খিলাফতের কল্যাণ


মাওলানা রইস আহমদ, মুবাশ্বের মুরব্বী

খিলাফতের কল্যাণসমূহ লিখে শেষ করা সম্ভব নয়। খিলাফতের এই কল্যাণ একমাত্র আহ্‌মদী জামাতের সদস্যরাই বুঝতে পারে। এই বিষয় সম্বন্ধে অনেক লেখক অনেক কথা লিখেছেন এবং লিখতে থাকবেন। আর বিভিন্ন সময়ে যুগ খলীফাগণ নিজেরাই এর বিশদ বর্ণনাও দিয়েছেন। আমি আপনাদের কাছে এইগুলো থেকে দু’টি উদ্ধৃতি উপস্থাপন করবোঃ

হযরত মুসলেহ মাওউদ (রাঃ) বলেন,

‘দর্শকদের জন্য তো এটি এক আশ্চর্যজনক বিষয় মনে হবে, কয়েক লাখ লোকের জামাতের উপর কর্তৃত্ব পেয়ে গেছে। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখ, তোমাদের স্বাধীনতায় পূর্বের থেকে কি কোন পার্থক্য হয়েছে? তোমাদের দ্বারা কি কোন গোলামী করানো হয় বা তোমাদের উপর প্রভূত্ব খাটানো হয় বা তোমাদের সাথে কি অনুগত গোলাম বা কয়েদীর ন্যায় আচরণ করা হয়? যারা খিলাফত থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয় তাদের সাথে কি তোমাদের কোন পার্থক্য আছে কি? কোন পার্থক্য নাই। কিন্তু এ সত্ত্বেও অনেক বড় পার্থক্য আছে। আর সেটা হলো, তোমাদের জন্য এক ব্যক্তি আছেন যিনি তোমাদের জন্য দরদ রাখেন, ভালবাসা রাখেন, তোমাদের দুঃখকে নিজের দুঃখ মনে করেন; তোমাদের কষ্টকে নিজের কষ্ট মনে করেন; তোমাদের জন্য খোদার নিকট দোয়া করেন। কিন্তু তাদের জন্য এমন কোন ব্যবস্থাপনা নাই। তোমাদের জন্য তিনি চিন্তা করেন; দরদ রাখেন। আর তিনি তোমাদের জন্য নিজ প্রভূর নিকট ব্যাকুল ও অস্থির হয়ে পড়েন। কিন্তু তাদের জন্য এমন কেউ নেই। কারো যদি কোন অসুখ হয় তাহলে তিনি আরাম পান না। কিন্তু তোমরা কি এমন মানুষের অবস্থা অনুমান করতে পার যার হাজার নয় বরং লাখ লাখ অসুখ। সুতরাং আমাদের স্বাধীনতার মধ্যে কোন পার্থক্য হয় নাই, হ্যাঁ তোমাদের জন্য তোমাদেরই মত স্বাধীন ব্যক্তির উপর বড় দায়িত্ব অর্পন করা হয়েছে’। (আনোয়ারুল উলুম খন্ড-২ পৃষ্ঠা ১৫৮)

খলীফার সাথে সম্পর্ক স্থাপন, কাজের বরকত লাভের একটি উল্ল্যেখযোগ্য মাধ্যম। এ সম্পর্কে হযরত মুসলেহ্‌ মাওউদ (রাঃ) বলেন,

“যতক্ষণ বার বার আমার কাছ থেকে পরামর্শ না নেওয়া হবে ততক্ষণ তাদের কর্মে কখনই বরকতের সৃষ্টি হবে না। কেননা, খোদা তাদের হাতে জামাতের বাগান দেন নাই বরং আমার হাতে জামাতের বাগান দেওয়া হয়েছে। খোদা তাদের খলীফা বানান নাই। আমাকে খোদা খলীফা বানিয়েছেন। আর যখন খোদা নিজের ইচ্ছার কথা জানাতে চান, তখন আমাকে বলেন-তাদেরকে বলেন না। সুতরাং তোমরা কেন্দ্র থেকে আলাদা হয়ে কি করতে পার? যাকে খোদা নিজের ইচ্ছার কথা বলেন, যাঁর উপর খোদার ইলহাম অবতীর্ণ হয়, যাকে খোদা এই জামাতের খলীফা এবং ইমাম বানিয়েছেন তাঁর কাছ থেকে পরামর্শ এবং হেদায়াত গ্রহন/অর্জন করে তোমরা কাজ করতে পার। তাঁর সাথে যতটুকু সম্পর্ক রাখবে ততই তোমাদের কাজে বরকত সৃষ্টি হবে………..সেই ব্যক্তিই জামাতের উপকারী কাজ করতে পারবে, যে নিজেকে ইমামের সাথে সম্পর্কযুক্ত রাখে। কোন ব্যক্তি যদি ইমামের সাথে নিজেকে সম্পর্কযযুক্ত না রাখে, যদিও সে দুনিয়ার সমস্ত জ্ঞান অর্জন করে তথাপি সে ততটুকু কাজ করতে পারবে না যতটুকু ছাগীর বাচ্চারা করতে পারে”। (আল ফযল ২০ নভেম্বর ১৯৪৬ইং)

খলীফার সাথে সম্পর্ক রাখা কতটুকু বরকতপূর্ণ তা আমরা প্রতি পদক্ষেপেই বুঝতে পারি। খলীফার সাথে আল্লাহ্‌র সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। আল্লাহ্ তা’আলা খলীফাকে যখন নির্বাচন করেন তখন খলীফাকে আল্লাহ্ নিজ আয়ত্তে নিয়ে নেন। হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ সালেস (রহঃ) বলেনঃ

“আমাদের বিশ্বাস, খলীফা খোদা নিজে বানান। যদিও বান্দার ওপর এটি ছেড়ে দেওয়া হয়। তথাপি বান্দার দৃষ্টিতে যে অধিক উত্তম হয় তাকেই তারা খলীফা বানিয়ে নেন। কিন্তু খলীফা স্বয়ং আল্লাহ্ তা’আলা বানান আর তাঁর নির্বাচনে কোন ত্রুটি নাই। তিনি এক দুর্বল বান্দাকে বেছে নেন যাকে তারা খুব ছোট মনে করে। এরপর আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে বেছে নিয়ে তাঁর উপর তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্তের নূর দান করেন………….আর খোদার কুদরতে তিনি লুকিয়ে যান। তখন আল্লাহ্ তা’আলা তাঁকে উঠিয়ে নিয়ে নিজের কোলে বসিয়ে নেন। আর যারা তাঁর বিরোধী হয় তাদেরকে বলেন, যদি তোমাদের লড়াই করার ক্ষমতা থাকে আমার সাথে লড়াই কর। ……..এখন সে আমার আশ্রয়ে এসে গেছে। এরকম কেন হয়? এইজন্য যে খোদা তা’আলা এটা প্রমাণ করতে চান, খিলাফতের নির্বাচনের সময় তাঁর ইচ্ছা কাজ করে আর বান্দাদের বুদ্ধি তখন কোন কাজ করে না’। (আল ফযল ১৭ মার্চ ১৯৬৭ইং)

যেহেতু খলীফার সাথে আল্লাহ্‌র গভীর সম্পর্ক তাই আল্লাহ্‌কে সন্তুষ্ট রাখতে হলে এবং খিলাফত থেকে কল্যাণ পেতে হলে খিলাফতের সাথে আমাদের সম্পর্ক দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করতে হবে। আর সেই সম্পর্ক রাখতে হবে যেভাবে ইঞ্জিনের সাথে গাড়ি জুড়ে থাকে।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্ আউয়াল (রাঃ) বলেন,

অবশেষে আমি আরো একটি কথা বলতে চাই। আর এই ওসীয়্যত করছি, তোমরা ‘ই’তিসামু হাবলুল্লাহ’ (তোমরা আল্লাহ্‌র রজ্জুকে দৃঢ়ভাবে ধর) এর সাথে থাক। কুরআন তোমাদের সামনে বিধিবদ্ধ আমলে পরিণত হোক। পরস্পর ঝগড়া করিও না। কেননা ঝগড়া বিবাদ আল্লাহ্‌র পক্ষ থেকে কল্যাণের পথ রুদ্ধ করে। মুসা (আঃ)-এর জাতি জঙ্গলে এই দোষের কারণে ধ্বংস হয়েছিল। রসূলে করীম (সাঃ)-এর জাতি সাবধানতা অবলম্বন করেছিল আর তারা সফল হয়ে গেছে। আর এখন তৃতীয় দফা তোমাদের পালা এসেছে। এই জন্য তোমাদের অবস্থা এমন হওয়া উচিত তোমরা নিজেদের ইমামের হাতে এমন হও যেমন গাস্‌সালের (যে মৃতকে গোসল করায়) হাতে মৃতদেহটি হয়। তোমাদের সমস্ত ইচ্ছা এবং চাওয়া মৃত হোক, আর তোমরা নিজেরা নিজেদের ঈমানের সাথে এমন সম্পর্ক কর যেমন গাড়ি ইঞ্জিনের সাথে হয়। আর এরপর দেখ, প্রতিদিন তোমরা অন্ধকার থেকে বাহির হও কিনা। অধিক সংখ্যক বার ইস্তিগফার কর। আর দোয়া-তে লেগে থাক। একত্ববাদকে হাত থেকে যেতে দিও না। অন্যদের সাথে নেকী এবং ভাল ব্যবহারে সংকীর্ণমনা হইও না। ১৩শত বছর পর এই যুগ পাওয়া গেছে। আর ভবিষ্যতে কেয়ামত পর্যন্ত এই যুগ আসবে না। সুতরাং এই নেয়ামতের শোকর কর। কেননা শোকরের ফলে নেয়ামত বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়, “লাইন শাকারতুম লা আজিদান্নাকুম’ (যদি তোমরা কৃতজ্ঞ হও তা হলে অবশ্যই আমি তোমাদেরকে অধিক দান করবো’ (সূরা ইব্রাহীমঃ ৮) কিন্তু যারা শোকরিয়া আদায় করে না তারা যেন স্মরণ রাখে ইন্না আযাবি লা শাদীদ অর্থাৎ-নিশ্চয়ই আজাব অত্যন্ত কষ্টের (সূরা ইব্রাহীম-৮)
(খুৎবাতে নূর পুস্তক, পৃষ্ঠা ১৩১)

অতএব, যুগ খলীফার সাথে আমাদের সবার সম্পর্ক সুদৃঢ় করা উচিত। এজন্য আমরা MTA (মুসলিম টেলিভিশন আহ্‌মদীয়া) এর সাহায্য নিতে পারি। আর চিঠির মাধ্যমে খলীফার সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। আর আমাদের বাঙালীদের সুবিধা এই, আমরা বাংলায়ও চিঠি লিখতে পারি। আল্লাহ্ করুন, আমরা সবাই যেন খলীফার কাছ থেকে কল্যাণ লাভ করতে পারি। আমীন!

পাক্ষিক আহ্‌মদী - ৩১শে মে ২০০৭