বয়’আতের তাৎপর্য ও শর্তসমূহ

মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ ও মাহ্‌দীর আগমনের কথা। হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-এর নির্দেশ রয়েছে তার হাতে বয়’আত করার । মহানবী (সা.) বলেছেন,

“ফা ইযা রাআয়তুমূহু ফা বা’য়েউহু ওয়া লাও হাবওয়ান আলাস সালজে ফা ইন্নাহু খালীফাতুল্লাহিল মাহ্‌দী”। (ইবনে মাজাহ, বাব-খরূজুল মাহ্‌দী)

অর্থাৎ যখন তোমরা তাঁর সন্ধান পাবে তখন তাঁর হাতে বয়’আত গ্রহন করবে যদি বরফের পাহাড় হামাগুড়ী দিয়েও ডিঙিয়ে যেতে হয়, কেননা তিনি আল্লাহ্‌র খলীফা আল-মাহ্‌দী।

মসীহ্ ও মাহ্‌দীর সত্যতা কারো কাছে প্রকাশিত হয়ে থাকলে কাল বিলম্ব না করে হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা (সা.)-এর নির্দেশ অনুযায়ী তাঁর হাতে বয়’আত গ্রহন করা উচিত।

বয়’আতের তাৎপর্য সম্পর্কে হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) বলেছেন:

“বয়’আতের অর্থ বিক্রয় করে দেয়া, যেভাবে কোন দ্রব্য বিক্রয় করে দোয়ার পর এর সাথে কোন সম্পর্ক থাকে না। এটা ক্রেতার অধিকার। সে যা চাইবে তা-ই করবে। এভাবেই যার নিকট তুমি বয়’আত করছ যদি তার আদেশের ওপর ঠিক ঠিক না চল তবে কোন উপকার লাভ করবে না”। (মলফূযাত, ৫ম খন্ড, পৃ: ২৮১)

“বয়’আতের তাৎপর্য সম্পর্কে পূর্ণজ্ঞান অর্জন করা উচিত এবং এর অনুগমন করা উচিত। বয়’আতের তাৎপর্য এই যে, বয়’আত গ্রহণকারী তার মাঝে সত্যিকারের পরিবর্তন এবং নিজ হৃদয়ে খোদাভীতি সৃষ্টি করবে এবং প্রকৃত উদ্দেশ্য জেনে নিজের জীবনকে একটি পবিত্র উদাহরণ স্বরূপ উপস্থাপন করে দেখাবে। যদি এরূপ না হয় তবে বয়াতে কোন লাভ নেই; বরং এ বয়’আত তার জন্য আরো আযাবের কারণ হবে। কেননা, অঙ্গীকার করার পর জেনে বুঝে ও সজ্ঞানে নাফরমানী করা ভয়ঙ্কর বিপদজ্জনক”। (মালফূযাত, ১০ম খন্ড, পৃ: ৩৩)

“বয়’আত যদি অন্তর হতে না করা হয় তবে এর কোন ফল নেই। আমার বয়াতে খোদা হৃদয়ের অঙ্গীকার চান। অতএব, যারা খাঁটি অন্তঃকরণে আমাকে গ্রহণ করে এবং নিজেদের পাপ হতে খাঁটি তওবা করে ক্ষমাশীল ও দয়ালু খোদা তাদের পাপ সমূহ নিশ্চয় ক্ষমা করে দেন এবং তারা এরূপ হয়ে যায় যেন মায়ের গর্ভ হতে বের হয়েছে। তদবস্থায় ফিরিশ্‌তারা তাদেরকে রক্ষা করে”। (মলফূযাত, ৩য় খন্ড, পৃ: ২৬২)

“তোমাদের পক্ষে যতটুকু সম্ভব এ অঙ্গীকার ও প্রতিজ্ঞার প্রতি লক্ষ্য রাখ এবং সকল প্রকার পাপ হতে বাঁচতে থাক। এতদ্ব্যতীত এ অঙ্গীকারে মজবুত থাকার জন্য আল্লাহ্‌ তা’লার নিকট দোয়া করতে থাক। তিনি নিশ্চিতরূপে তোমাদেরকে আশ্বস্ত ও শান্তি দিবেন এবং তোমাদের পদদ্বয়কে দৃঢ় রাখবেন। কেননা, যে ব্যক্তি খাঁটি অন্তঃকরণে খোদা তা’লার নিকট চায়-তাকে দেয়া হয়। আমি জানি যে, তোমাদের মাঝে কেউ কেউ এমনও আছে, যাদেরকে আমার সঙ্গে সম্পর্কে স্থাপনের জন্য বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা ও অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়। কিন্তু আমি কি করব। এ পরীক্ষা নতুন নয়। যখন খোদা তা’লা কাউকে নিজের দিকে আকর্ষণ করেন এবং কেউ তাঁর দিকে চলে তখন পরীক্ষার মাঝে দিয়ে যাওয়া তার জন্য জরুরী হয়। পৃথিবী ও এর সাথে সম্পর্ক অস্থায়ী ও নশ্বর। কিন্তু খোদা তা’লার সাথে আমাদের সম্পর্ক সর্বকালের, কাজেই তাঁর দিক হতে মানুষ কেন মুখ ফিরাবে?”। (মলফূযাত, ৭ম খন্ড, পৃ: ২৩৬)

আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামাতের পবিত্র প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহ্‌মদ কাদিয়ানী প্রতিশ্রুত মসীহ্ মাহ্‌দী (আ.) কর্তৃক প্রবর্তিত বয়’আত (দীক্ষা) গ্রহনের শর্তসমূহ

১। বয়’আত গ্রহণকারী সর্বান্তঃকরণে অঙ্গীকার করিবে যে, এখন হইতে ভবিষ্যতে কবরে যাওয়া পর্যন্ত শির্‌ক (খোদা তা’লার অংশীবাদিতা) হইতে পবিত্র থাকিবে।

২। মিথ্যা, ব্যভিচার, কামলোলুপ দৃষ্টি, প্রত্যেক পাপ ও অবাধ্যতা, যুলম ও খেয়ানত, অশান্তি ও বিদ্রোহের সকল পথ হিতে দূরে থাকিবে। প্রবৃত্তির উত্তেজনা যতই প্রবল হউক না কেন উহার শিকারে পরিণত হইবে না।

৩। বিনা ব্যতিক্রমে খোদা ও রসূল (সা.)-এর হুকুম অনুযায়ী পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়িবে, সাধ্যনুযায়ী তাহাজ্জুদ নামায পড়িবে, রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের প্রতি দরূদ পড়িবে, প্রত্যহ নিজের পাপসমূহ ক্ষমার জন্য আল্লাহ্ তা’লার নিকট প্রার্থনা করিবে ও এস্তেগফার পড়িবে, ভক্তিপ্লুত হৃদয়ে তাঁহার অপার অনুগ্রহ স্মরণ করিয়া তাঁহার হামদ ও তা’রীফ (প্রশংসা) করিবে।

৪। উত্তেজনার বশে অন্যায়রূপে,কথায়, কাজে বা অন্য কোন উপায়ে আল্লাহ্‌র সৃষ্ট কোন জীবকে, বিশেষতঃ কোন মুসলমানকে কোন প্রকার কষ্ট দিবে না।

৫। সুখে-দুঃখে, কষ্টে-শান্তিতে, সম্পদে-বিপদে সকল অবস্থায় খোদা তা’লার সহিত বিশ্বস্ততা রক্ষা করিবে। সকল অবস্থায় তাঁহার প্রতি সন্তষ্ট থাকিবে। তাঁহার পথে সকল লাঞ্ছনা-গঞ্জনা, দুঃখ-কষ্ট বরণ করিয়া লইতে প্রস্তুত থাকিবে এবং সকল অবস্থায় তাঁহার মীমাংসা মানিয়া লইবে। কোন বিপদ উপস্থিত হইলে পশ্চাদপদ হইবে না, বরং সম্মুখে অগ্রসর হইবে।

৬। সামাজিক কদাচার পরিহার করিবে। কুপ্রবৃত্তির অধীন হইবে না। কুরআনের অনুশাসন পরিপূর্ণরূপে শিরোধার্য করিবে এবং প্রত্যেক কাজে আল্লাহ্ ও রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হে ওয়া সাল্লামের আদেশকে জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে অনুসরণ করিয়া চলিবে।

৭। ঈর্ষা ও গর্ব সর্বতোভাবে পরিহার করিবে। দীনতা, বিনয়, শিষ্টাচার, ও অনাড়ম্বর জীবন যাপন করিবে।

৮। ধর্ম ও ধর্মের সম্মান করাকে এবং ইসলামের প্রতি আন্তরিকতাকে নিজ ধন-প্রাণ, মান-সম্ভ্রম, সন্তান-সন্ততি ও সকল প্রিয়জন হইতে প্রিয়তর জ্ঞান করিবে।

৯। আল্লাহ্ তা’লার প্রীতি লাভের উদ্দেশ্যে তাঁহার সৃষ্ট জীবের সেবায় যত্নবান থাকিবে এবং দেওয়া নিজ শক্তি ও সম্পদ যথাসাধ্য মানব-কল্যাণে নিয়োজিত করিবে।

১০। আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে ধর্মানুমোদিত সকল আদেশে পালন করিবার প্রতিজ্ঞায় এই অধমের (অর্থাৎ হযরত মসীহ্ মওউদ আলায়হেস্ সালামের) সহিত যে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনে আবদ্ধ হইল, জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত তাহাতে অটল থাকিব। ভ্রাতৃত্ব বন্ধন এতো বেশী গভীর ও ঘনিষ্ঠ হইবে যে, দুনিয়ার কোন প্রকার আত্মীয় সম্পর্কের মধ্যে উহার তুলনা পাওয়া যাইবে না।

(ইশ্‌তেহার তকমীলে তবলীগ: ১২ই জানুয়ারী, ১৮৮৯ইং)

বয়াত ফর্ম ডাউনলোড করুন বয়াত ফর্ম ১ | বয়াত ফর্ম ২