প্রেস বিজ্ঞপ্তি
০৮-মার্চ, ২০২৩

ব্রিটেনের বৃহত্তম মসজিদে ২০১৫ সালে এক অগ্নিকাণ্ডের পর পুনর্নিমিত কম্প্লেক্সের উদ্বোধনকালে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনায় সদুদ্দেশ্য ও পারস্পরিক আস্থা নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিলেন বিশ্বজনীন মুসলিম নেতা



• “আমি কেবল দুঃখ এবং গভীর ব্যথা অনুভব করি যখন আমি দেখি যে, বিশ্ব ক্রমাগত দ্রুততর গতিতে এক বিভীষিকাময় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে”
• “একদিকে ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সমর্থন ও সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, বিশ্ব শক্তিগুলোর শান্তি আলোচনা এবং সদুদ্দেশ্য ও পারস্পরিক-আস্থাভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধ থামানোর জন্য সম্ভাব্য সকল প্রয়াস গ্রহণ করা উচিত।”
• “রুশ রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক যে অন্যায় কর্মই হয়ে থাকুক না কেন, আমাদেরকে বৃহত্তর চিত্র দৃষ্টিপটে রাখতে হবে যে, যদি যুদ্ধকে থামানো না হয়, তবে এটি একটি ক্রমাগত গভীরতর বৈশ্বিক সংকটের দিকে ধাবিত হবে”
• “যদি রাশিয়া এবং এর নেতৃবর্গ জানেন যে যুদ্ধের অবস্থান থেকে তাদের নিজেদের প্রত্যাহার তাদের নিজেদের নিশ্চিত ধ্বংস ডেকে আনবে, তবে যুদ্ধ বিরতির জন্য তাদের আর কতটুকুই বা প্রণোদনা থাকবে?”

৪ মার্চ ২০২৩ আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত যুক্তরাজ্য আয়োজিত ১৭তম ন্যাশনাল পীস সিম্পোজিয়ামে মূল ভাষণ প্রদান করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।

এই অনুষ্ঠানটির সাথে বায়তুল ফুতূহ মসজিদে ২০১৫ সালের এক অগ্নিকাণ্ডের পর পুনঃনির্মিত নতুন পাঁচ তলা ভবনের উদ্বোধনও সম্পন্ন হয়।

পীস সিম্পোজিয়ামের আনুষ্ঠানিক সূচনার পূর্বে, হুযূর আকদাস একটি ফলক উন্মোচন করে উপস্থিত সকলকে নিয়ে দোয়া পরিচালনার মাধ্যমে নতুন কমপ্লেক্সটির উদ্বোধন করেন, যেখানে দুটি বহুমুখী হলঘর, অফিস স্পেস এবং মেহমান আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে।

অনুষ্ঠানটিতে মন্ত্রীবর্গ, রাষ্ট্রদূত এবং সাংসদসহ ৫০০ বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও অতিথিসমেত ৪০টি দেশের ১৫০০-এর অধিক শ্রোতা অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠান চলাকালে হুযূর আকদাস যুদ্ধে এতিম হওয়া শিশুদের লালন-পালনকারী সেবামূলক সংস্থা আসেম (ASEM)-এর প্রতিষ্ঠাতা বারবারা ক্যারোলিন হফম্যানকে ২০১৯ সালের আহমদীয়া মুসলিম প্রাইজ ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ পীস প্রদান করেন।

এর পাশাপাশি হুযূর আকদাস হিরোশিমার সাবেক মেয়র ড. তাদাতোশি আকিবাকে নিউক্লিয়ার নিরস্ত্রীকরণ বিষয়ে তার প্রয়াসের জন্য ২০২২ সালের আহমদীয়া মুসলিম প্রাইজ ফর দি অ্যাডভান্সমেন্ট অফ পীস প্রদান করেন।

তাঁর ভাষণে, হুযূর আকদাস, ইউক্রেন যুদ্ধ যে ভয়াবহ পথে অগ্রসর হচ্ছে তা সম্পর্কে সাবধান করে বিশ্ব-নেতাদের “সমঝোতার জন্য পারস্পরিকভাবে গ্রহণযোগ্য অবস্থান খোঁজার জোর প্রয়াস চালানোর” এবং শান্তি প্রতিষ্ঠার জরুরী প্রচেষ্টার জন্য আহ্বান জানান, পাছে “বিরামহীন সহিংসতার চক্র … অধিকতর বিভীষিকাময় রূপে” ঘুরতে শুরু করে।
হুযূর আকদাস বলেন যে, তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বিপদজনকভাবে সন্নিকটে। আর সমাধানের পথ খুঁজে পাবার জন্য তিনি পবিত্র কুরআনের আয়াতের আলোকে রূপরেখা উপস্থাপন করেন।
তাঁর বক্তৃতায় হুযূর আকদাস মসজিদ তৈরির সত্যিকার উদ্দেশ্য ব্যক্ত করেন এবং মক্কায় অবস্থিত পবিত্র কাবাঘরের সঙ্গে প্রত্যেক মসজিদের যে সম্পর্ক থাকা আবশ্যক তার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“মুসলমানদেরকে মক্কার পবিত্র কাবা ঘরের দিকে অভিমুখ রেখে মসজিদ নির্মাণের এবং সেই কিবলামুখী হয়ে নামায পড়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কেবল বাহ্যিকভাবে পবিত্র কাবার দিকে কিবলামুখী হওয়াই যথেষ্ট নয়; বরং, মুসলমানগণ ও তাদের মসজিদসমূহকে অবশ্যই কাবার উদ্দেশ্য পূরণ করতে হবে, যা পবিত্র কুরআনের ৩:৯৮ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে যে, যে কেউ আল্লাহ্র পবিত্র ঘরে প্রবেশ করে, ‘সে শান্তির মধ্যে প্রবেশ করে’। পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের অর্থ এই যে, একজন প্রকৃত মুসলমান, যখন একটি মসজিদে প্রবেশ করেন, তখন তিনি শান্তির এক অবস্থায় প্রবেশ করেন, এবং খোদা তা’লার অধিকার আদায় এবং আদেশাবলী পালনের মাধ্যমে, অন্যের জন্য শান্তি ও নিরাপত্তার এক আলোকবর্তিকা সাব্যস্ত হন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“আমাদের সকল মসজিদ আধ্যাত্মিক দৃষ্টিকোণ থেকে পবিত্র কাবার প্রতিবিম্ব, যার কারণে সেগুলো কেবল খোদাতালার ইবাদতের ঘর হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি, মানবজাতির অধিকার রক্ষা এবং বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রয়াসের এক কেন্দ্র হিসেবেও কাজ করে।”
হুযূর আকদাস উল্লেখ করেন যে, বেশ কয়েক বছর ধরে আহমদীয়া মুসলিম জামা’ত শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পীস সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে আসছে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“যদিও আমরা দীর্ঘ দিন যাবত এই পয়গাম দিয়ে আসছি, মনে হয় এটিকে কেউ আমলে নেন নি। আমার মনে হয় এর মৌলিক কারণ এই যে, বিশ্বের বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ খোদা তা’লার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে এবং বস্তুবাদী লক্ষ্য ও পার্থিব উদ্দেশ্যাবলিকে তাদের চূড়ান্ত লক্ষ্য বলে বিবেচনা করে থাকে। এমন বৃথা ও লোভাতুর দৃষ্টিভঙ্গির কারণেই মানবজাতিকে বিংশ শতাব্দীতে দুটি বিধ্বংসী ও ভীতিপ্রদ বিশ্বযুদ্ধের মধ্যে টেনে হেঁচড়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। অতীতের বিভীষিকা থেকে শিক্ষা লাভের পরিবর্তে, বিশ্ব আবারো যুদ্ধবিগ্রহ ও সংঘাতে পরিবেষ্টিত হয়ে পড়েছে।”

হুযূর আকদাস বলেন যে, ইসলামী শিক্ষা শান্তি স্থাপনের জন্য সমাধান প্রদান করে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“পবিত্র কুরআন এই নির্দেশনা প্রদান করে যে, সফলতার সম্ভাবনা যত ক্ষীণই হোক না কেন শান্তি প্রতিষ্ঠার সকল সম্ভাব্য সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। ৪৯:১০ আয়াতে আল্লাহ্‌ তা’লা বলেন যে, যখন দুই পক্ষ যুদ্ধে লিপ্ত হয়, তৃতীয় পক্ষসমূহের উচিত তাদের মধ্যে সমঝোতার মাধ্যমে একটি শান্তিপূর্ণ মীমাংসার দিকে তাদেরকে পরিচালিত করার প্রয়াস গ্রহণ করা। যদি আগ্রাসী পক্ষ যুদ্ধ চালিয়ে যায়, তবে অন্যান্য দেশের দায়িত্ব তারা যেন একতাবদ্ধ হয় এবং আনুপাতিক ও বৈধ বল প্রয়োগ করার মাধ্যমে আগ্রাসী পক্ষকে বিরত করে। কিন্তু, একবার যখন এই নিষ্ঠুরতার অবসান হয়, তখন অন্যায় প্রতিহিংসা পরিচালনা বা প্রতিশোধ গ্রহণ করা উচিত নয়।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“পবিত্র কুরআনের ৫:৯ আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা করা হয়েছে যে, কোন জাতি বা পক্ষের শত্রুতা কখনো যেন আপনাকে ন্যায়বিচারের প্রকৃত মান ধারণ করা থেকে বিচ্যুত না করে। সেই দিক থেকে, এমন শাস্তিমূলক নিষেধাজ্ঞা বা অন্যান্য অন্যায় ব্যবস্থা যেকোনো মূল্যে এড়িয়ে চলা উচিত যেগুলো যুদ্ধ পরবর্তী একটি দেশকে অগ্রসর হওয়া থেকে বিরত রাখে এবং এর স্বাধীনতা ও সমৃদ্ধিকে সীমাবদ্ধ করে।”

বর্তমান সময়ের ইউক্রেনের যুদ্ধের দিকে দৃষ্টি প্রদান করে হুযূর আকদাস তুলে ধরেন কীভাবে ইসলামী শিক্ষা নিবিড়ভাবে প্রাসঙ্গিক।

হযরত খলীফাতুল মসীহ্ বলেন যে, যদিও ইউক্রেন যুদ্ধের শেষ হওয়ার কোন লক্ষণ নেই, কতক রাজনৈতিক নেতা ঘোষণা করে চলেছেন যে, “একবার যুদ্ধ শেষ হলে, রাশিয়ার ওপর কঠিন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে এবং তার কাছ থেকে তার কর্মের ফল আদায় করে নেওয়া হবে।”

এ ধরনের বিবৃতির ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোকপাত করতে গিয়ে হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) ব্রিটেনের সংবাদ-মাধ্যমে প্রকাশিত একটি নিবন্ধের প্রশংসা করেন এবং বলেন:
“সম্প্রতি দা টাইমস পত্রিকায় সাংবাদিক ম্যাথিউ প্যারিস এর একটি কলাম প্রকাশিত হয়েছে যেখানে বলা হয়েছে যে, কোন অর্থবহ শান্তি আলোচনার পূর্বে এমন বিবৃতি নিতান্তই অবিবেচনা প্রসূত এবং তা আগুনে ঘি ঢালার নামান্তর। … আমি বিশ্বাস করি যে, এই সতর্কবার্তা উচ্চারণ করে তিনি সঠিক কাজ করেছেন। যদি রাশিয়া এবং এর নেতৃবর্গ জানেন যে যুদ্ধের অবস্থান থেকে তাদের নিজেদের প্রত্যাহার তাদের নিজেদের নিশ্চিত ধ্বংস ডেকে আনবে, তবে যুদ্ধ বিরতির জন্য তাদের আর কতটুকুই বা প্রণোদনা থাকবে?”

কিছু উদ্ধত রাজনীতিবিদের উস্কানিমূলক বক্তব্যের বিপরীতে ইসলামের শিক্ষা উপস্থাপন করে, হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আমি বিশ্বাস করি যে, যোগাযোগের মাধ্যমসমূহ খোলা রাখা অত্যাবশ্যক এবং পরস্পরের কাছে গ্রহণযোগ্য সমঝোতার শর্ত খুঁজে বের করার জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া উচিত। কিন্তু, যদি আগ্রাসী পক্ষ দুঃখ-দুর্দশা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর থাকে এবং সেনা প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে ইসলামের শিক্ষা এই যে, অন্যান্য দেশের একতাবদ্ধ হওয়া উচিত এবং হানাহানি বন্ধ করতে আনুপাতিক এবং যথাযথ বল প্রয়োগ করা উচিত।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বক্তব্য অব্যাহত রাখেন এবং বলেন:
“হস্তক্ষেপকারী পক্ষসমূহের লক্ষ্য সকল সময়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা হওয়া উচিত, আগ্রাসীর প্রতি প্রতিশোধ গ্রহণ বা তাকে অপদস্থ করা নয়। আর কখনোই নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হওয়া বা সংঘাতের সুযোগ নিয়ে নিজস্ব স্বার্থ উদ্ধার করা লুক্কায়িত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত নয়। অন্যথায়, যারা পরাভূত হবে তাদের মধ্যে নিঃসন্দেহে অবিচার এবং ক্ষোভের এক অনুভূতি সৃষ্টি হবে। এমন আবেগসমূহ পরিণামে উদ্বেলিত হয়ে আরো সংঘাতের জন্ম দিবে এবং এভাবে বিরামহীন সহিংসতার চক্র অধিকতর বিভীষিকাময় রূপে আবর্তিত হতে থাকবে।”

ইউক্রেনের যুদ্ধ কীভাবে আরো বৃহত্তর সংঘাত এবং যুদ্ধের জন্য স্ফুলিঙ্গ হিসেবে কাজ করতে পারে সে সম্পর্কে হুযূর আকদাস সতর্কবার্তা উচ্চারণ করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“সত্য এই যে, এক যুদ্ধ থেকে প্রায়শই আরো যুদ্ধের সূত্রপাত হয়ে থাকে। এমন গভীর উদ্বেগ রয়েছে যে, ইউক্রেনের সংঘাত ছড়িয়ে পড়তে পারে এবং অন্যান্য দেশ শক্ত অবস্থান গ্রহণ করে বিবাদমান বিষয়াদি নিরসনে কূটনৈতিক প্রয়াস পরিত্যাগ করে শক্তি প্রয়োগের পথ অবলম্বন করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, তাইওয়ানের পরিস্থিতি ক্রমশ সঙ্গীন হয়ে উঠছে যেখানে চীন নিজের নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য উদ্যোগী হয়েছে। তাই, বিশ্ব নেতৃত্ব, সংবাদ মাধ্যম ও অন্যান্যরা এই চিন্তার ফাঁদে পড়ে যাবেন না যে, ইউক্রেনে সংগঠিত যুদ্ধকে সহজেই সীমিত করা যাবে।”

হুযূর আকদাস বিশ্ব-নেতা ও সংবাদ মাধ্যমকে সাবধান করে বলেন যে, তারা যেন “এই চিন্তার ফাঁদে পড়ে না যান যে, ইউক্রেনে সংগঠিত যুদ্ধকে সহজেই সীমিত করা যাবে”। তিনি তাইওয়ানে চলমান দ্বন্দ্বের কথা উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে সতর্ক করেন যে, যুদ্ধটি আরো ছড়িয়ে পড়তে পারে যদি অন্যান্য দেশসমূহ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা গ্রহণ এবং বল প্রয়োগ বন্ধ করে দেয়।

হুযূর আকদাস ইসলামী শিক্ষার আলোকে যদ্ধের এই দুষ্টচক্র বন্ধের জন্য বাস্তব সমাধান পেশ করেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আক্রান্ত এবং অবিচারের শিকার যারা, যেমন, এই মুহূর্তে ইউক্রেনিয়ান জাতি, তাদের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসার বিষয়ে বিশ্ববাসী সম্যক অবহিত। কিন্তু, এটি হয়তো আপনারা শুনে অবাক হবেন, ইসলাম মুসলমানদেরকে কেবল অত্যাচারিতকেই নয়, বরং যে আগ্রাসী বা অত্যাচারকারী তাকেও সাহায্য করার শিক্ষা দেয়। অবশ্য, এর অর্থ এ নয় যে, আগ্রাসী পক্ষকে আরো অধিকতর নিষ্ঠুরতা পরিচালনার উপকরণ বা স্বাধীনতা প্রদান করে তাদেরকে সাহায্য করো। বরং, কোনো আগ্রাসী পক্ষকে ‘সাহায্য’ করার অর্থ হলো আর কোন নিষ্ঠুরতা বা অবিচার পরিচালনা করা থেকে তাদেরকে বিরত করা।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“রুশ রাষ্ট্রযন্ত্র কর্তৃক যে অন্যায় কর্মই হয়ে থাকুক না কেন, আমাদেরকে বৃহত্তর চিত্র দৃষ্টিপটে রাখতে হবে যে, যদি যুদ্ধকে থামানো না হয়, তবে এটি একটি ক্রমাগত গভীরতর বৈশ্বিক সংকটের দিকে ধাবিত হবে যার পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। পরস্পর-বিরোধী ব্লকসমূহ ক্রমাগত শিকড় গেড়ে বসবে। পারস্পরিক বিদ্বেষ গভীরতর হতে থাকবে, যা এক বিশ্বযুদ্ধের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দিতে থাকবে। সুতরাং, একদিকে ইউক্রেনকে আত্মরক্ষায় সমর্থন ও সহযোগিতা চালিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি, বিশ্ব শক্তিগুলোর শান্তি আলোচনা এবং সদুদ্দেশ্য ও পারস্পরিক-আস্থাভিত্তিক সমঝোতার মাধ্যমে যুদ্ধ থামানোর জন্য সম্ভাব্য সকল প্রয়াস গ্রহণ করা উচিত।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আগত ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে তা ব্যক্ত করে মনোবেদনা প্রকাশ করেন এবং বলেন:
“অনেক বছর ধরে, আমি একটি পূর্ণমাত্রার বিশ্বযুদ্ধের ঝুঁকি সম্পর্কে হুশিয়ারি উচ্চারণ করে আসছি এবং আমি বর্ণনা করেছি কীভাবে এর ভয়াবহ ও বিধ্বংসী পরিণাম আমাদের সকল ধ্যান-ধারণাকে ছাড়িয়ে যাবে। এমন এক যুদ্ধ সম্পর্কে দীর্ঘদিন ধরে সতর্ক বাণী উচ্চারণের পর, আজ আমরা যে ক্রমাগতভাবে এর দিকে ধাবিত হচ্ছি এবং এখন অন্যরাও অনুরূপ অনুভুতি ও আশঙ্কা ব্যক্ত করছেন তা আমাকে মোটেই পরিতৃপ্ত করে না। বরং, আমি কেবল দুঃখ এবং গভীর ব্যথা অনুভব করি যখন আমি দেখি যে, বিশ্ব ক্রমাগত দ্রুততর গতিতে এক বিভীষিকাময় বিশ্বযুদ্ধের দিকে ধাবিত হচ্ছে যেখানে লক্ষ-কোটি নিরীহ মানুষ প্রাণ হারাবে অথবা তাদের জীবন চিরতরে ধ্বংস হয়ে যাবে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“অনাগতদের জন্য আমরা কী ধরনের ভবিষ্যৎ রেখে যাবো? আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মসমূহের জন্য শান্তি ও সমৃদ্ধির এক উত্তরাধিকার রেখে যাওয়ার পরিবর্তে, তাদের জন্য বিদায় কালে আমরা কেবল মৃত্যু, ধ্বংস ও দুর্দশা ছাড়া আর কিছুই রেখে যেতে পারবো না। নিশ্চিতভাবে, এটি আমার সুগভীর শঙ্কা যে, আজকের ভূ-রাজনৈতিক টানাপোড়েন ক্রমাগত নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে এবং পরিণামে একটি নিউক্লিয়ার যুদ্ধের দিকে আমাদেরকে নিয়ে যাবে। … তাই, হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে, আমি দোয়া করি যেন আল্লাহ্‌ তা’লা মানবজাতির ওপর দয়া পরবশ হন এবং যেন বিশ্ববাসী, বিশেষ করে এর নেতৃবর্গ এবং নীতি-নির্ধারকগণের, সময় থাকতেই বোধোদয় হয়।”

আহমদীয়া মুসলিম শান্তি পুরস্কার ২০১৯ এর বিজয়ী ও ‘আসেম’ (ASEM)-এর প্রতিষ্ঠাতা বারবারা ক্যারোলিন হফম্যান তার নির্ধারিত বক্তব্য শুরুর পূর্বে বলেন:
“আমি আজ এই সম্মান আমার সকল সাথীর সাথে শেয়ার করতে চাই। কেননা, এ কাজ আমি একা করি নি, আমরা সকলে মিলে করেছি।”

আহমদীয়া মুসলিম শান্তি পুরস্কার ২০২২ এর বিজয়ী ড. তাডাটোশি আকিবা বলেন:
“১০ই অগাস্ট ১৯৪৫ আপনারা [আহমদীয়া মুসলিম সম্প্রদায়] ছিলেন বিশ্বের মধ্যে প্রথমদের অন্যতম যারা মানবজাতির জন্য নিউক্লিয়ার মারণাস্ত্রের অকল্যাণ অনুধাবন করে এর প্রতিবাদ করেছিলেন। দ্বিতীয় খলীফা সেই দিন ঘোষণা করেছিলেন যে, ‘এটি আমাদের ধর্মীয় ও নৈতিক দায়িত্ব, আমরা যেন পুরো বিশ্বের সামনে ঘোষণা করি যে, আমরা এমন ধরনের রক্তপাতকে বৈধ বলে বিবেচনা করি না।’ বহুদিন পরে, শেষ পর্যন্ত বিশ্ব সেই একই উপসংহারে উপনীত হয়েছে। … সম্মানিত হুযূরের বক্তব্যসমূহ আমাদের পথ প্রদর্শন করে থাকে।”
কোভিড মহামারির কারণে ৪ বছর বিরতির পর আয়োজিত অনুষ্ঠানটি হুযূর আকদাসের পরিচালনায় দোয়ার মাধ্যমে সমাপ্ত হয়।

আনুষ্ঠানিক কার্যক্রমের পূর্বে হুযূর আকদাস বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তি ও অতিথিবর্গের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। আর পরের দিন, উক্ত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিবৃন্দের সঙ্গে সারেস্থ টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে তাঁর কার্যালয়ে সাক্ষাৎ প্রদান করেন।