ওসীয়্যত – বিশ্বের দারিদ্র্য বিমোচনের ঐশী ব্যবস্থা

হযরত মির্যা বশীর উদ্দীন মাহমুদ আহমদ (রাঃ)

নেযামে নও’ ভাষণের চয়নকৃত অংশের অনুবাদ ১। সময়াভাবে ইংরেজী থেকে অনুবাদ করা হয়েছে। মূল উর্দূর সাথে মিলানো সম্ভব হয়নি। ২। এ বইটির সম্পূর্ণ অনুবাদ এক সময় করেছিলেন মৌঃ এ.এইচ. এম. আলী আনওয়ার। দুর্ভাগ্যবশত: বইটি মুদ্রিতও হয়নি এবং পান্ডুলিপিটিও হারিয়ে গেছে। তাই নতুন করে অনুবাদ করা হ’ল।

ইসলামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক শিক্ষাসমূহকে বাস্তব রূপ দিতে মহানবী (সাঃ)-এর সময় সে যুগের চাহিদানুযায়ী গৃহিত ব্যবস্থাদি বা প্রথম চার খলীফার যুগে সে যুগের চাহিদানুযায়ী অবলম্বনকৃত পদ্ধতিসমূহ আজকের যুগের চাহিদানুযায়ী অপ্রতুল। অতএব এ যুগে ইসলামী শিক্ষার বাস্তবায়নের জন্য অন্যান্য মতবাদ বা পদ্ধতির ত্রুটিসমূহ থেকে নিজেকে রক্ষার পাশাপাশি, ইসলামী নীতিসমূহ বাস্তবায়নের ভার যাদের উপর ন্যস্ত তাঁদের হাতে যথেষ্ট বড় অংকের তহবিল তুলে দেয়া আবশ্যক যেন তাঁরা সবার জন্য সমান সুযোগ বা অধিকারের অবস্থা সৃষ্টি করতে পারেন এবং মানুষের ন্যায়সঙ্গত চাহিদাসমূহ পূরণ করতে পারেন। নিজ নিজ যুগে খলীফাগণ এ প্রসঙ্গে ইসলামী শিক্ষার ব্যাখ্যা প্রদান করে এসেছেন এবং সময়ের দাবী অনুযায়ী একে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। হযরত উমর (রাঃ)-এর যুগে নিয়মিত আদম শুমারী (অর্থাৎ লোকগণনা) হ’ত এবং প্রত্যেক ব্যক্তির রেকর্ড রাখা হ’ত। প্রত্যেক ব্যক্তির বৈধ চাহিদাসমূহ পূরণের দায়িত্ব ছিল ইসলামী কোষাগার বা বায়তুল মালের। প্রাথমিকভাবে এ ব্যবস্থা অস্ত্র ধারণে সক্ষম সব ব্যক্তির জন্য প্রযোজ্য ছিল। কিন্তু হযরত উমর (রাঃ) উপলব্ধি করেন, রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন অন্যান্যদের ওপর পর্যন্ত বর্তায়। শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে সব ন্যায্য দাবীদারের চাহিদা পূরণের ব্যবস্থা করা হয়।

সার কথা এই, খলীফাগণ নিজ যুগের অবস্থা অনুযায়ী ইসলামী শিক্ষাকে বাস্তব রূপ দিয়েছেন। আজ মানব জীবন ও মানব সমাজ অনেক বেশি জটিল হয়ে পড়েছে। সুতরাং সেই শিক্ষাকে বাস্তব রূপ দেয়ার জন্য নতুন কোন ব্যবস্থার প্রয়োজন। এ নতুন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এটি অত্যাবশ্যকীয় ছিল যে, যাকে খোদা তাআলা স্বয়ং এমন কোন ব্যক্তিকে, দাঁড় করে দেন এবং তিনি এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্বোধন করেন। এটা মানবতার দুঃখদুর্দশার পরিসমাপ্তি ঘটাবে। এ ব্যবস্থা মানবীয় চিন্তাপ্রসূত হবে না বরং ঐশী ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত হবে। আর এটা প্রকৃতপক্ষেই দরিদ্রের অভাব মেটাতে পরিপূর্ণভাবে বলীয়ান এবং সমগ্র মানবতার শান্তি ও সমৃদ্ধি পুনরুদ্ধারে সক্ষম। যিনি বিশ্বাস করেন, মহানবী (সাঃ) এক মসীহ্‌ ও মাহদী (আঃ)-এর আগমনের ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন, প্রত্যেক এমন ব্যক্তি অবশ্যই এ বিষয়টি স্বীকার করতে বাধ্য, আজ বিশ্বে যে অশান্তি, অরাজকতা ও দুর্দশা বিদ্যমান এর প্রতিবিধান করা সেই প্রতিশ্রুত মহাপুরুষেরই কাজ। এ সমাধানকে অন্যান্য সমাজ ব্যবস্থার ত্রুটি-সমূহ থেকে মুক্ত হতে হবে। এমন হতে হবে যেন এতে প্রত্যেকের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা হয়। একাধারে জাতি ও শ্রেণীভেদে শান্তি ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করার পাশাপাশি একে প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা পূরণের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ একত্র করতে হবে।

সুতরাং এটি সেই খাতামুল খুলাফারই দায়িত্ব ছিল। ইসলামী শিক্ষার ওপর ভিত্তি করে যিনি এমন এক ব্যবস্থা স্থাপন করেন যা যুগের চাহিদাকে যথাযথভাবে পূর্ণ করবে এবং বিশ্বের দুর্দশার পরিসমাপ্তি ঘটাবে। আমি এখন বর্ণনা করবো, এ উদ্দেশ্য পূরণে এ যুগে মানবজাতির পথ প্রদর্শনের জন্য খোদা তাআলা কর্তৃক মনোনীত মহানবী (সাঃ)-এর গোলাম ও প্রতিনিধি হিসেবে নিযুক্ত মহাপুরুষের হাতে ঐশী নির্দেশে ও ইসলামী শিক্ষার পুংখাণুপুংখ অনুসরণে কিরূপে এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তি স্থাপিত হয়েছে। খোদা তাআলার নিযুক্ত এ মহাপুরুষ ১৯০৫ সালে তাঁর পুস্তিকা ‘আল ওসীয়্যত’-এ নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তি রাখেন।

মূলনীতি পবিত্র কুরআনের ২:১৯৬ আয়াতেই বর্ণিত আছে। এ আয়াতে ঐচ্ছিক দান সম্পর্কে কোন বাঁধা ধরা নিয়ম বেঁধে দেয়া হয়নি। মুসলমানদের কেবল সতর্ক করে দেয়া হয়েছে, যাকাতের অতিরিক্ত আরো কর তাদের দিতে হবে এবং আরো অনুদান দিতে হবে। কিন্তু সেই করের হার বা প্রকৃতি নির্ধারিত করে দেয় হয়নি। কোন এক সময়ে ইসলামী রাষ্ট্রের জাতীয় সম্পদের শতকরা এক ভাগ করের যদি প্রয়োজন হয় তাহলে খলীফার এ ঘোষণা দেয়াই যথেষ্ট ছিল যে, রাষ্ট্রের স্বার্থে এখন এরূপ প্রয়োজন এবং মুসলমানদের এই হারে কুরবানী করা প্রয়োজন। অপর কোন সময়ে শতকরা দুই ভাগের প্রয়োজন হয়ে পড়লে তখন খলীফা মুসলমানদের সেই হারেই কর বা চাঁদা দিতে আহ্বান করেছেন। রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর সময়ে ঐচ্ছিক কুরবানীর আহ্বান করতেন। খলীফাগণ ইসলামী শিক্ষার বাস্তবায়নকল্পে যুদ্ধলব্ধ সম্পদ বা মালে গনিমতের এক বড় অংশ গরীবদের জন্য সংরক্ষণ করতেন। স্বেচ্ছায় তাদের অধিকারের একটি অংশ দুঃস্থের ত্রাণ হিসেবে ছেড়ে দিতে সৈন্যদের আহ্বান করা হ’ত। হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) বর্তমান যুগের চাহিদার প্রেক্ষাপটে ইসলামী শিক্ষার ব্যাখ্যা প্রদান করেছেন। ইসলামী রাষ্ট্রকে সবার জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার সংস্থান করতে হলে অবশ্যই এরূপ রাষ্ট্রের হাতে ইসলামের প্রাথমিক যুগের তুলনায় অনেক বড় ধরনের সম্পদ থাকতে হবে। মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) এজন্য ঐশী নির্দেশে ঘোষণা করেন,

“খোদা তাআলা এরূপ নির্ধারণ করেছেন, যারা আজ প্রকৃত জান্নাত লাভ করতে উৎসুক তাদের নিজ সম্পদ ও অর্থের এক-দশমাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত স্বেচ্ছায় কুরবানী করা আবশ্যক। তিনি আরো বলেছেন, এভাবে সংগৃহীত সম্পদ ইসলামের উন্নতি, কুরআনের শিক্ষা ও ধর্মীয় সাহিত্যের প্রচার ও ইসলামী প্রচারক তথা প্রচার কেন্দ্র স্থাপনের জন্য ব্যয় করা হবে”। [আল ওসীয়্যত, শর্ত নং ২]

তিনি (আঃ) আরো বলেন,

“প্রত্যেকটি বিষয় যাহা ইসলাম প্রচারের উদ্দেশ্যের অন্তর্ভুক্ত এবং যাহার সবিশেষ বর্ণনা করার সময় এখনো আসে নাই, ঐ সমুদয় কাজ এই অর্থ দ্বারা সমাধা হইবে”। [প্রাগুক্ত]

অর্থাৎ, এ অর্থ যেসব উদ্দেশ্য পূরণের উদ্দেশ্যে ব্যয় হবে যা ইসলামী শিক্ষাকে বাস্তবায়ন ও কার্যকর করার জন্য আবশ্যক। তিনি (আঃ) ইঙ্গিত করেন, এখন এর সবিশেষ বর্ণনা করার সময় আসেনি। কিন্তু সময় এলে অপর কেউ এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা প্রদান করবেন।

এই হ’ল সেই বিশ্ব ব্যবস্থা যা মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, প্রত্যেক বিষয় যার সাথে ইসলামে শক্তি ও বিস্তারের সম্পর্ক এর জন্য এ থেকে ব্যয় করা হবে। কিন্তু এর বিস্তারিত সময় বর্ণনার সময় আসেনি। এতে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, সেই সমুদয় উদ্দেশ্য যা এ অর্থ দ্বারা সাধিত হবে, এর ব্যাখ্যা বিবরণ সে যুগে দেয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু সেই সময় অতি আসন্ন ছিল যখন সারা বিশ্ব থেকে এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার জন্য আর্তনাদ উত্থিত হবে। প্রত্যেক প্রান্ত থেকে নিজ নিজ নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ঘোষণাধ্বনি উচ্চারিত হবে। রাশিয়া দাবী করবে, তারা বিশ্বকে এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা উপহার দিয়েছে। ইংল্যান্ডও এক নুতন বিশ্ব ব্যবস্থা পেশ করবে। জার্মানী ও ইতালী নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ঘোষণা দিবে। আমেরিকাও এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ঘোষণা দিবে। তখন মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর এক খলীফা কাদিয়ান থেকে ঘোষাণা দিবেন:

“নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ঘোষণা ইতিপূর্বেই ‘আল-ওসীয়্যত’-এ প্রদান করা হয়েছে। বিশ্ব শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে অগ্রসর হতে চাইলে এর বাস্তবায়নের একমাত্র পথ হ’ল ‘আল-ওসীয়্যত’-এ প্রতিষ্ঠিত নতুন বিশ্ব ব্যবস্থাকে কার্যকরা করা”।

মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) এরপর বলেন,

“এ অর্থ সেই সকল এতীম ও মিসকীনের কল্যাণেও ব্যয় হইবে যাহাদের জীবিকা নির্বাহের সামথ্য নাই”। [প্রাগুক্ত]

…এটি ধরে নিলে যে এ জামাত সারা বিশ্বে বিস্তার লাভ করবে এবং সমগ্র মানবজাতিকে এতে একত্র করবে। এই ব্যবস্থার অনিবার্য পরিণতি এই, কয়েক প্রজন্মের মধ্যে মানুষ প্রায় তাদের সম্পূর্ণ সম্পদ স্বেচ্ছায় ও সন্তুষ্ট চিত্তে সমাজের কল্যাণের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করে থাকবে।

…এভাবে সংগৃহীত অর্থ কেবল এক দেশে ব্যয় করা হবে না, বরং বিশ্বব্যাপী দারিদ্র্য ও দুর্দশা মোচনে নিয়োজিত হবে।

এ নতুন বিশ্ব ব্যবস্থায় এক ভূমির মালিক যার ১০ একর জমি রয়েছে এবং যিনি তাঁর ওসীয়্যতে বলেন, এর মধ্যে এক বা দুই বা তিন একর জাতীয় তহবিলে যাবে। কখনো এ ভেবে তিনি ব্যথিত হন না যে ক্ষতিগ্রস্থ হলেন বরং পরের দিন উচ্ছ্বসিত হৃদয়ে নিজ ভ্রাতার সাথে সাক্ষাৎ করে অভিনন্দন পাওয়ার প্রত্যাশা করেন এজন্য যে, খোদা তাআলার সন্তুষ্টির খাতিরে তিনি এ ওসীয়্যত করতে নিজেকে উদ্বুদ্ধ করতে সফল হয়েছেন। অন্য কথায় দরিদ্রদের জন্য এ ত্যাগ তাকে ব্যথিত বা দুঃখিত করে না, বরং এটি এমন এক বিষয় যা তাকে পরিতৃপ্ত করে এবং তিনি আশা করেন, তার সাথে সম্পৃক্তরাও এতে শামিল হবেন যেন তিনিও তাদের অভিনন্দিত করতে পারেন। তিনি কি করেছেন, তিনি যখন তার স্ত্রীকে তা জানান সেই স্ত্রী সে-সব দরিদ্রকে অভিশাপ দেননা যারা তার পরিবারকে নিজ সম্পদের একাংশ থেকে বঞ্চিত করেছে। বরং তার মাঝে এক আবেগের সৃষ্টি হয় যাতে সন্তুষ্টিও থাকে আবার ঈর্ষাও মিশ্রিত থাকে। তিনি এক প্রকার আবেগাপ্লুত দৃষ্টিতে স্বমীকে বলেন, “খোদা তাআলা আপনাকে এরূপ করার সামর্থ্য দিয়েছেন। কিন্তু আমার নিজস্ব কোন সম্পত্তি নেই যা থেকে আমিও এরূপ ওসীয়্যত করতে পারি। আপনি কি আমাকে কিছু সম্পত্তি দিবেন না যেন আমিও এ তাহরীকে অংশ নিতে পারি?” তিনি এভাবে তার অনুনয় বিনয়ে সর্বশক্তি নিয়োজিত করেন যতক্ষণ তার স্বামী তাকে সম্পত্তির একাংশ প্রদান না করেন এবং এ থেকে তিনিও ওসীয়্যত করতে পারেন। এভাবে সম্পত্তির আরো এক অংশ থেকে ১/১০ বা ১/৮ বা ১/৬ অংশ সমন্বিত তহবিলে জমা হয়। পুত্র যখন ঘরে আসে আর এ সংবাদ পায়, বাবা-মা উভয়ে এমন ওসীয়্যত করেছেন। তখন তার মধ্যেও এক মনোবাসনা জাগ্রত হয় এবং সে-ও বাবাকে বলে, “খোদা তাআলা আপনাকে দীর্ঘদিন আমাদের মাঝে রাখুন! আমার নিজের কোন সম্পত্তি নেই। খোদার সন্তুষ্টি লাভের এ সহজ বাণিজ্যে আমি কিভাবে অংশ নিতে পারি? আপনি আপনার সম্পত্তির একাংশ যদি আমাকে দান করেন তবে আমিও আপনাদের পথ অনুসরণ করতে পারতাম।” বাবা ছেলেকে যদি খুব ভালবাসেন তবে তাকেও সম্পত্তির একাংশ দিতে পারেন এ মনে করে যে, পরিণামে এ সম্পত্তিতো পুত্রেরই হবে। পুত্র এর ওপর ওসীয়্যত করে এবং এভাবে সম্পত্তির আরেক অংশ জাতীয় তহবিলে যুক্ত হয়। বাবা সহজে সম্মত না হলে পুত্র তবুও ওসীয়্যত করে যে, জীবদ্দশায় নিজ আয়ের একাংশ জাতীয় তহবিলে প্রদান করবেন এবং মৃত্যুকালে কোন সম্পত্তি যদি রেখে যান এর অংশও একইভাবে জতীয় তহবিলে যুক্ত হবে।

প্রতিদিন আমরা দেখি, যখন রাষ্ট্র কোন কর আরোপ করে, যাদের ওপর কর ধার্য হয় তারা পীড়িত বোধ করে এবং যারা করের আওতার বাইরে থাকেন তারা স্বস্তি বোধ করে। ধনীরা অসন্তুষ্ট হয় যে, এখন রাষ্ট্রকে আরো বেশি দিতে হবে আর গরীবরা খুশি হয় যে ধনীদের সম্পদের আরেক অংশ তাদের কল্যাণে ব্যয় হবে। আমাদের ব্যবস্থায় এর উল্টোটা ঘটে। প্রথম যখন এর প্রচলন করা হয় তখন কেবল সম্পদের (স্থাবর) ওপরই ওসীয়্যত প্রযোজ্য হ’ত। ফলে কেবল সম্পদশালী ব্যক্তিরা এর দ্বারা প্রভাবিত হতেন। কিন্তু যাদের কল্যাণের জন্য এ ব্যবস্থা তারা উল্লাসিত বোধ করেন নি। যদিও বা তাদেরই কল্যাণের জন্য সম্পদশালী ব্যক্তিদের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হচ্ছিল। বরং তারা এক বঞ্চনার বেদনায় ব্যথিত ছিলেন যে, তারা এতে অংশ নিতে পারছিলেন না, যার পুরস্কার খোদার সন্তুষ্টি ও বেহেশ্‌ত। তারা মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর কাছে গেলেন এবং অনুরোধ করলেন যেন এমন কোন উপায় বের করা হয় যাতে তারাও এতে শামিল হতে পারেন। পরিশেষে ঐশী নির্দেশনায় তিনি তাদের আয়ের নির্ধারিত অংশ এ স্কীমে দেয়ার অনুমতি দিলেন। এভাবে প্রথমে যদিও এ ব্যবস্থা সম্পত্তির ওপর প্রযোজ্য ছিল, সম্পদশালীদের অনুরোধে তাদের আয়ের ওপরও প্রযোজ্য হয় এবং এভাবে আয়ের একাংশও সমন্বিত তহবিলে জমা হতে শুরু করে।

সার কথা এই,নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তি ১৯১০ সালে রাশিয়াতেও রচিত হয়নি বা অন্য কোন দেশে হয়নি। আর বর্তমান যুদ্ধের [দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ] শেষে বা ভবিষ্যতে এর ভিত্তি রচিত হবে না। প্রকৃতপক্ষে নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা, যা প্রত্যেক মানুষের স্বস্তি ও সমৃদ্ধি আনা ও সত্য ধর্মকে রক্ষার জন্য প্রস্তত করা হয়েছে, এর ভিত্তিও ১৯০৫ সালেই রচিত হয়েছে। বিশ্ব আজ নতুন কোন বিশ্ব ব্যবস্থার মখাপেক্ষী নয়। এ নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা কোন বলপ্রয়োগ বা সহিংসতার ওপর প্রতিষ্ঠিত নয় বরং সৌহার্দ্য ও সহমর্মিতার ওপর এর ভিত্তি।

এ পদ্ধতিতে সংগৃহিত অর্থ কেবল ধর্ম প্রচারে ব্যয় হবে এরূপ মনে করা ঠিক নয়। আমি ইতিমধ্যেই ‘আল ওসীয়্যত’ থেকে উদ্ধৃতির ভিত্তিমূলে দেখিয়েছি, বিবিধ উদ্দেশ্যের পূর্ণতায় এ অর্থ ব্যবহৃত হবে। মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) বলেছেন, এমন সব পরিকল্পনা যা বিশ্বব্যাপী ইসলামের প্রসারের উদ্দেশ্যে গৃহীত। এতে এ অর্থ ব্যয় করা হতে পারে। তখন এ ধরনের সব পরিকল্পনা বিস্তারিত বর্ণনার সময় আসেনি। এর স্পষ্ট অর্থ এই, এর কোন কোন উদ্দেশ্য কেবল ভবিষ্যতেই ব্যাখ্যা করা যাবে। যখন ইসলামকে ব্যবহারিক রূপ দেয়া হবে এবং এর সৌন্দর্য প্রতিভাত হতে শুরু করবে, তখন অনেক উদ্দেশ্য সামনে আসবে যার জন্যে এ থেকে খরচ করা কেবল যথোপযুক্তই হবে না বরং আবশ্যকীয় হয়ে পড়বে। পরন্তু মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) এতীম ও মিসকীনদের দিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছেন, এ অর্থে তাদেরও অধিকার রয়েছে। এ কথাও ইসলামের সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে ইঙ্গিত করছে। এর অধীনে এটি বলা হয়েছে, প্রত্যেক ব্যক্তির জন্য খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা ও শিক্ষার ব্যবস্থা অবশ্যই করতে হবে। আজকের প্রেক্ষপটে কেবল কর আরোপ করে এ উদ্দেশ্য সিদ্ধি সম্ভব নয়। এটা আবশ্যকীয় যেন স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তিও এতদুদ্দেশ্যে নিয়োজিত হয়।

এ আপত্তি উত্থাপন করা যেতে পারে, আমরা একটি ছোট জামাত আর এ ব্যবস্থার প্রত্যশাসমূহ আমাদের হাতে বাস্তব রূপ লাভ করবে এটি একটি বৃথা কল্পনা। এ বিষয়ে আমার উত্তর এই, এটি আমাদের দৃঢ় বিশ্বাসের অংশ যে, আমাদের সিলসিলার বিস্তার খোদা তাআলা কর্তৃক অবধারিত। ইলহাম ও ঐশী প্রতিশ্রুতির আলোকে আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, অর্ধ শতাব্দী বা এক শতাব্দীকালের মধ্যে আহ্‌মদীয়ত নিশ্চিতভাবে প্রাধান্য লাভ করবে। আমরা একই দৃঢ়তার সাথে এ-ও বিশ্বাস করি, সেই ব্যবস্থা যার ভিত্তি হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) রচনা করেছিলেন তা সফলভাবে প্রতিষ্ঠিত হতে বাধ্য। আসমান-যমীন ওলট-পালট হতে পারে, কিন্তু খোদা তাআলা বাক্য অপূর্ণ থাকতে পারে না।

কখনো কখনো এ আপত্তি উঠানো হয়, আমাদের জামাতের অগ্রগতি এত ধীর যে কবে এ বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা পাবে তা কল্পনা করা সম্ভব নয়। এর উত্তর হ’ল, যে কাঠামো দৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, অচিরেই তা ভূলুন্ঠিত হয়। তড়িঘড়ি করে যেসব সামাজিক বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থার পক্ষে আজ কাল প্রচার করা হচ্ছে অচিরেই তা নিঃশেষ হয়ে যাবে। একমাত্র সে ব্যবস্থাই টিকে থাকবে যা মানুষের স্বেচ্ছাপ্রণোদিত সহযোগিতার ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত। ঘাস আজ হয় কাল শুকিয়েও যায়। কিন্তু ফলদায়ী বৃক্ষ বড় হতেও সময় লাগে এবং এরপর দীর্ঘদিন টিকে থাকে। আমাদের জামাত যত বাড়বে এ ব্যবস্থাও তত বৃদ্ধি লাভ করবে। মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) আল্‌-ওসীয়্যতে বলেছেন:

“মনে করিও না যে, ইহা কেবল কল্পনাতীত কথা বরং ইহা সেই সর্বশক্তিমানের অভিপ্রায় যিনি আকাশ ও পৃথিবীর বাদশাহ্‌। এই বিষয়ে আমি চিন্তিত নহি যে, এই অর্থ কিরূপে সংগৃহীত হইবে এবং এরূপ জামাত কিরূপে সৃষ্টি হইবে যাহারা ঈমানে উদ্দীপ্ত হইয়া এমন বীরত্বপূর্ণ ক্রিয়া সম্পাদন করিবে। বরং আমার চিন্তা এই, আমাদের সময়ের পরে যাহাদের হস্তে এই অর্থ সোপর্দ করা হইবে তাহারা অর্থ প্রাচুর্য দেখিয়ে হোঁচট না খায় এবং সংসার প্রেমে নিমজ্জিত না হয়। তাই আমি দোয়া করিতেছি, সর্বদাই যেন এই সিলসিলা এমন সব বিশ্বস্ত ব্যক্তি লাভে সমর্থ হয় যাঁহারা খোদার জন্য কাজ করিবেন। অবশ্য যাহাদের জীবিকার কোন সংস্থান নাই তাহাদের সাহায্যস্বরূপ খরচ ইহা হইতে দেওয়া যাইতে পারে।”

অন্য কথায় সবার সংস্থান হওয়ার জন্য যথেষ্ট অর্থ থাকবেনা তাঁর এমন কোন শংকা ছিল না। তিনি নিশ্চিত ছিলেন, বিশাল অংকের অর্থ ও অনেক সম্পদ একত্র হবে। যে বিষয়ে তিনি শংকিত ছিলেন তা এই, যাদের ওপর এ তহবিলের ভার ন্যস্ত হবে তারা হয়তো প্রলুব্ধ হয়ে পড়তে পারেন এবং এমন উদ্দেশ্যে একে ব্যয় করতে পারেন যা করা উচিত নয়। আর যেসব উদ্দেশ্যে একে নিয়োজিত করা উচিত সেগুলো অবহেলিত ফেলে রাখতে পারেন। সুতরাং মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) স্বয়ং প্রশ্ন উত্থাপন করে এর উত্তর দিয়ে গেছেন। লোকে বলে কোথা থেকে এত টাকা আসবে? তিনি বলেন, আসবে এটা সুনিশ্চিত। তাঁর (আঃ) ভয় এটিই, লোকে এ অর্থে না আবার লোভে পতিত হয়। তিনি নিশ্চিত, অর্থ সম্পদ লাখ কোটিতে আসবে। এমনভাবে যে কোন রাষ্ট্র মার্কিন, রুশ, ইংরেজ, জার্মান, ইতালী বা জাপানী-কোন দিন এত সম্পদের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করেনি। তাঁর শংকা যে এটি আমাদের অসততায় লিপ্ত করতে পারে। সুতরাং কিভাবে এ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে তিনি আমাদের এ নিয়ে উদ্বিগ্ন হতে নিষেধ করেছেন। বরং আমরা নিজেদের যেন এ ভার নেয়ার যোগ্য করে গড়ে তুলতে তৎপর হই। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, বিশাল অর্থ সম্পদের ভার আমাদের ওপর ন্যস্ত হতে চলেছে এবং আমাদের উচিত নিজেদের প্রশিক্ষিত করে সেভাবে গড়ে তোলা যেন মানব কল্যাণে এ তহবিলের সদ্ব্যবহার করতে পারি।

তবে যেমনটি আমি ইঙ্গিত দিয়েছি, এ পরিকল্পনা ফলপ্রসূ হতে সময়ের প্রয়োজন। এতে ততদিন পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে যতদিন না বিশ্বের বড় অংশ আহ্‌মদীয়াত গ্রহণ করে নেয়। আমাদের বর্তমান [১৯৪২ সাল] আয় তো আমাদের কেন্দ্রও সুচারুরূপে পরিচালনার জন্য যথেষ্ট নয়। খোদা তাআলা এজন্য আমার অন্তরে তাহরীকে জাদীদের ধারণা ফুঁকে দিয়েছেন যা আহ্‌মদীয়তের প্রচার ব্যাপকতর করার জন্য কেন্দ্রীয় একটি তহবিল প্রতিষ্ঠার মাধ্যম। সুতরাং তাহরীকে জাদীদ খোদা তাআলার সমীপে একটি প্রতীকী নিবেদন। এর মধ্যে এ ইঙ্গিত রয়েছে, আল্‌-ওসীয়্যতের ওপর ভিত্তি করে একটি সার্বজনীন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার সময় এখনো পরিপক্ক হয়নি। সুতরাং আমরা আর একটি ক্ষুদ্র মডেল তাহরীকে জাদীদের মাধ্যমে স্থাপন করছি। যতদিন আল্‌-ওসীয়্যত ভিত্তিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত না হচ্ছে ততদিন তাহরীকে জাদীদের মাধ্যমে সংগৃহিত তহবিলকে আমরা আহ্‌মদীয়তের প্রচারে ব্যয় করতে পারি। আর এটাই বিস্তৃততার পরিসরে আল্-ওসীয়্যতের উদ্দেশ্যাবলী বাস্তবায়নের পথ রচনা করে দিবে।

এটা স্পষ্ট, আহ্‌মদীয়ত যতই বিস্তার লাভ করবে আল্‌-ওসীয়্যত ভিত্তিক ব্যবস্থা ততই বৃহৎ থেকে বৃহত্তর পরিধি ধারণ করবে এবং জাতীয় তহবিল ক্রমাগত শক্তিশালী হতে থাকবে। সব কিছুরই অগ্রগতি শুরুতে ধীর থাকে। এরপর শীঘ্রই এতে গতি সঞ্চারিত হয়। এটা সত্য, এ মুহূর্তে ওসীয়্যতের মাধ্যমে সংগৃহীত তহবিল খুব একটা বড় কিছু নয়। কিন্তু আহ্‌মদীয়তের প্রসার যতই তরান্বিত হবে এ তহবিলও বৃদ্ধি পেতে থাকবে। স্বাভাবিকভাবেই জ্যামিতিক হারে এটি বৃদ্ধি পাবে এবং এর ফলস্বরূপ নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার পূর্ণ প্রতিষ্ঠার দিন ক্রমেই নিকট থেকে নিকটতর হতে থাকবে।

সারকথা এই, আল্‌-ওসীয়্যতের ব্যবস্থা এর নিজ সত্তায় ইসলামের পূর্ণাঙ্গ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ধারণ করে। যারা মনে করেন, আল্‌-ওসীয়্যতের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত তহবিল কেবলমাত্র ইসলামের আক্ষরিক অর্থে তবলীগের জন্যই ব্যবহার করা যাবে তারা ভ্রান্তিতে আছেন। এটি সঠিক নয়। আল্‌-ওসীয়্যতের গন্ডীতে আক্ষরিক অর্থে তবলীগী প্রচেষ্টা এর অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু এর পাশাপাশি সেই ব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাও এর অংশ। এর অধীনে প্রত্যেক ব্যক্তির চাহিদা মর্যাদাপূর্ণভাবে পূরণ করা হবে। যখন এ ব্যবস্থা পরিপক্কতায় পৌঁছবে তখন এটি কেবল তবলীগি কার্যক্রমেরই অর্থ সংস্থান করবে না, বরং প্রত্যেক ব্যক্তির প্রয়োজন যথাযথভাবে পূরণের মাধ্যমে অভাব-অনটন ও দুঃখদুর্দশাকে নির্মূল করতে ভূমিকা রাখবে। এতীমবে ভিক্ষা করতে হবে না। বিধবাকে দানের জন্য হাত পাততে হবে না। অভাবগ্রস্থকে উৎকণ্ঠায় দিনাতিপাত করতে হবে না। এ সমাজ ব্যবস্থা শিশুদের জন্য মাতৃতুল্য হবে। সব সমাজের জন্য পিতৃতুল্য হবে। আর নারীজাতিকে নিরাপত্তা প্রদান করবে। এ ব্যবস্থার অধীনে, বল প্রয়োগ বা বাধ্য হয়ে নয় বরং প্রকৃত ভালবাসা ও সহানুভূতি থেকে এক ভাই তার নিজ ভাইয়ের পাশে দাঁড়াতে উদগ্রীব থাকবে। আর এ কুরবানীও বৃথা যাবে না। প্রত্যেক দাতাকে খোদা তাআলা বহুগুণে তা পুষিয়ে দিবেন। ধনীরাও ক্ষতিগ্রস্থ হবে না। গরীবরাও অপমানিত বোধ করবে না। এক জাতি অপর অপর জাতির বিরুদ্ধে লড়বে না। এক শ্রেণী অপর শ্রেণীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবে না।

আমি আপনাদের নিশ্চয়তা দিচ্ছি, মিঃ চার্চিল বা মিঃ রুজভেল্টন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার উদ্বোধন করবেন না, আর আটলান্টিক সনদের ন্যায় ঘোষণাপত্রসমূহও কোন উদ্দেশ্য সাধনে সফল হবে না। এগুলো ত্রুটি-বিচ্যুতিতে পরিপূর্ণ। নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা সব সময় খোদা তাআলার প্রেরিত নবীদের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়ে থাকে। তাদের ধনীদের প্রতিও কোন তিক্ততা থাকে না। আর গরীবদের জন্য পক্ষপাতিত্ব থাকে না। তারা প্রাচ্যেরও নয় নয়। তারা আল্লাহ্‌র রসূল হিসেবে সেই শিক্ষার ঘোষণা দেন যা প্রকৃত শান্তির ভিত রচনা করে। আজও শান্তি কেবলমাত্র মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর শিক্ষার অনুসরণেই প্রতিষ্ঠিত হবে। এর ভিত্তি ১৯০৫ সনে আল্‌-ওসীয়্যতে রাখা হয়েছিল। আমাদের সবার আল্‌-ওসীয়্যতের তাৎপর্য অনুধাবন করা উচিত।

আপনাদের মাঝে যারা ইতিমধ্যে আল্‌-ওসীয়্যতে প্রদত্ত নির্দেশনা অনুসারে ওসীয়্যত করেছেন তারা নতুন বিশ্ব ব্যবস্থার ভিত্তি রচনায় অংশগ্রহণ করেছেন। সেই বিশ্ব ব্যবস্থা যা এতে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেক ব্যক্তির নিরাপত্তা বিধান করবে, এমনকি তার পরিবার ও তার উত্তরসূরীদেরও। আপনাদের মাঝে যারা তাহরীকে জাদীদে অংশ নিয়েছেন, তা কেবল এর সফলতার জন্য দোয়া করার মাধ্যমেই হোক না কেন, তারা আল্‌-ওসীয়্যতের ব্যবস্থাকে ব্যপকতর করতে সহায়তা করছেন। ধর্মকে নিঃশেষ করে বিশ্ব এক নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। তাহরীকে জাদীদ ও আল্‌-ওসীয়্যতের মাধ্যমে আপনারা ধর্মের মর্যাদা সমুন্নত রেখে এক উন্নততর বিশ্ব ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করবেন। কিন্তু আপনাদের দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হয়ে অগ্রসর হতে হবে। কেননা, এ দৌড়ে যে অপরকে পিছনে ফেলবে সে বিজয় লাভ করবে। সুতরাং আপনাদের সবারই এ ব্যবস্থায় নিজ ওসীয়্যত করে ফেলা উচিত যেন নতুন বিশ্ব ব্যবস্থা যথাসম্ভব শীঘ্র প্রকাশিত হয়। আর সেই শুভ দিন যেন শীঘ্র আগমন করে যেদিন সর্বত্র ইসলাম ও আহ্‌মদীয়তের পতাকা উড্ডীন থাকতে দেখা যাবে। যারা ইতিমধ্যে ওসীয়্যত করেছেন তাদের আমি আমার অভিন্দন জানাচ্ছি। আর যারা করেননি তাদের জন্য দোয়া করছি যেন খোদা তাআলা এ সামর্থ্য তাদের দান করেন। যার ফলস্বরূপ তারা ইহলৌকিক ও পারলৌকিক কল্যাণে ভূষিত হন। আমি আরো দোয়া করি, এই ব্যবস্থা মানবজাতির জন্য এতটা কল্যাণপ্রদ হয় যে, তারা স্বীকার করতে বাধ্য হয়, এই অজ পাড়া গাঁ কাদিয়ান থেকে এক জ্যোতি প্রকাশিত হয়েছে এটা বিশ্বের অন্ধকার দূরীভূত করেছে এবং একে সত্য জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত করেছে। দুঃখ-যাতনাকে বিলুপ্ত করেছে। আর ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচুর প্রীতি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানকে সম্ভব করেছে, আমীন।

চয়ন ও অনুবাদ-ডঃ আব্দুল্লাহ্‌ শামস্‌ বিন তারিক