হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর সত্যতার প্রমাণ

মুহাম্মদ খলিলূর রহমান

প্রবন্ধটিতে বানানরীতি আধুনিকায়ন করা হয়েছে।

আহ্‌মদীয়া জামাতের প্রতিষ্ঠাতা হযরত মির্যা গোলাম আহমদ (আ.) দাবী করেছেন যে, আল্লাহ্‌ তা’লা তাকে ইমাম মাহ্‌দী ও মসীহ্‌ মওউদ হিসেবে প্রেরণ করেছেন। বিগত ১৮৮৯ খৃস্টাব্দে তথা ১৩০৬ হিজরী হতে একশত বছরের অধিক সময় ধরে আহ্‌মদীয়া জামা’ত ইসলামের শ্বাশত বাণী প্রচার করে চলেছে। ইতিমধ্যে এই আধ্যাত্মিক সংগঠন পৃথিবীর শতাধিক দেশে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। শত বাধা-বিপত্তি সত্বেও আল্লাহ্ ‌তা’লার বিশেষ অনুগ্রহে এই সংগঠন সাফল্যের পর সাফল্য অর্জন করে বিশ্বব্যাপী ইসলাম ভিত্তিক ‘উম্মতে ওয়াহেদা’ প্রতিষ্ঠার লক্ষে নিরবচ্ছিন্নভাবে প্রচেষ্টা করে যাচ্ছে। অনেকে প্রশ্ন করেন যে, আহ্‌মদীয়া জামাতের প্রতিষ্ঠাতার দাবীর সত্যতার প্রমাণ কি? সংক্ষেপে এ সম্বন্ধে কয়েকটি প্রমাণ নীচে উল্ল্যেখ করা হলো। আশা করি সত্য-সন্ধানী সুধীবৃন্দ বিষয়টি উম্মুক্ত হৃদয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন। এ সম্বন্ধে প্রধানতঃ যে পাঁচটি বিষয়ের দিকে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই সেগুলো হলো:

আহ্‌মদীয়া জামাতের প্রতিষ্ঠাতা ঘোষণা করেছেন,

‘সমগ্র কুরআন মজীদে মোটামুটি সেই সকল স্বতঃসিদ্ধ কথাই বর্ণিত রয়েছে যেগুলো দ্বারা আল্লাহ্‌র তরফ হতে আদিষ্ট কোন ব্যক্তির (মামুর মিনাল্লাহ্‌-এর) সত্যতার সন্ধান পাওয়া যায়। এখন যে ব্যক্তি ঈমান আনা আবশ্যক মনে করে সে যেন এই পাঁচটি বিষয়ের দ্বারা আমাকে পরীক্ষা করে’। (আল্‌ হাকাম)

এই নিবন্ধে উপরোক্ত পাঁচটি বিষয়ের প্রেক্ষিতে কয়েকটি সাক্ষ্য-প্রমাণ সম্পর্কে সংক্ষেপে উল্ল্যেখ করা হলো। বিস্তারিত জানার জন্যে সংশ্লিষ্ট ধর্মগ্রন্থাবলী, অন্যান্য গ্রন্থাবলী এবং ইতিহাস ভিত্তিক বাস্তব ঘটনাবলী দ্রষ্টব্য। (উল্লেখ্য যে, পবিত্র কুরআনের আয়াত নম্বরসমূহে ‘বিসমিল্লাহ্‌’-যুক্ত আয়াতকে এক নম্বর আয়াত ধরে গণনা করা হয়েছে কেননা উক্ত আয়াত সংশ্লিষ্ট সূরারই অবিচ্ছেদ্য অংশ)।

১। পবিত্র শিক্ষাসহ আগমনের প্রমাণ:

২। ঐশী-নিদর্শনমূলক প্রমাণ:

৩. ১। ধমীয় গ্রন্থাবলীতে বর্ণিত ভবিষ্যাদ্বাণীসমূহের পূর্ণতার সাক্ষ্য প্রমাণ:

পবিত্র কুরআনে সূরা জুমুআতে তাঁর আবির্ভাব হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দ্বিতীয় আগমন বলে অভিহিত করা হয়েছে। সূরা সাফে তাঁকে ‘আহমদ’ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে। সূরা নূরে ‘ঈসা-সদৃশ’ খলীফা হিসাবে ইংগিত করা হয়েছে। সূরা কাহাফে তাঁকে ‘যুল কারনায়ন’ বলা হয়েছে। হাদীসের গ্রন্থাবলীতে তাঁকে কখনও ‘ইমাম মাহ্‌দী’, কখনও ‘ঈসা ইবনে মরিয়ম’, ‘ইবনে মরিয়াম’, ‘খলীফাতুল্লাহিল মাহ্‌দী’ বলা হয়েছে। হিন্দুদের শাস্ত্রাদিতে কলি যুগের জন্য প্রতিশ্রুত মহাপুরুষকে ‘কল্কি অবতার’ এবং বৌদ্ধ ধর্মে ‘মৈত্তেয়’ বলা হয়েছে। তিনি পার্শী ধর্মে ‘মসীদর বহরমী’, ‘সুসান’ এবং ‘পবিত্র আহমদ’ নামে তিনি পরিচিত, খৃষ্টানদের জন্য তিনি ‘মনুষ্য পুত্র ঈসা’ নামে এবং শিখ ধর্মে ‘রেশাদ’ ও ‘মাহ্‌দীমীর’ বলে অভিহিত। বস্তুতঃ সকল ধর্মের অনুসারীদের জন্য শেষ যুগে তিনি এক ও অভিন্ন ঐশী সংস্কারক হবেন। একই যুগে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তি প্রত্যাদিষ্ট হওয়ার প্রশ্ন বর্তমান যুগের প্রেক্ষাপটে অযৌক্তিক এবং হাস্যকর। হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, ‘মাহ্‌দী ঈসা ইবনে মরিয়ম ব্যতীত অপর কেহ নহেন’। (ইবনে মাজা)

পবিত্র কুরআনের কয়েকটি রেফারেন্স দৃষ্টান্ত হিসেবে নীচে উল্ল্যেখ করা হলো: (এ গুলোর বিস্তারিত বিশ্লেষণ, হাদীসের উক্তি ইত্যাদি বিষয়ে জানার জন্য হযরত মির্যা সাহেব (আ.)-এর লেখা ৮৮ খানা পুস্তক এবং আহ্‌মদীয়া সাহিত্য, পত্র-পত্রিকাদি দ্রষ্টব্য)।

৩.২। অন্যান্য ধর্ম গ্রন্থের ভবিষ্যদ্বাণীসমূহের পূর্ণতার প্রমাণসমূহ:

বিশ্বজনীন ধর্ম হিসাবে ইসলামই একমাত্র ধর্ম যা পৃথিবীর অন্যান্য ধর্ম এবং ধর্মীয় মহাপুরুষদিগকে সত্য বলে স্বীকৃতি দিয়েছে (লাকাদ বায়াসনা ফিকুলিৱ উম্মতির রাসূল- ইউনুস: ৪৮)। অবশ্য একথা সত্য যে, বিভিন্ন কারণে অতীতের গ্রন্থাবলী সংরক্ষিত হয় নাই এবং তার ফলে অনেক ক্ষেত্রে এগুলো বিকৃতি এবং হস্তক্ষেপের শিকার হয়েছে। এতদসত্বেও প্রাচীন ধর্ম গ্রন্থাবলীতে অল্প বিস্তর ভবিষ্যদ্বাণী দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো দ্বারাও ‘আখেরী তথা কলি যুগ’ এবং সেই যুগের মহাপুরুষের বিভিন্ন লক্ষণ ও চিহ্নাবলীর উল্ল্যেখ দেখতে পাওয়া যায় যেগুলো বর্তমান কালে পূর্ণতা লাভ করেছে। সংক্ষেপে কয়েকটি ভবিষ্যদ্বাণীর বরাত উল্ল্যেখ করলাম।

৪। আবির্ভাব যুগের অবস্থাবলীর সাক্ষ্য প্রমাণ:

৫। দাবী-কারকের ব্যক্তি-চরিত্র এবং ‘তাকওয়া’ ভিত্তিক প্রমাণ:

উপসংহার: উদাত্ত আহ্বান

সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর আগমন ঘটেছে। তাঁর দাবীর সত্যতা প্রমাণিত হয়েছে বাস্তব ঘটনা ও নিদর্শনাবলী দ্বারা। তিনি ইসলামের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও প্রচার, ইসলামের শ্রেষ্ঠত্ব ও বিশ্ব-বিজয়কে বাস্তবে প্রতিপন্ন করার জন্য খিলাফত ভিত্তিক একটি সুসংবদ্ধ জামা’ত গঠন করেছেন। আল্লাহ্‌ তা’লার ফযলে আহ্‌মদীয়া মুসলিম জামা’ত প্রথম প্রতিষ্ঠা শতাব্দী অতক্রম করেছে ২২শে মার্চ ১৯৮৯ সালে। উল্লেখ্য যে, হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.)-এর ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী তাঁর আর্বিভাবের পর হতে তিনশত বছরের মধ্যে বিশ্বব্যাপী ইসলামের মহাবিজয় এবং প্রচার সুসম্পন্ন হবে। উক্ত ভবিষ্যদ্বাণী অনুযায়ী প্রথম শতাব্দী অতিক্রান্ত হয়েছে আহ্‌মদীয়াতের প্রতিষ্ঠা শতাব্দী হিসাবে এবং আগামী দ্বিতীয় শতাব্দী (১৯৮৯-২০৮৯ খৃ:) ও তৃতীয় শতাব্দী (২০৮৯-২১৮৯ খৃ:) হবে আহ্‌মদীয়া জামাতের মাধ্যমে ইসলামের বিশ্ব-বিজয়ের শতাব্দী’।

হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) ঘোষণা করেছেন,

হে লোক সকল! শুনে রাখ যে, ইহা সেই খোদার ভবিষ্যদ্বাণী যিনি আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন। তিনি এই জামা’তকে জগতের সমস্ত দেশে বিস্তৃত করবেন এবং যুক্তি-প্রমাণ ও নিদর্শনের মাধ্যমে সকলের উপর প্রাধান্য দান করবেন। …. আজকের দিন হতে তৃতীয় শতাব্দী পার হবে না, যখন ঈসা নবীর (আ.) অপেক্ষারত কি মুসলমান কি খৃষ্টান সম্পূর্ণ নিরাশ ও হতাশ হয়ে (ঈসার আকাশ হইতে অবতরণের) এই মিথ্যা বিশ্বাসকে পরিত্যাগ করবে এবং পৃথিবীতে তখন একই ধর্ম (ইসলাম) হবে এবং একই ধর্ম নেতা (হযরত মুহাম্মদ (সা.)) হবেন। আমি কেবল বীজ বপন করতে এসেছি। অতএব আমার দ্বারা বীজ বপন করা হয়েছে। এখন এই বীজ বৃদ্ধি প্রাপ্ত হবে এবং ফুলে ফলে সুশোভিত হবে। কেহ ইহাকে রোধ করতে সক্ষম হবে না। (তাযকেরাতুস-শাহাদাতায়ন, ১৯০৪ সনে প্রকাশিত)

হযরত রসূল করীম (সা.) বলেছেন,

‘ইমাম মাহ্‌দী প্রকাশিত হওয়ার সংবাদ পাওয়া মাত্রই তার বয়আত করিও, যদি বরফের উপর হামাগুড়ি দিয়েও যেতে হয়। নিশ্চয় তিনি আল্লাহ্‌র খলীফা ইমাম মাহ্‌দী’। (ইবনে মাজা)

‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি তাঁকে (ইমাম মাহ্‌দীকে) পাবে, সে যেন তাঁর উপর ঈমান আনে এবং তাঁকে আমার সালাম পৌছিয়ে দেয়’। (কনজুল উম্মাল)

‘যে ব্যক্তি যুগ-ইমামের হাতে বয়আত না করে ইহ জগৎ ত্যাগ করেছে, সে জাহেলিয়তের মৃত্যুবরণ করেছে’। (মুসলিম, মসনদ আহমদ বিন হাম্বল)

হযরত রসূল আকরাম (সা.)-এর নির্দেশাবলীর আলোকে আহ্‌মদী মুসলমানগণ হযরত ইমাম মাহ্‌দী (আ.) কে মেনেছে এবং তাঁর প্রতিষ্ঠিত আহ্‌মদীয়া জামাতের মাধ্যমে ইসলামের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেছে। যদি পবিত্র রসূল (সা.)-এর ঐরূপ নির্দেশ না থাকতো তাহলে তারা কখনই উপরোক্ত দাবীকারকের কথায় কর্ণপাত করতো না।

আহ্‌মদীয়া জামাতের উন্নতি সম্পর্কে আল্লাহ্‌ তা’লা হযরত মির্যা সাহেবকে (আ.) সম্বোধন করে বলেন,

‘আমি তোমাকে ইসলামের এক বিরাট জামা’ত দান করব’ (বারাহীনে আহ্‌মদীয়া গ্রন্থের ৪র্থ খন্ডে ৫৫৬ পৃষ্ঠা এবং তাযকেরা গ্রন্থের ১০৭ পৃষ্ঠা)

তিনি আরও বলেছেন,

‘ইসলামের পূনরায় সেই সজীবতা ও উজ্জ্বলতার দিন আসবে যা পূর্বে ছিল এবং সেই সূর্য পুনরায় স্বীয় গৌরব সহকারে উদিত হবে যেমন পূর্বে উদিত হয়েছিল’ (ফতেহ্‌ ইসলাম)

আল্লাহ্‌ তা’লা তাঁকে জানিয়েছেন,

‘আমি তোমার প্রচারকে বিশ্বের প্রান্তে প্রান্তে পৌছাবো’।

হযরত মির্যা সাহেব (আ.) বলেছেন:

খোদা তা’লা আমাকে বারংবার জানিয়েছেন যে, তিনি আমাকে বহু সম্মানে ভূষিত করবেন এবং মানুষের হৃদয় আমার প্রতি ভক্তিতে আপ্লুত করে দিবেন। তিনি আমার অনুসারীগণের জামা’তকে সারা বিশ্বে বিস্তৃত করবেন এবং তাদেরকে সকল জাতির উপর জয়যুক্ত করবেন। আমার অনুসরণকারীগণ এরূপ অসাধারণ জ্ঞান ও তত্ত্ব-দর্শিতা লাভ করবে যে, তারা নিজ নিজ সত্যবাদিতার জ্যোতিতে এবং যুক্তিপূর্ণ প্রমাণ ও নিদর্শনাবলীর প্রভাবে সকলের মুখ বন্ধ করে দিবে। সকল জাতি এই নির্ঝর হতে তৃষ্ণা নিবারণ করবে এবং আমার সংঘ ফল-ফুলে সুশোভিত হয়ে দ্রুত বর্ধমান হবে এবং অচিরেই সারা জগৎ ছেয়ে ফেলবে। বহু বাধা-বিঘ্ন দেখা দিবে এবং পরীক্ষা আসবে কিন্তু খোদা সেগুলোকে পথ হতে অপসারিত করে দিবেন এবং আপন প্রতিশ্রুতি পূর্ণ করবেন। (তাজাল্লিয়াতে ইলাহিয়া পৃষ্ঠা: ২২)