শান্তি ও নিরাপত্তার এক সর্বজনীন বার্তা – ডালাসের অ্যালেনে বায়তুল ইকরাম মসজিদের উদ্বোধন – সংবর্ধনা: বায়তুল ইকরাম মসজিদ, অ্যালেন (Allen), টেক্সাস, যুক্তরাষ্ট্র – ২০২২

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস

০১-ডিসেম্বর, ২০২২

শান্তি ও নিরাপত্তার এক সর্বজনীন বার্তা – ডালাসের অ্যালেনে বায়তুল ইকরাম মসজিদের উদ্বোধন
শনিবার, ৮ই অক্টোবর ২০২২, টেক্সাসের ডালাসের নিকট অ্যালেন শহরে বায়তুল ইকরাম মসজিদের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর মূল ভাষণ

৮ই অক্টোবর ২০২২, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত ডালাস শাখার অধীন টেক্সাসের অ্যালেন শহরে বায়তুল ইকরাম (সম্মানিত গৃহ) মসজিদের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত বিশেষ সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে মূল ভাষণ প্রদান করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)। সাপ্তাহিক জুমুআর খুতবার মাধ্যমে এর এক দিন আগে হুযূর আকদাস আনুষ্ঠানিকভাবে এই মসজিদটির উদ্বোধন করেন। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে রাজনীতিবিদ, ধর্মীয় নেতা এবং স্থানীয় অধিবাসীসহ ১৪০ জনের অধিক অতিথি উপস্থিত ছিলেন। হুযূর আকদাস প্রদত্ত বক্তৃতার বঙ্গানুবাদ নিম্নে উপস্থাপন করা হলো:

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম – আল্লাহর নামে, যিনি অযাচিত অসীম দাতা, বারবার দয়াকারী।
সম্মানিত অতিথিবর্গ। আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি ওয়া বারাকাতুহু – আপনাদের সকলের ওপর আল্লাহর শান্তি ও আশিস বর্ষিত হোক।
প্রথমত, আমি এ সুযোগে আমাদের সকল অতিথিকে আজ আমাদের সাথে যোগ দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাতে চাই। আমাদের নতুন মসজিদ, যা মুসলমানদের জন্য একটি উপাসনালয় হিসেবে ব্যবহৃত হবে, এর উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত এই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানটি একটি মুসলমান সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে আয়োজিত একটি পুরোপুরি ধর্মীয় অনুষ্ঠান। আপনাদের অধিকাংশই মুসলমান বা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের সদস্য না হওয়া সত্ত্বেও, আপনাদের অংশগ্রহণ আপনাদের উন্মুক্ত হৃদয়, মহানুভবতা ও সহিষ্ণুতার প্রতিফলন করে যার জন্য আমি আপনাদেরকে অবশ্যই সাধুবাদ জানাই।
প্রশংসাসূচক এ শব্দগুলো কেবল ভদ্রতা প্রকাশের একটি প্রয়াস নয়; বরং, এগুলো হৃদয় থেকে উৎসারিত এবং নিশ্চিতভাবেই, এ জন্য আমার ওপরে দায়িত্ব বর্তায় যে, আমি যেন আপনাদের সকলের কাছে আমার আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করি। কেননা, ইসলামের মহানবী (সা.) বলেছেন, যে-ব্যক্তি মানুষের প্রতি কৃতজ্ঞ নয়, সে খোদা তা’লার প্রতিও কৃতজ্ঞ হতে পারে না। মুসলমান হিসেবে আমরা বিশ্বাস করি যে, আল্লাহ্‌ তা’লা আমাদেরকে এই মসজিদ নির্মাণের সুযোগ ও যোগ্যতা দান করেছেন। সুতরাং, আমাদের অবশ্যই তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে হবে, এবং বাস্তবিকপক্ষে, আল্লাহ্‌র কাছে সত্যিকারের কৃতজ্ঞতা প্রকাশ তখনই সম্ভব যখন আমরা তাঁর সৃষ্টির প্রতিও কৃতজ্ঞ এবং গুণগ্রাহী থাকবো। এই আঙ্গিক থেকে, মুসলমান হিসেবে সকল অতিথিকে ধন্যবাদ জানানো এবং সম্মান প্রদর্শন করা আমার ধর্মীয় দায়িত্ব। অনুরূপভাবে, এই প্রকল্পে যারা কোনো না কোনোভাবে কাজ করেছেন বা সহায়তা প্রদান করেছেন তাদের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও আমার অবশ্য কর্তব্য।

আমাদের জামা’তের নির্মিত যেকোনো মসজিদের অন্তর্নিহিত প্রধান উদ্দেশ্য সব সময় একই হয়ে থাকে। প্রথমত, আমাদের মসজিদগুলো খোদা তা’লার ইবাদতের দায়িত্ব পালনের জন্য আমাদের সদস্যদের সমবেত হওয়ার একটি জায়গা হিসেবে কাজ করে। দ্বিতীয়ত, আমাদের মসজিদগুলো আমাদেরকে খোদার সৃষ্টির সেবা করার এবং ইসলামের শিক্ষার প্রচার করার সুযোগ করে দেয়। এটি (আমাদের জন্য) অত্যন্ত দুঃখ ও বেদনার কারণ যে, ইসলামকে অনেকেই একটি চরমপন্থী এবং অসহিষ্ণু ধর্ম বলে মনে করেন। এটি খুবই সম্ভব যে, এই শহরের কিছু স্থানীয় বাসিন্দা এই মসজিদের উদ্বোধন নিয়ে উদ্বেগ অথবা ভীতি নিজেদের অন্তরে রাখেন। প্রকৃতপক্ষে, যখন আমরা অন্যান্য স্থানে মসজিদ নির্মাণ করেছি, কোন কোন মানুষ নতুন মসজিদ নির্মাণ এবং মুসলমানদের বর্ধিত উপস্থিতি তাদের শহর বা নগরীর শান্তি ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে – এমন আশঙ্কা বা উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন।
যদি কারো মাঝে এমন উদ্বেগ থেকে থাকে, আমি এই মুহূর্তে তাদেরকে আশ্বস্ত করতে চাই যে, একজন নিবেদিতপ্রাণ মুসলমান যিনি ইসলামের শিক্ষা বুঝেন এবং এর মূল্যায়ন করে থাকেন তিনি কখনো এমন আচরণ করতে পারেন না যা ইসলামের দুর্নাম বা এ সম্পর্কে ভুল ধারণার কারণ হয় এবং কখনোই তার পক্ষে অমুসলিমদের জন্য দুঃখ-কষ্টের কারণ হওয়া সম্ভব নয়। সুতরাং, আমি এ বিষয়টি স্পষ্টভাবে ঘোষণা করতে চাই যে, এই মসজিদ কখনো আপনাদের বা আপনাদের সতীর্থ নাগরিকদের কোন প্রকার ক্ষতি বা কষ্টের কারণ হবে না। সমাজে বিভেদ এবং অস্থিরতার বীজ বোনার পরিবর্তে, এই মসজিদ কল্যাণের লক্ষ্যে একটি একতাবদ্ধকারী শক্তি হিসেবে কাজ করবে। এই মসজিদের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য এই যে, এটি যেন চিরন্তন শান্তির এক উৎস এবং সকল ধর্ম ও মতের মানুষের মাঝে সম্প্রীতি ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ লালনের একটি মাধ্যম সাব্যস্ত হয়; এবং সর্বদা এটিই থাকবে, ইনশাল্লাহ্‌। কেবল এখানকার জন্য নয়; বরং, বিশ্বের যেকোন প্রান্তে যেখানেই এবং যখনই আমরা কোন মসজিদ নির্মাণ করে থাকি তার জন্য এটি আমাদের অঙ্গীকার।
সকল মুসলমানের জন্য ইবাদতের সবচেয়ে সমাদৃত ও সম্মানিত স্থান হলো মক্কায় আল্লাহ্‌র পবিত্র ঘর কা’বা। বস্তুত, বিশ্বজুড়ে মুসলমানগণ ইবাদত এবং বিশেষত, নামাযের জন্য কা’বার অভিমুখেই দণ্ডায়মান হয়ে থাকেন। সকল শ্রেণী-পেশা এবং জাতিসত্তার মানুষের নিকট শান্তি ও নিরাপত্তার এক সর্বজনীন বাণী পৌঁছে দিতে আল্লাহ্ তা’লার নির্দেশে কা’বা প্রতিষ্ঠিত এবং নির্মিত হয়েছিল। যেখানে মসজিদসমূহ কা’বার দিকে মুখ করে নির্মাণ করা হয়, সেখানে কেবল বাহ্যিক অভিমুখের দিক থেকেই কা’বার অনুসরণ সেগুলোর জন্য যথেষ্ট নয়; বরং, প্রতিটি মসজিদ এবং সেগুলোতে ইবাদতকারী সকল মুসল্লীর সংগ্রাম করা উচিত যেন তাদের মাঝেও পবিত্র কা’বা ঘর প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য অনুসৃত এবং বিশ্বস্ততার সাথে প্রতিফলিত হয়। আল্লাহর ইবাদতের পাশাপাশি, কা’বার অপর মৌলিক লক্ষ্য, এবং সেইভাবে প্রত্যেক মসজিদেরও লক্ষ্য এই যে, সেগুলো যেন এমন মানুষের স্থান হয় যারা উদারচিত্ত, দয়ালু, কল্যাণকামী এবং যারা তাদের কথায় ও কাজে শান্তি, সমঝোতা, এবং সহানুভূতির বাণী ছড়িয়ে যায়।
সকল মুসলমানের কাছে সম্মানিত ও সবচেয়ে পবিত্র ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের সূরা আলে ইমরান-৩:৯৮ আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা কা’বা সম্পর্কে ঘোষণা করেন যে, ‘যে এতে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ’। এর অর্থ এই নয় যে, কেবলমাত্র কা’বায় উপস্থিত হওয়া বা এর পাশে একবার নামায আদায় করা কোন ব্যক্তিকে শান্তি ও সমৃদ্ধির জীবন দান করবে। এই আয়াত প্রকৃতপক্ষে এই শর্ত আরোপ করে যে, একজন প্রকৃত মুসলমান সেই ব্যক্তি যিনি সকল সময়ে ইসলামের শিক্ষার অনুসরণের মাধ্যমে সেই উদ্দেশ্যকে পূরণ করতে সচেষ্ট থাকেন যার জন্য কাবা নির্মিত হয়েছিল। মৌলিকভাবে, ‘যে এতে প্রবেশ করে, সে নিরাপদ’ – এই কথাটি দাবি করে যে, আল্লাহ্‌ তা’লার প্রকৃত ইবাদতকারী বান্দারা যেন অপরাপর মানুষের অধিকার আদায় এবং সমগ্র মানবজাতির জন্য শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করার দিকে সবিশেষ মনোযোগ নিবদ্ধ করেন। এভাবে কেবল তারাই শান্তি লাভ করবেন না; বরং, অপরের জন্যও শান্তির নিশ্চয়তা প্রদানকারীতে পরিণত হবেন।

সবচেয়ে পরিতাপের বিষয় এই যে, ইসলামের বিরুদ্ধবাদীরা এই অভিযোগ করে থাকেন যে, এটি একটি চরমপন্থী ধর্ম যা সহিংসতা এবং যুদ্ধ-বিগ্রহকে উৎসাহিত করে। সত্য থেকে এর চেয়ে দূরে আর কিছু হতে পারে না। সেই চরম পরিস্থিতি যেখানে অন্যায়ভাবে তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা হয় এবং সরাসরি ইসলামকে ধ্বংস এবং নির্মূল করার প্রয়াস চালানো হয়, এমন ক্ষেত্র ছাড়া ইসলামের শিক্ষা কোন মুসলমানকে যুদ্ধ ঘোষণা বা বলপ্রয়োগের আশ্রয় নেওয়ার অনুমতি দেয় না।
ইসলামের প্রাথমিক যুগে, পরিস্থিতি এত গুরুতর ছিল যে, আল্লাহ্‌ তা’লা মুসলমানদেরকে আত্মরক্ষার অনুমতি দিয়েছিলেন যেন সর্বজনীন ধর্মীয় স্বাধীনতার মূলনীতি সমুন্নত ও রক্ষিত হয়। এমনকি তখনো ইসলাম যুদ্ধের সময়ে পালনীয় শক্ত নিয়মাবলী বেঁধে দেয়, যেখানে, যে-কোন প্রকারের শক্তিমত্তাপূর্ণ প্রত্যুত্তর তাদের ওপর পরিচালিত নিষ্ঠুরতার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া আবশ্যক এবং এর মাঝেও শান্তি স্থাপনের জন্য সকল সম্ভাব্য সুযোগ গ্রহণ করতে হবে, সেই সুযোগ বা সম্ভাবনা যতই সংকীর্ণ হোক না কেন। ইসলামের শিক্ষা অনুসারে একটি প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধের উদ্দেশ্য কখনো প্রতিশোধ বা প্রতিহিংসা নয়। বরং, এর একমাত্র উদ্দেশ্য হলো নিপীড়ন, নিষ্ঠুরতা এবং অবিচারের অবসান ঘটানো। যেই মুহূর্তে নিপীড়ন ও নিষ্ঠুরতা বন্ধ হয়ে যায়, আল্লাহ্‌র নির্দেশ এই যে, সেই মুহূর্তে বল প্রয়োগের যে ব্যবস্থাই নেয়া হোক না কেন, তা থেকে বিরত হতে হবে এবং ন্যায় বিচার ও অনুগ্রহের সাথে আচরণ করতে হবে। এ কারণেই, প্রাথমিক যুগের মুসলমানগণ, যারা লাগাতার নিপীড়নের শিকার ছিলেন, তাদেরকে যখন আত্মরক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল, তার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল ধর্মীয় স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠা করা এবং বিশ্বাসের স্বাধীনতার স্বর্ণালী নীতিকে দৃঢ়-প্রতিষ্ঠিত করা।
পবিত্র কা’বা সম্পর্কে পবিত্র কুরআনের সূরা আল বাকারা-২: ১২৬ আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা ঘোষণা করেন যে, তিনি এই পবিত্র ঘরকে পাপ থেকে এক আশ্রয় এবং সমগ্র মানবজাতির সমবেত শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য এক কেন্দ্র হিসেবে নির্মাণ করেন। এই আয়াতে সমাজের সকল সদস্যের সাথে শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে বসবাস করার যে দায়িত্ব মুসলমানদের ওপর অর্পিত হয়েছে তা পুনর্ব্যক্ত হয়েছে। সুতরাং, যদি কোন ব্যক্তি অন্যের জন্য শান্তির উৎস হতে ব্যর্থ হয়, তবে সে নিজেকে প্রকৃত মুসলমান হিসেবে দাবি করতে পারে না।

শান্তি প্রতিষ্ঠিত রাখতে পবিত্র কুরআনের সূরা আল্ ফুর্‌কান-২৫:৬৪ আয়াতে মুসলমানদের দিকনির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে কীভাবে অজ্ঞ বা শত্রুভাবাপন্ন মানুষের আচরণে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে হবে যারা বিদ্রুপ করে অথবা কর্কশ ভাষায় কথা বলে। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার পরিবর্তে, আল্লাহ্‌ তা’লা মুসলমানদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন তারা যেন প্ররোচনার মুখে নিজেদের মর্যাদা সমুন্নত রাখে, ধৈর্য ধারণ করে এবং প্রত্যুত্তরে ‘তোমার ওপর শান্তি বর্ষিত হোক’ – এ কথা বলে সেখান থেকে সম্মানের সাথে বিদায় নেয়। পবিত্র কুরআন শিক্ষা দেয় যে, আগ্রাসন এবং প্ররোচণার উত্তর সেই একই ভাষায় না দিয়ে, মুসলমানদের উচিত তাদের অহমিকাকে দমন করে এর প্রত্যুত্তরে শান্তির বাণী পেশ করা এবং সকল প্রকার সংঘাত এবং ঝগড়া-বিবাদ এড়িয়ে চলা।
উপরন্তু, আল্লাহ্‌ তা’লা পবিত্র কুরআনের সূচনাতেই একথা ঘোষণা করেন যে, তিনি সকল ধর্ম, বিশ্বাস এবং জাতিসত্তার মানুষের প্রয়োজনসমূহের পূরণকারী এবং লালন-পালন কর্তা। আল্লাহ্‌ তা’লা এটি স্পষ্ট করেছেন যে, তিনি কেবল কতক ধর্মের বা যুগের মানুষের প্রয়োজনসমূহের পূরণকারী নন, বরং তিনি সকল জাতির, সকল ধর্ম-বিশ্বাসের এবং সকল যুগের মানুষের স্রষ্টা এবং লালন-পালন কর্তা। এই কথাগুলো অতুলনীয় সৌন্দর্য এবং প্রজ্ঞায় পরিপূর্ণ, যার মধ্যে অলঙ্ঘনীয় এক অধিকার হিসেবে সর্বজনীন মানবীয় সমতার মূলনীতি সংরক্ষিত হয়েছে এবং এতে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ এবং কল্যাণরাজি কেবল নির্দিষ্ট জাতি বা গোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং, কোন প্রকার বৈষম্য ছাড়াই সকলের ওপরই বর্ষিত হতে থাকে।
যখন মুসলমানগণ যে এক খোদার ইবাদত করে থাকেন, তিনি যখন খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, শিখ বা অন্যান্য ধর্মাবলম্বী মানুষ এবং সেই সকল মানুষ যারা কোন ধর্মে বিশ্বাসী নয় – সমগ্র মানবজাতির প্রভু-প্রতিপালক; তখন একজন মুসলমান কীভাবে কখনো অন্যের জন্য সমস্যা বা দুঃখের কারণ হতে পারেন? বরং, একজন নিষ্ঠাবান মুসলমান, মানুষকে দুঃখ-কষ্ট প্রদানের পরিবর্তে, সর্বদা তাদের জন্য স্বস্তির কারণ, শান্তির এক উৎস এবং অপরাপর সকল মানুষের সাথে সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠায় আকাঙ্ক্ষী এক সত্তা হবেন। একজন সত্যিকারের মুসলমান তিনিই যিনি অন্যের বোঝা কাঁধে নেন এবং তাদের দুঃখ-বেদনাকে নিজের মতো করে অনুভব করেন। সুতরাং, সমগ্র মানবজাতির জন্য সৌহার্দ্যের এই প্রেরণা এবং আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহ এবং করুণা যে সর্বজনীন, এই উপলব্ধির সাথে আমরা মসজিদসমূহ নির্মাণ করে থাকি।

আল্লাহ্‌ তা’লার আদেশের ভিত্তিতে আমরা কেবল তাঁর ইবাদত করাকেই আবশ্যক মনে করি না; বরং, জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমগ্র মানবজাতির অধিকার রক্ষার জন্য জোর প্রচেষ্টা পরিচালনা করাকেও নিজেদের দায়িত্ব বলে মনে করি। আমাদের ধর্মবিশ্বাস দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে, মসজিদ নির্মাণ ছাড়াও, আমাদের জামা’ত সর্বাধিক দারিদ্র্যক্লিষ্ট বিভিন্ন দেশে ও অঞ্চলে হাসপাতাল ও মেডিকেল ক্লিনিক পরিচালনা করে থাকে যার মাধ্যমে এমন সব জনগোষ্ঠীর নিকট স্বাস্থ্য সেবা পৌঁছে, অন্যথায় যাদের জন্য এমন সেবা কখনো তাদের সাধ্যের মধ্যে লভ্য হতো না। অনুরূপভাবে, আমরা বিশ্বের সবচাইতে দরিদ্র কতক অঞ্চলে স্কুল নির্মাণ ও পরিচালনা করে থাকি, যেন স্থানীয় শিশুরা শিক্ষিত হওয়ার সুযোগ লাভ করে। এটি আমাদের দোয়া এবং আকাঙ্ক্ষা যে, আমাদের স্কুলগুলোতে শিক্ষা অর্জন করা শিশুরা তাদের শিক্ষাকে ব্যবহার করে দারিদ্র্যের সেই শৃঙ্খল থেকে মুক্ত হতে সক্ষম হবে যার মাঝে তারা বংশপরম্পরায় আবদ্ধ রয়েছে এবং এরপর তারা তাদের দেশের সেবায় নিয়োজিত হতে সক্ষম হবে এবং তাদের নিজেদের সমাজকে উন্নতি ও অগ্রগতির পথে এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
বিশ্বের সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলে আমরা পরিষ্কার সুপেয় পানির ব্যবস্থা করার জন্য ওয়াটার ফর লাইফ কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করেছি। নিজেদের গ্লাসে পরিষ্কার পানি ঢালতে পারার বিষয়টা এমন যাকে আমরা তুচ্ছ বিষয় হিসেবে ধরে নিই। কিন্তু উন্নয়নশীল বিশ্বে বসবাসকারী লক্ষ-কোটি মানুষের জন্য, এটি এমন এক বৈপ্লবিক অভিজ্ঞতা যা তাদের জীবনকে বদলে দেয়। অনুরূপভাবে, আমরা আরও এক গুচ্ছ মানবসেবামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে চলেছি যার মাধ্যমে আমরা বিরতিহীনভাবে মানবতার সেবায় নিয়োজিত থাকতে সচেষ্ট। এছাড়াও, প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত এলাকায় আমরা মানবসেবামূলক ত্রাণ সরবরাহকারী দল পাঠিয়ে থাকি; যেগুলো মানবিক সহায়তা, নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, এবং চিকিৎসা-সেবা প্রদান করে দুর্গতদের পাশে দাঁড়ায়। এই সকল সেবাই জাতি, গোষ্ঠি, ধর্মবিশ্বাস নির্বিশেষে প্রদান করা হয়। আমরা এর বিনিময়ে কোন পুরস্কার বা প্রতিদানের আকাঙ্ক্ষী নই; কেননা, আমাদের একমাত্র উদ্দেশ্য এবং হৃদয় নিংড়ানো আকাঙ্ক্ষা এই যে, মানবতার দুর্দশা যেন লাঘব হয়। মানবতার সেবা করা আমাদের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। কেননা, ইসলাম আমাদের শিখিয়েছে যে, আমাদের কেবল খোদা তা’লার অধিকারই পূরণ করলে চলবে না; বরং, তাঁর সৃষ্টির অধিকারও পূরণ করতে হবে।

উপরন্তু, ইসলামের শান্তি ও নিরাপত্তার বাণীকে সমগ্র বিশ্বে পৌঁছে দেওয়া এবং আহমদী মুসলমান হিসেবে বিশ্বে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠা ও বজায় রাখার লক্ষ্যে সামনের কাতারে কাজ করাকে আমরা নিজেদের দায়িত্ব বলে গণ্য করি। বস্তুত, শান্তি প্রতিষ্ঠা এবং সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যের এক বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার এ দায়িত্বের কারণেই এই যুগে খোদা তা’লা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের প্রতিষ্ঠাতাকে পাঠিয়েছেন এবং তাঁকে প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ উপাধিতে ভূষিত করেছেন। মহানবী (সা,)-এর এক মহান ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী খোদা তা’লা তাঁকে প্রেরণ করেছেন, যেখানে তিনি বর্ণনা করেছিলেন যে, বহু শতাব্দীর আধ্যাত্মিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের পর তিনি তাঁর বিশ্বস্ত সেবককে শেষ যুগের মসীহ্‌ হিসেবে প্রেরণ করবেন। তরবারি ধারণ করার পরিবর্তে, প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) সকল ধরনের ধর্মযুদ্ধের অবসান ঘোষণা করেন এবং শান্তি, সম্প্রীতি ও ঐক্যের এক বাণী প্রচার করেন। তিনি ব্যাখ্যা করে বলেন যে, ইসলামের ওপর এখন আর বাহ্যিক আক্রমণ করা হচ্ছে না, আর ইসলামের প্রাথমিক যুগের মত একে নিশ্চিহ্ন করার প্রয়াস চালানোও হচ্ছে না। ফলস্বরূপ, এই যুগের [সশস্ত্র] ধর্মীয় যুদ্ধের কোন যথার্থতা নেই।

সুতরাং, ডালাসের স্থানীয় জনসাধারণের এই মসজিদকে ভয় করার কোনো কারণ নেই। আর তাই, এমন যে কারো মনে কোনো সংশয় বা শঙ্কা রয়েছে তাকে এটি জেনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে উৎসাহিত করবো যে, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের নির্মিত এই নতুন মসজিদটি কেবলমাত্র শান্তি, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ এবং সহিষ্ণুতার ইসলামের আলোকিত শিক্ষার প্রতিনিধিত্ব ও প্রতিফলন করবে। যারা ভিন্ন ধর্মাবলম্বী, আমাদের শিক্ষা তাদের সঙ্গে মোকাবিলা করা নয়, বরং তাদেরকে স্বাগত জানানো। আমাদের শিক্ষা আমাদের বিরুদ্ধবাদীদের আক্রমণ করা নয়, বরং তাদের সত্তা ও তাদের অধিকারের সুরক্ষা করা। আর সুস্থ থাকুন, এই মসজিদ থেকে মানবতার জন্য সম্প্রীতি, সৌহার্দ্য এবং সহানুভূতি ছাড়া অন্য কোন কিছু উৎসারিত হবে না।
যারা এই মসজিদে আসবেন তারা ঐ সমস্ত মানুষ হবেন, যারা সম্ভাব্য সর্বোত্তম উপায়ে সমাজের সেবা করতে ইচ্ছুক। তারা ঐ সকল মানুষ হবেন, যারা সমগ্র বিশ্বের সামনে ঘোষণা করবেন প্রকৃত সমৃদ্ধি লাভের উপায় এটিই যে, আমরা যেন সকলে একতাবদ্ধ হয়ে খোদা তা’লা এবং মানবজাতির অধিকার পূর্ণ করি। তারা ঐ সকল মানুষ হবেন, যারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার আমাদের সকলের আকাঙ্ক্ষার ওপর মনোযোগ নিবদ্ধ করে মানবজাতিকে ধর্মবিশ্বাসের পার্থক্যের ঊর্ধ্বে উঠে একতাবদ্ধ হওয়ার আহবান জানাবেন।
এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আজ বিশ্ব বিপর্যয়ের কিনারায় টলমল অবস্থানে রয়েছে, আর বিশ্ব জুড়ে দেশগুলোকে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামাজিক অস্থিরতার এক ভয়াবহ ঝড় ঘিরে ফেলেছে। বেশ কয়েকমাস হয়ে গেল ইউক্রেনের যুদ্ধ চলছে আর আরও বৃহত্তর দুর্যোগ ও যুদ্ধবিগ্রহের অশনি সংকেত নিয়ে অন্ধকার কালো মেঘ আমাদের ওপর ছেয়ে রয়েছে। পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক ব্লক ও জোটসমূহ ক্রমাগতভাবে দৃঢ়তর হচ্ছে আর পৃথিবীতে মেরুকরণ প্রকটতর হচ্ছে। এর ফল এই যে, বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা দিন দিন বিপন্ন হচ্ছে।
সাম্প্রতিক সময়ের পূর্ব পর্যন্ত, নিউক্লিয়ার সমরাস্ত্র ব্যবহারের হুমকি প্রদান করা অচিন্তনীয় বলে মনে করা হতো। কিন্তু, এখন বলতে গেলে প্রতিদিনই এমন হুমকি উচ্চারিত হচ্ছে। বিশ্বের পরিস্থিতির যেভাবে অবনতি হচ্ছিলো তা লক্ষ করে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বহু বছর পূর্ব থেকেই বিশ্বের বর্তমান বিপর্যয়োন্মুখ অবস্থার বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করে আসছে। বৃহত্তর কল্যাণের লক্ষ্যে, বিশ্বে শান্তি ও সৌহার্দ্য প্রতিষ্ঠার খাতিরে সকল মত-বিরোধ উপেক্ষা করার জন্য আমরা বিশ্ব নেতৃবর্গ, সরকারসমূহ এবং আপামর জনসাধারণের কাছে আহ্বান জানিয়েছি।

আমি সর্বদা মানুষকে শান্তির প্রকৃত মূল্য অনুধাবন করানোর চেষ্টা করেছি এবং বিভাজন সৃষ্টিকারী অন্যায় নীতিসমূহ অবলম্বনে ঝুঁকি সম্পর্কে তাদেরকে সচেতন করার চেষ্টা করেছি, যেগুলো কেবল অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং এমন নৈরাশ্যের কারণ হয়, যেগুলো পরিণামে উত্তপ্ত ও বিস্ফোরিত হতে বাধ্য। আমাদের সকলের জন্য আবশ্যক আমরা যেন আমাদের নেতৃবৃন্দ ও রাজনীতিবিদদের আহ্বান জানাই তারা যেন এই সংকটের কিনারা থেকে পিছু হটেন। কেননা, এতে কোন সন্দেহ নেই যে, যদি একটি বৈশ্বিক যুদ্ধের সূচনা হয়ে যায়, তবে তা এমন হবে যার তুলনা বিশ্ববাসী ইতিপূর্বে অবলোকন করে নি। নিশ্চিতভাবে, এর ভয়াবহ বিধ্বংসী পরিণাম আমাদের কল্পনার সীমানার চেয়েও বহু দূরে।
অনেক দেশের হাতে আজ অত্যাধুনিক মারণাস্ত্র বিদ্যমান, যেগুলো মাত্র একটি আঘাতে হাজারে হাজারে মানুষ হত্যা করার ভীতিকর ক্ষমতা রাখে। আর কেবল আমরাই এই যন্ত্রণা ভোগ ও এর জন্য আফসোস করবো না; বরং, আমাদের সন্তান এবং পরবর্তী প্রজন্মসমূহ আমাদের পাপের পরিণাম ভোগ করবে এবং তাদের নিজেদের কোনো দোষ ছাড়াই তাদের জীবন বিনষ্ট হয়ে যাবে। উদাহরণস্বরূপ, তেজস্ক্রিয়তার শিকার হওয়ার বিষাক্ত প্রভাব এমন যে, যদি কখনো কোন নিউক্লিয়ার বোমা ব্যবহৃত হয়, তবে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে সন্তানাদি মারাত্মক জেনেটিক বা শারীরিক ত্রুটি নিয়ে জন্ম লাভ করতে পারে। তারা জীবন হরণকারী রোগের সহজ শিকার হবে এবং তাদের আয়ুষ্কাল আরো সংক্ষিপ্ত হবে। সন্দেহ নেই যে, এই নির্দোষ মানুষগুলো আমাদের দিকে ক্ষোভের সাথে ফিরে তাকাবে। তাদের পূর্বপুরুষগণ তাদের অহম এবং স্বার্থান্বেষী উদ্দেশ্যসমূহকে কেন বিধ্বংসী যুদ্ধের দিকে পরিচালিত করার সুযোগ করে দিয়েছে যেগুলো তাদের পরবর্তী প্রজন্মসমূহকে শারীরিক, মানসিক এবং অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গু করে ছেড়েছে, এ নিয়ে তারা পরিতাপ করবে।
সুতরাং, বিশ্বের কাছে আমার একান্ত অনুরোধ এবং বার্তা এই যে, আমাদেরকে অবশ্যই আমাদের ভেদাভেদ উপেক্ষা করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যেতে হবে; যেন আমরা আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে, খোদা না করুন, এমন এক জীবনে নিপতিত না করে, যেখানে দুর্দশা ও নৈরাশ্য ছাড়া আর কিছুই থাকবে না, তাদের রক্ষা করতে পারি। যেখানেই নিষ্ঠুরতা বা অবিচার, আমাদের অবশ্য সেটির নিন্দা জানাতে হবে; আমাদেরকে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবর্গকে আহ্বান জানাতে হবে, তারা যেন আমাদের দেশকে যুদ্ধের দিকে ধাবিত করার পরিবর্তে, এবং প্রতিশোধ ও সহিংসতা হুমকি প্রদানের মাধ্যমে পরিস্থিতি উত্তপ্ত করার পরিবর্তে, তারা যেন আন্তর্জাতিক পরিসরে এবং দেশের অভ্যন্তরে কূটনীতি এবং প্রজ্ঞার যথাযথ প্রয়োগের মাধ্যমে বিদ্যমান টানাপোড়েনকে প্রশমিত করার প্রয়াস গ্রহণ করেন। তাদেরকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, বিশ্বের শান্তি ও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যেন তাদের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হয়।
শান্তি প্রতিষ্ঠার এই প্রয়াসে, মুসলমান, খ্রিস্টান, ইহুদি, হিন্দু, শিখ – সবারই নিজ ভূমিকা রাখতে হবে। যারা কোন খোদায় বিশ্বাসী নন বা কোন ধর্মের অনুসারী নন, তাদেরকেও নিজ ভূমিকা পালন করতে হবে। নিজেদেরকে বিচ্ছিন্ন না করে এবং একে অপরের বিষয়ে ভীতিপূর্ণ না হয়ে, মানবতার খাতিরে আমাদের একতাবদ্ধ হতে হবে। ধর্মীয় মানুষজনকে তাদের নিজ নিজ পদ্ধতিতে, প্রকৃত এবং স্থায়ী শান্তির উদয়ের জন্য খোদা তা’লার সাহায্য ও অনুগ্রহ যাচনা করে নিবিষ্টচিত্তে প্রার্থনা করতে হবে।

আমার হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে, আমি প্রার্থনা করি যে, এই পৃথিবী যেন সকল প্রকারের ধ্বংসযজ্ঞ ও বিপর্যয় থেকে রক্ষা পায়। আমি দোয়া করি যেন যুদ্ধ ও রক্তক্ষয়ের সুদীর্ঘ ছায়া যা আমাদের ওপর ছেয়ে আছে, তা যেন সরে গিয়ে শান্তি ও নিরাপত্তার চিরস্থায়ী নীল আকাশ আমাদের সামনে উন্মোচন করে। খোদা তা’লা বিশ্বের ওপর দয়া প্রদর্শন করুন।
পরিশেষে, আমি দোয়া করি যেন ডালাসে আমাদের এই নতুন মসজিদ চিরকাল মানবজাতির জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির এক আবাস হিসেবে সেবা করে যায়। এর আধ্যাত্মিক জ্যোতি যেন এর চতুর্পার্শ্বকে আলোকিত করে এবং শান্তি ও মানবতার এক প্রতীক হিসেবে চিরকাল আলোকোজ্জ্বল থাকে। আমীন।
এই কথাগুলোর সাথে, আজ এই অপরাহ্ণে আমাদের মাঝে উপস্থিত হওয়ার জন্য আমি আরো একবার আপনাদেরকে ধন্যবাদ জানাই। কংগ্রেসম্যান, মেয়র এবং সিটি কাউন্সিলকে তাদের উপহারের জন্য আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আপনাদেরকে অনেক ধন্যবাদ।

অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শামস বিন তারিক
মূল: https://www.reviewofreligions.org/40253/a-universal-message-of-peace-security-the-opening-of-the-baitul-ikram-mosque-in-dallas/