হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-এর আশিসময় জীবনের কিছু ঘটনা

আনোয়ারা বেগম

আহ্‌মদীয়া জামাআতের প্রতিষ্ঠাতা ইমাম মাহদী মসীহ ও মাওউদ (আঃ) হযরত নূরুদ্দীন (রাঃ) সম্পর্কে বলেছেন,

“চেহ্‌ – খোশ্‌ বুদে আগার হার ইক্‌ যা
উম্মত নূরে দী বুদে,
হামেঁ বুদে আগার হার দিল্‌ পর
আয নূরে দী বুদে।”

অর্থাৎ “কত ভালই না হতো! উম্মতের সবাই যদি নূরুদ্দীন হতো, প্রতিটি হৃদয় একীনের নূরে পরিপূর্ণ হতো।”

কত উত্তমই না হতো উম্মতের সবাই যদি নূরুদ্দীনের স্থান অর্জন করে নিত। তাঁর আনুগত্যে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) খুবই সন্তষ্ট ছিলেন। সৈয়্যদনা হযরত নূরুদ্দীন যখন প্রথম বার হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর দরবারে উপস্থিত হয়েছিলেন তখন তাঁর (রাঃ) উপর প্রথম দৃষ্টি পড়তেই হযরত (আঃ)-এর অন্তর থেকে এ কথা উৎসারিত হয়েছিল যে, “হাযা – দোয়াই” অর্থাৎ “তিনি সেই মু’মিন পুরুষ যাকে আমার দোয়ার ফলশ্রুতিতে আল্লাহ্‌ তাআলা আমাকে দান করেছেন।”

১৯০৮ সালের ২৬ মে তারিখে হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ) ইন্তেকাল করেন। ২৭ মে দেশ বিদেশের আগত বার শত লোকের উপস্থিতিতে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর প্রথম আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকারী হযরত হাফিজ হাজিউল হারমাঈন শরীফাঈন মাওলানা হেকীম নূরুদ্দীন (রাঃ) আহ্‌মদীয়া জামাআতের প্রথম খলীফা নির্বাচিত হন। পবিত্র কুরআনের সূরা আন নূর ৫৬ নং আয়াতের ওয়াদানুযায়ী কুদরতে সানীয়ার প্রথম বিকাশ ঘটে। হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) তাঁর রচিত পুস্তক “আল ওসীয়্যত”-এ লিখেছেন,

“তোমাদের জন্য দ্বিতীয় কুদরতও দেখা আবশ্যক। এর আগমন তোমাদের জন্য উত্তম, কারণ তা স্থায়ী এবং এর ধারাবাহিকতা কেয়ামত পর্যন্ত ছিন্ন হবে না।”

আহ্‌মদীয়া সিলসিলার প্রথম খলীফা আলহাজ্জ হাফেয হেকীম নুরুদ্দীন (রাঃ) একজন বিখ্যাত জ্ঞানী ও আলেম ছিলেন। জ্ঞান অর্জনের জন্য তিনি মক্কা মদীনা এবং বহু দূর দূরান্তের এলাকায় পরিভ্রমণ করেছেন। দেশ বিদেশের বহু আলেম ও জ্ঞানীগুণীর সান্নিধ্যে তিনি বহু সময় কাটিয়েছেন। তিনি একজন বিখ্যাত চিকিৎসাবিদ ছিলেন। কাশ্মীরের মহারাজার প্রধান চিকিৎসক ছিলেন। সেই সময়ে সারা বিশ্বের মুসলিম প্রধান দেশগুলিতে ইসলাম ধর্মের চরম বিরোধিতা চলছিল। কিন্তু কাউকেই তিনি এ বিষয়ে প্রতিবাদে সোচ্চার দেখতে পান নি।

কাশ্মীরে থাকাকালীন তিনি ভাগ্যক্রমে তিনি একটি বিজ্ঞাপন পান এবং সাথে সাথে বিজ্ঞাপনটি তিনি পড়েন, এভাবে তিনি সেই বিজ্ঞাপনের লেখক সম্পর্কে জানতে পারলেন এবং দ্রুত লেখকের সঙ্গে সাক্ষাত করার জন্য কাদিয়ান চলে গেলেন। বহু আলাপ আলোচনা করে তিনি বইটির লেখক হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর হাতে বয়আত নেবার বাসনা ব্যক্ত করলে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) বললেন যে, খোদা তাআলার পক্ষ থেকে এখনো কোন নির্দেশ পান নাই। অতএব এখন বয়আত করা যাবে না। কিন্তু হেকীম সাহেব ওয়াদা নিলেন যে নির্দেশ পাওয়া মাত্রই সবচেয়ে প্রথমেই যেন তাঁকে বয়আত গ্রহণের অনুমতি দেয়া হয়। যা হোক বয়আত করার পূর্ব পর্যন্ত তিনি হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। একবার কোন কাজ উপলক্ষে হেকীম সাহেব লাহোর গেলেন, তখন তাঁর ইচ্ছা হলো হযরত সাহেবের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন। অতঃপর কাদিয়ানে গেলেন। হুযূর পাকের নির্দেশে তিনি কাদিয়ানে থেকে গেলেন এবং তাঁর বিবিগণ ও দূর্লভ সংগ্রহের বইয়ের প্রিয় লাইব্রেরীটিও নিয়ে আসলেন। যুগ ইমামের উপর তাঁর আনুগত্য এতই দৃঢ় ছিল যে তাঁর দেশের বাড়ীর কথা আর স্বপ্নেও তাঁর মনে আসে নাই। অতঃপর হুযূর পাকের নির্দেশানুযায়ী তিনিই সর্বপ্রথম বয়আত গ্রহণ করেন এবং পরবর্তীতে খলীফা আওওয়াল হওয়ার মহান সম্মান অর্জন করেন। তাঁর ৬ বৎসর আশিসময় খিলাফতকালের ঈমান বর্দ্ধক ঘটনাবলীর কিছুটা সংক্ষেপে তুলে ধরার চেষ্টা করবো, ইন্‌শাআল্লাহ্‌।

হযরত হেকীম মাওলানা নূরুদ্দীন (রাঃ) অত্যন্ত মোত্তাকী এবং হযরত মসীহ মাওউদ (আঃ)-এর সবচেয়ে অন্তরঙ্গ বন্ধু ছিলেন এবং তাঁর (রাঃ) সত্তাকে হযরত ইমাম মাহদী (আঃ) অনুকরণীয় চরিত্র বলে আখ্যায়িত করেছেন।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) বলেন,

“আমি ও দাউদের খলীফা হওয়া প্রসঙ্গে আমি আগে বলেছি। এর পরে নিজ নেতা হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর খলীফা হযরত আবু বকর (রাঃ) ও হযরত ওমর (রাঃ) যেভাবে খলীফা হয়েছিলেন সেভাবেই খোদা তাআলা আমাকে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর পরে খলীফা মনোনীত করেছেন। অতএব যখন খলীফা মনোনীত করা আল্লাহ্‌রই কাজ তখন অন্য কারো কি শক্তি আছে যে, তাঁর কাজে বাধা দেয়? আমি যখন মারা যাব তখন তিনিই দন্ডায়মান হবেন যাঁকে খোদা তাআলা চাইবেন এবং খোদা তাআলা নিজেই তাকে দন্ডায়মান করে দিবেন।

আল্লাহ্‌ তাআলার নিয়তি এবং তাঁর প্রজ্ঞার ফলে তিনি আমাকে তোমাদের ইমাম ও খলীফা মনোনীত করলেন। আর তোমাদের ধারণায় যে যোগ্য ছিল তাকেও আমার কাছে বিনত করে দিলেন। এখন আপত্তি উত্থাপন করার তোমরা কে? যদি আপত্তি থাকে তাহলে যাও খোদার উপরে আপত্তি করো। কিন্তু এ অন্যায় ও বেয়াদবীর ফল সম্বন্ধেও অবহিত হও। আল্লাহ্‌ তাআলা যাকে যোগ্য মনে করলেন নিজ হাতে তাঁকে খলীফা মনোনীত করে দিলেন। যারা তার বিরোধিতা করে তারা মিথ্যাবাদী এবং দুষ্কৃতকারী। ফিরিশ্‌তা হয়ে আনুগত্য ও বিনয় অবলম্বন করো। ইবলিস হইও না”। (বদর, ৪ জুলাই, ১৯১২ খৃঃ)

হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) বলেছেনঃ

“একমাত্র খোদা তাআলাই আমাকে খিলাফতের-পরিচ্ছদ পরিধান করিয়েছেন তোমাদের কেউ নয়। আমি এর শ্রদ্ধা এবং সম্মান করা আমার অবশ্য কর্তব্য বলে মনে করি। এ সত্ত্বেও যে, আমি তোমাদের ধন সম্পদ বা তোমাদের কোন কিছুই গ্রহণ করবার পক্ষপাতি নই। আমার প্রাণের মাঝে এতটুকুও বাসনা নেই যে, কেউ আমাকে সালাম করুক বা না করুক, তোমাদের টাকা পয়সা যা নযরানা হিসেবে আমার নিকট আসছিলো পহেলা এপ্রিল পর্যন্ত আমি তা মৌলভী মোহাম্মদ আলীকে দিয়ে আসছিলাম। কিন্তু কোনো কোনো লোক ভুল ধারণার সৃষ্টি করলো এবং বললো, “এটা আমাদের টাকা এবং আমরা এর রক্ষক।” তখন আমি কেবল খোদা তাআলার সন্তুষ্টির জন্য টাকা দেয়া বন্ধ করে দিলাম এবং আমি দেখতে চাইলাম তারা কি করতে পারে। এ বক্তা ভুল করছে বরং বেয়াদবী করেছে। তার তওবা করা উচিত, যদি এখনো সে তওবা না করে তবে তাদের মঙ্গল হবে না।” (বদর, ১লা ফেব্র্বয়ারী ১৯১২ খৃঃ)

১৯১১ খৃষ্টাব্দে লাহোরের এক বক্তৃতায় তিনি (রাঃ) বলেছিলেন,

“খিলাফত মনোহারী দোকানের সোডা ওয়াটার নয়। তোমরা এ ��্যাপারে গোলমাল করে কোনরূপ ফায়দা হাসিল করতে পারবে না। তোমাদের কেউই খলীফা বলবে না এবং আমার জীবদ্দশায় অপর কেউ খলীফা হতে পারবে না। যখন আমি মারা যাবো তখন সেই ব্যক্তি খাড়া হবে যাকে খোদা তাআলা চাইবেন। স্বয়ং খোদা তাআলা তাকে খাড়া করবেন। তোমরা আমার সাথে অঙ্গীকার করেছো তোমরা নিজেরা খিলাফতের অন্য নাম মুখে নিও না। আমাকে খোদা তাআলা খলীফা বানিয়েছেন। এখন না তোমাদের কথায় আমি খিলাফতচ্যূত হতে পারি এবং না কারো শক্তি আছে যে, আমাকে খিলাফতচ্যূত করে। যদি তোমরা বেশী বাড়াবাড়ি করো তবে স্মরণ রেখো, আমার নিকট এমন খালেদ বিন-ওলিদ আছে যারা তোমাদেরকে বিরুদ্ধাচরণের শাস্তি প্রদান করবে।” (বদর পত্রিকা, ১৯০৯)

তিনি আরো বলেছেন,

“কতিপয় লোক বলে, আমরা আপনার সম্পর্কে কিছু বলি না। আগমনকারী খলীফার অধিকার এবং ক্ষমতা সম্বন্ধে আলোচনা করছি। কিন্তু তোমরা কেমন করে জানলে যে, তিনি আবু বকর (রাঃ) এবং মির্যা সাহেব (আঃ) হতেও ব্যপকতর কাজের ভার নিয়ে আসবেন না?”

আরো এক খুতবায় তিনি বলেছেন,

“তোমাদেরকেও খোদা তাআলা স্বীয় ফযলে আমাদের বাদশাহ্‌ মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর মাধ্যমে হযরত রসূলুল্লাহ্‌ (সাঃ)-এর পরে একত্র করেছেন। এরপর তাঁর (আঃ) মৃত্যুর পর আমার হাতে তোমাদেরকে বিভক্তি থেকে রক্ষা করেছেন। এ নেয়ামতের কদর করো আর অপ্রয়োজনীয় বিতর্কে জড়িয়ো না। আমি বুঝতে পারি না, এ ধরনের বিতর্ক থেকে তোমরা আচরণগত আধ্যাত্মিক কি উপকার পাবে? যাকে খোদা তাআলা চেয়েছেন খলীফা বানিয়েছেন এবং তোমাদের গর্দান তাঁর সামনে ঝুঁকিয়ে দিয়েছেন। খোদা তাআলার এ বিধানের উপর এর পরেও আপত্তি উত্থাপন করা চরম দুঃসাহস। আমি তোমাদেরকে বার বার বলেছি এবং কুরআন মজীদ থেকে দেখিয়েছি, খলীফা বানানো মানুষের কাজ নয়, বরং আল্লাহ্‌র কাজ। আমাকে কে খলীফা বানিয়েছেন? আল্লাহ্‌ তাআলা বলেছেন, “ইন্নী যায়েলুন ফিল আরদে খলীফা”। সেই খিলাফতে-আদমে ফেরেশ্‌তারা আপত্তি করলো যে, যমীনে বিশৃঙ্খলা ও ফাসাদ সৃষ্টিকারী হবে। কিন্তু তারা আপত্তি করে কি ফল পেয়েছে? তোমরা কুরআন মজীদ পড়ে দেখ-শেষ পর্যন্ত তারা আদমকে সিজদা করেছে। সুতরাং কেউ যদি আমার উপর আপত্তি উত্থাপন করে এবং সেই আপত্তিকারী যদি ফিরিশ্‌তাও হয় তবুও আমি তাঁকে বলবো আদমের খিলাফতের সামনে নত হও; তাহলেই মঙ্গল এবং সেই অহঙ্কার ও আত্মম্ভরিতা করে যদি ইবলীস্‌ হতে চাও তাহলে স্মরণ রেখো, ইবলীসকে আদমের বিরোধিতার প্রতিফল দেয়া হয়েছিল আমি আবারো বলছি, কেউ ফিরিশ্‌তা হয়েও যদি আমার খিলাফতের বিরোধিতা করে তাহলে তার অনুগত স্বভাব তাকে সিজদাপ্রাপ্ত আদমের দিকে নিয়ে আসবে। আর যদি ইবলিস হয় তাহলে সে দরবার থেকে বহিষ্কার হবে।”

“আমি এটা প্রকাশ করছি, যেভাবে আদম (আঃ), দাউদ (আঃ) এবং আবু বকর (রাঃ) ও উমর (রাঃ) কে খোদা তাআলা খলীফা বানিয়েছেন সেভাবে তিনি আমাকেও বানিয়েছেন। যদি কেউ বলে, আঞ্জুমান খলীফা বানিয়েছে, তাহলে তা ভুল। আর এ রকম ধারণা তাকে মৃত্যুর দ্বারে পৌঁছে দেয়। তোমরা এত্থেকে সরে দাঁড়াও। এরপর শুনে নাও আমাকে কোন মানুষ বা কোন আঞ্জুমান খলীফা বানায়নি, আর আমি কোন আঞ্জুমানকে এর যোগ্যও মনে করি না যা খলীফা বনাতে পারে। এখন আমাকে কোনো আঞ্জুমান নিযুক্ত করেনি, আর আমি এর নিযুক্তিকে সম্মানও করি না এবং এ পরিত্যাগ করায় (খিলাফত পরিত্যাগকারীকে) আমি থুথুও নিক্ষেপ করি না। আর কারো মাঝে এ শক্তি নেই যে, এই খিলাফতের চাদরকে আমার থেকে কেড়ে নেয়।” (১৬ জুন, ১৯১২ইং খুতবা)

এইসব বর্ণনা থেকে এটাই প্রকাশিত হয়, হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-এর দৃষ্টিতে খিলাফতের মকাম ও মর্যাদা অতি উচ্চ ছিল। খলীফা জাগতিক সংস্থার প্রেসিডেন্টের মত নন। তিনি এক আনুগত্য ভাজন আধ্যাত্মিক ইমাম যাঁর আনুগত্য ও অনুবর্তীতায় খোদা তাআলার সন্তুষ্টি লাভ হয় এবং যাঁর বিরুদ্ধাচরণ আল্লাহ্‌ তাআলার অসন্তুষ্টির কারণ হয়।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-এর জীবনে সবচেয়ে প্রসিদ্ধ দিক ছিল তাঁর খোদা তাআলার সাথে গভীর সম্পর্ক, ভালবাসা ও তাঁর ওপরে পূর্ণ ভরসা। যৌবনের শুরুতেই তাঁর ঐশী তত্ত্বজ্ঞান লাভ হয়েছিল যার জন্য তিনি খোদার হয়ে গিয়েছিলেন আর খোদা তাঁর। তাঁর কাছে খোদা প্রিয় ছিলেন, আর খোদারও তিনি প্রিয় ছিলেন। তিনি খোদার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন আর খোদাও তার প্রতি সন্তুষ্ট ছিলেন। তিনি বলেছেন,

“খোদা তাআলার অঙ্গীকার আমার সাথে রয়েছে। আমি যদি কোন জনমানবহীন জঙ্গলেও থাকি, তবুও খোদা তাআলা আমাকে রিয্‌ক (খাদ্য) পাঠাবেন, আমি কখনো ক্ষুধার্ত থাকবো না”।

তাঁর প্রত্যেক ধরনের প্রয়োজন মিটানোর উপকরণ অদৃশ্য থেকেই পূর্ণ হয়ে যেতো। “আমাকে খোদার তরফ থেকে সাহায্যের এই রহস্য কখনো কাউকে জানানোর অনুমতি খোদা তাআলা আমাকে দেননি।” (আল হাকাম, ১৯০৯ খৃঃ)

খোদা তাআলার দৃষ্টিতে হযরত নূরুদ্দীন (রাঃ) একজন সম্মানীত ব্যক্তি ছিলেন এবং সর্বাবস্থাতেই খোদা তাআলা তাঁর সম্মান রক্ষা করেছেন। এ বিষয়ে একটি ঘটনা উল্ল্যেখ করছি, একবার কাদিয়ানের মসজিদে আকসায় হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) কতিপয় বন্ধুর সাথে বসেছিলেন। হযরত সাহেবজাদা শহীদ আব্দুল লতিফ (রাঃ)ও সেখান বসে ছিলেন। কোনো প্রয়োজনে নিজের জায়গা থেকে তিনি উঠে বাইরে গেলেন। ইতি মধ্যে হযরত মাওলানা নূরুদ্দীন (রাঃ) এসে পৌঁছলেন। খালি জায়গা দেখে তিনি সেখানে বসে পড়লেন। সাহেবজাদা ফিরে এসে দেখেন এবং রাগতঃ স্বরে বললেন, মৌলভী সাহেব আপনার কি জানা নেই যে কারো জায়গায় বসা উচিৎ নয়? তৎক্ষণাত হেকীম সাহেব উঠে যাচ্ছেন এমন সময়ে শহীদ সাহেবজাদা (রাঃ) বললেন, না না বসে থাকুন। এখনই আমার ওপরে ইলহাম হয়েছে “আল্লাহ্‌র প্রিয় বান্দাদের সাথে ঝগড়া করো না।” খোদা তাআলার সাথে অসাধারণ সম্পর্ক থাকার কারণে তাঁকে কখনো নিজের বিষয়ে পেরেশান হতে হয়নি।

যেভাবে হযরত আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) খোদা প্রদত্ত জ্ঞান ও সুক্ষ্মদর্শিতার আলোকে কোনো কোনো সাহাবার কতিপয় ভাব ধারণা অশুদ্ধ প্রমাণ করে ইসলামের মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য সঠিক পথ নির্ণয় করে দিয়েছিলেন, সেভাবে দ্বিতীয় সিদ্দীক (রাঃ) অর্থাৎ আহ্‌মদীয়া সিলসিলার দ্বিতীয় কুদরতের প্রথম বিকাশকেও ভুল ভাবধারাগুলোর মোকাবেলা করতে হয়েছিল। তিনি খুবই স্পষ্টভাবে এবং সাহসিকতার মাঝে এগুলোর মূলোৎপাটন করেছিলেন। যখন কতিপয় লোক খিলাফতের মর্যাদা হানি করতে চেষ্টা করেছিল তখন হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) বলেছিলেন,

“বলা হয়ে থাকে, খলীফার কাজ কেবল নামায পড়ানো এবং বয়আত গ্রহণ। একাজ তো একজন মোল্লার পক্ষেই যথেষ্ট। এর জন্য কোন খলীফার প্রয়োজন নেই। বয়আত সেই বিষয় যাতে কামিল-ইতায়াত (পূর্ণ আত্মসমর্পণ) করা হয়ে থাকে এবং খলীফার কোন হুকুমেরই অবাধ্যতা করা হয় না।”

এত্থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, হযরত (রাঃ)-এর নিকট খলীফার নির্বাচন যে কোন পদ্ধতিতেই হোক, প্রকৃত পক্ষে খোদা তাআলা স্বয়ং খলীফা মনোনীত করে থাকেন আর যে খিলাফত খোদা তাআলার তরফ থেকে প্রদান করা হয় তা কোনো মানুষ ছিনিয়ে নিতে পারে না।

তাঁর দোয়ার কবুলিয়তের বিষয়ে তিনি বলেছেন,

“মনে রেখো! আমার দোয়া আল্লাহ্‌র আরশেও কবুল করা হয়। আমার প্রিয় প্রভু তো আমার দোয়ার পূর্বেও আমার কাজ করে দেন। আমার সাথে লড়াই করা খোদার সাথে লড়াই করার নামান্তর। যে ব্যক্তি হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর সিদ্ধান্তের বিপরীত কাজ করে সে আহ্‌মদী নয়। যে সম্পর্কে হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ) কথা বলেন নি সে বিষয়ে আমাদের নিজ থেকে আনুমানিক কথাবার্তা বলা উচিত না”।

তিনি লিখেছেন,

“একবার আমি ভাল শিক্ষকের সন্ধান করে স্বদেশ থেকে বহু দূরে চলে গেলাম। তি��� দিন ক্ষুধার্ত ছিলাম কিন্তু কারো কাছে হাত পাতিনি। আমি মাগরিব নামাযের সময়ে এক মসজিদে চলে গেলাম কিন্তু সেখানে কেউ আমাকে কিছু জিজ্ঞেস করেনি আর নামাযের পর সবাই চলে গেল। যখন আমি একা ছিলাম তখন বাইরে থেকে আওয়াজ এলো নূরুদ্দীন! নূরুদ্দীন! খাবারগুলো তাড়াতাড়ি এসে নাও। আমি গেলাম। আমি এটাও জিজ্ঞেস করি নাই যে এ খাবারগুলো কোথা থেকে এসেছে? কেননা আমার বিশ্বাস ছিল এগুলো খোদা তাআলা পাঠিয়েছেন। আমি ভালভাবে খেলাম আর পাত্রখানা মসজিদের দরজার সাথেই একটি পেরেকে লটকিয়ে রেখে দিলাম। আট-দশ দিন পরে যখন আমি ফেরত আসি তখনো পাত্রটি সেখানেই লটকানো অবস্থায় ছিল। সেটা থেকে আমার একীন হয়ে গেল, খাবার গ্রামের কোন লোক পাঠায়নি। খোদা তাআলাই পাঠিয়েছেন।” (হায়াতে নূর, পৃঃ ২৪-২৫)

আর একবার ১৯০৯ সালের ঘটনা,

“এক বর্ষা কালে কাদিয়ানে লাগাতার আট দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছিল। বহু ঘরবাড়ী পরে গিয়েছিল। হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) যোহরের নামাযের পরে বললেন, আমি দোয়া করছি আপনারা সকলে আমীন বলবেন। দোয়া শেষ হলে তিনি বললেন আমি আজ ঐ দোয়া করেছি যা হযরত রসূলে করীম (সাঃ) সারা জীবনে শুধু একবার বৃষ্টি বন্ধ হওয়ার জন্য করেছিলেন। দোয়া করার সময়ে খুব জোরে জোরে বৃষ্টি পড়ছিল। পরে বৃষ্টি পড়া বন্ধ হয়ে যায় আর আসরের নামাযের সময় আকাশ পুরাপুরি পরিস্কার হয়ে যায়।”

হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ সানী (রাঃ) বলেছেন,

“হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ)-কে দেখে নাও, তাঁর (রাঃ) যখনই কোন প্রয়োজন হয় তখনই তা পূরণ হয়ে যায়। কোন প্রতিবন্ধকতা বা দেরী হয় না। তাঁর সাথে খোদা তাআলার প্রতিশ্রুতি রয়েছে। “যখনই তোমার প্রয়োজন হবে তখনই আমরা দিব।”

একটি ঘটনা হযরত খলীফাতুল মসীহ সানী (রাঃ) বলেছেন,

“আমার সামনে এক ব্যক্তি এসে দুইশত টাকা দু’বছরের জন্য আমানত রাখলো। আর বললো, আমি দু’বছর পরে এসে এগুলো আপনার কাছ থেকে নিব। অন্য ব্যক্তি যে ধার চেয়েছিল সে খলীফা আউয়াল (রাঃ) পাশেই বসা ছিল। তিনি লোকটিকে ওখান থেকে একশত টাকা দিয়ে দিলো। আর রশিদ নিয়ে থলে ও টাকা ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। কিছুক্ষণ পরেই যে লোকটি আমানত রেখেছিল সে ফেরত আসল আর বললো আমার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে নিয়েছি। গচ্ছিত টাকা দু’শ আমায় ফেরত দিন। তখন (রাঃ) বললেন কখন যাবে? লোকটি বললো এক ঘন্টা পরে। তিনি বললেন ঠিক আছে এক ঘন্টা পরে এসে নিয়ে যেও। আমি ঐ সময়ে (রাঃ)-র পাশেই বসা ছিলাম। তিনি বললেন দেখ, মানুষের উপর ভরসা করা কেমন ভুল। আমি ভুল করেছি। খোদা জানিয়ে দিলেন দেখ, তুমি ভুল করেছো! এখন দেখ আমার খো্‌দা কিভাবে আমায় সাহায্য করেন? ঐ একশত টাকা এক ঘন্টার মধ্যেই মিলে গেল আর তিনি লোকটিকে দিয়ে দিলেন।” (তারীখে আহ্‌মদীয়াত, ৩য় খন্ড)

একবার হযরত মীর নাসের নওয়াব সাহেব “দারুয্‌ যিয়াফা” বা নূর হাসপাতালের চাঁদার জন্য তাঁর নিকটে আসলেন। তিনি বললেন এখন কিছুই নেই আমার কাছে। কিন্তু মীর সাহেব কয়েকবার তাগাদা দিলেন। এতে তিনি কাপড় নিলেন ও তা থেকে তিনি এক পাউন্ড বের করে দিলেন আর বললেন, “এতে কেবল নূরুদ্দীন-ই হাত লাগিয়েছে।” (তারীখে আহ্‌মদীয়াত, ৩য় খন্ড)

আসলে তাঁর পুরো জীবনটা এমন এক আয়না যাতে খোদা তাআলার ফযল, রহমত ও বরকতের প্রত্যাদিষ্ট শুধু দৃষ্টিগোচর হয়। মোহতারাম হাকীম মোহাম্মদ সিদ্দীক সাহেব বর্ণনা করেন, হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) বলতেন,

“একবার আমরা তিন বন্ধু রাস্তা ভুলে যাই এবং বহু দূরে চলে যাই। কোন জনবসতিই দেখা যাচ্ছিল না। আমার বন্ধুদের খুবই ক্ষুধা ও তৃষ্ণা লেগেছে। তাই তাদের মধ্য থেকে একজন বললো, নূরুদ্দীন না বলে আমার খোদা আমাকে খাওয়ায়, পান করায়, আজ আমরা দেখবো কিভাবে খাওয়ায়, কিভাবে পান করায়। তিনি বললেন আমি দোয়া করতে লাগলাম। আর সামনে যাচ্ছি। পিছন থেকে জোরে আওয়াজ আসলো দাঁড়াও! দাড়াও! যখন পিছনে তাকালাম দেখলাম দুজন ঊটের আরোহী দ্রুত আসছে। নিকটে এসে তারা বললো-আমরা শিকারী। হরিণ শিকার করেছি, আর তা মজা করে রান্নাও করেছি। বাড়ী থেকে পরোটা নিয়ে এসেছিলাম। আমরা পরিতৃপ্ত হয়ে খেয়েছি আর এখনো অনেক খাবার রয়ে গেছে। আপনারা খেয়ে নিন। অতঃপর আমরা সবাই খুবই পরিতৃপ্ত সহকারে খেলাম। বন্ধুদের বিশ্বাস হয়ে গেল নূরুদ্দীন সত্য বলতো।” (হায়াতে নূর, পৃঃ ১৬৭)

আর একটি ঘটনা- “হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) বলতেন,

“ডিপ্লোমা বা সনদের ওপর ভরসা করাও শির্‌ক। একবার এক ব্যক্তি যে মাদ্রাসার অফিসার ছিল, আর আমিও সে মাদ্রাসার শিক্ষক ছিলাম। কোন এক প্রসঙ্গে সে আমাকে বললো, আপনার সনদের অহংকার রয়েছে। আমি তৎক্ষণাৎ আমার লোককে ডেকে বললাম তুমি আমার সনদ নিয়ে আস যেটিকে এ অফিসার খোদা মনে করছে। সনদটি নিয়ে আসলে আমি ওটিকে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলি। অফিসার খুবই বিচলিত হয়ে পড়ে। তিনি বললেন, আপনি কি উত্তেজিত হয়ে পড়েছেন? আমি বললাম না। আবার বললো রাগ করেছেন কি? আমি বললাম না। বললাম আপনি ওটিকে গর্ব ও অহংকার ভরে জীবিকার ভিত্তি মনে করেছেন। তাই ওটাকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেখালাম আমার এ ধরণের জিনিষের উপর কোন ভরসা নেই।” (হায়াতে নূর)

আল্লাহ্‌ তাআলার প্রতি তাঁর ভালবাসা ও গভীর সম্পর্কের বিষয়টি আরো বুঝা যায় এ ঘটনা থেকে, তিনি শুনেছিলেন যখনই খোদার ঘর দৃষ্টিতে আসে তৎক্ষণাৎ যে দোয়া করা হয় সেটি কবুল হয়। এ কারণে যখনই তিনি পবিত্র মক্কা শরীফে পৌঁছলেন আর খোদা তাআলার ঘর কা’বা তাঁর দষ্টিগোচর হলো তখন তিনি এ দোয়া করলেন,

“হে প্রভু! আমি তো সব সময়ই তোমার মুখাপেক্ষী। এখন আমি এই দোয়া করবো যে, প্রয়োজনের সময়ে আমি যা চাইবো তোমার নিকটে, তখন তুমি তা কবুল করে নিও।” তিনি বলেছেন আমার অভিজ্ঞতা খোদা তাআলা আমার এ দোয়া কবুল করেছেন। জীবনে বহু বড় বড় প্রকৃতিবাদী, দার্শনিক ও নাস্তিকদের সাথে আমার তর্ক বিতর্ক হয়েছে। আর দোয়ার বরকতে সর্বদা আমি সফলতা লাভ করেছি। এটা আমার ঈমানকেও বর্দ্ধিত করেছে।” (মিরকাতুল একীন, পৃঃ ১১২)

আর একটি ঘটনা-খোদা তাআলা তাৎক্ষণিক বুদ্ধি দিয়ে কিভাবে তাঁকে সাহায্য করেন এটা স্পষ্ট বুঝা যায়-একবার তিনি ট্রেনে যাচ্ছিলেন, একই কামরায় একজন খৃষ্টান পাদ্রী এক মুসলিম যুবককে ‘ত্রিত্ববাদ’ সম্পর্কে শোনাতে আরম্ভ করে। যুবকটি কোন ভাবেই ত্রিত্ববাদ বিষয়টি বুঝতে পারছিল না। পাদ্রী তখন রাগান্বিত হয়ে বলে আগে খৃষ্টান হও তাহলে ত্রিত্ববাদ বিষয়টি বুঝতে পারবে। যুবকটি এ কথায় রাজী না হওয়ায় পাদ্রী ক্রুদ্ধ হয়ে বললেন, তোমরা এশিয়া বাসীর মাথায় ত্রিত্ববাদ বুঝার মত ক্ষমতা নেই। হযরত নূরুদ্দীন (রাঃ) দূর থেকে তাদের আলোচনা শুনছিলেন। তিনি ইশারায় যুবকটিকে ডেকে কানে কানে বললো পাদ্রীকে গিয়ে বলো যে তোমাদের খোদাও তো এশিয়া বাসী ছিলো। যুবকটি গিয়ে উত্তর দেয়া মাত্রই পাদ্রী বললো নিশ্চয়ই তোমাকে কোনো কাদিয়ানী একথা শিখিয়ে দিয়েছে!

হযরত মালেক গোলাম ফরিদ সাহেব এম.এ. বর্ণনা করেন, হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ আওওয়াল (রাঃ) তাঁর শেষ দিকের অসুস্থ্যতার সময়ে মির্যা আব্দুল হাই সাহেবকে দরস দেবার সময় বললেন,

“এখন আমরা চলে যাচ্ছি। যখন কোন সমস্যা আসে তখন খোদার কাছে দোয়া করো হে নূরুদ্দীনের খোদা! যেভাবে নূরুদ্দীনের প্রয়োজনকে তুমি মিটিয়েছো, সেভাবে আমার প্রয়োজনকেও মিটাও। আমার সমস্যাকে দূর করে দাও! আশা করি খোদা তাআলা এভাবেই তোমাদের প্রয়োজনকে পূর্ণ করে দিবেন। এটা বলতে বলতে তার আওয়াজ স্পষ্ট হতে লাগলো।” (তারিখে আহ্‌মদীয়াত, খন্ড ৩ পৃঃ ৫৫৭)

১৯১৪ সালের ১৩ মার্চ তিনি মৃত্যু শয্যায় যখন তাঁর ছেলেকে ডেকে বললেন,

“আমি সব সময়ে বিশ্বাস করেছি আল্লাহ্‌ এক এ���ং এ��� বিশ্বাস নিয়েই মারা যাচ্ছি। আমি হযরত রসূল (সাঃ)-এর সকল সাহাবীকে সম্মান করি, পবিত্র কুরআনের পর আমি হাদীস বুখারী শরীফকে সবচেয়ে আল্লাহ্‌র নিকট গ্রহণ যোগ্য মনে করি। আমি হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আঃ)-কে আল্লাহ্‌র প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ মনে করি। আমি তাঁকে এত ভালবাসি যে তাঁর সন্তানগণ আমার নিকট তোমাদের চাইতেও প্রিয়। তোমাদেরকে আমি সর্বশক্তিমান আল্লাহ্‌র কাছে সঁপে দিলাম এবং আমি নিশ্চিত যে তিনি তোমাদেরকে ধ্বংস হতে দিবেন না। তোমরা নিয়মিত কুরআন পাঠ করবে এবং কুরআন অনুযায়ী আমল করবে। তোমরা অনেক মূল্যবান জিনিস দেখছো কিন্তু কুরআনের সমকক্ষ কিছুই নাই। নিঃসন্দেহে ইহা আল্লাহ্‌র বাণী!”

১৩ই মার্চ শুক্রবার তৈয়ম্মুম করে তিনি নামায পড়লেন। নামায শেষ হওয়ার পর শ্বাস-প্রশ্বাসের কষ্ট আরম্ভ হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তাঁর পবিত্র আত্মা এই নশ্বর দেহ ত্যাগ করে স্বীয় মাওলার সান্নিধ্যে চলে গেল। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)

জীবনে তিনি একজন জন দরদী ব্যক্তিত্ব ছিলেন। জাতি ধর্ম নির্বিশেষে তিনি জনসেবা করতেন। তাঁর মৃত্যুর খবরে হিন্দুরা পর্যন্ত কেঁদেছিল। ১৪ই মার্চ হযরত খলীফাতুল মসীহ্‌ সানী (রাঃ) তাঁর নামাযে জানাযা পড়ান এবং বেহেশতী মাকবেরাতে হযরত মসীহে মাওউদ (আঃ)-এর কবরের পার্শ্বে তাঁকে সমাহিত করা হয়। “আল্লাহুম্মা নূর কবরাহু ইলা ইয়ামিল ক্বিয়ামাহ্‌” অর্থাৎ “হে আল্লাহ্‌! কিয়ামতের দিন পর্যন্ত তাঁর কবরকে জ্যোতির্ময় করো।”

তিনি হযরত মসীহ্‌ মাওউদ (আঃ)-এর ন্যায় সম বয়স প্রাপ্ত হন (৭৩ বছর বয়স) যেমন হযরত আবু বকর (রাঃ) হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সম বয়স প্রাপ্ত হয়েছিলেন (৬৩ বছর বয়সের)। সকল উম্মতকে খিলাফতের ঐশী রজ্জুর সাথে দৃঢ়ভাবে সম্পৃক্ত থাকার তৌফিক দাও এবং সকল উম্মতের সদস্যদের হৃদয়কে একীনের নূরে পরিপূর্ণ করার তৌফিক দান করো, আমীন।

পাক্ষিক আহ্‌মদী - ৩১শে মে, ২০০৮ইং