেবকদের প্রয়াস এবং সেবার মাধ্যমে সাশ্রয় করে থাকি। আমার স্মরণ আছে, একবার যুক্তরাষ্ট্রে একটি অনুষ্ঠানে, আমি একটি স্টেটের লেফটেন্যান্ট গভর্নরের সাথে বসেছিলাম এবং তখন এমটিএ-র বিষয়ে আলোচনা শুরু হয়। আমি তাকে অবহিত করেছিলাম যে, এমটিএ একটি ২৪-ঘণ্টার ধর্মীয় চ্যানেল, যা সারা বিশ্বে সম্প্রচারিত হয় এবং এটি অন্যান্য চ্যানেল থেকে ভিন্ন এইদিক থেকে যে, এটি কোন রাষ্ট্রীয় তহবিলও পায় না আবার বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোনো বাণিজ্যিক তহবিলও লাভ করে না।
এটি শুনে, লেফটেন্যান্ট গভর্নর দৃশ্যত হতচকিত ও বিস্মিত হয়েছিলেন। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেন, বিজ্ঞাপন থেকে কোন প্রকার আয় ছাড়া কীভাবে আমাদের পক্ষে একটি বিশ্বজনীন ২৪ ঘণ্টার একাধিক চ্যানেল-বিশিষ্ট টেলিভিশন সেন্টার পরিচালনা করা সম্ভব। নিশ্চয়ই, বস্তুবাদী দুনিয়াবী ও মানুষের জন্য এমটিএ কীভাবে কোন প্রকার বাণিজ্যিকীকরণ ছাড়া একটি বিশ্বজনীন চ্যানেল হিসেবে কেবল টিকে থাকা নয়, বরং উত্তরোত্তর উন্নতির পথে অগ্রসর হতে পারে তা কল্পনা করা নিঃসন্দেহে অসম্ভব। তবুও, তারা অনুধাবন করে না যে, এমটিএ হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.)-এর কাছে প্রদত্ত আল্লাহ্‌ তাআলার মহান প্রতিশ্রুতি: “আমি তোমার প্রচারকে পৃথিবীর প্রান্তে প্রান্তে পৌঁছে দিবো” — এরই পরিপূরণস্থল।
নিঃসন্দেহে, আল্লাহ্‌ তাআলাই সেই সত্তা যিনি জামা’তের সদস্যদের হৃদয়ে এমন আবেগ ও প্রেরণা প্রোথিত করে দিয়েছেন; যার কারণে তারা এমটিএ পরিচালনা এবং এর ক্রমাগত উন্নতিতে ভূমিকা রাখার জন্যে তাদের দিন-রাত কুরবানী করে চলেছে। সুতরাং, আমি পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, এমটিএ-র স্থায়ী কর্মীরা এবং এর প্রত্যেক স্বেচ্ছাসেবক, তারা যেখানেই কাজ করুন না কেন, তারা আমাদের আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং দোয়া লাভের অধিকার রাখেন। তাদের কাছে যা-ই চাওয়া হোক না কেন তারা হাসিমুখে এবং অসাধারণ নিষ্ঠার সাথে সেবা করে যান। নিশ্চিতভাবে, আমার হৃদয় আপনাদের প্রত্যেকের জন্য কৃতজ্ঞতায় পরিপূর্ণ।

আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাদেরকে পুরস্কৃত করুন এবং আপনাদেরকে বিনয় ও নিঃস্বার্থতার সাথে সেবা করে যাওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। মসীহ্‌ মওউদ (আ.) এর বাণী, যা প্রকৃতপক্ষে পবিত্র কুরআন এবং মহানবী (সা.)-এরই বাণী ও শিক্ষা, বিশ্বময় ছড়িয়ে দিতে আপনাদের সকলকে আপনাদের ভূমিকা পালনের সৌভাগ্য দান করুন। আমি সর্বদা এ দোয়াও করে থাকি যে, আপনারা যেন সর্বদা বিনয়ী থাকেন এবং আপনাদের অন্তরে গর্ব বা অহংকারের লেশমাত্র যেন প্রবেশ না করে। কখনো এ কথা ভাববেন না যে, এমটিএ বা জামা’তের সাফল্য আপনার দক্ষতা বা সময়ের কুরবানির ওপর নির্ভরশীল অথবা আপনি প্রশংসা বা পার্থিব কোন পুরস্কারের দাবিদার।
এটা সুনিশ্চিত যে, আপনি যদি সদা-সর্বদা নিষ্ঠাপূর্ণ এবং নিবেদিত থাকেন এবং প্রকৃত বিনয়ের সাথে সেবা করে যান, তাহলে আল্লাহ্‌ তাআলা স্বয়ং আপনাকে সর্বোত্তম পুরস্কার প্রদান করবেন। আপনারা এখানে মরকযে (সদর দপ্তরে) কাজ করুন বা বিশ্বজুড়ে আমাদের কোন স্টুডিওতে বা কোন দলের সাথে, আল্লাহ্ তাআলা আপনাদেরকে তৌফিক দান করুন যেন সর্বদা যুগ-খলীফার প্রত্যাশা আপনারা পূর্ণ করতে পারেন, এবং আপনারা এমটিএ-র জন্য আপনার সেবায় সদা অগ্রসর হতে থাকুন।
আল্লাহ্‌ তাআলা আপনাদেরকে সর্বোত্তম প্রতিদানে ভূষিত করুন, আর সর্বদা আপনাদেরকে নিজেদের সর্বোচ্চ যোগ্যতা দিয়ে মসীহ্‌ মওউদ (আ.) এর উদ্দেশ্যকে পূর্ণ করার লক্ষ্যে অবদান রাখার তৌফিক দান করুন, আমীন। জাযাকাল্লাহ্‌ (আল্লাহ্‌ আপনাকে পুরস্কৃত করুন)।

অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শামস বিন তারিক