হিউম্যানিটি ফার্স্ট – দুর্দশাগ্রস্তদের অশ্রুমোচন – আন্তর্জাতিক হিউম্যানিটি ফার্স্ট সম্মেলন ২০২১

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) খলীফাতুল মসীহ্ আল্ খামেস

৩১-অক্টোবর, ২০২১

হিউম্যানিটি ফার্স্ট – দুর্দশাগ্রস্তদের অশ্রুমোচন
হিউম্যানিটি ফার্স্ট ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ২০২১-এর উদ্দেশে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান, পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর ভাষণ

৩১শে অক্টোবর ২০২১ হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলনের সমাপনীতে ভাষণ প্রদান করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান, পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)। দুই দিনের অনুষ্ঠানমালার প্রথম দিন শনিবার লন্ডনের বায়তুল ফুতূহ মসজিদে, আর দ্বিতীয় দিন রবিবার টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে অনুষ্ঠিত হয়। এর প্রতিপাদ্য ছিল ‘সক্ষমতা সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ’। কোভিড-১৯ এর জন্য এক বছর বিলম্বিত হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর রজত জয়ন্তী সম্মেলনটিতে সশরীরে এবং ভার্চুয়ালি (অনলাইনে) মিলিয়ে ১২০০ এর অধিক ব্যক্তি যোগদান করেন, যার মধ্যে বিশ্বের ৬০টির অধিক দেশের হিউম্যানিটি ফার্স্ট প্রতিনিধি ও সদস্য অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। মূল ভাষণের পূর্বে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর চেয়ারম্যান বিগত ২৬ বছরের হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর কর্মকাণ্ডের ওপর একটি সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট পেশ করেন। হুযূর আকদাসের মূল ভাষণের বঙ্গানুবাদ নিম্নে পেশ করা হলো।

তাশাহুদ, তাআব্বুয ও তাসমীয়ার পর, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান হযরত খলীফাতুল মসীহ আল খামেস (আই.) বলেন:
আল্লাহর ফযলে, এই সপ্তাহান্তে আপনারা হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করতে সমর্থ হয়েছেন। যেমনটি রিপোর্টেও উল্লেখ করা হয়েছে, গতবছর হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর রজত জয়ন্তী উপলক্ষে আপনাদের এই সম্মেলনটি আয়োজনের কথা ছিল। কিন্তু, কোভিডের কারণে এটি এ পর্যন্ত বিলম্বিত হয়েছে। যেক্ষেত্রে কিছু সংখ্যক মানুষ সশরীরে এতে যোগদান করতে পেরেছেন, কোভিডের চলমান প্রভাবে, সেক্ষেত্রে হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর অধিকাংশ সদস্য এই অনুষ্ঠানটিতে দূর থেকেই যোগদান করছেন এবং অন্যান্য দেশ থেকে আমার বক্তব্য শ্রবণ করছেন।
হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর প্রথম আনুষ্ঠানিক নিবন্ধনের ২৬ বছর হয়ে গেছে, আর আল্লাহ্‌র ফযলে, একেবারেই এর সূচনা লগ্ন থেকে হিউম্যানিটি ফার্স্ট ক্রমাগতভাবে অগ্রগতি ও উন্নতি সাধন করেছে এবং বিশ্বের বিভিন্ন অংশে বেশকিছু প্রভাব বিস্তারকারী কাজ সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়েছে। আমেরিকা, ইউরোপ, পুরো আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য, এশিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের ৬০টির অধিক দেশে কোন না কোনভাবে এটি সেবা প্রদান করেছে। কোন কোন দেশে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় সাড়া দিয়েছে এবং স্থানীয় জনগণের নিকট দ্রুতগতিতে ত্রাণ পৌঁছে দিয়েছে; আর অন্যান্য দেশে, এটি স্থায়ী অবকাঠামো এবং চলমান কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করেছে যেগুলো স্থানীয় জনসাধারণের মৌলিক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে প্রস্তুত করা হয়েছে।
এর বিভিন্ন প্রকল্পের মধ্যে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট সুবিধাবঞ্চিত মানুষের সহায়তার জন্য বিভিন্ন দেশে ফুড ব্যাংক স্থাপন করেছে, ঈদের সময়ে বৃহৎ পরিসরে পশু কোরবানির ব্যবস্থা করেছে। গৃহহীন এবং এতিমদের ন্যায় সমাজের সবচেয়ে নাজুক পর্যায়ের সদস্যদের সেবা প্রদানের জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি প্রতিষ্ঠা করেছে। উপরন্তু, এর বিভিন্ন কর্মসূচি দীর্ঘস্থায়িত্বকে মাথায় রেখে প্রণয়ন করা হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, এটি কৃষি এবং খামারের বিষয়ে সহযোগিতা প্রদান করছে, এটি চিকিৎসা বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং বিভিন্ন দক্ষতার প্রশিক্ষণ প্রদান করছে, এবং সম্মুখ-সারির স্বাস্থ্যসেবাও প্রদান করছে। অনুরূপভাবে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট কয়েক বছর ধরে ‘গিফ্‌ট অফ সাইট’ কর্মসূচি পরিচালনা করে আসছে। এর ওয়াটার ফর লাইফ কর্মসূচির মাধ্যমে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট পৃথিবীর প্রত্যন্ত এলাকায় বসবাসকারী মানুষের কাছে বিশুদ্ধ ও সুপেয় পানি পৌঁছে দিচ্ছে। যেভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ভূমিকম্প, বন্যা অথবা অন্যান্য প্রাকৃতিক বিপর্যয় আক্রান্ত দেশসমূহে দুর্যোগ সহায়তা এবং জরুরি ত্রাণ সরবরাহ করছে।
স্থায়ী প্রতিষ্ঠানের দিক থেকে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট স্কুল, হাসপাতাল, এতিমখানা এবং আশ্রয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছে। এভাবে, আল্লাহ্‌র ফযলে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট বর্তমানে একটি অত্যন্ত সুপ্রতিষ্ঠিত এবং সমাদৃত আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বস্তুত, হিউম্যানিটি ফার্স্ট এখন সেই পর্যায়ে উপনীত হয়েছে যেখানে অন্যান্য এনজিও অথবা অনুরূপ মানবসেবামূলক সংস্থা এখন এর সাথে যৌথভাবে কাজ করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করছে। উদাহরণস্বরূপ, একটি দেশে, একটি আন্তর্জাতিক এনজিও, যার সাথে জাতিসংঘের সম্পর্ক রয়েছে, হিউম্যানিটি ফার্স্টকে তহবিল প্রদানের জন্য তাদের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে, যেন তাদের পক্ষ থেকে এটি মানবসেবামূলক কাজ এবং প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়ন করতে পারে। এ থেকে বুঝা যায় যে, আল্লাহ্‌র ফযলে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট অন্যান্য মানবসেবামূলক সংস্থার শ্রদ্ধা এবং আস্থা অর্জন করেছে, এবং এদের মধ্যে এমন সংস্থাও অন্তর্ভুক্ত যারা জাতিসংঘের সাথে সম্পর্ক রাখে।
অবশ্য, এটি হওয়ারই ছিল, কেননা মহানবী (সা.) বলেছেন যে, যদি তোমাদের আচার-আচরণ ভালো হয়, তাহলে মানুষ তোমাদের সমাদর করবে এবং তুমি এমন বিবেচনা করতে পারো যে, তুমি সমাজের প্রতি ইতিবাচক অবদান রেখেছে। একদিকে যেখানে, আল্লাহ্‌ ছাড়া কারো কাছ থেকে, আমরা কোন স্বীকৃতি বা পুরস্কারের আকাঙ্ক্ষী নই, যেমনটি আমি বর্ণনা করেছি, ক্রমবর্ধিষ্ণু হারে বিভিন্ন বাইরের সংগঠন এবং এমনকি কতক সরকারি সংস্থাও হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর অবদানের স্বীকৃতি প্রদান করেছে, যা এর দ্বারা পরিচালিত কল্যাণমূলক কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতি বহন করে। এটি এ বিষয়ের প্রতিফলন যে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট সেই মহান উদ্দেশ্য পরিপূরণের লক্ষ্যে একনিষ্ঠভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেছে, পবিত্র কুরআনে আল্লাহ্‌ তা’লা আমাদেরকে যার নির্দেশ প্রদান করেছেন আর যা একজন মুসলমানের জীবনভর উদ্দেশ্য হওয়া উচিত – আর তা হল মানবতার সেবায় নিয়োজিত হওয়া এবং যারা কোন প্রকার দুর্দশার মুখোমুখি তাদের প্রয়োজন পূরণ করা।
বারবার, পবিত্র কুরআন মুসলমানদের নির্দেশ প্রদান করেছে ধর্ম-গোত্র-বর্ণ নির্বিশেষে যারা বিপন্ন বা অভাবী তাদের পাশে দাঁড়াতে। উপরন্তু, মহানবী (সা.)-এর এমন অগণিত হাদীস রয়েছে যেগুলো এ বিষয়টির ওপর আলোকপাত করে কীভাবে তিনি তাঁর সারাটা জীবন মানবজাতির সেবায় ব্যয় করেছেন, আর তাঁর অনুসারীদের মাঝে সেই একই সহমর্মিতার প্রেরণা জাগ্রত করার জন্য চেষ্টা করে গেছেন। নিশ্চিতভাবে, মহানবী (সা.) মানবজাতির জন্য রহমতের এক চিরন্তন উৎস ছিলেন, আর তাঁর পবিত্র কথা ও কাজ দ্বারা তিনি ইসলামের অসাধারণ শিক্ষার ওপর অত্যুজ্জ্বল এবং চিরস্থায়ী আলোকপাত করে গেছেন এবং তিনি দেখিয়ে গিয়েছেন যে, মানবজাতির সেবা করা আমাদের ধর্ম-বিশ্বাসের একটি অবিচ্ছেদ্য এবং একেবারেই মৌলিক অঙ্গ।
উদাহরণস্বরূপ, ইসলাম আমাদেরকে নির্দেশ প্রদান করে যেন এতিমদের সুরক্ষা লালন পালন করা হয়, যারা মুসাফির তাদের যেন সহযোগিতা করা হয়, সমাজে যারা অভাবী এবং বঞ্চিত তাদের যেন ব্যবস্থা করা হয় এবং যারা রোগব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের যেন সেবা-যত্ন করা হয়। এছাড়াও, ইসলাম শিক্ষা দেয় যে, কারো ওপর তার প্রতিবেশীর অনেক বড় অধিকার রয়েছে। মুসলমানদেরকে শেখানো হয়েছে যে, তাদেরকে অবশ্যই তাদের প্রতিবেশীর সাথে অনুগ্রহ ও সহমর্মিতার আচরণ করতে হবে, এবং সদাসর্বদা তাদের প্রয়োজনের সময় এবং তাদের দুঃখের সময়ে তাদের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। একটি সুপরিচিত হাদীসে মহানবী (সা.) বলেন যে, ফেরেশতা জিব্রাইল প্রতিবেশীর অধিকার আদায় এবং তাদের সাথে ভালোবাসা ও সহানুভূতির আচরণ করার বিষয়ে এত বেশি জোর দিয়ে তাগাদা দিয়েছিলেন যে, তাঁর মনে হতে লাগলো যে, হয়তোবা তাদেরকে মুসলমানদের উত্তরাধিকারীদের মধ্যেও অন্তর্ভুক্ত করা হবে। উপরন্তু, ইসলামে প্রতিবেশীর সংজ্ঞা অত্যন্ত বিস্তৃত এবং সুদুরপ্রসারী। এর মধ্যে কেবল নিকটে বসবাসকারীরাই অন্তর্ভুক্ত নন, বরং এর মধ্যে সেই সকল মানুষ অন্তর্ভুক্ত যারা আরও দূরে বাস করেন – যেমন, কারো সফরসঙ্গী, কর্মক্ষেত্রের সহকর্মী, অধীনস্থ এবং আরো অনেকে। বস্তুত, প্রতিবেশীর ধারণা এত বিস্তৃত যে, সমাজের সকল সদস্যকে আমাদের প্রতিবেশী হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।
আর তাই, মানবজাতির সকল সদস্যকে তাদের ব্যথা-বেদনা থেকে বের হয়ে আসতে সহায়তা করা একজন আহমদী মুসলমানের ধর্মীয় দায়িত্ব। আল্লাহ্‌র ফযলে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর কাজের মধ্য দিয়ে অনেক আহমদী এই সুযোগ লাভ করেছেন তাদের প্রতিবেশীদের সেবা করার এবং তাদের চাহিদা পূরণের, যার মধ্যে যেমন নিকটবর্তীরাও রয়েছেন, তেমনি এমন মানুষ রয়েছেন যারা বহু দূরে বাস করেন – ভিন্ন দেশে কিংবা ভিন্ন মহাদেশে।
তদুপরি, আল্লাহ্‌ তা’লা এবং তাঁর রসুল (সা.) যারা রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য প্রয়াসী হওয়ার, তাদের চিকিৎসা সেবা প্রদানের, তাদের সেবা-যত্ন করার, এবং নিয়মিত তাদের স্বাস্থ্যের খোঁজ-খবর নেওয়ার জন্য মুসলমানদের নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ প্রসঙ্গে মহানবী (সা.) বলেছেন, যখনই কেউ আল্লাহ্‌র খাতিরে কোন অসুস্থ ব্যক্তির সাথে সাক্ষাতের জন্য যান, একজন ঐশী ঘোষণাকারী ঘোষণা করেন যে, ‘আপনার প্রতিটি পদক্ষেপ আশিসমণ্ডিত হোক, এবং আপনাকে জান্নাতে একটি আবাসস্থল দ্বারা পুরস্কৃত করা হোক’। মহানবী (সা.) কেবল মুসলমানদেরকে যারা অসুস্থ তাদের আরামের ব্যবস্থা করা এবং চিকিৎসার সেবা প্রদানের নির্দেশই দেন নি, বরং তিনি তাদেরকে সুসংবাদ দিয়েছেন যে, যারা অসুস্থদের সেবা-যত্ন করার জন্য আন্তরিক প্রচেষ্টা করে থাকে তারা পরকালে পুরস্কৃত হবেন। অনুরূপভাবে, যারা তাদেরকে আল্লাহ্‌ তা’লা যে রিযিক দান করেছেন তা থেকে হাসপাতাল ও ক্লিনিক নির্মাণে বা চিকিৎসা সেবা প্রদানের জন্য দান করেন, তারা সেই সকল মানুষ যারা প্রকৃতপক্ষে জান্নাতে নিজেদের ঘর নির্মাণ করছেন।

এই সকল ইসলামী শিক্ষার আলোকে, আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত বিভিন্ন দেশে অনেক হাসপাতাল এবং স্কুল নির্মাণ করেছে। কিন্তু, যেখানে কোন কোন দেশে আমাদের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিরোধিতার কারণে আমাদের পক্ষে সরাসরি এমন সুযোগ-সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে হিউম্যানিটি ফার্স্ট আমাদেরকে একটি অসাধারণ রাস্তা খুলে দিয়েছে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের দায়িত্ব পালন করতে পারি এবং অন্যের সেবা করার আমাদের আন্তরিক আকাঙ্ক্ষা পূরণ করতে পারি।

অনুরূপভাবে, পবিত্র কুরআন ঘোষণা করে যে, যারা এতিমদের সুরক্ষা করে এবং তাদের আহার্য প্রদান করে তারা আল্লাহ্‌র নৈকট্যপ্রাপ্তদের অন্যতম, আর যারা তাদের চাহিদাকে উপেক্ষা করে তারা তাঁর কোপগ্রস্তদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। মহানবী (সা.)-ও বারবার এতিমদের দেখাশোনা করা এবং সমাজের সকল দুর্বল ও বিপন্ন সদস্যদের সহায়তায় এগিয়ে আসার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। বস্তুত, বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা.) একবার বলেন, ‘আমাকে দুস্থ এবং দরিদ্রদের মাঝে পাবে। নিশ্চিতভাবে, তোমরা দুর্বল এবং বঞ্চিতদেরকে যে সাহায্য করো, তার জন্যই তোমাদেরকে রিযিক প্রদান করা হয় এবং সাহায্য করা হয়’। এখানে, মহানবী (সা.) ঘোষণা করছেন যে, যারা দুর্বল এবং অসহায়, তিনি তাদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকেন, এবং যদি কেউ তাঁর ভালোবাসা এবং আল্লাহ্‌র ভালোবাসা লাভ করার আকাঙ্ক্ষা করেন, তবে তার উচিত যারা অসহায়, যারা দুর্ভাগ্যের শিকার, তাদের সহায়তাকল্পে এগিয়ে আসা।
প্রশ্নাতীতভাবে, মহানবী (সা.)-এর আশিসমণ্ডিত ও মহান শিক্ষা, এবং ব্যবহারিক আচরণ মুসলিম সমাজের জন্য, তথা বিস্তৃত পরিসরে সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য এক কালোত্তীর্ণ দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে আসে। এটি তার জীবনপদ্ধতি ছিল যে, তিনি দুর্বল, বঞ্চিত, অথবা অল্প বয়সে পিতৃ-মাতৃহারা বা অভিভাবকহীনদের পাশে দাঁড়াতেন, এবং তাঁর অনুসারীদের কাছেও এটিই তাঁর প্রত্যাশা। সুতরাং, যারা দারিদ্র্যক্লিষ্ট, বা কাঠিন্যে পতিত, তাদের সেবার কোন সুযোগ কখনো হাতছাড়া করবেন না। আর কখনো, খোদা না করুন, আপনাদের মনে অহংকারের লেশমাত্র প্রবেশ করতে দিবেন না, এমন কথা চিন্তা করে যে, আপনারা তাদের প্রতি অনুগ্রহ করেছেন; বরং তারা আপনার প্রতি অনুগ্রহ করছেন, কেননা, তারা আপনাকে খোদার সন্তুষ্টি অর্জনের, এবং ইহকালে ও পরকালে তাঁর কল্যাণরাজি লাভের একটি সুযোগ করে দিচ্ছে।
যারা কষ্টে নিপতিত অথবা যারা বঞ্চনার শিকার তাদের কষ্ট লাঘবের জন্য আল্লাহ্‌র ফযলে, আহমদীগণ উদার হস্তে তাদের সম্পদ কুরবানি করে থাকেন, আর এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখেই হিউম্যানিটি ফার্স্ট প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। অনুরূপভাবে, মহানবী (সা.) বলেছেন যে, যারা ক্ষুধার্ত তাদের খাবারের ব্যবস্থা করা উচিত, আর তাই হিউম্যানিটি ফার্স্ট ফুড ব্যাংক প্রতিষ্ঠা করেছে; যা থেকে হাজার হাজার মানুষ উপকার লাভ করছে। কোন কোন দেশ এ বিষয়ে বিশেষ ভালো কাজ করেছে; যেমন, কানাডা এবং যুক্তরাজ্য। আর অন্যরাও তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুসারে কাজ করে যাচ্ছে। হিউম্যানিটি ফার্স্ট যুক্তরাষ্ট্রও ফুড প্যান্ট্রি পরিচালনা করছে যেখান থেকে হাজার হাজার মানুষ কল্যাণমণ্ডিত হচ্ছে।
অভাবীদের জন্য উদার হাতে দান করা প্রসঙ্গে, বর্ণিত আছে যে, মহানবী (সা.) একবার বলেছিলেন, প্রতিদিন দুই জন ফেরেশতা নেমে আসেন, তাদের একজন বলে, “হে আল্লাহ্‌, যে দান করে তাকে আরো বেশি দাও এবং তার পদাঙ্ক অনুসরণকারী আরো সৃষ্টি করো।” এতে, অন্যান্য ফেরেশতারা বলে, “হে আল্লাহ্‌, সেই ব্যক্তি যে দান হতে বিরত হয় এবং কার্পণ্য প্রদর্শন করে সে ধ্বংস হোক, এবং তার সকল সম্পদ ও ধনরাশি নিঃশেষ হয়ে যাক।” কেবল অন্যের সেবার সামর্থ্য লাভ করার এই উদ্দেশ্য নিয়েই হিউম্যানিটি ফার্স্ট তহবিল সংগ্রহের জন্য সচেষ্ট হয়, এবং এই প্রেরণা লক্ষ করে অনেক অ-আহমদী এবং অমুসলিম ব্যক্তি ও গোষ্ঠী উল্লেখযোগ্য পরিমাণ অর্থ এখানে দান করেছেন এবং হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর ওপর তাদের আস্থা প্রকাশ করেছেন। তারা এটা স্বীকার করেন যে, অন্যান্য মানবসেবামূলক ত্রাণ সংস্থার মধ্যে যেগুলোকে তারা দেখেছেন, সেগুলোর তুলনায় হিউম্যানিটি ফার্স্ট নিজেদের স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী ব্যবহার করার মাধ্যমে নিশ্চিত করে যে, প্রশাসনিক খরচ যেন ন্যূনতম হয়, যেন সর্বোচ্চ পরিমাণ অর্থ, যারা এর দাবিদার, তাদের সেবা ও সহযোগিতার জন্য ব্যয় করা সম্ভব হয়।
সর্বদা, কোন রূপে নিজেদের কোন ব্যক্তিস্বার্থ চরিতার্থ করার পরিবর্তে, সমাজের দুর্বলতম সদস্যদের স্বার্থে এগিয়ে আসাটাই হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর প্রত্যেক সদস্যের প্রাথমিক উদ্দেশ্য এবং আকাঙ্ক্ষা হওয়া উচিত। আপনারা নিশ্চিত থাকুন যে, যদি আপনারা নিঃস্বার্থভাবে এবং কেবল আল্লাহ্‌রই খাতিরে তাঁর সৃষ্টির সেবা করেন তবে নিশ্চিতভাবে তিনি আপনাদেরকে এই পৃথিবীতে এবং পরকালে পুরস্কৃত করবেন। আমাদের ধর্মীয় ব্যবস্থাপনা থেকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে হিউম্যানিটি ফার্স্ট পরিচালিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে যে, কেউ যেন আমাদের উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলতে না পারে, অথবা এমন ধারণা না করে যে, আমরা আমাদের মানবসেবামূলক কাজের মধ্য দিয়ে ধর্মীয় ক্ষেত্রে কোন প্রকারের সুবিধা বা সুযোগ লাভ করে থাকি।
যাহোক, কখনো ভুলে যাবেন না যে, ইসলামের উদার শিক্ষা আপনাদের প্রকৃত প্রেরণার উৎস হয়ে আছে এবং সর্বদা থাকবে। কখনো এ বিষয়টি এড়িয়ে যাবেন না যে, এটি আপনাদের ধর্ম এবং আল্লাহ্ তা’লার ওপর আপনাদের বিশ্বাসই সেই বিষয় যা আপনাদেরকে মানবতার সেবায় উদ্বুদ্ধ করে। সুতরাং, যেখানেই হিউম্যানিটি ফার্স্ট কোন প্রকার সেবা প্রদান করে, অথবা যেখানে এটি তহবিলের জন্য আহবান করে, মানুষকে এ বিষয়টি জানানোর জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করুন যে, আপনারা ইসলামের অনিন্দ্যসুন্দর শিক্ষার দ্বারা অনুপ্রাণিত এবং এটি আপনাদের ধর্ম যা আপনাদেরকে সহানুভূতি এবং উদারতার এক প্রেরণার সাথে অন্যের সেবায় এগিয়ে আসতে বাধ্য করে।
আমি ইতোমধ্যেই উল্লেখ করেছি কীভাবে মহানবী (সা.) তাঁর অনুসারীদের মাঝে যারা নিপীড়িত এবং দুর্দশায় নিপতিত তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার এক আকাঙ্ক্ষা গড়ে দিয়েছিলেন। তাঁর আশিসমণ্ডিত পদচিহ্ন অনুসরণ করে, এই যুগে, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) সর্বদা মানবতার সেবার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন এবং তাঁর জামা’তের সদস্যদের দরিদ্র এবং বঞ্চিতদের সেবায় এগিয়ে আসার নির্দেশ প্রদান করেছেন। এ কারণেই, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের সদস্যদের মাঝে মানবজাতির সেবায় এগিয়ে আসার এক বিশেষ প্রেরণা ও আকাঙ্ক্ষা বিদ্যমান। একবার মানবজাতির অধিকার আদায় করার বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে, হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.) বলেন:
“সবচেয়ে কঠিন এবং দুষ্কর চ্যালেঞ্জ হলো মানবজাতির অধিকার আদায় করা; কেননা, এটি একটি পরীক্ষা যার মুখোমুখি কোন ব্যক্তি সকল সময়ে হয়ে থাকে এবং যা সর্বদা তার সামনে থাকে।” তিনি বলেন, “সুতরাং, প্রত্যেকের উচিত অতি সন্তর্পণে চলা এবং এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার সময়ে সর্বদা সচেতন থাকা।” মসীহ্‌ মওউদ (আ.) আরও বলেন, “এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, এমনকি কারো শত্রুর সাথেও তার কখনো অতিরিক্ত কঠোরতার সাথে আচরণ করা উচিত নয়।”
আরেক স্থানে, মসীহ্‌ মওউদ (আ.) বলেন, “মানবজাতিকে ভালোবাসা এবং অন্যের প্রতি সহানুভূতি প্রদর্শন খোদা তা’লার ইবাদতের এক বিশেষ রূপ এবং তাঁর সন্তুষ্টি এবং পুরস্কার লাভের একটি অসাধারণ মাধ্যম।”

মানবতার সেবা কীভাবে করতে হবে, তার ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.) বলেন, “আল্লাহ্‌ তা’লা বারবার এ আদেশ দিয়েছেন যে, ধর্ম ও জাতি নির্বিশেষে, সকলের প্রতি তোমাদের ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করা উচিত। আল্লাহ্‌ আদেশ দেন যেন আমরা ক্ষুধার্তকে অন্নদান করি, বন্দিদশায় শিকলাবদ্ধদের মুক্ত করি, ঋণে জর্জরিতদের বকেয়া ঋণ পরিশোধ করি, অন্যের বোঝা বহন করি এবং মানবজাতির প্রতি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি।”
এই উদ্দেশ্যাবলী পূরণের লক্ষ্যেই হিউম্যানিটি ফার্স্ট প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল কারও ধর্মবিশ্বাস বা পরিচয় নির্বিশেষে মানবজাতির সেবার লক্ষ্যে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল রোগব্যাধিতে আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং প্রয়োজনীয় সেবা-যত্ন প্রদানের উদ্দেশ্যে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ক্ষুধার্তদের খাদ্য প্রদানের এবং তাদের পিপাসা নিবারণের উদ্দেশ্যে। এটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল সেই সকল মানুষের নিকট ত্রাণ সহায়তা পৌঁছানোর উদ্দেশ্যে যারা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও বিপর্যয়ের পরে নিজেদের পৃথিবীকে সম্পূর্ণ ওলট-পালট অবস্থায় পায়, অথবা যারা নিজেদের কোন ত্রুটি ছাড়াই বঞ্চনার মাঝে জীবন-যাপন করে।
একবার, তাঁর নিজ অনুসারীদের মানবজাতির প্রতি প্রকৃত এবং চিরন্তন সহানুভূতি প্রদর্শনের নির্দেশনা প্রদান করতে গিয়ে, হযরত আকদাস মসীহ্‌ মওউদ (আ.) বলেন, “প্রতিটি দিন, প্রত্যেক ব্যক্তির নিজেকে বিশ্লেষণ করা উচিত, এবং দেখা উচিত কতদূর পর্যন্ত অন্যের জন্য তার উদ্বেগ রয়েছে, আর কতদূর পর্যন্ত নিজ ভ্রাতাদের প্রতি সে ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করে থাকে। অন্যের জন্য সহানুভূতি অনেক বড় একটি দাবি এবং দায়িত্ব যা মানবজাতির কাঁধে এক গুরুভার হিসেবে অর্পণ করা হয়েছে।”
এরপর, অন্যের সেবা প্রকৃতপক্ষেই কত বড় একটি দায়িত্ব, সে বিষয়ের ওপর আলোকপাত করতে গিয়ে হযরত মসীহ্‌ মওউদ (আ.) একটি হাদীসে উল্লেখ করে বলেন যে, “এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, কেয়ামতের দিনে আল্লাহ্‌ বলবেন, ‘আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম এবং তুমি আমাকে খাওয়াও নি, আমি পিপাসার্ত ছিলাম এবং তুমি আমাকে পানি পান করাও নি। আমি অসুস্থ ছিলাম এবং তুমি আমার সঙ্গে সাক্ষাৎ করো নি এবং আমাকে সান্ত্বনা প্রদান করো নি।’ এতে যারা সম্বোধিত তারা প্রশ্ন করবে, ‘হে আমাদের খোদা, কখন এমন হয়েছে যে, তুমি ক্ষুধার্থ ছিলে আর আমরা তোমাকে খাবার প্রদান করি নি? কখন এমন হয়েছে যে, তুমি পিপাসার্ত ছিলে আর আমরা তোমার তৃষ্ণা নিবারণ করি নি? আর কখন এমন হয়েছে যে, তুমি অসুস্থ ছিলে আর আমরা তোমার আরামের ব্যবস্থা করি নি?’ উত্তরে খোদা তা’লা বলবেন যে, ‘আমার এক প্রিয় বান্দা এভাবে কষ্ট পাচ্ছিল আর তুমি তার প্রতি কোনো প্রকার সহানুভূতি বা দয়া প্রদর্শন করো নি। তাকে ভালোবাসলেই প্রকৃতপক্ষে আমার প্রতি ভালোবাসা প্রকাশ করা হতো।’

অনুরূপভাবে, আরেক দল লোকের কাছে আল্লাহ্‌ তা’লা বলবেন, ‘আমি তোমাদের কাছে কৃতজ্ঞ যে, তোমরা আমার প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেছো। যখন আমি ক্ষুধার্ত ছিলাম, তোমরা আমাকে আহার্য দান করেছো, আর যখন আমি পিপাসার্ত ছিলাম তখন তোমরা আমার তৃষ্ণা নিবারণ করেছো।’ সেই দলের লোকেরা জিজ্ঞাসা করবে, ‘হে আমাদের খোদা, কখন আমরা এমনভাবে তোমার সেবা করেছি? আমাদের নিজেদেরই তো জানা নেই।’ উত্তরে আল্লাহ্‌ বলবেন, ‘যখন তুমি আমার এক বান্দার প্রতি ভালোবাসা ও সহানুভূতি প্রদর্শন করেছিলে, তখন প্রকৃতপক্ষে, তুমি আমার প্রতি তোমার ভালোবাসা প্রকাশ করছিলে।’ ”
সুতরাং, আল্লাহ্‌র সৃষ্টিকে ভালোবাসা এমন একটি বিষয় যা সত্যিই মহান এবং আল্লাহ্‌ তা’লা এটি গভীরভাবে মূল্যায়ন করে থাকেন। সুতরাং, হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর সদস্যদের এটি দায়িত্ব যে, তারা যেন মানবজাতির কল্যাণ ও উন্নয়নের জন্য আন্তরিকভাবে সংগ্রাম করে। কখনো আরাম বোধ করবেন না, অথবা অতীতে যা হয়েছে তার জন্য সন্তুষ্ট বোধ করবেন না; বরং, ভবিষ্যতের দিকে তাকান আর দেখুন মানবতার সেবায় আপনাদের কর্মপরিধি কীভাবে এবং কোথায় প্রসারিত করা সম্ভব। সর্বদা ন্যূনতম সম্পদ ব্যবহার করে, সর্বোচ্চ সম্ভাব্য সেবা প্রদান করাটাই আপনাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত।
যেভাবে আমি উল্লেখ করেছি, হিউম্যানিটি ফার্স্ট এক সুনাম অর্জন করেছে, যার ফলে বাইরের অনেক সংগঠন এটি স্বীকার করে যে, হিউম্যানিটি ফার্স্ট এর স্বেচ্ছাসেবক দলের কারণে, এবং এর সদস্যগণ যে প্রেরণার সাথে কাজ করেন তার কারণে, আরও বড় অনেক সেবামূলক সংস্থা বা এনজিও-র তুলনায় অনেক ক্ষুদ্র বাজেট দিয়ে অনেক বেশি কাজ সমাধা করছে। নিশ্চিতভাবে, আমি সন্তুষ্ট যে, বিশ্বজুড়ে হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর কর্মী ও স্বেচ্ছাসেবকগণ অত্যন্ত ব্যাকুলতা ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা, এবং সেবা ও আত্মনিবেদনের প্রকৃত প্রেরণা নিয়ে সেবা প্রদান করে চলেছেন। আমার দোয়া এই যে, এই প্রেরণা যেন কখনো ম্লান না হয়, বরং যেন সর্বদা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
আমি পুনরাবৃত্তি করতে চাই যে, কখনোই আপনাদের হৃদয়ে অহংকারের লেশমাত্র আসতে দিবেন না, একথা ভেবে যে, আপনারা অনেক বড় কোন কাজ সম্পাদন করেছেন, অথবা এই ভেবে যে, যারা হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর বিভিন্ন প্রকল্প থেকে কল্যাণমণ্ডিত হবেন তাদের প্রতি আপনারা কোন অনুগ্রহ করেছেন। বরং, সকল সময়ে, আপনাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিনয় এবং আল্লাহ্‌ তা’লার প্রতি কৃতজ্ঞতা বহমান থাকা উচিত। সর্বদা এবং চিরকাল নিজের মনোযোগ আল্লাহ্‌র সন্তুষ্টি অর্জনের ওপর নিবদ্ধ রাখুন, আর স্মরণ রাখুন যে, অন্যের সেবা করা আমাদের ধর্মীয় দায়িত্ব, এবং মানবজাতির অধিকার আদায় না করে, আমাদের পক্ষে খোদা তা’লার অধিকার আদায় করা সম্ভব নয়।
পরিশেষে, আমি হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর স্বেচ্ছাসেবক এবং দলের সদস্যদের প্রতি আমার হৃদয় নিংড়ানো অভিনন্দন এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে চাই; কেননা, এর প্রথম পঁচিশটি বছর, তারা অসাধারণভাবে, অত্যন্ত আন্তরিকতা ও বিশ্বস্ততার সাথে মানবতার সেবার লক্ষ্যে কাজ করেছেন। এর স্বেচ্ছাসেবকদের আত্মনিবেদন হিউম্যানিটি ফার্স্টকে তার নামের যথার্থতা সাব্যস্ত করতে সক্ষম করেছে এবং একে একটি সুপ্রতিষ্ঠিত এবং স্বনামধন্য সেবামূলক ও ত্রাণ-সংস্থায় পরিণত করেছে। আলহামদুলিল্লাহ, প্রতিটি বছর, হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর কর্মপরিধি প্রসারিত হয়েছে, এবং আমি দোয়া করি যেন সর্বদাই এমনটি হতে থাকে।
এমন যেন হয় যে, এর সদস্য এবং স্বেচ্ছাসেবকবৃন্দ যে-কোন প্রকার দুর্দশাগ্রস্ত ও বিপন্নদের অশ্রু মোচনের জন্য সদা-সর্বদা প্রস্তুত থাকেন। এমন যেন হয় যে, আপনারা সর্বদা ঐসকল নির্দোষ আত্মার সহায়তার জন্য প্রস্তুত থাকেন যারা পরিস্থিতির শিকার, যেন তারা তাদের দুঃখ-দুর্দশা ও হৃদয়বিদারক কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এমন যেন হয় যে, দুর্বল, বঞ্চিত ও বিপন্নদের অধিকার রক্ষার জন্য আপনারা সর্বদা দণ্ডায়মান হতে পারেন।

মানবতার সেবা এবং নিদারুণ দারিদ্র‌্য ও বঞ্চনার শিকার হওয়া ব্যক্তিদেরকে তাদের নিজ দু’পায়ে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে আপনাদের সকলকে আল্লাহ্‌ তা’লা আপনাদের ভূমিকা লালনের তৌফিক দান করুন। আল্লাহ্‌ তা’লা হিউম্যানিটি ফার্স্ট-এর প্রয়াসকে বরকতমণ্ডিত করুন, এবং কখনো যেন এটি পশ্চাৎপদ না হয়; বরং, আমি দোয়া করি যেন মানবতার সেবায় এর প্রয়াসে এটি সর্বদা সামনের দিকে দৃপ্ত পদক্ষেপে অগ্রসর হয় — আমিন, জাযাকাল্লাহ্‌ (আল্লাহ দোয়া কবুল করুন, পুরস্কৃত করুন)।

অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শামস বিন তারিক