প্রেস বিজ্ঞপ্তি
৩০-এপ্রিল, ২০২৩

“ধৈর্যই নবীদের পথ” – আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান বললেন ধৈর্য এবং নামাযের মাধ্যমেই আহমদী মুসলমানগণ নিপীড়নের মোকাবেলা করে যাবে


“আমাদের শত্রুরা আমাদেরকে আক্রমণ করতে যত অগ্রসর হবে, আমাদের তত বেশি আল্লাহ্‌ তা’লার দিকে ঝুঁকতে হবে। এটিই আমাদের সফলতার একমাত্র চাবি।”
– হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

কঠোর নিপীড়নের মোকাবেলা করার জন্য আহমদী মুসলমানদের পূর্বাপেক্ষা অধিক নিবেদনের সাথে নিজের স্রষ্টার পানে ধৈর্যের সাথে প্রত্যাবর্তনের পরামর্শ দিলেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।
২৮ এপ্রিল ২০২৩, টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে অবস্থিত মুবারক মসজিদে তাঁর জুমুআর খুতবায় হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বিভিন্ন দেশে আহমদী মুসলমানগণ নিপীড়নের মুখে চলমান যে সকল চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন তা তুলে ধরেন। হুযূর আকদাস আহমদী মুসলমানগণ ইসলামের যে প্রকৃত শিক্ষাকে অবলম্বন করে থাকেন তার ওপর আলোকপাত করেন, যার কারণে তারা কখনো প্রতিশোধপরায়ণ হন না এবং কখনোই বিদ্বেষের জবাব প্রতিহিংসা দ্বারা প্রদান করেন না।

তাঁর সাপ্তাহিক জুমুআর খুতবায় হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) অসংখ্য স্থানে জামা’তকে ধৈর্য ধারণের উপদেশ দিয়েছেন, দোয়া করার উপদেশ দিয়েছেন আর স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, যাদের পা দুর্বল এবং আমার সাথে এসব কণ্টকাকীর্ণ ও পাথুরে পথে চলতে পারে না আর ধৈর্যধারণের শক্তি রাখে না, তারা চাইলে আমাকে পরিত্যাগ করতে পারে। এই ধৈর্যই তো বিশ্বব্যাপী জামা’তকে স্বতন্ত্র মর্যাদা দান করেছে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“অনেক রাজনীতিবিদ এবং সংবাদকর্মী আমাকেও প্রশ্ন করে থাকেন আমরা কেন এত ধৈর্য ধারণ করে থাকি, আর অধিকাংশ সময়ে আমি তাদের এই উত্তরই দিয়ে থাকি যে, যারা আমাদেরকে কষ্ট দিচ্ছে এবং অত্যাচার চালাচ্ছে তাদের মধ্য থেকেই আমরা আহমদীরা এসেছি … আমাদেরও স্বভাব প্রকৃতিও তাদের মতোই ছিল। আমরাও তাদের মতো প্রতিক্রিয়া দেখাতে পারি, কিন্তু আমরা যুগ-ইমামকে মেনেছি, যিনি শান্তি বজায় রাখার এবং আল্লাহ্ তা’লার কৃপারাজির উত্তরাধিকারী হওয়ার জন্য আমাদেরকে এই শিক্ষা দিয়েছেন যে, তোমরা ধৈর্য প্রদর্শন করবে।”

হুযূর আকদাস বলেন যে, নিজেদের অধিকারের দাবি করার সময় আহমদী মুসলমানদের আইনের গণ্ডির মধ্যে থাকতে হবে।

হুযূর আকদাস বলেন যে, আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের ইতিহাস এই সাক্ষ্য দেয় যে, খোদা তা’লা সকল সময়ে আহমদী মুসলমানদের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“এটিই নবীদের ইতিহাস আর এটিই আমাদের জন্য প্রতিশ্রুত মসীহ্ (আ.)-এর শিক্ষা যে, আমাদেরকে ধৈর্য ধারণ করতে হবে।”

হুযূর আকদাস বলেন যে, ‘ধৈর্য’-এর অর্থ এই নয় যে আমরা অলস বসে থাকবো। বরং, ধৈর্য দাবি করে যে আমরা ইবাদতে আরো অগ্রসর হই এবং আল্লাহ্‌ তা’লার দিকে ঝুঁকি।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“ধৈর্য শুধু এতটুকুই নয় যে, (মৌখিকভাবে) বলা হবে, ‘আমরা অনেক বড় ধৈর্যশীল’ আর এরপর হাত গুটিয়ে বসে থাকবে। বরং, অবিচলতার সাথে নিজের অভ্যন্তরীণ (দোষ-ত্রুটি) পরিষ্কার করাই হলো প্রকৃত ধৈর্য। যারা এমন মানুষ, আল্লাহ্ তা’লা তাদের সাহায্যের জন্য এমন স্থান থেকে আসেন যার কল্পনাও করা যায় না। বিরুদ্ধবাদীরা চায় আমরা যেন ধৈর্যের আঁচল হাতছাড়া করি এবং তাদের মতো আচরণ করি, যাতে তারা নিজেদের উদ্দেশ্যে সফল হতে পারে। কিন্তু, আল্লাহ্ তা’লা আমাদেরকে একথা বলেন যে, তোমরা বিবেক-বুদ্ধি খাটাবে, আত্মবিশ্লেষণ করে দেখবে যে, তোমরা যা বলছো তা আল্লাহ্ তা’লার নির্দেশসম্মত কিনা? আর সে মোতাবেক কাজ করতে হবে।”

সঠিক কারণেই ধৈর্য প্রদর্শন করা উচিত, এই বিষয়ের উপর গুরুত্ব আরোপ করে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“কিন্তু সর্বদা এটি স্মরণ রাখতে হবে যে, কোনো দুর্বলতার কারণে যেন ধৈর্যধারণ করা না হয়, জাগতিক কোনো ভয়ের কারণে যেন তা করা না হয়, বরং শুধুমাত্র আল্লাহ্ তা’লার সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যেই যেন তা হয়, তবেই সেটি প্রকৃত ধৈর্য যা আল্লাহ্ তা’লার কৃপারাজিকে আকৃষ্ট করে। যদি কোনো ব্যক্তি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার সামনে বা বাদশাহ্র সম্মুখে তার অত্যাচারের মুখে কেবলমাত্র এই কারণে নীরব থাকে যে, সে আল্লাহ্ তা’লার আদেশে ধৈর্যধারণ করছে, তবে এটিই প্রকৃত ধৈর্য। আর তা যদি জীবননাশের ভয়ে হয়ে থাকে, তবে এটি সঠিক নয়। আমরা যে ধৈর্যধারণের নসীহত করি, তা কেবলমাত্র এ কারণে যে, এটি আল্লাহ্ তা’লার নির্দেশ।”

হুযূর আকদাস বলেন যে, যদি আহমদী মুসলমানগণ চাইতেন, তবে তাদের বিরুদ্ধে যে সকল অন্যায় অবিচার হচ্ছে তার প্রতিক্রিয়া এমনভাবে ব্যক্ত করতে পারতেন যাতে অত্যাচারকারীদেরকে এক হাত দেখানো যেত। কিন্তু, আহমদী মুসলমানগণ কখনো এমন করবেন না; কেননা, এটি ইসলামের শিক্ষার পরিপন্থী।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“কিন্তু আমরা এমনটি করব না। এটি সেই শিক্ষার পরিপন্থি যা আমাদেরকে দেওয়া হয়েছে আর আমরা এমন কার্যকলাপকে ঘৃণা করি; কেননা, এটি নবীদের জামা’তের জন্য শোভনীয় নয়। আর আমরা বয়আতের অঙ্গীকারে মানবজাতিকে সকল প্রকার অনিষ্ট থেকে নিরাপদ রাখারও অঙ্গীকার করেছি।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“নবীদের এবং তাঁদের জামা’তের সুন্নত বা রীতি হলো, তাঁরা ধৈর্য ও দোয়ার মাধ্যমে কার্য সম্পাদন করে থাকেন; যেমনটি, আল্লাহ্ তা’লারও নির্দেশ এবং রসূল (সা.)-এরও নির্দেশ রয়েছে। প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-ও আমাদেরকে এই শিক্ষাই প্রদান করেছেন। অতএব, আমাদের সর্বদা একথা স্মরণ রাখা উচিত যে, জামা’তের বৃহত্তর স্বার্থে আমাদেরকে সাময়িক ও ছোটোখাটো কষ্ট ধৈর্য সহকারে সহ্য করতে হবে।”

প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.)-কে উদ্ধৃত করে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“[প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) বলেন] ‘যারা আমার বিরোধিতা করে (তাদের অবস্থা হলো) তারা যেন প্রবল বেগে ধেয়ে আসা এক বিশাল নদীর সামনে বাধা দেওয়ার জন্য নিজেদের হাত রেখে দেয়, আর চায় যে, তার মাধ্যমে পানি থেমে যাক।’ কিন্তু, এটি স্পষ্ট যে এর প্রবাহকে বন্ধ করা সম্ভব নয়। [প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) বলেন] ‘তারা তাদের গালিগালাজ দ্বারা এর প্রবাহকে বন্ধ করতে চায়। কিন্তু স্মরণ রাখবেন, একে কখনোই রুদ্ধ করা সম্ভব হবে না।’ ”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) আমাদেরকে বুঝিয়ে বলেছেন যে, আমাদের বিজয়ের অস্ত্র প্রতিক্রিয়া প্রদর্শন করা নয়। আমাদের বিজয়ের অস্ত্র হচ্ছে তওবা-ইস্তেগফার, ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন আর খোদা তা’লার শ্রেষ্ঠত্বকে দৃষ্টিপটে রাখা এবং পাঁচ বেলার নামায আদায় করা।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“বিরোধীরা যতটা গোলমাল ও শোরগোলের ক্ষেত্রে অগ্রসর হচ্ছে আমাদেরকে ততটাই আল্লাহ্ তা’লার প্রতি অধিক বিনত হতে হবে। এটিই আমাদের সাফল্যের মূলমন্ত্র। প্রতিশ্রুত মসীহ্‌ (আ.) বারংবার আমাদেরকে এরই নসীহত করেছেন, কোনো প্রকার প্রতিক্রিয়া দেখাতে নয়। আমাদের সফলতা সর্বাবস্থায় নির্ধারিত; যেমনটি তিনি বলেছেন, ইনশাআল্লাহ্। তবে হ্যাঁ, এই কথা স্মরণ রাখতে হবে যে, প্রজ্ঞার সাথে নিজেদের দায়িত্বও আমাদেরকে পালন করে যেতে হবে। প্রজ্ঞা বা হিকমতের ভিত্তিতে অনেক কাজ হতে পারে। তাই, প্রজ্ঞা অবলম্বন করে চলা একান্ত আবশ্যক। প্রত্যেক আহমদী যদি নিজের এই দায়িত্বকে উপলব্ধি করে নেয় তাহলে বহু সমস্যার সমাধান আমাদের আচার-আচরণ আর দোয়ার মাধ্যমে হতে পারে।”