প্রেস বিজ্ঞপ্তি
২০-জানুয়ারি, ২০২৩

আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধানের সাথে ভার্চুয়াল সাক্ষাতের সম্মান লাভ করলো ইন্দোনেশিয়ার ওয়াকফে নও লাজনা ও নাসেরাত সদস্যাবৃন্দ


“কখনো নিরাশ হবেন না। কঠিন পরিশ্রম করুন এবং আল্লাহ্ তা’লার নিকট দোয়া করুন, তখন আপনি [লক্ষ্য অর্জনে] সমর্থ হবেন।” – হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)

১৫ জানুয়ারি ২০২৩, ওয়াকফে নও স্কীমের অন্তর্ভুক্ত ইন্দোনেশিয়ার লাজনা ও নাসেরাত (আহমদীয়া মুসলিম নারী ও নারী শিশু অঙ্গ-সংগঠন) সদস্যাদের সাথে আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের বিশ্ব-প্রধান ও পঞ্চম খলীফাতুল মসীহ্ হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.)-এর একটি ভার্চুয়াল (অনলাইন) সভা অনুষ্ঠিত হয়।

হুযূর আকদাস টিলফোর্ডের ইসলামাবাদে এমটিএ ইন্টারন্যাশনাল স্টুডিও থেকে এ সভার সভাপতিত্ব করেন, আর লাজনা সদস্যাবৃন্দ ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তা থেকে অনলাইনে সভায় সংযুক্ত হন।

পবিত্র কুরআন তিলাওয়াত দিয়ে শুরু হওয়া একটি আনুষ্ঠানিক অধিবেশনের পর ওয়াকফে নও স্কীমের অন্তর্ভুক্ত সদস্যাবৃন্দ হুযূর আকদাসকে তাদের ধর্ম-বিশ্বাস ও সমসাময়িক বিষয়াদি নিয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন করার সুযোগ লাভ করেন।

একজন অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন কীভাবে কোনো ব্যক্তি ভুল করা বা ক্ষতিকর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকতে পারেন।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন যে, যখনই আমরা কোনো কাজ শুরু করতে যাই, আমাদের উচিত তাঁর সাহায্য যাচনা করা। আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করুন যেন তিনি কাজটি আমাদের জন্য সহজ করে দেন। আল্লাহ্ তা’লার সাহায্য ও দিকনির্দেশনা প্রার্থনা করুন, যেন কাজটি যদি আপনার জন্য মঙ্গলজনক হয়, তাহলে আল্লাহ্ তা’লা যেন তা আপনার জন্য সহজ ও স্বস্তিকর করে দেন এবং আপনার হৃদয়কে তৃপ্ত করেন। যদি আপনি আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করতে থাকেন তাহলে তিনি আপনাকে সাহায্য করবেন। আপনি হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করবেন এবং কাজটির পরিসমাপ্তি অশুভ হবে না। সুতরাং, স্মরণ রাখুন, আমাদের উচিত সার্বক্ষণিক আল্লাহ্ তা’লার নিকট দোয়া করতে থাকা। যখন আমরা কোনো কিছু শুরু করি, যখন আমরা কাজটি করতে থাকি এবং এভাবে জীবনের শেষাবধি আমাদের উচিত তাঁর নিকট সাহায্য যাচনা করা। তাহলে আল্লাহ্ তা’লা আমাদের সাহায্য করবেন এবং যখন তিনি আমাদের সাহায্য করেন, তখন ফলাফল কখনো অশুভ হতে পারে না।”

অপর এক শিক্ষার্থী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন শিক্ষা গ্রহণ ও জামা’তের কাজে স্বেচ্ছাসেবার মাঝে কোনটিকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“প্রথমত, শিক্ষা গ্রহণ সম্পন্ন করুন, উত্তম শিক্ষা অর্জন করুন এবং এরপর আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের কাজে অগ্রসর হোন এবং এর সেবায় নিয়োজিত হোন। এছাড়া, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে ওয়াকফাতে নও ক্লাস কিংবা ইজতেমায় [বার্ষিক সম্মেলন] অংশগ্রহণ করুন। যখনই আপনি ছুটি পান, [লাজনার] প্রেসিডেন্ট বা সেক্রেটারি ওয়াকফে নও দ্বারা অর্পিত জামা’তের কাজে কিছু সময় ব্যয় করুন। কিন্তু, কখনোই আপনার পড়াশোনাকে জলাঞ্জলি দিয়ে নয়। প্রথমে আপনার পড়াশোনায় মনোনিবেশ করুন, শিক্ষা সমাপ্ত করুন, উন্নত শিক্ষা লাভ করুন; তাহলে আপনি আহমদীয়া মুসলিম জামা’তের জন্য অধিকতর কল্যাণকর এবং উপকারী সম্পদে পরিণত হবেন।”

অপর এক অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন কীভাবে আল্লাহ্ তা’লার প্রতি সন্তুষ্টি বজায় রাখা যায় যখন কোনো কোনো মনোবাসনা ও লক্ষ্য অর্জিত হয় না।

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“যদি আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী স্বপ্ন ও লক্ষ্য থাকে তাহলে আপনার উচিত কঠিন পরিশ্রম করা এবং আল্লাহ্ তা’লার নিকট দোয়া করা যেন তিনি আপনাকে তা অর্জনে সাহায্য করেন … আল্লাহ্ তা’লা বলেছেন ‘জোর প্রচেষ্টা করো’। [তাই,] প্রথমত, আপনাকে কঠিন পরিশ্রম করতে হবে; এরপর আল্লাহ্ তা’লার কাছে দোয়া করতে হবে যে, আপনার শক্তি ও সামর্থ্য অনুসারে আপনি আপনার সর্বোচ্চটুকু করেছেন, আর আল্লাহ্ তা’লা যেন আপনাকে [আপনার লক্ষ্য] অর্জনে সাহায্য করেন। তাহলে ইনশাআল্লাহ্, আল্লাহ্ তা’লা আপনাকে সাহায্য করবেন …”

একজন প্রশ্নকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন, কখনো দুঃখ বোধ করলে কিংবা জীবনে কোনো সমস্যার সম্মুখীন হলে তিনি কী করেন?

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“যদি আপনি কোনো কারণে ভালো বোধ না করেন কিংবা আবেগ তাড়িত থাকেন তাহলে আপনাকে আল্লাহ্ তা’লার নিকট দোয়া করতে হবে যেন তিনি আপনাকে সাহায্য করেন। নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করুন, সিজদায় খুব ক্রন্দন করুন, তখন আপনি হৃদয়ে প্রশান্তি অনুভব করবেন এবং সব ঠিক হয়ে যাবে।”

অপর এক অংশগ্রহণকারী হুযূর আকদাসকে জিজ্ঞেস করেন ওয়াকফে নও স্কীমের অন্তর্ভুক্ত ও জামা’তে পূর্ণকালীন সেবা প্রদানকারী একজন আহমদী নারীর বিয়ের পর কী করা উচিত। তার কী গৃহিণী হিসেবে ঘরের কাজের জন্য সেবা প্রদান থেকে বিরত থাকা উচিত, নাকি স্বামীর পরামর্শ নিয়ে সেবা প্রদান চালিয়ে যাওয়া উচিত?

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) বলেন:

“আপনি আহমদীয়া মুসলিম জামা’তে কিংবা বাইরে যা-ই কাজ করেন, বিয়ের পর স্বামীর সঙ্গে পারস্পরিক সমাঝোতার মাধ্যমে কাজ করা উচিত। কিন্তু, প্রথম বিষয় হলো, আপনার উচিত আপনার স্বামীকে উপলব্ধি করানো যে, যদি আপনি জামা’তের জন্য কাজ করেন এটি আপনার আধ্যাত্মিকতার স্তরকে উন্নীত করতে এবং আল্লাহ্ তা’লার কৃপারাজি অর্জন করতে সাহায্য করবে। আপনি যদি জামা’তের জন্য কাজ করেন তাহলে আপনি আল্লাহ্ তা’লার আশীর্বাদ লাভ করবেন। তাকে সর্বদা বলতে থাকুন যে, ‘আমাদের উচিত জামা’তকে কিছু সময় প্রদান করা, যেন আমরা আল্লাহ্ তা’লার অনুগ্রহরাজি আরও বেশি পেতে পারি।”

হযরত মির্যা মসরূর আহমদ (আই.) আরও বলেন:

“একজন ওয়াকফে নও মেয়ের উচিত তার সম্ভাব্য বাগদত্ত ও তার পরিবারকে বলা যে, ‘একজন ওয়াকফে নও হিসেবে জামা’তের ডাকে অগ্রসর হয়ে সেবা প্রদান করা আমাদের বাধ্যবাধকতা। আমি একজন ওয়াকফে নও এবং একজন ওয়াকফে নও হিসেবে এটি আমার দায়িত্ব। সুতরাং, আপনাদের বুঝতে হবে যে, বিয়ের পরেও যখনই আমাকে ডাকা হবে আমি জামা’তের জন্য কাজ করবো।”