প্রেস বিজ্ঞপ্তি
১৬-মে, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সৌভাগ্য লাভ করলো অস্ট্রেলিয়ার আনসার আমেলা সদস্যবৃন্দ


৭ মে ২০২৩, মজলিস আনসারুল্লাহ্ (চল্লিশোর্ধ্ব আহমদীয়া মুসলিম পুরুষদের অঙ্গ-সংগঠন) অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় আমেলার সদস্যবৃন্দের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) এক ভার্চুয়াল অনলাইন সভায় মিলিত হন।

হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর আমেলা সদস্যবৃন্দ সিডনিতে অবস্থিত বায়তুল হুদা মসজিদের খিলাফত হল থেকে অনলাইনে সভায় সংযুক্ত হন।

দোয়ার পর হুযূর আকদাস উপস্থিত সকলের সাথে কথা বলেন।

৪০ থেকে ৫৫ বছর বয়সী আনসার সদস্যদের দায়িত্বে নিয়োজিত নায়েব সদর সফে দওম-এর সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে, হুযূর আকদাস আনসার সদস্যদের কর্মক্ষম ও সুস্থ থাকার জন্য এবং ইসলামের সত্যিকার শান্তিপূর্ণ শিক্ষা মানুষের নিকট পৌঁছানোর জন্য মাধ্যম হিসেবে সাইকেল ব্যবহারে উৎসাহ প্রদান করেন।

হুযূর আকদাস উদাহরণ প্রদান করেন যে, সম্প্রতি আনসার সদস্যরা সাইকেলে করে যুক্তরাজ্য থেকে স্পেনে যান, যেখানে তারা ২০০ কিলোমিটার ভ্রমণ করতে সমর্থ হন। তিনি আরও উল্লেখ করেন তারা কীভাবে বিভিন্ন স্থানীয় সাইক্লিং গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়ে কাজ করেছেন, আর যার ফলে তারা স্থানীয় বাসিন্দাদের মাঝে ইসলামের বার্তা প্রচারেরও সুযোগ লাভ করেছেন।

অস্ট্রেলিয়ায় বসবাসরত আনসার সদস্যদেরও একই ধরনের কাজ করতে উদ্ধুদ্ধ করে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“স্থানীয় স্লাইক্লিং ক্লাবগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করুন এবং একত্রে প্রোগ্রাম পরিচালনা করুন। এভাবে আপনারা দাতব্য কাজের জন্য আরও অধিক ফান্ড সংগ্রহ করতে পারবেন এবং ইসলামের শান্তির শিক্ষার বার্তাও প্রচারের সুযোগ পাবেন। আপনারা বই বিতরণ করতে পারেন এবং এমনকি ‘ভালোবাসা সবার তরে’ ও সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাসের বিষয়ে ইসলামের বার্তা প্রচার করে এমন শার্ট পরিধান করতে পারেন। পাশাপাশি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহতা নিয়েও প্রচারাভিযান পরিচালনা করতে পারেন। স্থানীয় সাইক্লিং গ্রুপগুলোর সঙ্গে কাজ করার ফলে মানুষের সঙ্গে আপনাদের যোগাযোগ বাড়বে, পরিচিতি বৃদ্ধি পাবে এবং অমুসলিমরাও আপনাদের দাতব্য কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ লাভ করবে।”

আনসারদের নৈতিক প্রশিক্ষণের দায়িত্বে নিয়োজিত কায়েদ তরবিয়তকেও হুযূর আকদাস নির্দেশনা প্রদান করেন যেন, প্রতিনিয়ত আনসারদের নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে প্রণোদিত করা হয়।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আপনি ধর্মীয় উদ্ধৃতির ওপর ভিত্তি করে ছোট ছোট বার্তা প্রস্তুত করতে পারেন এবং সেগুলো শেয়ার করতে পারেন বা প্রিন্ট করে হাতে হাতে দিয়ে ইবাদতের গুরুত্বের বিষয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারেন। আনসার হওয়ার পর বিশেষ করে নামাযের প্রতি মনোযোগী হওয়া উচিত। এ বয়সের পরই রয়েছে পরকালের জীবনের হাতছানি। তাই, প্রতিনিয়ত তাদেরকে স্মরণ করান যেন তারা তাদের নামায আদায় করেন এবং আল্লাহ্ তা’লার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তুলেন। একইভাবে, তাদের মনোযোগ পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত এবং ধর্মীয় শিক্ষায় অগ্রসর হওয়ার প্রতি নিবদ্ধ করুন। কেবল যখন তারা তাদের জ্ঞানকে সমৃদ্ধ করবেন, তখনই তারা নিজেদের মধ্যে পরিবর্তন সাধন করতে পারবেন। তাদেরকে উৎসাহিত করতে চেষ্টা করুন যেন তারা আমার জুমু’আর খুতবা শোনেন।”

মানুষের নিকট ইসলামের শান্তিপূর্ণ শিক্ষা প্রচারের দায়িত্বে নিয়োজিত কায়েদ তবলীগের সঙ্গে কথা বলার সময় হুযূর আকদাস আমেলা সদস্যদের অস্ট্রেলিয়ায় ইসলামের বার্তা প্রচারের ক্ষেত্রে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করতে উৎসাহিত করেন এবং বলেন যে, যদি বয়োজ্যেষ্ঠ সদস্যরা আর কিছু নাও করতে পারেন, তারা যেন সাপ্তাহিক ছুটির দিনে অবসর সময়ে নিজ এলাকায় অন্তত লিফলেট বিতরণ করেন।

হুযূর আকদাস বলেন যে, অস্ট্রেলিয়ায় খুব কম সংখ্যক মানুষজন আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত সম্পর্কে জানেন এবং কেউ কেউ আহমদী মুসলমান ও মসজিদসমূহের বিরোধিতা করে থাকেন; কারণ, তারা ইসলামের সেই শান্তিপূর্ণ শিক্ষা সম্পর্কে অনবহিত, যার অনুসরণ আহমদী মুসলমানগণ করে থাকেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“সকল অঙ্গ-সংগঠনের একত্রে কাজ করতে হবে যেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি পায়। মানুষ যেন জানে আহমদীরা শান্তিপ্রিয় এবং সর্বদা সকল মানুষের মধ্যে শান্তি ও ভালোবাসা প্রসারে কাজ করে। একবার যখন আপনি মানুষের নিকট মৌলিক পরিচিতি তুলে ধরবেন, কেবল তখনই আপনি পরবর্তী পর্যায়ে অগ্রসর হতে পারবেন যে, কীভাবে ইসলাম সত্য ধর্ম এবং প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.) এসেছেন কিনা। নিজেদের মধ্যে পরিচয় হওয়ার পরই কেবল বড় বড় বিষয়গুলো আপনারা আলোচনা করতে পারবেন।”

হুযূর আকদাস আরও বলেন যে, মজলিস আনসারুল্লাহর কেবল ছোটখাট নৈমিত্তিক কাজে আবদ্ধ হয়ে থাকলে চলবে না; বরং, তাদের উচিত প্রতি সপ্তাহে শত শত মানুষকে ইসলামের শিক্ষা সম্পর্কে অবগত করার লক্ষ্য নেয়া।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আপনাদের অবশ্যই এমন কিছু প্রাথমিক কাজ করতে হবে যেন মানুষজন আপনদেরকে চেনে। অস্ট্রেলিয়ার শতকরা পঞ্চাশ থেকে ষাট ভাগ জনগোষ্ঠী যেন আহমদীয়া মুসলিশ জামা’তকে চেনে। আপনারা মিডিয়া ও বই-পুস্তক, লিফলেট ছাপার মাধ্যমে এটি অর্জন করতে পারেন। পুরাতন পথ ব্যবহারের পরিবর্তে নতুন নতুন পথ বের করুন … সামান্য প্রচেষ্টা দ্বারা পৃথিবীকে শান্তিপূর্ণ শিক্ষা সম্পর্কে জানানো সম্ভব হবে না। বরং, আপনাদেরকে এর জন্য কঠোর সংগ্রাম করতে হবে। আনসারুল্লাহ্র সদস্যবৃন্দ অধিক পরিপক্ক, আর তাই তাদেরকে উন্নত পরিকল্পনার মাধ্যমে কাজ করতে হবে। আপনাদের এমন কর্মসূচী ও উদ্যোগ হাতে নিতে হবে যা পূর্বে কখনো গ্রহণ করা হয় নি।”

মানবতার সেবার দায়িত্বে নিয়োজিত কায়েদ ঈসারকে হুযূর আকদাস আরও পরামর্শ দেন যে, পরিবেশের সুরক্ষার জন্য তাদেরকে গাছ রোপণ করতে হবে এবং নিশ্চিত করতে হবে যেন এটিও ইসলামের শিক্ষা প্রচারের মাধ্যম হয়।

সভা চলাকালীন হুযূর আকদাস আমেলা সদস্যদের আরও উপদেশ প্রদান করেন যেন তারা ওয়াকফে আরযী-তে অংশগ্রহণ করেন, যেখানে কেবলমাত্র আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের সেবার উদ্দেশ্যে অল্প কিছু দিন উৎসর্গ করা হয়। হুযূর আকদাস বলেন যে, এটি ‘বিশাল সাফল্য’ হবে যদি প্রত্যেক আমেলা সদস্য এই কর্মসূচিতে অংশ নেন এবং এর ফলে অন্যরাও এতে অংশগ্রহণে এগিয়ে আসবেন।