প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২৭-জানুয়ারি, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো জার্মানির নাসেরাত


“এটা দেখা উচিত না যে, কে কী পোশাক পরে আছে, আমাদের দেখা উচিত আমাদের হৃদয় কতটা বিশুদ্ধ, আর আমরা একে অপরের কতটা খেয়াল রাখি, আমরা একে অপরের আবেগ-অনুভূতির প্রতি যত্নশীল কিনা” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

২২ জানুয়ারি ২০২৩, নাসেরাতুল আহমদীয়া (আহমদীয়া মুসলিম নারী শিশু অঙ্গ-সংগঠন) জার্মানির ১০ থেকে ১২ বছর বয়সী সদস্যাদের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর এক ভার্চুয়াল শিক্ষামূলক অনলাইন ক্লাস অনুষ্ঠিত হয়।
হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর নাসেরাত সদস্যাগণ ফ্রাঙ্কফুর্টে অবস্থিত বায়তুস সুবূহ মসজিদ থেকে সভায় সংযুক্ত হন।
পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া একটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশনের পর নাসেরাতুল আহমদীয়ার সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।

অংশগ্রহণকারীদের একজন হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন খিলাফতের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে ভালো পন্থা কোনটি।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আল্লাহ্ তা’লার নিকট দোয়া করো, যেন তিনি তোমাকে খিলাফতের সঙ্গে সত্যিকার এক আধ্যাত্মিক সম্পর্ক স্থাপনের তৌফিক দান করেন। দ্বিতীয়ত, যুগ-খলীফার নির্দেশনা অনুসারে আমল করতে চেষ্টা করো। এমনটি হওয়া উচিত নয় যে, যে নির্দেশনাগুলো তোমার পছন্দ হবে সেগুলো তুমি মান্য করবে, আর যেগুলো পছন্দ করবে না সেগুলোর বিষয়ে বলবে যে, ‘না, না, এটাতো এমন হওয়ার কথা ছিল’, আর নানা ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ পেশ করতে শুরু করো। … যুগ-খলীফার বাণীকে নিজের মর্জি অনুযায়ী নিজের মতো করে ব্যাখ্যা করা তোমার উচিত হবে না। বরং, তোমার উচিত, নির্দেশনা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা। এর মাধ্যমে সম্পর্কবন্ধন ও ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।”

একজন বালিকা হুযূর আকদাসকে বলেন যে, ক্লাসের কিছুসংখ্যক অমুসলমান বালিকা তার ওড়না পরিধানকে পছন্দ করেন না এবং এর কারণে তার সাথে বন্ধুত্ব করেন না। তাদেরকে কীভাবে উত্তর প্রদান করা যায়, এ সম্পর্কে তিনি উপদেশ চান।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“তুমি তাদেরকে বলো যে, ‘প্রত্যেকের নিজস্ব পছন্দ থেকে থাকে। তুমি কোনো ধর্মের অনুসারী হতে পারো বা নাও হতে পারো, সে বিষয়টি ছেড়ে দাও। এখন তুমি স্কার্ট, নাকি ফ্রক, নাকি মিনি-স্কার্ট – কী পরবে তা তোমার ইচ্ছা। তুমি যেটা পছন্দ করো, সেটাই তুমি পরে নাও। এখন আমিও যে পোশাক পছন্দ করি, সেটা আমি পরে থাকি। এটাতো আপত্তির কোনো বিষয় নয়।’ তারা তোমার বয়সের হবে, তাই তাদেরকে এটি বুঝাও যে, তারা যা পছন্দ করে তা পরিধান করে এবং তুমি যা পছন্দ করে তা পরিধান করো…”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“তাদেরকে বলো, যেহেতু আমরা নিজেদের পছন্দ মতো জীবনযাপন করছি, তাই এসব বিষয়ে তর্ক বা ঝগড়া করার কী দরকার? তাদেরকে বলো, আমরা সকলে মানুষ এবং আমাদের উচিত একে অপরের সঙ্গে সম্প্রীতির সাথে বসবাস করা। এটা দেখা উচিত না যে, কে কী পোশাক পরে আছে, আমাদের দেখা উচিত আমাদের হৃদয় কতটা বিশুদ্ধ, আর আমরা একে অপরের কতটা খেয়াল রাখি, আমরা একে অপরের আবেগ-অনুভূতির প্রতি যত্নশীল কিনা, আমরা একে অপরের সেবায় এগিয়ে আসার জন্য প্রস্তুত কিনা। এগুলো হলো আসল বিষয়, এটাই মানুষের কাজ। আর, ওড়না পরা, কিংবা না পরার বিষয়টি পরের কথা। মানবিক মূল্যবোধের ওপর এসব কথা বলার পর, তাদেরকে আরও বলো, ‘হ্যাঁ, আরো একটি বিষয় আছে, যা আমাকে অনুসরণ করতে হবে, আর তা হলো আমার ধর্মবিশ্বাস। যখন আমি বড় হবো, যৌবনে পদার্পণ করবো, তখন আমার ওপর নির্দেশ এই যে, আমি যেন ওড়নাও নিই, হিজাবও পরি, শালীন পোশাক পরিধান করি, আর পর্দার ন্যূনতম মান বজায় রাখার চেষ্টা করি।”

একজন অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন শিশু থাকাকালীন মা-বাবার সাথে তাঁর প্রিয় কাজ কী ছিল।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“অনেকগুলো প্রিয় কাজ থেকে থাকবে, কিন্তু ইতোমধ্যে বহুদিন কেটে গেছে। আমার তাদের সঙ্গে কাটানো সময়ের কথা পড়ে, মনে পড়ে কীভাবে তারা উপদেশ প্রদান করতেন, তাদের সঙ্গে ভ্রমণের কথা, পর্বত আরোহণের স্মৃতি। পিতা-মাতার সঙ্গে কাটানো প্রত্যেক স্মৃতিই অসাধারণ।”

অপর এক বালিকা হুযূরকে জিজ্ঞেস করেন মাথা স্কার্ফে ঢেকে পার্কে জগিং করার জন্য মেয়েরা যেতে পারবে কিনা, আর যদি পারে তো কতটুকু? কেননা, অধিকাংশ সময়ে সেখানে অন্যান্য পুরুষরাও জগিং করতে থাকে।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“অবশ্যই তুমি যাও এবং জগিং করো (দৌড়াও), অনুমতি আছে। … তোমরা শরীরচর্চা করার সময়ে মাথা ঢাকার জন্য আধুনিক কোন ক্যাপ ডিজাইন করে নাও, আর পোশাক যদি আঁটোসাটো না হয়, তাহলে তোমরা পার্কে গিয়ে হাঁটতেও পারো, জগিংও করতে পারো, কোন বাধা নাই। হ্যাঁ, এ বিষয়টি স্মরণ রাখতে হবে যে, তুমি পুরুষদের সঙ্গে খুব বেশি মেলা-মেশা করো না, তোমার শরীরচর্চা করো, দৌঁড়াও এবং এরপর বাড়ি চলে আসো। আরও ভালো হয় তুমি যদি সাথে তোমার ভাই বা বাবাকে নিয়ে যাও; কেননা, বর্তমানে পার্কে বিভিন্ন সময়ে কু-মতলবধারী কিছু মানুষও এসে থাকে।”

রাস্তায় ভিক্ষুকদের সম্মুখীন হলে আমাদের কী করা উচিত, যখন আমরা জানি না যে, সে প্রকৃতপক্ষে গরীব কিনা, এ সম্পর্কে একটি প্রশ্ন করা হয়।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“উত্তম পন্থা হলো দাতব্য সংস্থার মাধ্যমে অর্থ দান করা। অন্যান্য সম্প্রদায় দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দাতব্য সংস্থাসমূহও রয়েছে যাদেরকে ‘হিউম্যানিটি ফার্স্ট’ বা সরাসরি আহমদী মুসলিম জামা’তের মাধ্যমেও অর্থ প্রদান করা হয়, যেন তারা গরীবদের সাহায্য করতে পারে। তারা ভালো জানে কোথায় খরচ করতে হবে, সন্তানদের শিক্ষার জন্য, নাকি খাদ্য সরবরাহের জন্য, নাকি চিকিৎসা-সেবার জন্য। তাই আমরা এমন দাতব্য সংস্থাকেও অর্থ প্রদান করে থাকি। কিন্তু, যদি কোনো ভিক্ষুক সরাসরি তোমার কাছে সাহায্য চায়, তাহলে আমাদের শিক্ষা হলো তাকে ফিরিয়ে দেওয়া উচিত নয়; বরং, তাকে কিছু দেওয়া উচিত, এমনকি অল্প হলেও। যদি তুমি তাকে অর্থ দিতে না চাও, তাহলে ‘সালাম’ বলে চলে এসো, অন্তত ধমক দিও না বা কর্কশভাবে তার সাথে কথা বলো না; কারণ, কে জানে সে সত্যিই অভাবী কিনা, তার হৃদয়ে কী আছে তা তো আমাদের অজানা।”