প্রেস বিজ্ঞপ্তি
০২-মে, ২০২৩

“নিজের ধর্মবিশ্বাসকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সর্বদা প্রতিকূলতার মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকুন” – লন্ডনে ওয়াকেফাতে নও ইজতেমায় আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান


“নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে গর্ব অনুভব করুন আর নিজেদের ধর্মের অভিব্যক্তির বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হোন” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

২৯ এপ্রিল ২০২৩, ইসলামের শান্তিপূর্ণ সেবার জন্য জীবন উৎসর্গকারী আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত যুক্তরাজ্যের নারী সদস্যাদের জন্য আয়োজিত সমাবেশ, বার্ষিক জাতীয় ওয়াকেফাতে নও ইজতেমা, যুক্তরাজ্যের সমাপনী অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।

লন্ডনের বায়তুল ফুতূহ মসজিদে আয়োজিত অনুষ্ঠানটিতে ওয়াকফে নও স্কিমের অন্তর্ভুক্ত ১,২০০ সদস্যাসহ ১,৬০০ এর অধিক নারী অংশগ্রহণ করেন।

এক অনুপ্রেরণাদায়ক ভাষণে, হুযূর আকদাস ওয়াকফে নও স্কীমের সদস্যাদের মহান দায়িত্ব এবং ধর্মকে প্রাধান্য দেওয়ার ক্ষেত্রে তাদের অঙ্গীকারের প্রকৃত অর্থ কী তা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“একবার যখন আপনারা বুঝে যাবেন অন্য সকল বিষয়ের ওপর আপনাদের ধর্মবিশ্বাসকে প্রাধান্য দেওয়ার অর্থ কী, আপনারা কীভাবে জীবন যাপন করবেন তার ওপর এর একটি সুগভীর প্রভাব পড়বে। এটি আপনাকে আত্মসংশোধনের এক প্রক্রিয়ার দিকে ধাবিত করবে এবং আপনাকে সর্বোত্তম উপায়ে আহমদিয়া মুসলিম জামা’তের সেবার সুযোগ করে দিবে। কোন ব্যক্তি, যিনি মুসলমান হিসেবে নিজের ধর্মবিশ্বাসকে প্রাধান্য দান করেন, প্রকৃতিগতভাবেই এক নৈতিক জীবন যাপনের দিকে ঝুঁকবেন। এমন ব্যক্তি নিজের মাঝে সেই সকল মূল্যবোধ ও গুণাবলী ধারণ করতে সচেষ্ট হবেন যেগুলোর দাবি ইসলাম করে থাকে। যদি আপনারা আপনাদের ধর্মবিশ্বাসকে সকল বিষয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করেন, তবে অন্যান্যদের ওপর এবং বিস্তৃত পরিসরে পুরো সমাজের ওপর আপনাদের একটি অত্যন্ত ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।”

হুযূর আকদাস বলেন যে, যখন বিশ্ববাসী ক্রমাগতভাবে খোদা বিমুখ হয়ে পড়ছে, এমন এক সময়ে ওয়াকেফাতে নও সদস্যাদের জন্য আবশ্যক যে, তারা যেন নিজেদের “প্রকৃত গুরুত্ব ও মর্যাদা” অনুধাবন করেন।

তাঁর ভাষণে, হুযূর আকদাস, ওয়াকেফাতে নও সদস্যাদের বিভিন্ন দায়িত্ব তুলে ধরেন, যেগুলোর পরিপূরণ তাদেরকে তাদের লক্ষ্য সর্বোত্তমভাবে অর্জনে অগ্রসর হতে সাহায্য করবে।

প্রতিদিন পাঁচ বেলার নামায আদায় এবং পবিত্র কুরআন তেলাওয়াতের অপরিসীম গুরুত্বের কথা বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ওয়াকেফাতে নও হিসেবে আপনাদেরকে সদা-সর্বদা নিজেদের নামাযের সুরক্ষা ও সংরক্ষণ করতে হবে। সালাতকে আপনাদের নিত্য সঙ্গী হিসেবে গণ্য করুন। এমন হওয়া উচিত নয় যে, আপনাদের পার্থিব কাজ বা পড়াশোনার জন্য আপনারা কোন নামায বিলম্বে পড়লেন অথবা ছেড়ে দিলেন। অলস হবেন না বা এমন দুর্বল বাহানার শিকার হবেন না, যেগুলো আপনাদেরকে আল্লাহ্‌র ইবাদত থেকে দূরে নিয়ে যায়। বরং, এটি নিশ্চিত করুন যে, আপনারা সময়মতো এবং গভীর যত্ন ও মনোযোগের সাথে নামায আদায় করেন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“ওয়াকেফাতে নও হিসেবে আপনারা ধর্মের সেবায় নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন, আর তাই আপনাদের ওপর বিশেষভাবে এ দায়িত্ব বর্তায় যে, আপনারা কুরআন চর্চা করবেন এবং এর বিভিন্ন শিক্ষাকে চিহ্নিত করবেন। পবিত্র কুরআনের প্রতিটি আদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং কখনোই একে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।”

এরপর হুযূর আকদাস নিজ পোশাকে এবং আচার-আচরণে শালীনতা অবলম্বনের ইসলামী শিক্ষার গুরুত্ব সম্পর্কে আলোচনা করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আল্লাহ্‌ তা’লা বলেন যে, মোমেন নারীদের নিজেদের পবিত্রতা ও শালীনতা সর্বদা রক্ষা করা উচিত এবং পর্দা অবলম্বন করা উচিত। কুরআনের এই শিক্ষার একটি মৌলিক কারণ এই যে, নারীদেরকে যেন পুরুষদের হয়রানি থেকে সুরক্ষিত ও নিরাপদ রাখা যায়, এবং যেন নিশ্চিত করা যায় যে, কোন পুরুষ কোনো দিন তাদের দিকে অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে তাকানোরও সাহস না পায়, অথবা তাদের সম্পর্কে তাদের হৃদয়ে কোন অপবিত্র বা মন্দ চিন্তার উদ্ভব যেন না হয়। নারীদেরকে সীমাবদ্ধ করার পরিবর্তে, হিজাব তাদেরকে পুরুষের অনাকাঙ্ক্ষিত দৃষ্টি থেকে মুক্তি দানের একটি মাধ্যম।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“এটা সত্য যে অমুসলিম বিশ্বে, পর্দা এবং হিজাবের ধারণা দীর্ঘদিন ধরে সমালোচিত হয়ে আসছে। তথাপি আজকাল, কতক অমুসলিমও এমন সুরক্ষামূলক ব্যবস্থার আহ্বান জানাচ্ছেন যেগুলো ইসলামের শিক্ষার প্রতিবিম্বস্বরূপ। সমাজের সকল পর্যায়ে পুরুষদের দ্বারা নারীদের হয়রানি এবং লাঞ্ছনার অগণিত ঘটনা দৃষ্টিপটে আসার কারণে তারা ধীরে ধীরে সাবধানতার আবশ্যকতা অনুধাবন করছে।”

হুযূর আকদাস সাম্প্রতিক বিভিন্ন জনমত জরিপের দৃষ্টান্ত পেশ করেন যেগুলোতে নারীদের যৌন নিপীড়নের মুখোমুখি হওয়ার চরম মাত্রা প্রকাশ পেয়েছে। এগুলোর মধ্যে একটিতে এই তথ্য সামনে এসেছে যে, সকল বয়সের নারীর মধ্যে শতকরা ৭০ ভাগ নারী জনসাধারণ্যে যৌন হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন বলে বর্ণনা করেছেন।

এ সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ফলস্বরূপ, এখন নারীদের জন্য ‘নিরাপদ স্থান’ (সেফ স্পেস) প্রতিষ্ঠা এবং ‘কেবল নারীদের জন্য সংরক্ষিত’ অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের ডাক উঠেছে। অনুরূপভাবে, সাম্প্রতিককালে, একটি নতুন প্রতিবেদনে জানা গেছে যে, যুক্তরাজ্যের অনেক নারী খেলাধুলা এবং শরীর চর্চা এই কারণে ছেড়ে দিচ্ছেন যে, তারা অনুভব করছেন যে, তাদেরকে শরীরের এক বড় অংশ উন্মুক্তকারী যে-সমস্ত পোশাক পড়তে তাদেরকে বাধ্য করা হয় সেগুলোর দ্বারা তাদেরকে যৌন আবেদনের পাত্রে পরিণত করা হচ্ছে এবং এতে তারা অসচ্ছন্দ বোধ করছেন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“তাই, আপনাদের কখনোই হিজাব অথবা ইসলামের অন্য কোন শিক্ষা নিয়ে হীনমন্যতার শিকার হওয়া বা বিব্রত বোধ করা উচিত নয়। বরং, আপনাদের নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে গর্বিত হোন এবং নিজেদের ধর্মের অভিব্যক্তির বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী হোন। নিশ্চিতভাবে, ইসলামের কোন আদেশ-নিষেধ নেই যা অযৌক্তিক বা অহেতুক। প্রতিটি ইসলামী শিক্ষা মানব প্রকৃতিসম্মত এবং সমাজের শান্তি ও সৌহার্দ্য নিশ্চিত করার মাধ্যম।”

হুযূর আকদাস এরপরে সত্যবাদিতার সেই উঁচু মান সম্পর্কে আলোচনা করেন, ইসলামের শিক্ষা অনুসারে যা ওয়াকফে নও সদস্যদের অবলম্বন করা আবশ্যক।

হুযূর আকদাস আরো বলেন যে, ওয়াকেফাতে নওদের অনেকেই এখন মা হয়েছেন; আর তাই এক ক্রমাগত বস্তুবাদী জগতে ধর্মপরায়ণ জীবন যাপনের ক্রমবর্ধিষ্ণু চ্যালেঞ্জসমূহ মোকাবেলার জন্য ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রশিক্ষণের বাড়তি দায়িত্ব তাদের ওপর অর্পিত হয়েছে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আহমদী মুসলমান মায়েদের নিজেদের মাঝে আল্লাহ্‌ তা’লার ইবাদতের সর্বোচ্চ মান বিকশিত করতে হবে এবং নিজেদেরকে সর্বোত্তম নৈতিকতায় সজ্জিত করতে হবে। আপনাদের অধিকাংশই এ দেশে বড় হয়েছেন এবং এখানেই শিক্ষা লাভ করেছেন। আর তাই আপনারা এই সমাজকে বুঝেন এবং এর মন্দ বিষয়াদি ও পাপাচার সম্পর্কে আপনারা অবহিত। এই জ্ঞানকে কাজে লাগান, কেবলমাত্র নিজেদেরকে এর কুপ্রভাব থেকে বাঁচানোর জন্য নয়, বরং নিজেদের সন্তানদেরও পথপ্রদর্শন করুন, যেন তারা সেই সকল নৈতিক স্খলনের ফাঁদসমূহ থেকে নিরাপদ থাকতে পারে, যা বাড়ন্ত বয়সে তাদের জন্য অপেক্ষা করছে। এতে সন্দেহের লেশমাত্র নেই যে, আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ধর্মের সাথে সম্পৃক্ততা নিশ্চিত করাটা আহমদী মায়েদের জন্য এক বিশাল চ্যালেঞ্জ।”

তাঁর ভাষণে হুযূর আকদাস বলেন যে, ওয়াকেফাতে নওদের অবশ্যই “অতীতের সেই সকল মহীয়সী নারীদের নিকট হতে অনুপ্রেরণা নিতে হবে যারা আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করেছিলেন।”

হযরত ঈসা (আ.)-এর নারী শিষ্যাদের দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ঈসা (আ.)-কে ক্রুশ থেকে নামানোর পরে যখন তিনি তিন দিন এক সমাধি-সদৃশ গুহায় অবস্থানের পর বের হয়ে আসেন, তখন মরিয়ম মগ্দালিনী এবং অপর দুই নারী ছিলেন যারা তার সহায়তাকল্পে এগিয়ে এসেছিলেন, যদিও তাদের ওপর কঠিন শাস্তি এবং কর্তৃপক্ষের প্রতিশোধের হুমকি ছিল। সেই সকল বীর নারী ভয়ে কুঁকড়ে যান নি। বরং তারা পুরুষ সাহাবীদের তুলনায় অনেক বেশি সাহস এবং আত্মনিবেদন প্রদর্শন করেছিলেন।”

হুযূর আকদাস আরো বলেন যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নারী সাহাবীরা যে কুরবানী পেশ করেছেন, “তা এক নতুন উচ্চতায় উপনীত হয়েছিল এবং তা চিরকাল মানবজাতির জন্য এক দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।”

ইসলামের প্রাথমিক যুগ থেকে হুযূর আকদাস বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেন।

নিজেদের ধর্মবিশ্বাসের জন্য কঠিন নিপীড়নের শিকার এক দম্পতির কথা বলতে গিয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“একবার, মহানবী (সা.) লক্ষ্য করেন যে, এক মুসলিম দম্পতি, যাদের উভয়ই ক্রীতদাস ছিলেন, তাদের নির্দয় মালিকের দ্বারা ভয়াবহভাবে অত্যাচারিত হচ্ছিলেন। তাদেরকে তপ্ত বালুর ওপর শুয়ে থাকতে বাধ্য করা হচ্ছিল এবং অবিরামভাবে মারধর করা হচ্ছিল, আর তাদের শরীরের ওপর জ্বলন্ত কয়লা এবং উত্তপ্ত পাথর রাখা হচ্ছিল। পুরোটা সময়, তাদের মালিকের দাবি এই ছিল যে, তারা যেন মহানবী (সা.)-এর ওপর তাদের বিশ্বাস থেকে প্রত্যাবর্তনের ঘোষণা করেন। নিদারুণ যন্ত্রণা সত্ত্বেও, তারা একটি মুহূর্তের জন্যও তাদের ঈমানে দুর্বলতা প্রদর্শন করেন নি। তাদের এই অত্যাচার লক্ষ করে মহানবী (সা.) আবেগে এবং শোকে আপ্লুত হয়ে পড়েন এবং আল্লাহর কাছে দোয়ার জন্য ঝুঁকেন। এরপর মহানবী (সা.) সেই মুসলিম দম্পতির উদ্দেশে ধৈর্য ধারণের পরামর্শ দিয়ে তাদেরকে আল্লাহ্‌ তা’লার সেই পুরস্কারের সুসংবাদ দান করেন যা তারা পরকালে লাভ করতে চলেছেন।”

এই বর্ণনায় আরও অগ্রসর হয়ে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“অবশেষে, বিরামহীন নিপীড়নের শিকার হয়ে স্বামীটি জীবন হারালেন। যখন সেই মুসলিম নারী তার স্বামীকে হারিয়েছেন, সেই মুহূর্তেও সেই মালিক তাঁর প্রতি কোন প্রকার দয়া প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়। বরং, সে একটি বর্শা হাতে তুলে নেয় এবং নিষ্ঠুরভাবে সেই নারীর তলপেটে তা ঢুকিয়ে দেয়, যা তাকেও মৃত্যুমুখে পতিত করে। দুনিয়ার দৃষ্টিতে, সেই নারীর কোন সম্মান বা মর্যাদা ছিল না। বস্তুত, ক্রীতদাস হিসেবে, তিনি সমাজের দুর্বলতম শ্রেণীর সদস্যা ছিলেন এবং তাঁর মালিকের ঘরের আসবাবপত্র বা অন্যান্য সম্পদের চেয়ে তাঁর মূল্য সামান্যতম বেশি বলেও বিবেচিত হতো না। কিন্তু, মহানবী (সা.)-এর সত্যতার বিষয়ে তাঁর অবিচল আস্থা এবং তাঁর ঈমানের নিশ্ছিদ্র মানের কারণে, সেই নারী, যার দিকে বিশ্ববাসী হেয় চোখে তাকাতো, আধ্যাত্মিকতার সর্বোচ্চ শৃঙ্গে আরোহন করেন এবং তার মহান মর্যাদা চিরকালের জন্য ইতিহাসে অমোচনীয় কালিতে লেখা হয়ে রইলো।”

হুযূর আকদাস তাঁর ভাষণের শেষাংশে ওয়াকেফাতে নওদের পরামর্শ দিয়ে বলেন:

“প্রত্যেক আহমদী মুসলমান নারী ও মেয়ে, বিশেষ করে ওয়াকেফাতে নওদের অবশ্যই অনুধাবন করতে হবে যে, নিজ ধর্মবিশ্বাসের খাতিরে সর্বপ্রকার ত্যাগের জন্য প্রস্তুত থাকার মুকুট পরার পালা এখন তাদের। আজকের সমাজে অগণিত নৈতিক ব্যাধি এবং পাপাচার বিদ্যমান, আর ক্রমাগতভাবে, মানুষ ধর্মকে পরিত্যাগ করছে। এমন পরিস্থিতিতে, ওয়াকেফাতে নওদের আল্লাহ্‌ তা’লার খাতিরে একটি অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। আপনাদেরকে নিজেদের মন থেকে দুনিয়াদারীর সকল চিহ্ন মিটিয়ে ফেলার জন্য সংগ্রাম করতে হবে; আর নিশ্চিত করতে হবে, আপনারা যেন দুনিয়ার বাহ্যিক আকর্ষণ ও চাকচিক্যের শিকারে পরিণত না হন। এর পরিবর্তে, নিজেদের জীবন ইসলামের শিক্ষা অনুসারে যাপনের চেষ্টা করুন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“নিজের ধর্মবিশ্বাসকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে সর্বদা প্রতিকূলতার মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত থাকুন। নিজের ধর্মবিশ্বাসের সুরক্ষা করুন এবং আল্লাহ্‌র সাথে এক চিরস্থায়ী জীবন্ত বন্ধন প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করুন। তাঁর সামনে পূর্ণ বিনয়ের সাথে নত হোন, এবং আন্তরিকভাবে এই দোয়া করুন যেন ইসলামের শান্তিপূর্ণ বাণীর প্রচার এবং নিজ ধর্মপরায়ণ আচরণের মাধ্যমে আপনারা পৃথিবীতে এক সুগভীর পরিবর্তন আনয়ন করতে সমর্থ হন। আল্লাহ্‌ তা’লার সামনে মানবজাতিকে নত করে মহানবী (সা.)-এর পতাকা-তলে একতাবদ্ধ করতে আপনার ভূমিকা পালনের জন্য প্রতিদিন চেষ্টা করুন। যদি আপনারা এই চ্যালেঞ্জে সাড়া দিয়ে দণ্ডায়মান হন, তবে আপনারা আপনাদের জীবনের উদ্দেশ্যকে পরিপূর্ণকারী হবেন এবং এই দাবি করতে পারবেন যে, আপনারা কেবল নামে নয়, বরং যা আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেভাবে, হৃদয়ের প্রেরণা এবং কর্মে আপনারা প্রকৃত ওয়াকফে নও।”