যাকাত ও আল্লাহ্‌র পথে ব্যয়

আলহাজ্জ মোহাম্মদ মুতিউর রহমান

আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি ও তাঁর ভালবাসা লাভের জন্যে নিজের ধন-সম্পদ ব্যয় করা যেখানে একটি অতি বড় পুণ্য ও মঙ্গল এবং দেশেরও মঙ্গল লাভের একটি বড় প্রত্যাশা সেখানে এটা একটি আর্থিক ইবাদতও বটে।

যে জাতি মজুদ্দারী ও ধন-সম্পদ জমা করতে অভ্যস্ত হয়ে যায় আর জাতীয় প্রয়োজন এবং জনকল্যাণমূলক কর্মকান্ডে উদার মনে ব্যয় করতে ইতস্তত করে, ধ্বংস ও বিনাশ এর দুয়ারে দাঁড়িয়ে থাকে। ফিৎনা-ফাসাদ এবং নিরাপত্তাহীনতা ও বিশৃঙ্খলা তাদের ললাটের লিখন হয়ে যায়। এতেও কৃপণ জাতি হাবুডুবু খেতে থাকে। মানুষ যে ধন-সম্পদ লাভ করে তা আল্লাহ্ই দিয়ে থাকেন। আর এটা তাঁর আমানত। আল্লাহ্‌ তাআলা যদি এ আমানত থেকে কিছু নিতে চান আর বান্দাকে তাঁর দেয়া সম্পদ থেকে তাঁর পথে ব্যয় করতে বলেন তাহলে আনন্দ ও পূর্ণ প্রশান্তির সাথে আল্লাহ্‌ তাআলার এ আদেশকে মান্য করা এবং তাঁর পথে ব্যয় করা মানুষের বড়ই সৌভাগ্য ও তাঁর পক্ষ থেকে আরও কল্যাণ লাভকারী হওয়ার সুনিশ্চিত ও অকাট্য মাধ্যম।

যাকাতের নিসাব ও নিয়মাবলী:

নগদ অর্থ, সোনা, রূপা এবং অন্যান্য সব রকমের মূলধনের জন্যে নিসাবের নিরিখ হলো রূপা অর্থাৎ যার নিকট ৫২ তোলা ৬ মাসা অর্থাৎ সাড়ে বায়ান্ন তোলা রূপা থাকে বা এত রূপা বা সোনা থাকে যা দিয়ে এ পরিমাণ রূপা কেনা যায় তখন এর যাকাত দেয়া অবশ্য-কর্তব্য হবে। যাকাতের বিষয় হলো পুরো মূলধনের চল্লিশ ভাগের এক ভাগ বা আড়াই (২.৫%) শতাংশ যেমন, ৫২ তোলা ৬ মাসা রূপার মূল্য যদি ১০,৫০০ টাকা হয় আর এত অর্থ তার নিকট থাকে তাহলে ২.৫% হিসেবে নিশ্চিত তাকে ১৬২.৫০ টাকা যাকাত দিতে হবে।

এটা সেই সম্পদের যাকাত যার জন্যে নিসাবের নিরিখ রূপা আর নিসাবের নিরিখ জানার জন্যে ওজন হলো মাধ্যম।

মহিলাদের বক্তিগত ব্যবহারে থাকে এমন সোনা ও রূপার অলংকারাদির বেলায় এবং কখনও কখনও চাওয়ার পরে তারা গরীব স্ত্রীলোকদের ব্যবহার করতে দেয় এর ওপরে যাকাত হবে না। সৈয়্যদনা হযরত মসীহ্ মাওউদ আলায়হেস সালাম বলেছেন,

যে অলংকার ব্যবহারে রয়েছে এর যাকাত নেই। আর রেখে দেয়া হয় এবং কখনও কখনও পরা হয় এর যাকাত দেয়া আবশ্যক। যে অলংকার পরা হয় আর কখনও কখনও দরিদ্র মহিলাদেরকে ব্যবহার করতে দেয়া হয়, কোন কোন লোকের এ ব্যাপারে ফতওয়া এই যে, এর যাকাত নেই। আর যে অলংকার পরা হয় এবং অন্যকে ব্যবহারের জন্য দেয়া হয় না এর যাকাত দেয়া ভাল। কেননা, এ নিজের জন্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে। আমাদের ঘরে এর ওপর ও নিজেদের বর্তমান অলংকারের ওপর যাকাত দেয়া হয় আর যে অলংকার টাকা পয়সার মত রাখা হয় এর যাকাত দেয়ার প্রসঙ্গে কারও মতভেদ নেই।

(মযমুআ ফাতাওয়া আহমদীয়া, প্রথম খন্ড, পৃষ্ঠা: ১৮৭, আল্ হাকাম, ১৭ নভেম্বর, ১৯০৫)

ব্যবসায়ে বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর যাকাত আদায় করার আসল অধিকারী যদিও সরকার আর নিজেদের প্রয়োজনের প্রতি দৃষ্টি রেখে তারা ট্যাক্সের পরিমাণও নির্ধারণ করেন। তবুও দিক-নির্দেশনার জন্যে উম্মতের আলেমগণ মূলধনের ওপর যাকাত নির্ধারণের যে নীতি প্রস্তাব করেছেন এর সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিলে অপকার হবে না।

শিল্প-বাণিজ্যে বিনিয়োগকৃত মূলধন থেকে কেবল সেই মূলধনের ওপর যাকাত প্রদেয় যা ব্যবসায়ের আবর্তনে রয়েছে অর্থাৎ মালামাল আনতে ও মালামাল বিক্রি করতে ও মালামাল তৈরী করতে হয়। যে পুঁজি বিনিয়োগকৃত কারখানার মেশিনারী, দালান-কোঠা, প্রয়োজনীয় অফিসাদি, ফার্নিচার ও হিসাব কিতাবের রেজিষ্টার বই খাতা এবং ফাইল ইত্যাদিতে ব্যয় হয়েছে এর ওপর যাকাত প্রদেয় হবে না। এভাবে বাস, ট্রাক, টেক্সি ও ভাড়া দেয়ার নিমিত্তে নির্মাণকৃত দোকান-পাট ও ঘর-বাড়ী নির্মাণের ব্যয়কৃত মূলধনও যাকাত থেকে রেয়ায়েত হবে। এমনিভাবে এসব জিনিষ যা মানুষের আসল প্রয়োজন মিটাতে ব্যয় হয় যেমন থাকার বাড়ী, পরার কাপড়-চোপড়, ঘরের আসবাবপত্র, ফার্নিচার, আসা-যাওয়ার গাড়ী, লাইব্রেরীর পুস্তক ইত্যাদি-এর যতই মূল্য হোক না কেন, লক্ষ লক্ষ টাকারই হোক না কেন এর ওপরও যাকাত প্রদেয় হবে না। মোটকথা যাকাত চলমান ব্যবসায় বিনিয়োগকৃত মূলধনের প্রতি। যাকাতের হিসাব এভাবে হতে পারে। যত টাকা যে যে মাসে ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয় তত টাকা সেই সেই মাসে উল্লেখ করে সবটা একত্র করে নেয়া হয় আর ১২ দিয়ে ভাগ করে যে সংখ্যা বের হয় এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে দিতে হয়। যেমন, ২৫০.০০ টাকা বছরের প্রথম ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা হলো যা বছরের শেষ পর্যন্ত বার মাস ঘটলো। ২ মাস পরে ২০ টাকা আরও বিনিয়োগ করা হলো যা ১০ মাস ব্যবসায় ঘাটলো। এর ২ মাস পরে ৫০০.০০ টাকা ব্যবসায়ে বিনিয়োগ করা হলো যা বছরের শেষ হওয়া পর্যন্ত এভাবে হিসাব করা হয় ২৫০.০০ টাকা ১২ মাস, ২০.০০ টাকা ১০ মাস, ৫০০.০০ টাকা ৮ মাস খাটানো হয়েছে।

এজন্যে,

টাকা মাস মোট
২৫০ × ১২ = ৩,০০০
২০ × ১০ = ২০০
৫০০ × = ৪,০০০
সর্বমোট ৭,২০০

সমস্ত বিনিয়োগকৃত মূলধনের মোট পরিমাণ দাঁড়ায় ৭,২০০ টাকা। একে ১২ দিয়ে ভাগ করলে ৭,২০০ ÷ ১২ = ৬০০ টাকা। এর চল্লিশ ভাগের এক ভাগ ১৫ টাকা যাকাত ধার্য হবে।

জমির উৎপন্ন ফসলের নিসাব ও এর যাকাতের বিধান:

ইসলামের আলেমগণ কৃষি জমিকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। ‘খারাজি’ অর্থাৎ সেসব এলাকার জমি যার ওপর মুসলমান তরবারীর বলে কব্জা করেছে কিন্তু সেখানে জমি সৈন্যদের মাঝে বন্টন করার পরিবর্তে সরকারের অধীনে রেখে দিয়েছে এবং চাষাবাদের জন্যে সেসব লোকদের দেয়া হয়েছে যারা এর ওপর দখল স্বত্বেও মালিক বনে ছিল। এমন জমির শস্যের ওপর যাকাতের পরিবর্তে খারাজ অর্থাৎ খাজানা ধার্য হবে। যার নিয়ম-নীতি অবস্থা ও সরকারের প্রয়োজনের দিক থেকে পরিবর্তিত হতে থাকে।

জমির দ্বিতীয় শ্রেণীকে ‘উশরি’ বলা হয়। যেমন হেজায অঞ্চলের জমি বা যেসব এলাকার জমি মুসলমান সৈন্যদের মাঝে বন্টন করে দেয়া হয়েছে আর তাদেরকে এর মালিক বানিয়ে দেয়া হয়েছে। এমন জমির উৎপাদনের ওপর ‘উশরি’ ১/১০ যাকাত হিসেবে দেয়া অবশ্য-কর্তব্য হবে। তবে শর্ত এই, বৃষ্টির ওপর নির্ভশীল হয় আর উৎপাদিত শস্য ৫ ওয়াসক * (আনুমানিক ২১ মন)। উৎপাদন যদি এত্থেকে কম হয় তাহলে এর ওপর যাকাত ধার্য হবে না। অবশ্য উৎপাদন যদি ২১ মন বা এত্থেকে অধিক হয় তাহলে এর দশ ভাগের এক ভাগ যাকাত হিসেবে আদায় করতে হবে। জমিতে যদি কূঁয়ো বা খাল অথবা ঝরণার পানিতে সেচ দেয়া হয় তাহলে যাকাতের নিয়ম অর্ধ-দশমাংশ অর্থাৎ বিশ ভাগের এক ভাগ। এ যাকাত দেয়া তখন আবশ্যিক হবে যখন এ জমি থেকে সরকার খাজানা আদায় না করে। খাজানা যদি নিরূপিত হয়ে থাকে তাহলে পরে নীতিগতভাবে যাকাত দেয়া আবশ্যিক হবে না। কেননা, একই জিনিস থেকে দু’বার স্থায়ী ট্যাক্স আদায় করা যেতে পারে না।

যেভাবে প্রথমে উল্লেখ করা হয়েছে, নীতিগতভাবে জমির সেই ফসলের ওপর যাকাত দিতে হবে যা মজুদ করা যায় যেমন, শস্য, শুকনো ফল যেমন, খেজুর, কিসমিস প্রভৃতি। কিন্তু যেসব ফসল মজুদ করা যায় না যেমন, সব্জী বা খরবুজা বা তাজা ফল প্রভৃতি তখন এগুলোর ওপর যাকাত আদায় জরুরী নয়।

জমি যদি ভাগে দেয়া হয় তাহলে এজমালী ফসল থেকে যাকাত আদায় করতে হবে। এরপর জমির মালিক ও ভাগীদারের মাঝে অবশিষ্ট ফসল বন্টন করা হবে।

জংলী মধু, যার ব্যাপারে মৌমাছি পালনের জন্যে মানুষকে টাকা-পয়সা ব্যয় করতে হয় নি সেক্ষেত্রে ১০ মশক সমান আহরিত হলে এক মশক যাকাত হিসাবে অবশ্য-দেয় হবে। সুতরাং মধুর নিসাব ১০ মশক স্বীকার করা হয়। মৌমাছি পালনের মাধ্যমে যে মধু আহরিত হয় এর যাকাত নেই।

পশুর নিসাব ও যাকাত আদায়ের নিয়ম:

যাকাতের পশু অর্থে গৃহপালিত পশু যেমন, উট, গাভী, মোষ, বলদ, ছাগল, ভেড়া, দুম্বা প্রভৃতি। ঘোড়া খচ্চর ও গাধার প্রসঙ্গে মতভেদ আছে। কোন কোন ফিকাহ্‌বিদ একে যাকাতের মাল হিসাবে গণ্য করেছেন আবার কেউ কেউ করেন নি। তদুপরি গৃহপলিত পশুর ওপর তখন যাকাত অবশ্য-দেয় হবে যখন এরা প্রাকৃতিক চারণ ক্ষেতে চরবে ও লালিত-পালিত হবে এবং ঘরে তাদের খাবার সরবরাহ করার প্রয়োজন হবে না।

নিসাব

উটের যাকাতের নিসাব পাঁচ। কারও নিকট যদি ৫টি থেকে কম উট থাকে তাহলে এর ওপর যাকাত অবশ্য-দেয় হবে না। এ প্রসঙ্গে যাকাতের বিস্তারিত নিয়মাবলী নিম্নরূপ:

প্রতি ৫ থেকে ৯টি উটের যাকাত ১টি ছাগল বা এর মূল্য।

প্রতি ১০ থেকে ১৪টি উটের যাকাত ২টি ছাগল বা এর মূল্য।

প্রতি ১৫ থেকে ১৯ টি উটের যাকাত ৩টি ছাগল বা এর মূল্য।

প্রতি ২০ থেকে ২৪ টি উটের যাকাত ৪টি ছাগল বা এর মূল্য।

প্রতি ২৫ থেকে ৩৫ টি উটের যাকাত ১ বছর বয়সের ১টি উটনী বা সমমূল্য।

প্রতি ৩৬ থেকে ৪৫ টি উটের যাকাত২ বছর বয়সের ১টি উটনি বা সমমূল্য।

প্রতি ৪৬ থেকে ৬০ টি উটের যাকাত ৩ বছর বয়সের ১টি উটনী বা সমমূল্য।

প্রতি ৬১ থেকে ৭৫ টি উটের যাকাত ৪ বছর বয়সের ১টি উটনী বা সমমূল্য।

প্রতি ৭৬ থেকে ৯০ টি উটের যাকাত ২ বছর বয়সের ২টি উটনী বা সমমূল্য।

প্রতি ৯১ থেকে ১২০ টি উটের যাকাত ৩ বছর বয়সের ২টি উটনী বা সমমূল্য।

এর পর অতিরিক্ত প্রতি ৪০টি উটের জন্যে দু’বছর বয়সের ১টি উটনী এবং ৫০টি উটের জন্যে ৩ বছর বয়সের ১টি উটনী যাকাত হিসেবে দিতে হবে।

গাভী ও মোষের যাকাত:

গাভী ও মোষ একই শ্রেণীভুক্ত। আর এতে বলদ ও পুরুষ মোষও অন্তর্ভুক্ত। অতএব এদের নিসাব ও যাকাতের পরিসীমা এর সম্মিলিত সংখ্যার ওপর নির্ণিত হয়। প্রত্যেক পশুর আলাদা আলাদা সংখ্যার ওপর নয়; তা কোন একটির সংখ্যা নিসাবের সংখ্যা থেকে কম হোক না কেন। এসব পশুর (গাভী ও মোষ) যদি সম্মিলিত সংখ্যা নিসাবের সমান সমান হয় তাহলে যাকাত দেয়া অবশ্য-কর্তব্য। এরপর যেখানে ‘গাভী’ শব্দ ব্যবহৃত হবে এতে গাভী, বলদ, পুরুষ মোষ ও স্ত্রী মোষ প্রভৃতি সবই অন্ত:র্ভুক্ত হবে।

গাভীর নিসাব ৩০টি। ৩০টির কম পশুর জন্যে যাকাত নেই। আর এসব জন্তর যাকাতের নিয়ম প্রতি ৩০টি পশুর জন্যে এক বছর বয়সের ১টি গাভী আর প্রতি ৪০টি পশুর জন্যে ২ বছর বয়সের একটি গাভী যেমনঃ

প্রতি ৩০ থেকে ৩৯টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ১ বছর বয়সের ১টি গাভী বা এর সমমূল্য।

প্রতি ৪০ থেকে ৫৯ টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ১টি ২ বছর বয়সের গাভী বা এর সমমূল্য।

প্রতি ৬০ থেকে ৭৯ টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ১টি ২ বছর বয়সের গাভী বা এর সমমূল্য।

প্রতি ৮০ থেকে ৮৯ টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ১টি ২ বছর বয়সের গাভী বা এর সমমূল্য।

প্রতি ৯০ থেকে ৯৯ টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ৩টি ১ বছর বয়সের গাভী বা এর সমমূল্য।

প্রতি ১০০ থেকে ১০৯ টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ১টি ২ বছর বয়সের গাভী বা এর সমমূল্য।

প্রতি ১১০ থেকে ১১৯ টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ২টি ২ বছর বয়সের গাভী ও ১টি ১ বছরের বয়সের গাভী বা এর সমমূল্য।

প্রতি ১২০ থেকে ১২৯ টি গাভী পর্যন্ত যাকাত হবে ৩টি ২ বছর বয়সের গাভী ও ৪টি ১ বছর বয়সের গাভী বা এর সমমূল্য।

আর এভাবে পরবর্তীগুলোর জন্যে হিসাব করতে হবে।

ছাগল ভেড়ার যাকাত:

ছাগল, ভেড়া বা এ জাতীয় পশু আর দুম্বা একই শ্রেণীতে গণ্য করা হয়। আর এদের নিসাব ও যাকাতের পরিসীমাও এদের সম্মিলিত সংখ্যার ওপর নির্ধারিত হবে। পৃথক পৃথকভাবে প্রত্যেক পশুর ওপর হবে না। পরে যেখানে ‘ছাগল’ শব্দ ব্যবহৃত হবে এতে ছাগল, পাঠা, ভেড়া, ভেড়ী, দুম্বা, দুম্বী সব অন্তর্ভুক্ত হবে।

ছাগলের নিসাব হলো ৪০টি। এর কম সংখ্যার জন্যে যাকাত দিতে হবে না। আর এগুলোর যাকাতের নিয়ম নিম্নরূপ:

প্রতি ৪০ থেকে ১২০ টি ছাগল পর্যন্ত যাকাত হবে ১টি ছাগল বা এর সমমূল্য।

প্রতি ১২১ থেকে ২০০টি ছাগল পর্যন্ত যাকাত হবে ২টি ছাগল বা এর সমমূল্য।

প্রতি ২০১ থকে ৩০০টি ছাগল পর্যন্ত যাকাত হবে ৩টি ছাগল বা এর সমমূল্য।

এর বেশি হলে প্রতি ১০০ ছাগলের জন্যে একটি ছাগল যাকাত দিতে হবে। ছাগলের সংখ্যা যদি একশ’ পুরো না হয় বরং কম হয় তাহলে অংশের জন্যে কোন যাকাত ধার্য হবে না। অতএব ৩০১ থেকে ৩৯৯টি ছাগলের জন্যে যাকাত হবে ৩টি ছাগলই। অংশের প্রশ্নটি প্রত্যক পশু-উট, গাভী প্রভৃতি সকলের নিসাবের বেলায় কার্যকরী হবে।

(ফিকাহ্ আহমদীয়া, পৃষ্ঠা: ৩৬২-৩৬৫)

*টীকাঃ ‘ওয়াসাক’ এক প্রকার ওজনের নিরিখ। এক ওয়াসাক ৬০ সা’ ১৬৫ লিটার। এ পরিমাপে গমের যে পরিমাপ হয় এদিক থেকে নিশ্চিতভাবে এর ওজন দাঁড়ায় এক ওয়াসাক = ৩ মন ১৯ সের ৫৯ তোলা ৫ মাসা ২ রতি। সা’ এর পরিমাপের অন্য গবেষণা অনুযায়ী এক ওয়াসাক ৩ মন ৭ সের ৫ তোলা।

(ইসলাম কা নেযামে মুহাসসিল্, পৃষ্ঠা: ৯৯)