প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২২-ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো ফিনল্যান্ডের খোদ্দাম ও আতফাল


“এমন এক সময় আসবে যখন আপনারাও স্বাধীনভাবে পাকিস্তানে যেতে পারবেন এবং [তখন] তথাকথিত উলামা ও ‘ইসলামের রক্ষক’-দের মাথা নত হয়ে যাবে।” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)
১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, মজলিস খোদ্দামুল আহমদীয়া (১৫-৪০ বছর বয়সী আহমদী তরুণ-যুবকদের অঙ্গ-সংগঠন) ও মজলিস আতফালুল আহমদীয়া (৭-১৫ বছর বয়সী আহমদী বালকদের অঙ্গ-সংগঠন) ফিনল্যান্ডের সদস্যদের সঙ্গে একটি ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্‌ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)।

হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর আতফাল ও খোদ্দাম সদস্যবৃন্দ ফিনল্যান্ডের হেলসিংকি থেকে সভায় ভার্চুয়ালি (অনলাইনে) সংযুক্ত হন।
কিছু আনুষ্ঠানিকতার পর খোদ্দাম ও আতফাল সদস্যগণ তাদের ধর্মবিশ্বাস ও সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয়ে হুযূর আকদাসের নিকট প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।
অংশগ্রহণকারী এক খাদেম হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন কীভাবে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা যায়।
হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) বলেছেন যে, যদি তুমি রাগান্বিত হও তাহলে বসে পড়ো এবং এরপরও যদি তোমার রাগ অব্যাহত থাকে তাহলে শুয়ে পড়ো, মুখ ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধৌত করো … সুতরাং, যখন তুমি রাগান্বিত হও, ইস্তেগফার করো এবং ঠাণ্ডা পানি পান করো। অগ্নিশর্মা ও আবেগতাড়িত হওয়ার পরিবর্তে, মহানবী (সা.) এর কথা অনুসারে, বসে পড়ো যেন তোমার রাগ কমে যায়। এছাড়া, অনেক কিছুর ওপরই মানুষের রাগ হয়ে থাকে এবং অনেক সময় তা ন্যায়সঙ্গতও হয়। কিন্তু সেক্ষেত্রেও বোধশক্তি হারিয়ে ফেলা উচিত নয়। কেবল কারো সংশোধনকল্পেই রাগ প্রকাশ করা উচিত। আর এ রাগ দ্রুতই প্রশমিত হওয়া উচিত এবং অন্তরে পুষে রাখা উচিত নয়। এটি অভ্যাসে পরিণত হওয়া উচিত নয় যে, তুমি ছোট ছোট বিষয়েও এমন রাগান্বিত হও যে মানুষজন তোমাকে নিয়ে চিন্তিত বোধ করে এবং তোমাকে এড়িয়ে চলে।”

অপর এক অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের উপর চলমান নিপীড়ন কখন বন্ধ হবে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“নিপীড়ন তখন বন্ধ হবে যখন আপনাদের দোয়া উচ্চতার সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছাবে। সুতরাং, প্রথমত নিজেদের মূল্যায়ন করুন; আল্লাহ্ তা’লার সঙ্গে আপনি কতটুকু সম্পর্ক গড়েছেন? আমরা বিভিন্ন স্লোগান উচ্চারণ করি এবং নযম গেয়ে থাকি, কিন্তু আমরা কি আল্লাহ্‌র এবং তাঁর ইবাদতের অধিকার আদায় করছি? আমরা কি আমাদের নৈতিকতার মান উন্নীত করা জন্য পুরোপুরি কুরআনের শিক্ষা অনুসারে জীবনযাপন করছি? নিপীড়ন ও অন্যায় থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আমরা কি আন্তরিকভাবে কেঁদে কেঁদে দোয়া করছি? সুতরাং, এটি আমাদের ওপরও নির্ভর করে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“এছাড়া, কখনো কখনো পরীক্ষাও দীর্ঘায়িত হয়ে থাকে। আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি যে, একবার আমি আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করেছিলাম কখন আমরা এসব থেকে মুক্তি পাবো। আমাকে আল্লাহ্ তা’লার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল যে, যদি পুরো জামা’ত, আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা, ইউনুস (আ.)-এর মান্যকারীদের মতো তিন দিন ধরে আল্লাহ্ তা’লার নিকট ক্রন্দন ও মিনতি সহকারে দোয়া করে তাহলে তিন দিনের মধ্যে এ বিষয়টির সমাধান হওয়া সম্ভব। এর অর্থ বিষয়টি আমাদের ওপর নির্ভর করে। শেষ পর্যন্ত, দোয়ার মাধ্যমেই এই নিপীড়ন থেকে মুক্ত হওয়া যাবে।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:
“মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) প্রবলভাবে দোয়া করতেন, তবুও তিনি মক্কায় তেরো বছর অত্যাচারের শিকার হয়েছেন। এমনকি মদীনাতেও অবিচার ও কঠিন পরিস্থিতি বিরাজ করছিল। যাহোক, ধীরে ধীরে পরিস্থিতি মুসলমানদের জন্য শ্রেয়তর হতে থাকে। সুতরাং, এটি আমাদের নিজেদের ওপর নির্ভর করে, আমরা আমাদের দোয়ায় কতটা ব্যাকুলচিত্ত এবং আল্লাহ্ তা’লার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক কেমন। যাহোক, এ নিপীড়ন থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আল্লাহ্ তা’লা নিশ্চয় একটা সময় নির্ধারণ করে রেখেছেন এবং এটি অবশ্যই আসবে। এতে সময় লাগতে পারে – মুসা (আ.)-এর জাতি তাঁকে অবিশ্বাস করেছিল এবং ফলে তারা ৪০ বছর কষ্ট ভোগ করে – কিন্তু আমরাতো অবিশ্বাস করি নি, আর সকল স্থানে আমাদের জামা’তের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা খুব ধার্মিক, আন্তরিকভাবে দোয়ায় রত থাকেন এবং সর্বপ্রকার ত্যাগ স্বীকারেও প্রস্তুত আছেন।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) সম্প্রতি বুরকিনা ফাসোতে শাহাদাতের উদাহরণ পেশ করে বলেন:
“সম্প্রতি আফ্রিকার আহমদীরা ত্যাগের এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। তাদের কুরবানী সত্যিকার অর্থেই সাহেবযাদা আব্দুল লতিফ শহীদের পদচিহ্ন অনুসরণ করে, যেখানে তারা সম্মুখে মৃত্যুকে দেখেও মিথ্যাকে প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং [সত্যের জন্য] নিজেদের জীবন উৎসর্গ করেছেন। একইভাবে, ১৯৭৪ সালেও গুজরানওয়ালাতেও আহমদীরা একইরকম কুরবানী করেছিলেন এবং এর ফলে আল্লাহ্ তা’লা আহমদীয়া মুসলিম জামা’তকে বিশাল উন্নতি দান করেছেন। যখনই আমরা অবিচারের শিকার হয়েছি, যখনই কোনো স্থানে আমরা নিপীড়নের শিকার হয়েছি, তখন অন্যান্য স্থানে সাফল্য ধরা দিয়েছে আর জামা’তের অগ্রগতির ধারা অব্যাহত রয়েছে। আপনারাও এখানে এসেছেন [পশ্চিমা বিশ্বে] এবং আপনারা এখন পূর্বের তুলনায় অনেক ভালো আছেন। এখানে যদি আপনারা দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকেন আর পরবর্তী প্রজন্মও যদি দ্বীনের ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকে, তাহলে আপনারা আরও সুফল লাভ করবেন। এরপর এমন এক সময় আসবে যখন আপনারাও স্বাধীনভাবে পাকিস্তানে যেতে পারবেন এবং [তখন] তথাকথিত উলামা ও ‘ইসলামের রক্ষক’-দের মাথা নত হয়ে যাবে। ইনশাআল্লাহ্ সেই সময়ও আসবে, কিন্তু আল্লাহ্‌ই ভালো জানেন এতে কত সময় লাগবে। আমাদের উচিত আমাদের দায়িত্ব পালন করা। আল্লাহ্ তা’লা ইনশাআল্লাহ্‌ পরিস্থিতি বদলে দেবেন।”

একজন খাদেম হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন কীভাবে কোনো ব্যক্তি নফসে লাউয়ামা (তিরস্কারকারী আত্মা)-র আধ্যাত্মিক স্তর থেকে নফসে মুতমাইন্না (শান্তিপ্রাপ্ত আত্মা)-র আধ্যাত্মিক স্তরে উপনীত হতে পারে, যেখানে সে পাপ কাজ করা হতে মুক্তি পায়।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:
“নিষ্ক্রিয়তার মাধ্যমে এটি অর্জন করা সম্ভব নয়। যতদূর সম্ভব কঠোর চেষ্টা করুন এবং শয়তানের সঙ্গে যুদ্ধ করুন। আপনার সৎকাজের পরিমাণ বৃ্দ্ধি করুন। আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য যাচনা করুন। নফসে লাউয়ামা থেকে নফসে মুতমাইন্নায় উপনীত হতে হলে আপনাকে আধ্যাত্মিক লড়াই করতে হবে এবং যথাসম্ভব জয়ের চেষ্টা করতে হবে। একটা সময় আসবে যখন আপনি শয়তানের প্ররোচনা থেকে বাঁচতে পারবেন। এটি আল্লাহর সাহায্য ছাড়া অর্জিত হতে পারে না এবং আপনাকে অবশ্যই আল্লাহ্‌র সাহায্য যাচনা করতে হবে। কেবলমাত্র প্রচেষ্টা দ্বারা কোনো ব্যক্তি কিছুই অর্জন করতে পারে না, এর জন্য পাশাপাশি দোয়া করাও আবশ্যক। দৃঢ়তার সাথে যদি দোয়ায় লেগে থাকেন তাহলে শয়তানের আক্রমণ হ্রাস পেতে থাকবে এবং ধীরে ধীরে আপনি শয়তানকেও পুরোপুরি পরাস্ত করতে পারবেন। আপনি আল্লাহর দিকে ধাবিত হবেন এবং এক সময় কেবল সেই কাজই করবেন আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল (সা.) যা চেয়ে থাকেন। এরপর আপনি ‘নবী, সিদ্দিক, শহীদ ও সালেহ্’-এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।”

হুযূর আকদাস বলেন যে, প্রাথমিকভাবে কোন ব্যক্তির উচিত শয়তানের বিরুদ্ধে যতটা সম্ভব যুদ্ধে জয়লাভ করার চেষ্টা করা; যেন যখনই তার হৃদয়ে অন্যায় ইচ্ছা ও প্রবৃত্তি জাগ্রত হয়, তখনই তা কাটিয়ে উঠতে পারে। এর ফলে পরিণামে সে তার মন্দ ইচ্ছাসমূহকে সম্পূর্ণরূপে দমন করতে সমর্থ হবে।