রমযান কি?


সূর্যের তাপকে রাময্‌ বলা হয়। রোযার মাসে মানুষ খাদ্য পানীয় এবং সমস্ত দৈহিক ভোগের ব্যাপারে সংযমী হয়। দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ্‌র নির্দেশাবলীর জন্যে একটা উদ্যম এবং প্রেরণা অনুভব করে। আধ্যাত্মিক এবং দৈহিক তাপ এবং উষ্ণতার মিলনে রমযান হয়। ভাষাবিদরা বলেন যে, যেহেতু গরমের মাসে এর সূচনা হয় সেই জন্যে রমযান বলা হয়। আমার মতে এটা সঠিক নয় কেননা আরবদের জন্য এটা বিশেষত্ব হতে পারে না। আধ্যাত্মিক ‘রময’ উৎসাহ, উদ্দীপনা এবং ধর্মীয় উষ্ণতা। রামায সেই উষ্ণতাকেও বলা হয় যার দ্বারা পাথর ইত্যাদি উত্তপ্ত হয়ে যায়। (মলফুযাত, প্রথম খন্ড, ২০৯-১০পৃষ্ঠা)

শাহরু রমাযানাল্লাযীনা উনযিলা ফীহিল কুরআন” হতে রমযান মাসের গুরুত্ব বুঝা যায়। সুফীগণ লিখেছেন যে, এ মাস অন্তরকে জ্যোতির্ময় করার জন্যে উত্তম মাস। এতে প্রচুর দিব্য-দর্শন লাভ হয়ে থাকে। নামায আত্মাকে পবিত্র করে এবং রোযা অন্তরকে বিকশিত ও উজ্জ্বল করে আত্মাকে পবিত্র করার অর্থ হলো নফসে আম্মারার কামুক প্রবণতা থেকে দূরত্ব লাভ করা এবং অন্তরকে উজ্জ্বল করার অর্থ হলো কাশফের দ্বার তার জন্য উন্মুক্ত হওয়া যেন সে খোদাকে দর্শন করে । “উনযিলা ফীহিল কুরআন” (যাতে নাযেল করা হয়েছে কুরআন) এ ইংগিতই বহন করে। এতে কোন দ্বিধা বা সন্দেহ নেই যে, রোযার পুরস্কার অতি মহান কিন্তু রোগ ব্যাধি এবং দুনিয়াবী কামনা-বাসনা এ কল্যাণ থেকে মানুষকে বঞ্চিত রাখে। আমার স্মরণ আছে যে, যৌবনকালে এক স্বপ্নে দেখেছি যে রোযা রাখা আহলে বয়াতে সুন্নত। আমার উদ্দেশ্যে খোদার পয়গম্বর (সাঃ) বলেছেন “সালমান মিন আহলীল বায়াত” (আমার এবং আমার আহলে বয়াত থেকেই দু’টি শান্তি) সালমান অর্থ আস সুলহান (দু’টি সন্ধি) অর্থাৎ এই ব্যক্তির হাতে দু’টি সন্ধি হবে । একটি আভ্যন্তরীণ এবং একটি বাহ্যিক এবং ইনি তার কাজ করলে কোমলতার সাথে করবেন তরবারীর দ্বারা নহে। এবং যখন আমি ঐ হুসায়নের পথের পথিক নহি যিনি যুদ্ধ করেছেন বরং ঐ হুসায়নের পথের পথিক যিনি যুদ্ধ করেননি। তখন আমার বোধগম্য হল যে, এটা রোযার দিকে ইঙ্গিত। সুতরাং আমি ছয় মাস ধরে রোযা রাখলাম। এরই মধ্যে আমি দেখলাম যে, জ্যোতির স্তম্ভের পর স্তম্ভ আকাশের দিকে উত্তোলিত হচ্ছে। এ বিষয়ে সন্দেহজনক যে জ্যোতির ধারা পৃথিবী থেকে আকাশের দিকে যাচ্ছিল অথবা আমার হৃদয় থেকে যাচ্ছিল। কিন্তু এটা যৌবনের সময়ে সম্ভব ছিল এবং যদি ঐ সময় আমি চাইতাম তা হলে চার বছর পর্যন্ত রোযা রাখতে পারতাম। এখন যখন ৪০ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেছে, দেখছি যে, এটা হওয়ার নহে। নতুবা প্রথমতঃ আমি বাটলায় কয়েকবার পায়ে হেঁটে চলা ফেরা করতাম কিন্তু আমার কোন অলসতা বা দূর্বলতা অনুভব হয়নি। কিন্তু এখন ৫-৬ মাইল গেলেই কষ্ট হয়। চল্লিশ বছর পর স্বাভাবিক তাপমাত্রা কম হতে আরম্ভ হয়। রক্ত কম সৃষ্টি হয়। মানুষকে নানা প্রকার দুঃখ কষ্টের মধ্য দিয়ে অতিক্রম করতে হয়!
এখন কয়েকবারই দেখেছি যে, ক্ষুধা নিবৃত্তিতে দেরী হলে শরীর বিচলিত হয়ে যায়। (মলফুযাত, ৪র্থ খন্ড, ২৫৬-২৫৭ পৃঃ)

মাওলানা ফিরোজ আলম
মুরব্বী সিলসিলাহ্

লিঙ্ক:
পাক্ষিক আহ্‌মদী – নব পর্যায় ৬৯বর্ষ | ৭ম ও ৮ম সংখ্যা | ১৫ই অক্টোবর ২০০৬ইং, পৃষ্ঠা: ৬
https://theahmadi.org/p/WijLDwAAQBAJ