প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২৬-ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো ডেনমার্কের লাজনা ও নাসেরাত


শিশুকে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিকতার মধ্য দিয়ে গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূণ একটি কাজ; আর আপনারা যদি কার্যকরভাবে এটি করতে সমর্থ হোন, এর অর্থ এই যে, আপনি আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছেন – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, নাসেরাতুল আহমদীয়া (আহমদীয়া মুসলিম নারী শিশু অঙ্গ-সংগঠন) এবং লাজনা ইমাইল্লাহ (আহমদীয়া মুসলিম নারী অঙ্গ-সংগঠন) ডেনমার্কের সদস্যাবৃন্দের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর এক ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা অনুষ্ঠিত হয়।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর নাসেরাত ও লাজনা সদস্যাবৃন্দ ডেনমার্কের নুসরত জাহান মসজিদ থেকে সভায় সংযুক্ত হন।

একটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশনের পর উপস্থিত নাসেরাত ও লাজনা সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।

একজন লাজনা সদস্যা হুযূর আকদাসকে মহানবী (সা.)-এর একটি হাদীসের মর্মার্থ সম্পর্কে প্রশ্ন করেন যেখানে বর্ণনা করা হয়েছে যে, আল্লাহ্ তা’লা বলেন: তিনি জান্নাত ও পৃথিবী সৃষ্টি করতেন না, যদি না মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.)-কে সৃষ্টি করা হতো।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) উত্তরে বলেন:

“এর মর্মার্থ এই যে, মহানবী (সা.) আল্লাহ্ তা’লার সবচেয়ে প্রিয় এবং তিনি তাঁকে পূর্ণাঙ্গ মানব বানিয়েছেন। আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন যে, পৃথিবীতে হযরত মুহাম্মদ (সা.) ব্যতীত অন্য কোন পূর্ণাঙ্গ মানুষ নেই। মানুষের সামর্থ্যের পরিপ্রেক্ষিতে তিনি পূর্ণাঙ্গ ছিলেন। তিনি যে শরীয়ত নিয়ে এসেছেন তা সর্বশ্রেষ্ঠ এবং পৃথিবীতে তিনি যে আদর্শ স্থাপন করে গিয়েছেন সেটিও অতুলনীয়। এভাবে আল্লাহ্ তা’লা তাঁকে নিখুঁতভাবে উপস্থাপন করে তাঁর নিজের অসীম শক্তিমত্তার দৃষ্টান্ত পেশ করতে চেয়েছেন … মহানবী (সা.) আল্লাহ্ তা’লার নিকট এতই প্রিয় ছিলেন যে, আল্লাহ্ তা’লা বিশ্বজগত এ উদ্দেশ্যে সৃষ্টি করেছেন যে, জগৎবাসী যেন মহানবী (সা.)-এর মাঝে একজন পূর্ণাঙ্গ মানবকে প্রত্যক্ষ করতে পারে এবং তাঁর পূর্ণাঙ্গ শিক্ষা মেনে চলতে পারে, তাঁর পদাঙ্ক অনুসরণ করতে পারে, তাঁর অনুসৃত পদ্ধতির ওপর আমল করতে পারে, কেননা তিনি এমনই এক পরিপূর্ণ ও পূর্ণাঙ্গ মানব যার পদাঙ্ক অনুসরণের মাধ্যমে কেউ আল্লাহ্ তা’লার ভালোবাসা অর্জন করতে পারেন।”

অপর এক অংশগ্রহণকারী পশ্চিমা সমাজে কিছু যুবকের সাংস্কৃতিক দ্বন্দ্বে ভোগা ও আত্মপরিচয় নিয়ে হীনমন্যতার মুখোমুখি হওয়া সম্পর্কে হুযূর আকদাসের নিকট জানতে চান।

হুযূর আকদাস বাড়িতে সন্তানদের লালন-পালনের প্রতি গুরুত্বারোপ করেন। হুযূর আকদাস বলেন যে, একজন শিশুর জীবনের বড় একটি অংশ ঘরে কেটে থাকে আর তাই পিতামাতাকে সন্তানদের ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা নিশ্চিত করা উচিত এবং সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আপনাদেরকে সন্তানের সঙ্গে নিবিড় সম্পর্ক স্থাপন করতে হবে এবং এর জন্য কঠোর চেষ্টা করতে হবে। তাদেরকে ধর্ম সম্পর্কে অবগত করুন। যেভাবে স্কুলে শিক্ষকরা কঠোর পরিশ্রম করে এবং তাদেরকে তথাকথিত বিভিন্ন প্রকার ‘স্বাধীনতা’র শিক্ষা প্রদান করে থাকে, একইভাবে পিতামাতার উচিত ঘরে সন্তানদেরকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দেওয়ার জন্য কঠোর প্রচেষ্টা গ্রহণ করা। শিশুকে ধর্মীয় মূল্যবোধ ও আধ্যাত্মিকতার মধ্য দিয়ে গড়ে তোলা খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ; আর আপনারা যদি কার্যকরভাবে এটি করতে সমর্থ হোন, এর অর্থ এই যে, আপনি আপনার ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পেরেছেন।”

হুযূর আকদাস বলেন, পিতামাতাকে প্রতিদিন তাদের সন্তানদের প্রশিক্ষণের বিষয়ে সময় দেওয়া উচিত; আর বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে অনর্থক কাজকর্ম থেকে বিরত থেকে সুনির্দিষ্টভাবে সন্তানদের সঙ্গে সময় কাটানো উচিত।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“যখন পিতামাতা উভয়ই বাড়িতে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ করবেন তখন স্কুলে ভিন্ন শিক্ষা পাওয়া সত্ত্বেও, শিশুরা তাদের ধর্ম সম্পর্কেও শিক্ষা লাভ করবে। সন্তানদেরকে এজন্য পিতামাতার ব্যবহারিক দৃষ্টান্ত দেখতে হবে। সন্তানরা যেন প্রত্যক্ষ করে তাদের পিতামাতা পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করছেন, পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত করছেন, আল্লাহ্ তা’লার ইবাদত করছেন এবং ধর্মের চর্চায় সম্পৃক্ত রয়েছেন। যদি বড়রা কার্যকরভাবে সঠিক দৃষ্টান্ত স্থাপন না করেন, তাহলে শিশুরা কী শিখবে?”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“যদি আমরা শিশুদের ধর্ম না শেখাই আর নিজেরা সে অনুযায়ী কাজ না করি এবং দৃষ্টান্ত স্থাপন না করি, তাহলে সমাজ তাদেরকে যা শিক্ষা দেবে তারা তাই অনুসরণ করবে এবং ইসলামকে কোনো মূল্যই দিবে না। আল্লাহ্ তা’লার প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত যে, আমাদের কাছে জীবন্ত ধর্ম রয়েছে যার শিক্ষা আমাদেরকে সেই সকল বিষয়াবলি সম্পর্কে অবহিত করে যা চিত্তাকর্ষক। সেই শিক্ষা আমাদেরকে এ বিষয়েও পথ প্রদর্শন করে যে, কীভাবে পরিবর্তনশীল সময়ের সাথে মানিয়ে নিতে হয়। সুতরাং, যখন আমাদের কাছে উক্ত শিক্ষা বিদ্যমান, তখন যদি আমরা তা অনুসরণ করতে ব্যর্থ হই তবে এটি হবে অনেক বড় দুর্ভাগ্যের বিষয়, আর আমরা আমাদের সন্তানদের ধ্বংস করার জন্য দায়ী থাকবো। সুতরাং, পিতামাতার বসে আলোচনা ও পরিকল্পনা করা উচিত তারা তাদের সন্তানদের কীভাবে বড় করতে চান। আমি দীর্ঘ দিন ধরে এ বিষয়ে কথা বলে আসছি, আর পূর্বের খলীফাগণও বলে গেছেন। আপনাদের উচিত ‍যুগ-খলীফার জুমুআর খুতবা মনোযোগ দিয়ে শোনা; কেননা, এর মধ্যে এ বিষয়ে নানা দিকনির্দেশনা সন্নিবেশিত থাকে।”

অপর এক লাজনা সদস্যা উল্লেখ করেন যে, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ঘরে সাংসারিক কাজে সাহায্য করতেন। তিনি হুযূর আকদাসের নিকট জানতে চান বাড়ির কাজে পুরুষের ভূমিকা কী।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“আমি প্রতিনিয়ত উপদেশ দিয়ে যাচ্ছি ও সকলকে স্মরণ করাচ্ছি যে, মহানবী (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করার গুরুত্ব সর্বাধিক। আল্লাহ্ তা’লা বলেন, তুমি যদি উচ্চ মানে উপনীত হতে চাও তাহলে মহানবী (সা.)-এর অনুসরণ করো। অনেক পুরুষেরাই ঘরের কাজে সাহায্য করে থাকে। সন্তানদের গড়ে তোলার ক্ষেত্রে পূর্বে যেমনটি আমি উল্লেখ করেছি, পিতামাতা উভয়েরই দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। যদি ঘরের পরিবেশ আন্তরিকভাবে বজায় রাখা হয় তবেই এটি সম্ভব। আন্তরিক পরিবেশই কেবল তখনই গড়ে তোলা সম্ভব হবে যখন পুরুষ প্রয়োজনের তাগিদে তার স্ত্রীকে ঘরের কাজে সাহায্য করবে। যদি পুরুষ সেটি না করে থাকে, তাহলে এটি ঠিক নয়।”
অপর এক লাজনা সদস্যা পরামর্শ চান কীভাবে কারো মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ভালো রাখা যায় এবং পরিবারকে কীভাবে এ বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করা যায়।
এ প্রশ্নের উত্তরে কীভাবে আজকাল রাত দীর্ঘতর, যা আমাদেরকে অধিক সময় নফল নামায পড়ার সুযোগ করে দিচ্ছে তা বর্ণনা করে হুযূর আকদাস অংশগ্রহণকারীদের (রাতের) এই নফল ইবাদত (তাহাজ্জুদ) আদায়ের উপদেশ প্রদান করেন। হুযূর আকদাস ভোরে কিছু শারীরিক ব্যায়াম করার এবং সকালের মুক্ত বাতাসে হাঁটার পরামর্শও প্রদান করেন। উপরন্তু, হুযূর আকদাস মসজিদে লাজনা সদস্যাদের মিলনমেলা আয়োজনের পরামর্শ প্রদান করেন যেখানে তারা ধর্মীয় শিক্ষা ও বিনোদনের জন্য কিছু অনুষ্ঠান আয়োজন করতে পারে।
শিশুদের বিষয়ে হুযূর আকদাস পুনর্ব্যক্ত করেন যে, তাদের ভিডিও গেম ও ইন্টারনেটে ডুবে থাকা উচিত নয়; বরং, তাদের উচিত মাঠে-ময়দানে সময় কাটানো, যা তাদের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে এবং বাড়ির সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে সহায়ক হবে।